আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম ‘বন্ধ রাখার’ সরকারি সিদ্ধান্তে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আনন্দিত বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার এক বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা আনন্দিত যে, বিলম্বে হলেও গতরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ফ্যাসীবাদী সরকারের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দ্রুত করার এবং বিচারকার্য নির্বিঘ্ন করার স্বার্থে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ ও তার সাথে যুক্ত সকল সংগঠনের কার্যক্রম বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে গত বৃহস্পতিবার থেকে আন্দোলন চলছিল। প্রথমে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা। শুক্রবার বিকেল থেকে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করছিলেন।

এর মধ্যে গতকাল শনিবার রাতে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল সাংবাদিকদের জানান, আওয়ামী লীগ ও এর নেতাদের বিচারকাজ সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা, জুলাই আন্দোলনের নেতা-কর্মীদের নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বাদী ও সাক্ষীদের সুরক্ষার জন্য সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অধীনে সাইবার স্পেসসহ আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।

এই সিদ্ধান্তে দলের আনন্দিত হওয়ার কথা উল্লেখ করে বিবৃতিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রাসঙ্গিক আইন সংশোধন করে ফ্যাসিবাদী দলের বিচার করার সিদ্ধান্তকে সঠিক মনে করেন তারা। তবে বিএনপির দাবি মেনে আরও আগেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলে চাপের মুখে ব্যবস্থা নেওয়ার মতো বিব্রতকর ও অনভিপ্রেত অবস্থায় সরকারকে পড়তে হতো না বলে উল্লেখ করেছেন তিনি।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি ও সর্বশেষ ১৬ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে বিএনপি তাদের লিখিত পত্রে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিচারিক প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা’ এবং ‘ফ্যাসিবাদী দল ও সেই দলীয় সরকারের সঙ্গে যুক্তদের বিচার দ্রুত করে দেশের রাজনীতির ময়দানকে জঞ্জালমুক্ত করার’ দাবি জানিয়েছিল বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে দলটির মহাসচিব।

এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘আলোচনায় আমরা স্পষ্ট করে বলেছিলাম, আইনি প্রক্রিয়াতেই ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা সম্ভব ও উচিত। বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও আলোচনায় আমরা আমাদের এসব দাবি বার বার উত্থাপন করেছি।’

বিএনপি প্রশাসনিক আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এই কারণেই বিগত ফ্যাসিবাদী সরকার পতনের আগ মুহূর্তে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষণার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছিল বিএনপি।

বিবৃতিতে দ্রুত নির্বাচনের দাবি পুনর্ব্যক্ত করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জনগণ তাদের ভোটাধিকার তথা গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই ফ্যাসিবাদের পতনের জন্য গুম, খুন, জেল, জুলুম সহ্য করেও অব্যাহত লড়াই করেছে। তাদের সেই দাবি এখনও অর্জিত হয়নি।

নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ (রূপরেখা) ঘোষণা না হওয়ায় জনমনে যে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে, সে ব্যাপারে সচেতন হওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফখর ল ইসল ম উপদ ষ ট আনন দ ত আওয় ম ব এনপ সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

সি চিন পিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ যুগান্তকারী, চীনকে বিএনপি

চীন সফররত বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতা স্মারকে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়নার (সিপিসি) আন্তর্জাতিক বিভাগের মিনিস্টার লি জিয়াং ঝাও। তিনি এক চীন নীতির ব্যাপারে বিএনপির সুস্পষ্ট অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন।

গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে সফররত বিএনপির প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপে লি জিয়াং ঝাও এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। পরে রাতে বিএনপির মিডিয়া সেল থেকে শায়রুল কবির খান এ তথ্য জানান।

লি জিয়াং ঝাওয়ের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, চীন তথা বিশ্বব্যাপী উন্নয়ন ও জনকল্যাণে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) যুগান্তকারী ও অবিশ্বাস্য। এ কারণে বিএনপির পক্ষ থেকে চীনের প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানানো হয়। বিএনপির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান–সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন প্রকল্পে চীনের অধিকতর অংশগ্রহণের প্রত্যাশা ব্যক্ত করা হয়।

পরে বিএনপির প্রতিনিধি দল তাদের সম্মানে সিপিসির আন্তর্জাতিক বিভাগের ভাইস মিনিস্টার সুন হাইয়ানের আয়োজনে মধ্যাহ্নভোজে যোগ দেন।

গত সোমবার থেকে চীন সফরে রয়েছে বিএনপির প্রতিনিধি দল। মির্জা ফখরুলের নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক সুকোমল বড়ুয়া, জহির উদ্দিন স্বপন, দলের মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল এবং চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তার।

গতকাল চীন সফরের দ্বিতীয় দিন পার করেছেন বিএনপির প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এদিন সকালে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী সান ওয়েইডংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা।

সফরের প্রথম দিন সোমবার চীনের পিপলস গ্রেট হলে সিপিসি কেন্দ্রীয় কমিটির পলিটব‍্যুরো সদস্য ও ন্যাশনাল পিপলস কংগ্রেস স্ট্যান্ডিং কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান লি হংঝংয়ের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন মির্জা ফখরুল।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • যশোরে মানবপাচার চক্রের ৪ সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা
  • নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করার অপেক্ষায় চীন: মির্জা ফখরুল
  • সি চিন পিংয়ের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ যুগান্তকারী, চীনকে বিএনপি