গফরগাঁওয়ে চোর সন্দেহে পিটুনির ৮ ঘণ্টা পর মানসিক ভারসাম্যহীন যুবকের মৃত্যু
Published: 11th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় গরুচোর সন্দেহে পিটুনির আট ঘণ্টা পর মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে পিটুনির শিকার হায়দুল আকন্দ (৩৫) নামের ওই যুবককে আজ রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।
দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। নিহত হায়দুল আকন্দ উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের হাটুরিয়া গ্রামের অবেদ আলী আকন্দের ছেলে।
পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাইদুল একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। গত শুক্রবার উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের বাইলনা গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান তিনি। কিন্তু বোনের বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তিনি রাতের বেলা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। কয়েক মাস ধরে এলাকায় গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন পাহারা দিচ্ছিলেন। মধ্যরাতে হাইদুলকে রাস্তায় দেখে চোর সন্দেহে ধাওয়া করে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে সামনে পিটুনি দেওয়া হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকলে খবর পেয়ে পাগলা থানার পুলিশ গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।
গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়।
নিহতের ভাতিজা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার চাচা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। যারা আমার পাগল চাচাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারল, তাদের বিচার চাই।’
মশাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মহল্লাদার (গ্রাম পুলিশ) মো.
পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, গরুচোর সন্দেহে ভোররাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তবে তাঁর নামে চুরি–সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ নেই। পরিবারের দাবি, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট
ভোরের আলো ফুটতেই বসেছে হাট। কাকডাকা ভোরে অধিকাংশ মানুষের ঘুম না ভাঙলেও সরগরম দুই ঘণ্টার শ্রম বিক্রির হাট। কে কাকে নিবেন, তা নিয়ে চলছে দরদাম। হারভেস্টার মালিকরা ধান কাটতে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যে কারণে বেড়েছে শ্রমিকের চাহিদা। এমন কথাই বলেছে ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি বিভাগ।
চলতি বোরো মৌসুমে কৃষকের ধান কাটতে প্রতিদিন ফজরের নামাজের পরপরই এই হাটে নিম্ন আয়ের মানুষের কোলাহল বেড়ে যায় কয়েক গুণ। দূর থেকে লোকজনের জমায়েত দেখে কোনো রাজনৈতিক দলের সমাবেশ মনে হলেও বাস্তবে এটি শ্রম বিক্রির হাট।
ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া পৌরশহরের সাবেক জননী সিনেমা হলের সামনে চৌরাস্তায় বসে শ্রম বিক্রির এ হাট। হাটে আসা শ্রমিকদের কেউ গেরস্থদের কাজ সম্পন্ন করার
চুক্তিতে কাজে নিচ্ছেন, আবার কেউ কেউ দৈনিক হাজিরায় কাজে নিচ্ছেন। স্থানীয়ভাবে এই হাটকে সবাই ‘কামলার হাট’ বলেই জানেন।
সরেজমিন ফুলবাড়িয়া পৌর সদরের শ্রমিক হাট ও দেওখোলা বাজারের শ্রমিক হাট ঘুরে দেখা গেছে হাট দুটিতে নেত্রকোনা, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ সদরসহ ফুলবাড়িয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুলসংখ্যক ধানকাটার শ্রমিক জড়ো হয়েছেন। এসব হাটে প্রতিদিন শত শত শ্রমিক বেচাকেনা হয়ে থাকে। সাড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পর্যন্ত শ্রমিকের দাম উঠেছে। বেচাকেনার পর ওই শ্রমিকরা ইজিবাইক অথবা ভ্যানে চড়ে গেরস্থের বাড়ি চলে যাচ্ছেন। তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন কৃষক।
নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আশুজিয়া গ্রাম থেকে আসা কৃষি শ্রমিক তাইয়েবুর রহমান বলেন, ‘আমগর এলাকায় কাজ কম, ময়নাও (মজুরি) কম। যে কাজ আছে, তা দিয়ে সংসার ঠিকমতো চলে না। তাই এই এলাকায় ধানকাটা কাজের সন্ধানে এসেছি। ফুলবাড়িয়া বাজারের পাশেই ভালুকজান এলাকায় এক গেরস্থের বাড়িতে ৮৫০ টাকায় দিন হাজিরায় ধান কাটতে যাচ্ছি। সঙ্গে দুই বেলা খাবার দেবেন তিনি।’
কাজের জন্য আসা সারুটিয়া গ্রামের আব্দুল হক জানান, বোরো ধান কাটা ও মাড়াইয়ের ব্যস্ত সময় এখন। মাঠভরা পাকা ধান ঘরে তুলতে কৃষকের তোড়জোড় চলছে। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি। ঝড় বৃষ্টি এলে শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১ হাজার টাকার উপরে উঠতে পারে।
ফুলবাড়িয়ার জোরবাড়ীয়া গ্রামের মকবুল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, ইচাইল বিলে তার ৮ কাঠা জমির ধান পেকে ঝরে পড়ছে। ধান কাটতে ৮৫০ টাকা দিন হাজিরা ও দুই বেলা খাবারের শর্তে ৪ জন শ্রমিক নিচ্ছেন। সামনে শ্রমিক সংকট হলে আরও বাড়তি টাকা গুনতে হবে বলে জানান তিনি।
স্থানীয় কৃষক মনিরুজ্জামান জানান, আবাদ করতে অনেক খরচ। শ্রমিকের মজুরিও বেশি। শ্রমিকের মজুরি যেহেতু ৯০০ টাকা দিতে হচ্ছে। খাবার দিতে হচ্ছে দুই বেলা। পক্ষান্তরে প্রতিমণ ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা। ধানের দামের সমান শ্রমিকের মজুরি। এবারের বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও খরচ অনুসারে দাম না পাওয়ায় ধান আবাদ করে পোষাবে না।
উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এবছর ফুলবাড়িয়া উপজেলার ২১ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। সরকার থেকে ভর্তুকি মুল্যে কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হলেও সাধারণ কৃষক সুফল বুঝতে না পারায় শ্রমিকের ওপর নির্ভর করছে। শ্রমিকের চাহিদা বাড়ায় তাদের মজুরিও বেড়েছে।
ফুলবাড়িয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ বলেন, আমাদের উপজেলার প্রায় ৬০ শতাংশ ধান পেকে গেছে। ঝড় বৃষ্টির কবল থেকে ফসল রক্ষায় দ্রুত ধান কাটা প্রয়োজন। কিছু এলাকায় হারভেস্টার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধান কাটতে কম্বাইন হারভেস্টারে আগ্রহ কম থাকায় এখানকার হারভেস্টার মালিকরা তাদের হারভেস্টার নিয়ে হাওর অঞ্চলে চলে গেছেন। যার কারণেই শ্রমিকের চাহিদা বেড়েছে।