ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলায় গরুচোর সন্দেহে পিটুনির আট ঘণ্টা পর মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাতে পিটুনির শিকার হায়দুল আকন্দ (৩৫) নামের ওই যুবককে আজ রোববার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। নিহত হায়দুল আকন্দ উপজেলার সালটিয়া ইউনিয়নের হাটুরিয়া গ্রামের অবেদ আলী আকন্দের ছেলে।

পুলিশ ও নিহতের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হাইদুল একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। গত শুক্রবার উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের বাইলনা গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে যান তিনি। কিন্তু বোনের বাড়ির কাউকে না জানিয়ে তিনি রাতের বেলা রাস্তায় ঘোরাঘুরি করছিলেন। কয়েক মাস ধরে এলাকায় গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় স্থানীয় লোকজন পাহারা দিচ্ছিলেন। মধ্যরাতে হাইদুলকে রাস্তায় দেখে চোর সন্দেহে ধাওয়া করে স্থানীয় একটি কিন্ডারগার্টেনে সামনে পিটুনি দেওয়া হয়। মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকলে খবর পেয়ে পাগলা থানার পুলিশ গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে আজ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাঁকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করায়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে তাঁর মৃত্যু হয়।

গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ফারজানা আক্তার বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়। নিহতের শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন আছে। পায়ের নখ উপড়ে ফেলা হয়।

নিহতের ভাতিজা ইসলাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার চাচা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। যারা আমার পাগল চাচাকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারল, তাদের বিচার চাই।’

মশাখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মহল্লাদার (গ্রাম পুলিশ) মো.

খোকন মিয়া বলেন, ‘খবর পেয়ে সেখানে গিয়ে দেখেন, কোনোমতন দম আছে লোকটার। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাই। ওই সময় তাঁর পরিবারের লোকজন বলাবলি করেছেন, সে পাগল ছিল।’ তিনি বলেন, এলাকায় পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে গরু চুরির উপদ্রব বেড়েছে। এ জন্য সবাই রাত জেগে পাহারা দেন। গ্রামের এনামুল মিয়ার গোয়ালঘরে হায়দুল ঢুকেছিলেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তখন লোকজন জড়ো করে হায়দুলকে ধরতে চাইলে তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। পরে তাঁকে ধরে গণপিটুনি দিয়ে ফেলে রাখা হয়েছিল। ঘটনার পর এনামুল এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

পাগলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফেরদৌস আলম প্রথম আলোকে বলেন, গরুচোর সন্দেহে ভোররাতে গণপিটুনির শিকার হয়েছিলেন ওই ব্যক্তি। তবে তাঁর নামে চুরি–সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ নেই। পরিবারের দাবি, তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কারা ঘটনাটি ঘটিয়েছেন, এখন পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। নিহতের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ য় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে গারো স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তির এক সহযোগীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গতকাল রাত ১০টার দিকে জুগলি ইউনিয়নের নয়াপাগা গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মিলন মিয়া (২১)। তিনি একই এলাকার বাসিন্দা ও পেশায় অটোরিকশাচালক। এর আগে গতকাল রাতেই মূল অভিযুক্ত আবুল বাশার (২৫) ও তাঁর সহযোগী মিলন মিয়াকে আসামি করে হালুয়াঘাট থানায় মামলা করেন ওই ছাত্রীর মা। তবে মামলার প্রধান আসামিকে আজ সকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি।

আরও পড়ুনহালুয়াঘাটে স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ১৫ ঘণ্টা আগে

পুলিশ, স্থানীয় বাসিন্দা ওই কিশোরীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরী (১৫) নবম শ্রেণিতে পড়ে। গত সোমবার দুপুরে মিলন মিয়ার (২১) সঙ্গে সে একটি পার্কে বেড়াতে যায়। বিকেলের দিকে সেখান থেকে বাড়ি পৌঁছে দিতে কিশোরীটিকে বাশারের অটোরিকশায় তুলে দেন মিলন। এ সময় বাশার হালুয়াঘাট উপজেলা শহরে পূজামণ্ডপ দেখানোর কথা বলে মেয়েটিকে নিয়ে ঘুরতে থাকেন। একপর্যায়ে একটি নির্জন স্থানে নিয়ে স্কুলছাত্রীটিকে ধর্ষণ করেন। এরপর রাত ১১টার দিকে গামারীতলা এলাকায় তাকে নামিয়ে দিয়ে অটোরিকশাচালক চলে যান। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে তাকে বাড়িতে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে পুলিশ গতকাল রাতেই আবুল বাশারের (২৫) বাড়িতে অভিযান চালায়। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি। ওই সময় অটোরিকশাটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

হালুয়াঘাট থাকার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে আমাদের চেষ্টা চলছে। তাঁর সহযোগী মিলনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মিলন জানিয়াছেন, মেয়েটি তাঁর বন্ধু।’

এদিকে হালুয়াঘাটে গারো ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলো। আজ বেলা তিনটায় ঢাকা শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ কর্মসূচি আয়োজন করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কেন্দ্রীয় সদস্য সাবেক যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) অলিক মৃ।

আজ বুধবার সকালে নিজের ফেসবুকে পেজে পোস্ট দিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স ওই ঘটনার নিন্দা ও শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। তিনি বলেন, মেয়েটি জীবনের সবচেয়ে বড় ক্ষতি ও বিপর্যয়ের সম্মুখীন। মেয়েটির মা বিএনপি পরিবারের সদস্য ও গত ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিলেও অন্য গারো নারীদের সঙ্গে অংশ নিয়েছেন। অবশ্যই এই ধর্ষকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ময়মনসিংহে তিন দশকের পঞ্চদুর্গাপূজা
  • ময়মনসিংহে কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, গ্রেপ্তার ২
  • এ বছর ডেঙ্গুতে ২০০ জনের মৃত্যু
  • ময়মনসিংহে গারো স্কুলছাত্রী ধর্ষণের অভিযোগে মামলা, একজন গ্রেপ্তার
  • ‘আল্লাহ তুই দেহিস’: জোর করে চুল কেটে দেওয়ার ঘটনায় এক আসামি গ্রেপ্তার