কদম রসুল সেতু আশীর্বাদ নাকি অভিশাপ হবে
Published: 11th, May 2025 GMT
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে দেখেছি অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে কীভাবে প্রকল্প, মেগা প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। নতুন নতুন প্রকল্পের উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব প্রকল্পের অধিকাংশের যথাযথ সমীক্ষা ছিল না; ছিল টাকার শ্রাদ্ধ। বিভিন্ন বাহানায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো মানে বাজেট বৃদ্ধি। সব কিছুকে ‘উন্নয়ন’ বলে চালানো হয়েছে, যার অধিকাংশই জনগণের কাজে আসেনি।
বর্তমানে নারায়ণগঞ্জে যেসব প্রকল্প চলমান, সেগুলোর ভবিষ্যৎ ও পরবর্তী বাস্তবতা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এর একটি হচ্ছে শীতলক্ষ্যা নদীর ওপর নির্মিতব্য কদম রসুল সেতু। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীর পূর্ব ও পশ্চিম পারকে যুক্ত করার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ সেতু। সেতুটিকে নারায়ণগঞ্জবাসীর দীর্ঘ দিনের স্বপ্নও বলা চলে। এর নকশায় বড় ধরনের ত্রুটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ ত্রুটি এখনই যে তৈরি হয়েছে, তা নয়। জনসমক্ষে প্রকল্পটি উন্মুক্ত হওয়ায় ত্রুটি নজরে এসেছে। জনগণ যেহেতু এসব প্রকল্পের অংশীজন; প্রকল্পের শুরুতে তাদের মতামত নিলে সে ত্রুটি আগেই চিহ্নিত হতো।
সেতুটি নির্মাণের দায়িত্বে রয়েছে যৌথভাবে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। ৭৩৫ কোটি টাকার প্রকল্প ২০১৭ সালে একনেকে অনুমোদিত হয়েছে। কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৮ সালে; মেয়াদ ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০২৬ সালের জুন।
সেতুটির পূর্ব পারের র্যাম্প-স্পট (নামার মুখ) বন্দর উপজেলার সিএসডি অঞ্চল এবং পশ্চিমাংশের র্যাম্প শহরের নারায়ণগঞ্জ কলেজের সামনে। কলেজটি শহরের ব্যস্ততম নবাব সিরাজউদ্দৌলা সড়কে অবস্থিত। এর উত্তর পাশে নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এবং কলেজ ঘেঁষে শহরের সবচেয়ে বড় পণ্যস্থল দিগুবাবুর বাজারের প্রবেশমুখ। ব্রিটিশ শাসনামল থেকে নারায়ণগঞ্জ শহরে রেলস্টেশন, লঞ্চঘাট, বাস টার্মিনাল একই জায়গায় অবস্থিত। সেখানে যাওয়ায় যেমন, তেমনই দেশের বৃহত্তর রং ও সুতার বাজার টানবাজারে যাওয়ার জন্যও এটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এখানে রয়েছে রেলক্রসিং; যেখানে বিভিন্ন সময়ে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটেছে। সব মিলিয়ে, সিরাজউদ্দৌলা সড়কটিতে সব সময় যানজট থাকে।
নারায়ণগঞ্জে অপরিকল্পিত নগরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে এখানে গড়ে উঠেছে অপরিকল্পিত পরিবহন ব্যবস্থা। ১৮৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ রেল ব্যবস্থা চালু হলে শহরটি পূর্ববঙ্গের সিংহদ্বারে পরিণত হয়েছিল। গোয়ালন্দ থেকে স্টিমারে নারায়ণগঞ্জ; তারপর রেল বা সড়কপথে ঢাকাসহ অন্যান্য জায়গায় যাওয়া যেত। প্রায় দেড়শ বছর পরে এ যোগাযোগ ব্যবস্থা জনদুর্ভোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে কদম রসুল সেতুর নকশা প্রণয়নে এলাকার বাস্তবতা, ট্রাফিক প্রভাব নিরূপণে সমীক্ষার ক্ষেত্রে ত্রুটি রয়েছে। এই সেতু দিয়ে ঘণ্টায় কত যান চলাচল করবে এবং তার ধারণ সক্ষমতা এ সড়কের কতটুকু রয়েছে, তা প্রকল্পের নকশায় গুরুত্ব পায়নি। বিদ্যমান ব্যবস্থায় সেতু থেকে সড়কে গাড়ি নামার বাস্তবতা নেই। ১ নম্বর রেলগেটের কাছে বন্দর খেয়াঘাট। প্রতিদিন সেখানে এক লাখ ২০ হাজার থেকে দেড় লাখ লোক যাতায়াত করে। এর ৬০ শতাংশ যদি সেতু ব্যবহার করে, তাহলে কী দাঁড়াবে?
নারায়ণগঞ্জ শহরে বর্তমানে সাড়ে ৯ লাখ মানুষের বসতি। যদি বর্তমান হারে জনসংখ্যা বাড়ে তাহলে আগামী একশ বছরে এ সংখ্যা দাঁড়াবে এক কোটিরও বেশি। কদম রসুল সেতুর মতো প্রকল্প অন্তত একশ বছর সামনে রেখে গ্রহণ করা হয়ে থাকে। রাজনীতি ও আত্মস্বার্থ যখন গুরুত্বপূর্ণ হয়, তখন কোনো কিছু বিবেচনায় থাকে না।
ত্রুটিপূর্ণ নকশা নিয়ে কদম রসুল সেতু প্রকল্পের টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, যেনতেনভাবে সেতু বানিয়ে দিলেই কাজ সারা হয়ে গেল। জনগণের কাজে লাগুক বা না লাগুক। বর্তমান নকশায় এ সেতুর মুখ যেভাবে আছে, সেভাবে বাস্তবায়িত হলে উপকার তো নয়ই, স্থায়ীভাবে নারায়ণগঞ্জবাসীর জন্য দুর্ভোগের কারণ হয়ে উঠবে। নারায়ণগঞ্জের জন্য আশীর্বাদ না হয়ে তা অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে।
এ পরিস্থিতিতে কদম রসুল সেতুর পশ্চিম পারের মুখটি পরিবর্তন করে দ্রুত সেতুর কাজ শুরু করা জরুরি। নকশা পরিবর্তন করতে গিয়ে প্রকল্প যাতে বিঘ্নিত বা বিলম্বিত না হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। এ বিষয়ে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
রফিউর রাব্বি: লেখক; আহ্বায়ক, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ প রকল প র ব যবস থ র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’
নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।