রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা নিজ কক্ষে বসেছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি তাঁর নির্ধারিত অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। আজ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব বিদ্যালয়টি পরিদর্শনও করেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে বের করে কক্ষে তালা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা। তাঁর অভিযোগ, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁকে মারধরও করেছেন। এ ঘটনায় তাঁর চেয়ার পাশেই একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন চেয়ারটি পাশের একটি আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে কে বা কারা। প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে চেয়ারটি বেঁধে রাখা হয়। এরপর সেদিন রাতে কে বা কারা চেয়ারটি অফিস কক্ষের সামনে রেখে যায়। এ ছাড়া তালা দুটিও খুলে দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ মোটামুটি ভালো। অফিসে প্রবেশ করে অন্য একটি চেয়ারে বসেছি। ভাঙা চেয়ারটি বিদ্যালয়ের একটি স্টোররুমে রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসেছিলেন। আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেছেন।’

শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসার প্রত্যাশা করে মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁরা অনুতপ্ত হবেন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে এলাকাবাসী সহযোগিতা করবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে গত বছরের ৫ আগস্টের আগে নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান সভাপতি ছিলেন। পরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক অধ্যাদেশে আবার বিদ্যালয়গুলোয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে। পরে গত ৩ মার্চ এই বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপি–সমর্থিত মামুন–অর–রশিদ নামের একজন। তিনি নওহাটা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের চাচাতো শ্যালক।

রফিকুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ওরফে নজির। তিনিও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নজির পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মো.

মকবুল হোসেনের ঘনিষ্ঠ। এই পক্ষ বিদ্যালয়ের এ কমিটিকে মেনে নেয়নি। মঙ্গলবার কমিটির লোকজনকে নিয়ে সভা করার কথা ছিল প্রধান শিক্ষকের। সেখানে পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের যাওয়ার কথা ছিল। তবে তিনি যাওয়ার আগে সেখানে এক পর্যায়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষককে বাইরে বের করে তাঁর কক্ষে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার আমগাছ থেকে নামানো হলো, খুলেছে কক্ষের তালাও০৯ মে ২০২৫

এ ঘটনায় সেদিন দুপুরে প্রধান শিক্ষক পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এতে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের মতির ছেলে ও পৌরসভা যুবদলের মো. আতাউর (৩৫), বাগসারা গ্রামের কফিলের ছেলে বাগাসারা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌরসভা যুবদলের মো. মকসেদ আলী (৩৫), পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ওরফে নজির (৫০) প্রমুখকে অভিযুক্ত করেন।

এ ঘটনায় গত শুক্রবার পবা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির এক পক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তাঁরা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে চেয়ার বের করেননি। কক্ষে তালাও লাগাননি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিরা।

আরও পড়ুনপ্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে আমগাছে০৮ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব এনপ র স কর মকর ত প রসভ র মন য় র আমগ ছ উপজ ল নওহ ট

এছাড়াও পড়ুন:

টেস্ট ক্রিকেটের শেষ অধ্যায় লিখে ফেললেন কোহলি

বহুদিন ধরেই চলছিল গুঞ্জন— বিরাট কোহলি কি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবেন? অধিনায়ক রোহিত শর্মার বিদায়ের পর সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছিল। আর এবার আর কোনও রকম সন্দেহের অবকাশ না রেখে নিজেই জানিয়ে দিলেন, আর দেখা যাবে না তাকে লাল বলের ক্রিকেটে।

সোমবার (১২ মে) নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাণপুরুষ কোহলি। লিখেছেন, “১৪ বছর আগে যখন প্রথম সাদা জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলাম, তখন বুঝতেই পারিনি এই যাত্রা আমার জীবনের এত বড় অংশ হয়ে উঠবে। টেস্ট ক্রিকেট আমাকে সাহস দিয়েছে, দায়িত্ব শিখিয়েছে এবং মানুষ হিসেবে গড়তে সাহায্য করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ফরম্যাটে খেলার প্রতি এক বিশেষ অনুভব থাকে, যা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সংগ্রাম— আজীবন হৃদয়ে থাকবে। তবে এখন মনে হচ্ছে, সরে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি, আর ক্রিকেটও আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আশাতীত ভালোবাসা।”

আরো পড়ুন:

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে দ. আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ

সাতাশ পর্যন্ত টেইট বাংলাদেশের

২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক দিয়ে শুরু হয় কোহলির টেস্ট-যাত্রা। এরপর ১২৩ ম্যাচে ভারতের হয়ে করেছেন ৯২৩০ রান। রয়েছে ৩০টি শতক, ৩১টি অর্ধশতক এবং ৭টি ডাবল সেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস— ২৫৪ রান। গড়টা দীর্ঘ সময় ৫০-এর ওপরে থাকলেও ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে সেটা নামল ৪৬.৮৫-তে।

ধীরে ধীরে টেস্টে ব্যাট হাতে তার ধার কমে আসছিল। যা নিয়ে উঠছিল নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে গত অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম ম্যাচে শতরান করলেও বাকিটা ছিল হতাশাজনক। সেই থেকেই নাকি নিজের ভিতরে টেস্ট ছাড়ার ভাবনা চলছিল— যা এবার বাস্তবে রূপ পেল।

গত বছর টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেওয়ার পর এবার টেস্টও ছাড়লেন তিনি। এখন থেকে কোহলিকে দেখা যাবে শুধুই ওয়ানডে ফরম্যাটে।

বিসিসিআই শেষ পর্যন্ত কোহলিকে টেস্টে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এমনকি কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও কোহলিকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোহলি নিজেই মনে করেছেন, মঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার এখনই সময়।

২০১৪ সালে ধোনির পর কোহলি যখন টেস্টের নেতৃত্ব নেন, তখন ভারতের টেস্ট দল ছিল রূপান্তরের মাঝে। কিন্তু তার অধীনে দলটি হয়ে ওঠে ভয়ংকর প্রতিপক্ষ। ৬৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দিয়েছেন ৪০টি ম্যাচে— দেশের বাইরে ১৫ জয়ও রয়েছে তার কৃতিত্বে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ভারতীয় অধিনায়ক তিনি।

আইসিসির কোনও মেজর ট্রফি না জিতলেও কোহলির অধীনে ভারত টানা চার বছর ছিল টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে। ২০১৮-১৯ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত প্রথমবার সিরিজ জেতে তার অধিনায়কত্বেই।

এবার যখন কোহলি বিদায় জানালেন, তখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়— বিদায় নিচ্ছে একটি প্রজন্মের আবেগ, এক অদম্য নেতৃত্ব আর খাঁটি ক্রিকেটীয় দৃষ্টিভঙ্গি।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ