আমগাছে চেয়ার: রাজশাহীতে বিদ্যালয়ের সেই প্রধান শিক্ষক নিজ কক্ষে বসেছেন
Published: 12th, May 2025 GMT
রাজশাহীর পবা উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা নিজ কক্ষে বসেছেন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় তিনি তাঁর নির্ধারিত অফিস কক্ষে প্রবেশ করেন। আজ জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহাব বিদ্যালয়টি পরিদর্শনও করেছেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে টেনেহিঁচড়ে বের করে কক্ষে তালা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা। তাঁর অভিযোগ, বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা তাঁকে মারধরও করেছেন। এ ঘটনায় তাঁর চেয়ার পাশেই একটি পুকুরে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন চেয়ারটি পাশের একটি আমগাছে ঝুলিয়ে রাখে কে বা কারা। প্লাস্টিকের দড়ি দিয়ে চেয়ারটি বেঁধে রাখা হয়। এরপর সেদিন রাতে কে বা কারা চেয়ারটি অফিস কক্ষের সামনে রেখে যায়। এ ছাড়া তালা দুটিও খুলে দেওয়া হয়।
প্রধান শিক্ষক মঞ্জু মনোয়ারা আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষার পরিবেশ মোটামুটি ভালো। অফিসে প্রবেশ করে অন্য একটি চেয়ারে বসেছি। ভাঙা চেয়ারটি বিদ্যালয়ের একটি স্টোররুমে রাখা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পবা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসেছিলেন। আজ সকাল পৌনে ১০টার দিকে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পরিদর্শন করে গেছেন।’
শিক্ষার পরিবেশ ফিরে আসার প্রত্যাশা করে মঞ্জু মনোয়ারা বলেন, কারও বিরুদ্ধে তাঁর কোনো অভিযোগ নেই। যাঁরা অপরাধ করেছেন, তাঁরা অনুতপ্ত হবেন। বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার পরিবেশ ফেরাতে এলাকাবাসী সহযোগিতা করবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বাগধানী উচ্চবিদ্যালয়ে গত বছরের ৫ আগস্টের আগে নওহাটা পৌরসভার মেয়র ও পবা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান সভাপতি ছিলেন। পরে বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির দায়িত্ব দেওয়া হয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে। গত ফেব্রুয়ারিতে এক অধ্যাদেশে আবার বিদ্যালয়গুলোয় কমিটি গঠনের নির্দেশনা আসে। পরে গত ৩ মার্চ এই বিদ্যালয়ের কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন বিএনপি–সমর্থিত মামুন–অর–রশিদ নামের একজন। তিনি নওহাটা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলামের চাচাতো শ্যালক।
রফিকুল ইসলামের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ওরফে নজির। তিনিও পৌরসভা বিএনপির সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নজির পৌরসভা বিএনপির সাবেক সভাপতি শেখ মো.
এ ঘটনায় সেদিন দুপুরে প্রধান শিক্ষক পবা থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। এতে নওহাটা পৌরসভার বাঘাটা গ্রামের মতির ছেলে ও পৌরসভা যুবদলের মো. আতাউর (৩৫), বাগসারা গ্রামের কফিলের ছেলে বাগাসারা উচ্চবিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক ও পৌরসভা যুবদলের মো. মকসেদ আলী (৩৫), পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর নাজিম উদ্দিন মোল্লা ওরফে নজির (৫০) প্রমুখকে অভিযুক্ত করেন।
এ ঘটনায় গত শুক্রবার পবা উপজেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির এক পক্ষ। সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়, তাঁরা প্রধান শিক্ষককে মারধর করে চেয়ার বের করেননি। কক্ষে তালাও লাগাননি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত ওই ব্যক্তিরা।
আরও পড়ুনপ্রধান শিক্ষকের কক্ষে তালা, চেয়ার ঝুলছে আমগাছে০৮ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র স কর মকর ত প রসভ র মন য় র আমগ ছ উপজ ল নওহ ট
এছাড়াও পড়ুন:
বিবিসির বিশ্লেষণ: শেখ হাসিনার ফাঁসির রায় কেন ভারতকে বিব্রত করবে
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেওয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মৃত্যুদণ্ডের রায় ভারতকে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করছেন বিবিসির গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স রিপোর্টার অ্যানবারাসান ইথিরাজান।
তিনি লিখেছেন, এখন আশা করা হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হাসিনাকে ফেরানোর জন্য প্রত্যর্পণের অনুরোধ পাঠাবে। ২০২৪ সালের আগস্টে দেশ ছাড়ার পর থেকে তিনি ভারতে বসবাস করছেন।
আরো পড়ুন:
শেখ হাসিনার রায় নিয়ে ভারতের প্রতিক্রিয়া
বিচার স্বচ্ছ ও আন্তর্জাতিকমানের, প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই: জামায়াত
ঢাকার আগের দাবিগুলোর জবাব ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে দেয়নি। দুই দেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তিও রয়েছে।
তবে আইনি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি মনে হয় হাসিনার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা সৎউদ্দেশ্যে করা হয়নি, তাহলে ভারত সেই অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করতে পারে।
ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রিত্বের সময়ে তিনি ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলেছিলেন। ভারতে তাকে ফেরত না পাঠানোর ব্যাপারে দেশটির সর্বদলীয় রাজনৈতিক পর্যায়েও এক ধরনের ঐকমত্য রয়েছে।
দিল্লির কাছে বাংলাদেশ শুধু প্রতিবেশী নয়, এটি কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য।
অ্যানবারাসান ইথিরাজান লিখেছেন, ভারত যেন টানটান করে বাঁধা দড়ির ওপর হাঁটছে; কারণ হাসিনাকে ফেরত পাঠাতে অস্বীকার করলে তা কূটনৈতিক অবজ্ঞা হিসেবে দেখা যেতে পারে, যা দুই দেশের সম্পর্ককে আরো খারাপ করতে পারে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মামলায় সোমবার (১৭ নভেম্বর) ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে গত ১৩ নভেম্বর রায় ঘোষণার জন্য আজকের তারিখ নির্ধারণ করেন আদালত।
ঢাকা/রাসেল