খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা যেন কাটছেই না। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষকেরা। আজ সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাসে পাঠদান হয়নি।

এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও গত ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যম দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে ‘কুয়েট শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কার্যালয়। আজ শিক্ষার্থীদের হাতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজন শিক্ষার্থীকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।

ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা এখনো কর্মবিরতিতে আছেন। শিক্ষার্থীদের আজ কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কতজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে সেই সংখ্যা বলা আমার জন্য শোভনীয় নয়।’ ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষকদের হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে। ১৫ মের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনকুয়েটে ‘ভালো কিছু হতে যাচ্ছে’, তবে আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা০৮ মে ২০২৫

প্রথম আলোর হাতে থাকা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সাবেক ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের কাছে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন এবং কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই তা মেনে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা; প্রশাসনিক ভবনে সভা চলাকালে জোর করে সভাকক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া; ভিসিসহ অন্য শিক্ষকদের কটূক্তি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা; মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এ ছাড়া মেডিকেল সেন্টারের সামনে ভিসি ও শিক্ষকদের নামে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া এবং অনুমতি ব্যতীত প্রশাসনিক ভবনে ব্যানার লাগানো ও একাডেমিক ভবনে তালা লাগানোর অভিযোগও আনা হয়েছে।

তবে সবার চিঠিতে একই রকম অভিযোগ আনা হয়নি। এ বিষয়ে কুয়েটের আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব কারণ উল্লেখ করে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত। অভিযোগ মোটামুটি একই ধরনের। এটা আমাদের সঙ্গে প্রহসন। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে এই চিঠির উত্তর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সবাই মিলে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।’

আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, ক্লাস শুরু করার আকুতি শিক্ষার্থীদের০৬ মে ২০২৫

এদিকে ৫ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।

১৫ মে শিক্ষকদের দেওয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফারুক হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অগ্রগতিগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’

১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। এর পর থেকেই ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো.

হযরত আলীকে কুয়েটের অন্তর্বর্তীকালীন উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র প রথম আল উপ চ র য

এছাড়াও পড়ুন:

ইসির প্রাথমিক বাছাইয়ে উত্তীর্ণ ২২ দল, আছে ‘বাংলাদেশ বেকার সমাজ’ও

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের জন্য নির্বাচন কমিশনের (ইসি) প্রাথমিক যাচাই–বাছাইয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) অন্তত ২২টি দল উত্তীর্ণ হয়েছে। দ্রুত এসব দলের কার্যক্রম মাঠপর্যায়ে তদন্তের জন্য পাঠানো হবে বলে ইসি সূত্রে জানা গেছে। এরপর নিবন্ধনের জন্য ইসি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।

আজ সোমবার ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। এর আগে গতকাল রোববার মাঠপর্যায়ের যাচাই–বাছাই শেষে তদন্তের জন্য প্রাথমিকভাবে ১৬টি দলের তালিকা করে কমিশন। আরও একদিনের যাচাইয়ে সোমবার এ সংখ্যা বেড়ে ২২টি হয়েছে।

গত ২২ জুন পর্যন্ত নিবন্ধন পেতে ইসিতে আবেদন করে দলগুলো। তখন প্রাথমিক বাছাইয়ে কোনো দলই শর্ত পূরণ করতে পারেনি। এরপর সবগুলো দলকে প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে ১৫ দিন সময় দেয় ইসি। ৩ আগস্ট শেষ সময় পর্যন্ত এনসিপিসহ ৮৪টি রাজনৈতিক দল নিবন্ধনের শর্ত পূরণের তথ্য ইসিতে জমা দেয়। এরপর যাচাইয়ে ২২টি দল প্রাথমিকভাবে উত্তীর্ণ হয়।

যাচাই–বাছাই শেষে উত্তীর্ণ হওয়া ২২টি দল হলো– ‘ফরওয়ার্ড পার্টি, আমজনতার দল, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক পার্টি (বিজিপি), বাংলাদেশ সংস্কারবাদী পার্টি (বিআরপি), বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্কসবাদী), মৌলিক বাংলা, বাংলাদেশ জাস্টিস এন্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, জনতার দল, জনতা পার্টি বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ জাতীয় লীগ, ভাসানী জনশক্তি পার্টি, বাংলাদেশ বেকার মুক্তি পরিষদ, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)–সিপিবি (এম), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ–শাহজাহান সিরাজ), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ বেকার সমাজ (বাবেস), বাংলাদেশ সলুশন পার্টি এবং নতুন বাংলাদেশ পার্টি।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ‘১৪৩টির মধ্যে ৮৪টি দল তথ্য ঘাটতি পূরণ করে জমা দেয়, ৫৯টি দল কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি। এ ৮৪টি দলের মধ্যে ২২টি দলের তথ্য সঠিক রয়েছে বলে আপাতত পাওয়া গেছে। যেগুলোর মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের (যাচাই-বাছাই) জন্য চলে যাবে। বাকি ১২১টি দল অযোগ্য বিবেচিত হয়েছে। তাদেরকে কারণ দর্শানো নোটিশসহ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ফেরত দেওয়া হবে।’

আইন অনুযায়ী, কোনো রাজনৈতিক দল ইসির নিবন্ধন পেতে চাইলে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি, দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলা ও ১০০টি উপজেলা কমিটি এবং প্রতিটি কমিটিতে ২০০ জন ভোটারের সমর্থনের প্রমাণ থাকতে হয়। এ ছাড়া কোনো দলের কেউ অতীতে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে থাকলে বা আগের নির্বাচনের পাঁচ শতাংশ ভোট পেলেও নিবন্ধন পাওয়ার যোগ্যতা হিসেবে ধরা হয়। প্রধান এ শর্তগুলো ছাড়াও বেশ কিছু নিয়মকানুন মেনে আবেদন করতে হয় দলগুলোকে।

নিবন্ধনপ্রক্রিয়ায় দলগুলোর আবেদন পাওয়ার পর প্রাথমিক বাছাই করে কমিশন। এরপর সেই দলগুলোর তথ্যাবলি মাঠপর্যায়ে সরেজমিন তদন্ত শেষে কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর নির্বাচন কমিশন যদি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তখন কারও দাবি বা আপত্তি আছে কি না, সে জন্য বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। কোনো আপত্তি এলে শুনানি করে তা নিষ্পত্তি করা হয়। আর কোনো আপত্তি না থাকলে সংশ্লিষ্ট দলগুলোকে নিবন্ধন সনদ প্রদান করা হয়। নিবন্ধন ছাড়া কোনো দলের পক্ষে নিজ প্রতীকে ভোটে প্রার্থী দেওয়ার সুযোগ থাকে না। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনের আগে এই নিবন্ধন প্রথা চালু করে ইসি। দেশে বর্তমানে নিবন্ধিত দলের সংখ্যা ৫১টি (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগসহ)।

আরও পড়ুন‘বাংলাদেশ বেকার সমাজের’ কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেলের বাসার ‘ড্রয়িংরুম’২৪ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ