কুয়েটে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কারণ দর্শানোর নোটিশ, আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা
Published: 12th, May 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) অচলাবস্থা যেন কাটছেই না। শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তি নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন শিক্ষকেরা। আজ সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো ক্লাসে পাঠদান হয়নি।
এদিকে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও গত ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের মাধ্যম দ্রুত একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর দাবিতে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থীরা। আজ দুপুরে ‘কুয়েট শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের কার্যালয়। আজ শিক্ষার্থীদের হাতে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে ঠিক কতজন শিক্ষার্থীকে এই চিঠি দেওয়া হয়েছে, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।
ছাত্রকল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক আবদুল্লাহ ইলিয়াস আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিক্ষকেরা এখনো কর্মবিরতিতে আছেন। শিক্ষার্থীদের আজ কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে কতজনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে, এই মুহূর্তে সেই সংখ্যা বলা আমার জন্য শোভনীয় নয়।’ ৬ মে অনুষ্ঠিত সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এই কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের কাছে পাঠানো চিঠির সূত্রে জানা যায়, ১৯ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেটের ৯৮তম (জরুরি) সভায় গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও শিক্ষকদের হেয়প্রতিপন্ন করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তার জবাব চাওয়া হয়েছে। ১৫ মের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
আরও পড়ুনকুয়েটে ‘ভালো কিছু হতে যাচ্ছে’, তবে আজও ক্লাসে যাননি শিক্ষকেরা০৮ মে ২০২৫প্রথম আলোর হাতে থাকা আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সাবেক ভিসি অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদের কাছে পাঁচ দফা দাবি উত্থাপন এবং কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই তা মেনে নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা; প্রশাসনিক ভবনে সভা চলাকালে জোর করে সভাকক্ষের দরজা ধাক্কা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ ও হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া; ভিসিসহ অন্য শিক্ষকদের কটূক্তি ও অসৌজন্যমূলক আচরণ করা; মিছিলে নেতৃত্ব দেওয়া ও উসকানিমূলক বক্তব্য প্রদান এবং গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা। এ ছাড়া মেডিকেল সেন্টারের সামনে ভিসি ও শিক্ষকদের নামে অশ্লীল স্লোগান দেওয়া এবং অনুমতি ব্যতীত প্রশাসনিক ভবনে ব্যানার লাগানো ও একাডেমিক ভবনে তালা লাগানোর অভিযোগও আনা হয়েছে।
তবে সবার চিঠিতে একই রকম অভিযোগ আনা হয়নি। এ বিষয়ে কুয়েটের আন্দোলনে অংশ নেওয়া এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব কারণ উল্লেখ করে আমাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে, তাতে আমরা বিস্মিত। অভিযোগ মোটামুটি একই ধরনের। এটা আমাদের সঙ্গে প্রহসন। তবে আমরা প্রাথমিকভাবে এই চিঠির উত্তর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমরা সবাই মিলে বসে পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করব।’
আরও পড়ুনকুয়েটে শিক্ষকদের কর্মবিরতি অব্যাহত, ক্লাস শুরু করার আকুতি শিক্ষার্থীদের০৬ মে ২০২৫এদিকে ৫ মে অনুষ্ঠিত সাধারণ সভা শেষে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারুক হোসেন ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে সংঘটিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সঙ্গে জড়িত ও শিক্ষকদের লাঞ্ছনাকারীদের সাত কর্মদিবসের মধ্যে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান।
১৫ মে শিক্ষকদের দেওয়া সেই সাত কর্মদিবসের সময়সীমা শেষ হবে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক ফারুক হোসেন আজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রশাসন কাজ করে যাচ্ছে। আমরা অগ্রগতিগুলো পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করি, খুব দ্রুতই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।’
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক মানুষ আহত হন। এর পর থেকেই ক্যাম্পাসে অচলাবস্থা বিরাজ করছে। একপর্যায়ে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করলে উপাচার্য ও সহ–উপাচার্যকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। ১ মে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) অধ্যাপক মো.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ক ষকদ র প রথম আল উপ চ র য
এছাড়াও পড়ুন:
দেশবাসীকে ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জামায়াত আমিরের
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় তাকে দুটি অভিযোগে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুরে এ রায় ঘোষণা করা হয়। এর কিছুক্ষণ পর নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে দেশবাসীকে ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “বাংলাদেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। নানা রাজনৈতিক উত্তাপ, সামাজিক অস্থিরতা ও দীর্ঘদিনের অনিশ্চয়তার মাঝে আমাদের জন্য জরুরি হলো—ন্যায়বিচার, সত্য এবং জনগণের অধিকারকে সবচেয়ে উঁচু আসনে প্রতিষ্ঠা করা।
আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি দেশ তখনই সত্যিকার অর্থে অগ্রসর হয়, যখন সেখানে বৈধতা, ন্যায়, স্বচ্ছতা এবং জনগণের মতামত সর্বাধিক মর্যাদা পায়। ব্যক্তিনির্ভর রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে, নীতিনির্ভর রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করাই আজ সময়ের দাবি।
এই সংকটময় সময়ে আমি আবারও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই—আমাদের সংগ্রাম কারো বিরুদ্ধে নয়; আমাদের সংগ্রাম ন্যায়, অধিকার, গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার পক্ষে। আমরা চাই এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে সব নাগরিক নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারে, যেখানে বিচার হবে নিরপেক্ষ, এবং যেখানে পরিবর্তন আসবে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক উপায়ে।
আমি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি—ধৈর্য, সতর্কতা ও ঐক্য বজায় রাখুন। আমাদের লক্ষ্য হোক শান্তি, ন্যায় ও জাতীয় পুনর্গঠন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের দেশকে সত্য, ন্যায় ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করুন।”
আজ একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড এবং পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে ৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ রায় ঘোষণা করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন- বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
ঢাকা/রফিক