কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে সেবা ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত, নগরবাসীর স্বস্তি
Published: 12th, May 2025 GMT
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) ২৩টি নাগরিক সেবা ও সনদের ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। আজ সোমবার দুপুরে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ এ সিদ্ধান্ত নেয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন করপোরেশনের প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ।
আজ সোমবার দুপুরে নগরবাসীর পক্ষ থেকে সিটি করপোরেশনের প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাসিন্দা। গত ২০ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবার ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর গত ১৫ এপ্রিল সিটি করপোরেশনের সচিব ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এতে স্বাক্ষর করেন। এতে ২৩টি নাগরিক সেবার বর্তমান ফি ও পুনর্নির্ধারিত ফি তুলে ধরা হয়। এতে ১৯টি খাতে ফি বাড়ানো হয়। এই ক্ষেত্রে ৫ গুণ টাকা বাড়ানো হয় ১৬টি খাতে। কোনো ধরনের গণশুনানি ছাড়া এভাবে মূল্য বাড়ানোর নজির নেই।’
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ‘জানুয়ারি মাসের সিদ্ধান্ত, হঠাৎ করে মে মাসে বাজেটের এক মাস আগে জানানো হয়েছে। এত দিন এই সিদ্ধান্ত কেন জানানো হলো না। আবার বলা হচ্ছে, ১ মে থেকে এটি কার্যকর হবে। বর্তমান দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির যুগে এভাবে জনস্বার্থবিরোধী মূল্যতালিকা বৃদ্ধি কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন লাভবান প্রতিষ্ঠান, এখানে টাকার অভাব নেই। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মীরা নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছেন। সিটি করপোরেশনে ১ হাজার ৫৩৮ কোটি ১০ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়নকাজ চলছে। অন্যান্য ফি নগরবাসী দিচ্ছেন। এমতাবস্থায় জনস্বার্থবিরোধী পুনর্নির্ধারিত মূল্যতালিকা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় নগরবাসীকে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
স্মারকলিপি প্রদানকালে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সভাপতি উদবাতুল বারী (আবু), কলেজশিক্ষক মো.
প্রশাসক সাইফ উদ্দিন আহমেদ বলেন, নগরবাসীর কথা চিন্তা করেই ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত স্থগিত করা হয়েছে। যদিও অন্যান্য সিটি করপোরেশনের তুলনায় এই ফি এখনো কম, তবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়াটি সঠিক ছিল না। ভবিষ্যতে সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এর আগে ৯ মে প্রথম আলোয় ‘কুমিল্লা সিটি করপোরেশন: ১৬ ধরনের সেবার ফি ৫ গুণ বৃদ্ধি, গণশুনানি না করায় নাগরিকদের ক্ষোভ’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় এবং ১১ মে ‘নাগরিক সেবার ফি বৃদ্ধি, কুমিল্লাবাসীর মতামতকে বিবেচনায় নিন’ শিরোনামে সম্পাদকীয় ছাপা হয়।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: নগরব স
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লাবাসীর মতামতকে বিবেচনায় নিন
নগর ব্যবস্থাপনায় নাগরিক অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি একটি আধুনিক শহরের মৌলিক ভিত্তি। কিন্তু কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত সেই ভিত্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। সিটি করপোরেশন ২৩টি নাগরিক সেবা ও সনদের মধ্যে ১৯টির ফি হঠাৎ করে কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু নাগরিক সেবা ও সনদের ফি বাড়ানোর আগে নগরবাসীর কাছ থেকে কোনো মতামত গ্রহণ করা হয়নি, হয়নি কোনো গণশুনানিও। এ নিয়ে নগরবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, ১৯টি সেবার মধ্যে ১৬টি সেবার ফি এক ধাপে ৫ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে—২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১০০ টাকা। কিছু সেবার ক্ষেত্রে ফি দ্বিগুণ হয়ে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, এমন অনেক সেবার ফি বাড়ানো হয়েছে, যেগুলো দরিদ্র ও প্রান্তিক নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যেমন বেকারত্ব সনদ, ভূমিহীন প্রত্যয়ন, মাসিক আয় সনদ, চারিত্রিক সনদ ইত্যাদি। বেকারত্ব সনদের ফি ৫ গুণ বাড়িয়ে ১০০ টাকা করায় বেকার তরুণদের মধ্যে ক্ষোভ আরও বেশি। একজন তরুণের ভাষ্য, ‘বেকারত্ব প্রমাণ করতে যদি ১০০ টাকা লাগে, তাহলে আগে তো আয় করতে হবে!’ আরও হতাশাজনক হলো, আগে যেসব অনলাইন আবেদন একেবারেই বিনা মূল্যে করা যেত, এখন সেগুলোর জন্যও ৫০ টাকা ফি নির্ধারণ করা হয়েছে। এর ফলে নাগরিকেরা ডিজিটাল সেবা ব্যবহারে নিরুৎসাহিত হবেন।
সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামছুল আলমের বক্তব্য, ‘এই সিদ্ধান্ত আমাদের মাসিক সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের খরচও বেড়েছে, যার কারণে এই মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে ১০০ টাকা অনেক বেশি টাকা নয়। আশা করি বর্তমান পরিপ্রেক্ষিত চিন্তা করে নাগরিকেরা বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখবেন।’
নাগরিক সেবার ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি বাস্তবায়িত হয়েছে এমন এক সময়ে, যখন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন কার্যত অভিভাবকহীন। নেই কোনো মেয়র, নেই কোনো নির্বাচিত পরিষদ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, জনগণের প্রতিনিধি ছাড়া কীভাবে একটি প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ জনগণের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলা এমন একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারে? নগরবাসী বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে তো নেনইনি; বরং গণশুনানি বা নগরবাসীর মতামত গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
কয়েক বছর আগে কোনো ধরনের মতামত ছাড়া মানুষের বাসাবাড়ির কর ৮ থেকে ১০ গুণ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছিল। পরে নগরবাসী আপিল করলে সেটি কিছুটা কমিয়ে আনা হয়। গণশুনানি বা জনগণের মতামত না নিয়ে এমন সিদ্ধান্ত আবারও গ্রহণ করা হলো। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানাই, নাগরিক মতামত ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ফি নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি পুনর্বিবেচনা করুন।