বহুদিন ধরেই চলছিল গুঞ্জন— বিরাট কোহলি কি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াবেন? অধিনায়ক রোহিত শর্মার বিদায়ের পর সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়েছিল। আর এবার আর কোনও রকম সন্দেহের অবকাশ না রেখে নিজেই জানিয়ে দিলেন, আর দেখা যাবে না তাকে লাল বলের ক্রিকেটে।

সোমবার (১২ মে) নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি আবেগঘন পোস্টে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাণপুরুষ কোহলি। লিখেছেন, “১৪ বছর আগে যখন প্রথম সাদা জার্সি গায়ে চাপিয়েছিলাম, তখন বুঝতেই পারিনি এই যাত্রা আমার জীবনের এত বড় অংশ হয়ে উঠবে। টেস্ট ক্রিকেট আমাকে সাহস দিয়েছে, দায়িত্ব শিখিয়েছে এবং মানুষ হিসেবে গড়তে সাহায্য করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “এই ফরম্যাটে খেলার প্রতি এক বিশেষ অনুভব থাকে, যা শব্দে প্রকাশ করা কঠিন। প্রতিটি মুহূর্ত, প্রতিটি সংগ্রাম— আজীবন হৃদয়ে থাকবে। তবে এখন মনে হচ্ছে, সরে দাঁড়ানোর এটাই উপযুক্ত সময়। আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়েছি, আর ক্রিকেটও আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছে আশাতীত ভালোবাসা।”

আরো পড়ুন:

রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে দ.

আফ্রিকাকে হারাল বাংলাদেশ

সাতাশ পর্যন্ত টেইট বাংলাদেশের

২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক দিয়ে শুরু হয় কোহলির টেস্ট-যাত্রা। এরপর ১২৩ ম্যাচে ভারতের হয়ে করেছেন ৯২৩০ রান। রয়েছে ৩০টি শতক, ৩১টি অর্ধশতক এবং ৭টি ডাবল সেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস— ২৫৪ রান। গড়টা দীর্ঘ সময় ৫০-এর ওপরে থাকলেও ক্যারিয়ারের শেষভাগে এসে সেটা নামল ৪৬.৮৫-তে।

ধীরে ধীরে টেস্টে ব্যাট হাতে তার ধার কমে আসছিল। যা নিয়ে উঠছিল নানা প্রশ্ন। বিশেষ করে গত অস্ট্রেলিয়া সফরে প্রথম ম্যাচে শতরান করলেও বাকিটা ছিল হতাশাজনক। সেই থেকেই নাকি নিজের ভিতরে টেস্ট ছাড়ার ভাবনা চলছিল— যা এবার বাস্তবে রূপ পেল।

গত বছর টি-টোয়েন্টি থেকে বিদায় নেওয়ার পর এবার টেস্টও ছাড়লেন তিনি। এখন থেকে কোহলিকে দেখা যাবে শুধুই ওয়ানডে ফরম্যাটে।

বিসিসিআই শেষ পর্যন্ত কোহলিকে টেস্টে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করেছিল, এমনকি কিংবদন্তি ব্রায়ান লারাও কোহলিকে এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু কোহলি নিজেই মনে করেছেন, মঞ্চ ছেড়ে দেওয়ার এখনই সময়।

২০১৪ সালে ধোনির পর কোহলি যখন টেস্টের নেতৃত্ব নেন, তখন ভারতের টেস্ট দল ছিল রূপান্তরের মাঝে। কিন্তু তার অধীনে দলটি হয়ে ওঠে ভয়ংকর প্রতিপক্ষ। ৬৮টি টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে জয় এনে দিয়েছেন ৪০টি ম্যাচে— দেশের বাইরে ১৫ জয়ও রয়েছে তার কৃতিত্বে। এই পরিসংখ্যানই বলে দেয়, টেস্ট ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ভারতীয় অধিনায়ক তিনি।

আইসিসির কোনও মেজর ট্রফি না জিতলেও কোহলির অধীনে ভারত টানা চার বছর ছিল টেস্ট র‍্যাংকিংয়ের শীর্ষে। ২০১৮-১৯ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে ভারত প্রথমবার সিরিজ জেতে তার অধিনায়কত্বেই।

এবার যখন কোহলি বিদায় জানালেন, তখন শুধু একজন খেলোয়াড় নয়— বিদায় নিচ্ছে একটি প্রজন্মের আবেগ, এক অদম্য নেতৃত্ব আর খাঁটি ক্রিকেটীয় দৃষ্টিভঙ্গি।

ঢাকা/আমিনুল

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক হল

এছাড়াও পড়ুন:

যুবদল নেতা ভিআইপি রুম না পাওয়ায় বার ভাঙচুর ও লুটপাট

রাজধানীর মহাখালীর জাকারিয়া ইন্টারন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বারে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে যুবদল নেতা মনির হোসেনের বিরুদ্ধে। বার কর্তৃপক্ষ তাকে ভিআইপি রুম না দেওয়ায় অনুসারীদের নিয়ে এসে তাণ্ডব চালায় মনির। এ ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

গত মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ওই বারে ভাঙচুর চালানোর সময় তারা নারীদের লাঞ্ছিত করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় বারের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার আবু বক্কর সিদ্দিক বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় পাঁচজনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা করেছেন। এতে আরও ২৫জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে।

এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। তাতে দেখা গেছে, শাড়ি পরা এক নারী হোটেলটির সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ে নিচে নামছেন। এ সময় বিপরীত দিক থেকে এক ব্যক্তি ওই নারীর পথ রোধ করে শরীরে আঘাত করছেন। তাঁর হামলায় ওই নারী মেঝেতে পড়ে যান।

এদিকে ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর যুবদলের পক্ষ থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মনির হোসেনকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও সংগঠনের আদর্শবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য সব ধরনের পদ থেকে অব্যাহতি এবং প্রাথমিক সদস্যপদও প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এতে আরও বলা হয়, দল থেকে বহিষ্কৃত কারও আচরণের দায় দল নেবে না। সব নেতাকর্মীকে তার সঙ্গে দলীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানানো হচ্ছে। মনিরের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে যুবদল।

এজাহারে বলা হয়, মঙ্গলবার রাতে মনিরের নেতৃত্বে ২০-২৫ জনের একটি দল রেস্টুরেন্টে ঢুকে ভাঙচুর চালায়। তারা টিভি, চেয়ার, টেবিল, সিসিটিভি ক্যামেরা ও মনিটর, ল্যাপটপ, গ্লাস ও অন্যান্য সামগ্রী ভেঙে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি করে। এছাড়া কাউন্টার থেকে তারা নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং স্টোর থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার বিদেশি মদ লুট করে নিয়ে যায়। চলে যাওয়ার সময় পুলিশের কাছে অভিযোগ করলে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেয়।

মামলার বাদী আবু বকর বলেন, ঘটনার আগের দিন অভিযুক্ত মনির রেস্টুরেন্টে এসে নিজেকে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা পরিচয় দিয়ে ভিআইপি রুম দাবি করেন। সে সময় কোনো রুম খালি না থাকায়, তাকে সাধারণ টেবিলে বসানো হয়। খাবার শেষে ছাড় দিয়ে বিল নেওয়া হলেও, তিনি ক্ষুব্ধ হন এবং হুমকি দিয়ে রেস্টুরেন্ট ত্যাগ করেন।

আজ বৃহস্পতিবার বনানী থানার এসআই এমদাদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জড়িতদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারে কাজ চলছে। এ ঘটনায় নারীদের লাঞ্ছিত করার অভিযোগও পেয়েছি, তদন্ত চলছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ