ঢাবি ছাত্র শাহরিয়ারের হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি ছাত্রপক্ষের
Published: 14th, May 2025 GMT
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার আলম সাম্যকে হত্যায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষ। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ করতে বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে তারা।
এ বি পার্টির ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের নেতারা আজ বুধবার মধুর ক্যানটিনে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে এ দাবি জানান। সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রপক্ষের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক মুহাম্মদ প্রিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেন।
মুহাম্মদ প্রিন্স বলেন, জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানের পরও দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। একদিকে খুনিরা পুলিশের সহায়তায় দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে সাধারণ নাগরিকের জীবন নিরাপত্তাহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর পার্শ্ববর্তী সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রশাসনের নাকের ডগায় মাদক ও জুয়ার আসর বসছে, নারী নিপীড়ন, ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা ঘটছে। সর্বশেষ মেধাবী ছাত্র সাম্যকে জীবন দিতে হয়েছে।
আর কত ছাত্রের জীবন গেলে এই ক্যাম্পাস নিরাপদ হবে—সেই প্রশ্ন তুলে ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক বলেন, ‘আমরা জানতে চাই, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কাদের মদদে মাদকের কারবার চলছে? কেন পুলিশ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে? যদি কোনো বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী এই মাদক ব্যবসায় জড়িত থাকে, আমরা তাদের অবিলম্বে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রপক্ষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সাত দফা দাবি তুলে ধরে। দাবিগুলো হলো:
# মেধাবী ছাত্র শাহরিয়ার আলম সাম্য হত্যার সঙ্গে জড়িত সব আসামি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মাদক ব্যবসায়ীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে হবে।
# শাহবাগ মোড় থেকে হাইকোর্টের শিক্ষা চত্বর পর্যন্ত একটি বিকল্প রাস্তা তৈরি করে ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
# বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরের রাস্তাকে অভ্যন্তরীণ সড়ক হিসেবে ঘোষণা করে এর নিয়ন্ত্রণ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হাতে তুলে দিতে হবে।
# সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সঙ্গে লাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সব গেট অবিলম্বে বন্ধ করে দিতে হবে।
# ক্যাম্পাসের ভেতরের সব ভবঘুরেকে উচ্ছেদ এবং তাদের চলাচল নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্যাম্পাসের রাস্তায় শুধু নিবন্ধিত রিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করতে পারবে।
# নারী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য হলের প্রবেশপথ এবং আশপাশে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।
# বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করতে হবে এবং টিএসসির অনিবন্ধিত ও ভাসমান দোকানপাট বন্ধ করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ছাত্রপক্ষের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক আকিব হাসান, প্রচার সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম, ছাত্রপক্ষের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক খালেদ সাইফুল্লাহ জিহাদ ভূইয়া, যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেরীন আফরোজ মাইশা, ফারজানা আক্তার মিতু, শাশ্বত হকসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ছ ত রপক ষ র ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।