ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পূর্ববিরোধ ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে মিয়াজুল হোসেন (৫০) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আজ বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে সদর উপজেলার নাটাই উত্তর ইউনিয়নের নাটাই গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মিয়াজুল নাটাই গ্রামের তোতা মিয়ার ছেলে। তিনি সদর উপজেলা থেকে আশুগঞ্জের লালপুর পর্যন্ত সড়কে চলাচলকারী সিএনজি (অটোরিকশা) পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি।

স্থানীয় লোকজন ও নিহত মিয়াজুলের পরিবার সূত্রে জানা গেছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার নাটাই দক্ষিণ ইউনিয়নের চান্দের বাড়ি গোষ্ঠী ও ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে অনেক বছর ধরে বিরোধ চলে আসছে। চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক ইউপি সদস্য তকদির হোসেন ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোবারক হোসেন। ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর নেতৃত্বে রয়েছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুল্লাহ বাহার, সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়া, সাইদ মিয়া ও স্থানীয় বিএনপির নেতা কামাল হোসেন। গত সোমবার রাত থেকে দুই গোষ্ঠীর মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর জেরে আজ বেলা দুইটার দিকে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে নাটাই এলাকায় প্রতিপক্ষের হামলায় চান্দের বাড়ির মিয়াজুল হোসেন আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। জরুরি বিভাগে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে চিকিৎসক তাঁকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির পরামর্শ দেন। সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাজুল ইসলাম জানান, নিহত ব্যক্তির বুকের বাঁ পাশে আঘাতের চিহ্ন আছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর প্রকৃত কারণ বলা যাবে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর শহীদ মিয়ার ছেলে কয়েকজনকে নিয়ে চান্দের গোষ্ঠীর এক বাড়িতে মাদক সেবন করছিলেন। এতে চান্দের বাড়ির লোকজন বাধা দেন। এ নিয়ে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে তর্ক হয় এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। রাত নয়টার দিকে ছলিম গোষ্ঠীর ভাঙারি ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেনকে নাটাই গ্রামের রাস্তায় একা পেয়ে চান্দের বাড়ির গোষ্ঠীর লোকজন মারধর করেন। স্থানীয় লোকজন আনোয়ারকে উদ্ধার করে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। এই সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে উভয় গোষ্ঠীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। গতকাল মঙ্গলবার সকালে দুই গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে আবারও সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষ চলাকালে উভয় পক্ষের ১০-১২টি বাড়িঘর ভাঙচুর করা হয় এবং উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হন।

নিহত মিয়াজুলের চাচাতো ভাই মাসুদ মিয়া বলেন, ‘দেড় মাস আগে ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর সাবেক ইউপি সদস্য গোলাম মিয়ার ছেলে হাসান মিয়া ও সাইদ মিয়ার ছেলে তামিম মিয়া ইয়াবা সেবন করছিল। এ সময় আমার ভাতিজা তুহিন মিয়া বাধা দেয়। পরে তারা আমাদের পক্ষের একজনকে মারধর করে। এলাকা থেকে মাদক নির্মূলে বাধা দেওয়ায় দেড় মাস ধরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। তিন দিন ধরে সংঘর্ষ লেগেই আছে। আজ বিকেলের পর তারা অতর্কিত হামলা চালায়। আমরাও আত্মরক্ষার চেষ্টা করি। বিকেলে গ্রামে আসার সময় ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর তাজু মিয়ার ছেলে আমার ভাইকে বুকে আঘাত করে।’

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো.

মোজাফফর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিনের গোষ্ঠীগত বিরোধ ও দ্বন্দ্বের জের ধরে চান্দের বাড়ির গোষ্ঠী ও ছলিম বাড়ির গোষ্ঠীর লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে আহত একজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব র হ মণব ড় য় গ ষ ঠ র ল কজন স থ ন য় ল কজন স ব ক ইউপ স ঘর ষ কজন র

এছাড়াও পড়ুন:

সরাসরি: যুদ্ধ কখনোই গণতন্ত্র নিয়ে আসে না: ইরানের নোবেলজয়ী নার্গিস

ইরানি মানবাধিকারকর্মী ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কারজয়ী নার্গিস মোহাম্মদি তার স্বদেশ ইরানের ওপর ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের হামলার বিরোধিতা করে আবার বার্তা দিয়েছেন। 

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক সংক্ষিপ্ত বার্তায় নার্গিস লিখেছেন, “আমি যেটা নিশ্চিতভাবে জানি, তা হলো, যুদ্ধ কখনোই গণতন্ত্র, মানবাধিকার কিংবা স্বাধীনতা নিয়ে আসে না।”

নরওয়ের পত্রিকা ক্লাসেকামপেনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ২০২৩ সালের শান্তিতে নোবেলজয়ী নার্গিস বলেছেন, ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে তার সমালোচনা তিনি জারি রেখেছেন। তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু আমাদের স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নরকের পথে নিয়ে যাচ্ছেন।”

আরো পড়ুন:

হরমুজ প্রণালী বন্ধ করা হবে অর্থনৈতিক আত্মহত্যা: যুক্তরাষ্ট্র

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আরো আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগের আহ্বান মালয়েশিয়ার

নার্গিস মোহাম্মদি আরো বলেন, “আমি বিশ্বাস করি না যে, যুক্তরাষ্ট্রের বোমা ইরানি জনগণকে মুক্তি দিতে পারে।”

নারী অধিকার নিয়ে আন্দোলনের অগ্রণী এই কর্মী ইরানি সরকারেরও একজন খোলামেলা সমালোচক, যার ফলে তাকে একাধিকবার কারাবরণ করতে হয়েছে।

১৩ জুন থেকে ইসরায়েলের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যে ২২ জুন ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। পারমাণবিক স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া ছাড়া ইরানে ‘রেজিম চেঞ্জ’ করাও ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যের মধ্যে রয়েছে।

ঢাকা/রাসেল

সম্পর্কিত নিবন্ধ