উপদেষ্টা মাহফুজের সঙ্গে যা হয়েছে, এর জন্য আপনাদের প্রতি ধিক্কার:
Published: 14th, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বুধবার (১৪ মে) রাতে তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, মাহফুজ আলম শিক্ষা উপদেষ্টা নয়, কিংবা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। তারপরও তিনি সেখানে গিয়েছিলেন অভ্যুত্থানের ছাত্র-জনতার একজন প্রতিনিধি হিসেবে। আপনাদের প্রতিনিধি হিসেবে। তিনি নিজের অফিস কিংবা প্রশাসনিক জায়গায় আপনাদেরকে না ডেকে বের হয়ে রাজপথে আপনাদের কাছে গিয়েছেন।
এরপর তার সঙ্গে যে আচরণ হয়েছে, সেটার জন্য আপনাদের প্রতি ধিক্কার।
তিনি আরো লিখেন, আপনাদেরকে পূর্বে কমিটমেন্ট দেয়ার পরও কেন কাজগুলো বাস্তবায়ন হলো না সেটার জন্য আপনাদের তো শিক্ষা সচিবকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিত। শিক্ষা উপদেষ্টাকে জবাবদিহি করানো উচিত। সেটা না করে যে আপনাদের কথা শুনতে গিয়েছে আপনারা তাকে আঘাত করেছেন!
আরো পড়ুন:
আ.
একজন আরেকজনের প্রতিপক্ষ হলে ক্ষতি সবার : সারজিস
গতকাল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একজন প্রতিনিধি আমার সাথে যোগাযোগ করে। আমি সাথে সাথে মাহফুজ ভাইকে জানাই। তিনি আজকে রাতে নয়টায় আপনাদেরকে মিটিং এর সময় দেন এবং এটাও বলেন যে আগামীকালকে শিক্ষা উপদেষ্টার সাথে মিটিং এর ব্যবস্থা করে দিবেন। তারপর তিনি এটাও বলেছেন- এই দুই জায়গায় সমস্যাগুলোর কাঙ্ক্ষিত সমাধান না পেলে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করে দিবেন। তারপরও আপনারা আপনাদের মতো করে কর্মসূচি করেছেন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কতিপয় সুশীল উপদেষ্টার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা তারা জনগণকে ডিল করতে ভয় পায়। তখন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় না হলেও ছাত্র উপদেষ্টাদেরকে পাবলিক ডিলিংস করতে সামনে ঠেলে দেওয়া হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর আগেও একবার মুভমেন্ট করেছে। দাবিগুলো যৌক্তিক। তারপরও কেন আজকে তাদের এই মুভমেন্ট করতে হলো এর জবাবদিহি এই সরকার এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদেরকে করতে হবে। চাপে পড়লে কাজ করে নাহয় অফিস করে এমন দুর্বল ব্যক্তিত্বের মানুষ অভ্যুত্থান পরবর্তী সরকারে আমরা প্রত্যাশা করি না।
এর আগে তিন দফা দাবিতে ‘লংমার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচির ডাক দিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতে শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়।
পরে সমঝোতা করতে সেখানে উপস্থিত হন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। এ সময় শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে একটি চক্র তার ওপরে আক্রমণ করেছে বলেও অভিযোগ করেন উপদেষ্টা মাহফুজ। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একটি পক্ষ ঢুকে আন্দোলনকে স্যাবোটাজ করার চেষ্টা করছে, তারা কারা তাদের নাম বলতে চাই না।
ঢাকা/রায়হান/ফিরোজ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উপদ ষ ট র আপন দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
গ্রামীণ ব্যাংকের পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকতে হবে, কমছে সরকারি শেয়ার
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা, শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন। গ্রামীণ ব্যাংক–সংক্রান্ত নতুন অধ্যাদেশে মোট ১৩ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষককে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সেই শিক্ষক হবেন গ্রামীণ অর্থনীতি বা নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ অথবা উক্ত বিষয়ে গবেষণাকাজে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন।
পর্ষদে এ ছাড়া থাকবেন একজন নারী সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদ (সিএ) এবং একজন নারী অধিকারবিষয়ক বিশেষজ্ঞ নারী গবেষক অথবা নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় অবদানের জন্য স্বীকৃতিপ্রাপ্ত কোনো নারী অথবা নারী অধিকার বিষয়ে অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নারী আইনজীবী।
পরিচালনা পর্ষদের এই তিনজন মনোনীত পরিচালক হিসেবে বিবেচিত হবেন। তাঁদের মনোনয়ন দেবেন নির্বাচিত ৯ জন পরিচালক, যাঁরা গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডার। পর্ষদের বাকি একজনকে সরকার অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া হবে। অধ্যাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির বয়সও সর্বোচ্চ ৬৫ বছর করা হয়েছে। এত দিন যা ছিল ৬০ বছর।
গ্রামীণ ব্যাংক আইন, ২০১৩ সংশোধন করে সরকার এসব পরিবর্তন এনেছে। বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে গ্রামীণ ব্যাংক (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর গেজেট প্রকাশিত হয়েছে গত সোমবার। তার আগে গত ১৭ এপ্রিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ গ্রামীণ ব্যাংক (অধ্যাদেশ) সংশোধনের প্রস্তাবে নীতিগত অনুমোদন দেয়।
অনুমোদনের কথা জানিয়ে ওই দিন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাংবাদিকদের জানান, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে রাজনৈতিকভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল। তখন গ্রামীণ ব্যাংককে তাঁর দর্শন থেকে অনেকাংশে সরিয়ে সরকারি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আগে গ্রামীণ ব্যাংক কেবল ভূমিহীনদের জন্য কাজ করত। এখন ইউনিয়ন ও পৌরসভা উভয় পর্যায়েই বিত্তহীনদের নিয়ে কাজ করবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পরিচালকদের মেয়াদ আগেও তিন বছর ছিল, এখনো তা–ই আছে। একজন পরিচালক পরপর দুই মেয়াদে পরিচালক থাকতে পারবেন। তিন বছরের বিরতি দিয়ে আবার তাদের পরিচালক হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে।
গ্রামীণ ব্যাংকে সরকারের মালিকানা ছিল এত দিন ২৫ শতাংশ। তা কমিয়ে এখন ১০ শতাংশ করা হয়েছে। আর এ ব্যাংকে গ্রামীণ ব্যাংকের ঋণগ্রহীতা শেয়ারহোল্ডারদের মালিকানা ছিল এত দিন ৭৫ শতাংশ। তা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৯০ শতাংশ।
ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে সরকারের সদস্য বা পরিচালক ছিলেন এত দিন তিনজন। সংশোধন করে তা একজনে নামিয়ে আনা হয়েছে। এই ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন ৩০০ কোটি টাকা। ৯০ শতাংশ মালিকানা পেতে ব্যাংকটির ঋণগ্রহীতা-শেয়ারহোল্ডারদের এখন পরিশোধিত মূলধন বাড়াতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দুই সপ্তাহ পর গত ২০ আগস্ট গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান এ কে এম সাইফুল মজিদের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। তাঁর পরিবর্তে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির স্কুল অব বিজনেস অ্যান্ড ইকোনমিকসের শিক্ষক আবদুল হান্নান চৌধুরীকে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়।
আবদুল হান্নান চৌধুরী চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েই গ্রামীণ ব্যাংক আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেন, যা এত দিন পর অধ্যাদেশ আকারে জারি হয়েছে। আগে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান নিয়োগের ক্ষমতা সরকারের হাতে থাকলেও নতুন অধ্যাদেশ পাস হওয়ার পর চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন পর্ষদ সদস্যদের মধ্য থেকে।
গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যানের পদ শূন্য হলে বা তিনি দায়িত্ব পালনে অক্ষম হলে সরকার তার মনোনীত পরিচালকদের মধ্য থেকে একজনকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিতে পারত। নতুন অধ্যাদেশে সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন বলা হয়েছে, চেয়ারম্যান অক্ষম হলে পর্ষদ সদস্যরাই অন্য কোনো পরিচালককে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনের অনুমোদন দিতে পারবেন।