কানাডায় বিদেশি শিক্ষার্থীদের আশ্রয় আবেদনে রেকর্ড, আরও বৃদ্ধির সম্ভাবনা
Published: 16th, May 2025 GMT
কানাডায় আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন রেকর্ড পরিমাণে বেড়ে গেছে। ২০২৪ সালে মোট ২০ হাজার ২৪৫ জন বিদেশি শিক্ষার্থী আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন করেছেন। এ সংখ্যা ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ। আর ২০১৯ সালের তুলনায় ছয় গুণ বেশি।
কানাডার ফেডারেল ইমিগ্রেশন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালেও এই সংখ্যা (২০২৪ সালের) অতিক্রম করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চলতি বছরের (২০২৫) প্রথম তিন মাসেই ৫ হাজার ৫০০ জন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী আশ্রয় (রিফিউজি) আবেদন করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২ শতাংশ বেশি।
এমন এক সময়ে এই সংখ্যা বাড়ছে, যখন কানাডা সরকার শিক্ষার্থীদের স্টাডি পারমিট ইস্যু ৪০ শতাংশ কমিয়ে আনছে এবং প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি ঘোষণা দিয়েছেন, ২০২৭ সালের মধ্যে অস্থায়ী শ্রমিক ও আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে মোট জনসংখ্যার ৫ শতাংশের নিচে আনা হবে। বর্তমানে এই হার ৭ শতাংশ।
কেন বাড়ছে এই আশ্রয় আবেদন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্থায়ী আবাসনের পথগুলো সীমিত হওয়ায় শিক্ষার্থীরা এখন বিকল্প হিসেবে আশ্রয়প্রক্রিয়া বেছে নিচ্ছেন। ওয়ার্ক পারমিট (কাজের অনুমতিপত্র) ও স্পাউসের পারমিট পাওয়ার নিয়ম কঠিন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। অনেক প্রতারণামূলক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান (diploma mills) আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের ঠকিয়ে নিম্নমানের ডিপ্লোমা দিচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে চাকরি বা পিআরের (স্থায়ী আবাসন) কাজে আসছে না।
আরও পড়ুনউচ্চশিক্ষার সুযোগ সীমিত, বেতন কম, কারিগরিতে আগ্রহ হারাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা১৩ মে ২০২৫কানাডায় অবস্থানরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ—
যাঁরা পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং পিআর-এর আর কোনো উপায় না পেয়ে যাঁরা রিফিউজি আবেদন করেছেন বা করবেন, তাঁদের মাথায় রাখতে হবে, ‘বাংলাদেশে আপনার জীবন হুমকির সম্মুখীন’ এটা প্রমাণ করতে হবে। কানাডা এখন হাজারো মিথ্যা অ্যাসাইলাম (আশ্রয়) আবেদনের ফাইল বাতিল করে দিচ্ছে। ভুল বা মিথ্যা তথ্য দিয়ে আবেদন করলে তা আইনি ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এ জন্য অভিজ্ঞ ইমিগ্রেশন আইনজীবীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি। যাঁরা এখনো পড়ছেন, তাঁরা যেন অবশ্যই কানাডায় থেকে যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি ও অভিজ্ঞতা অর্জনের চেষ্টা করেন এবং নতুন পিআরগুলো সম্পর্কে আপডেট থাকেন।
আরও পড়ুনকানাডায় অভিবাসনে নতুন উদ্যোগ: বাড়তি সুযোগ ফ্রেঞ্চ ভাষা জানলেই১৬ এপ্রিল ২০২৫ভবিষ্যতে কানাডায় আসতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের জন্য পরামর্শ—
শুধু কানাডা আসার জন্য নিম্নমানের কলেজে ভর্তির চিন্তা করবেন না। ভালো প্রতিষ্ঠানে ভর্তি ও সঠিক পরিকল্পনা নিয়ে আসা উচিত। কানাডা সরকার এখন শিক্ষার্থী নির্বাচনপ্রক্রিয়া কঠোর করেছে—যেমন স্টাডি পারমিট লিমিট, ভেরিফায়েবল লেটার অব অ্যাডমিশন, ফান্ড প্রমাণ ইত্যাদি। ভবিষ্যতে পিআর পাওয়ার জন্য আগে থেকেই যোগ্য কোর্স ও অভিজ্ঞতা অর্জন করার দিকে মনোযোগ দিন।
মডেল: মার্শিয়াছবি: সুমন ইউসুফ.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
১২ দিনে প্রবাসী আয় এসেছে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি
চলতি আগস্ট মাসের প্রথম ১২ দিনে (১ থেকে ১২ আগস্ট) ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। এই সময়ে প্রবাসীরা দেশে পাঠিয়েছেন ১০৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশ ব্যাংক এই তথ্য জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, আগস্ট মাসের ১২ দিনে দেশে ১০৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় এসেছে। গত বছরের একই সময়ে (২০২৪ সালের আগস্টের প্রথম ১২ দিন) দেশে এসেছিল ৭২ কোটি ১০ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়। এই হিসাবে গত বছরের আগস্টের প্রথম ১২ দিনের তুলনায় চলতি মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রায় ৩৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার বেশি প্রবাসী আয় দেশে এসেছে। তাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৪ শতাংশ।
ব্যাংক খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ের দিক থেকে চলতি অর্থবছরটি ভালোভাবে শুরু হয়েছে। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ২৯ শতাংশ। গত জুলাই মাসে প্রবাসীরা ২৪৭ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার আয় দেশে পাঠিয়েছিলেন। গত বছরের জুলাই মাসে প্রবাসী আয় এসেছিল ১৯১ কোটি ডলার।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রবাসী আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মুদ্রাবাজারে ডলারের ওপর চাপও কমেছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানোর বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় পাঠানোকে উৎসাহিত করতে নানা প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের প্রবৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, গত কয়েক মাসে বিদেশি সব বকেয়া দেনা পরিশোধ হয়ে গেছে। লেনদেনের ভারসাম্যে উন্নতি হওয়ায় ডলারের ওপর চাপও কমে এসেছে। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রতি বিদেশি ব্যাংকগুলোর আস্থা ফিরে এসেছে, যা বৈদেশিক মুদ্রাবাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে।
এদিকে, সদ্যবিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিদেশ থেকে রেকর্ড প্রায় ৩০ দশমিক ৩৩ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। দেশের ইতিহাসে এর আগে কোনো এক অর্থবছরে এত বেশি প্রবাসী আয় আর আসেনি। গত অর্থবছরে যে প্রবাসী আয় দেশে এসেছে, তা আগের অর্থবছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলার বা ২৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি।
প্রবাসী আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ডলারের বাজারও স্থিতিশীল হয়ে এসেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ছাড়ের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ বেড়ে গত ১০ আগস্টে ৩০ দশমিক ২৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে। আইএমএফের হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ মান অনুযায়ী, ওই দিন রিজার্ভ অবশ্য ২৫ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার ছিল।