জিহ্বার নিচে খানিকটা ফোলা, যেন একটা থলি। একে বলে রেনুলা। রেনুলা মূলত মিউকাসপূর্ণ একটি সিস্ট, যা মুখের মেঝের মিউকাস গ্রন্থি থেকে উৎপত্তি লাভ করে। রেনুলা সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থিগুলোর সঙ্গে যুক্ত সাধারণ ক্ষত।
উৎপত্তি
এটি জিহ্বার নিচের লালাগ্রন্থি থেকে উৎপত্তি হয়। আঘাতের কারণে মুখের মেঝেতে থাকা সূক্ষ্ম নালিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যা মুখগহ্বরের সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি থেকে লালা নিষ্কাশনে বিঘ্ন ঘটায়।
এটি জেলির মতো তরল দিয়ে গঠিত হয়।
কার হয়
শিশু–কিশোরেরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। নারী ও পুরুষ উভয়েরই এ রোগ হতে পারে।
জিহ্বার নিচে খানিকটা ফোলা, যেন একটা থলি। একে বলে রেনুলা। রেনুলা মূলত মিউকাসপূর্ণ একটি সিস্ট, যা মুখের মেঝের মিউকাস গ্রন্থি থেকে উৎপত্তি লাভ করে।শনাক্তকরণ
স্বচ্ছ, নীল ফোলা হিসেবে মুখের মেঝেতে দেখা যায়। এটি সাধারণত জিহ্বার ফ্রেনুলারের এক পাশে হয়। আকৃতিতে গোলাকার ও গম্বুজ আকারের হয়ে থাকে। আকার ১ সেমি থেকে ৫ সেমি ব্যাসার্ধের হয়।
মসৃণ পৃষ্ঠ
মিউকাস পর্দাটি ফোলার ওপর দিয়ে নড়ে।
লক্ষণ ও উপসর্গ
জিহ্বার উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে খাবার গিলতে অসুবিধা হয়।
ফোলা স্থির নয় এবং মূলত ব্যথাহীন (যদি না এটি দ্বিতীয়বার সংক্রমিত হয়)
রেনুলা উপসর্গবিহীনও হতে পারে।
চিহ্নিতকরণের উপায়
ফোলার প্রান্ত বা কিনারা হাত দিয়ে অনুভব করে বোঝা কষ্টকর।
চাপ দিয়ে ধরলে ব্যথা অনুভব হয় না।
ফ্লাকচুয়েশন টেস্ট ইতিবাচক।
গলার লিম্ফ নোড বড় হয় না।
গলার রেনুলা
মুখের মধ্যে ফোলাসহ বা ফোলা ছাড়াই, ঘাড়ে ফোলা হিসেবে পাওয়া যেতে পারে, এটাকে প্লানজিং টাইপ বা ডাইভিং টাইপ রেনুলা বলে।
একটি রেনুলা অনেক সেমি ব্যাসের একটি বড় ক্ষতে পরিণত হয়, ফলে জিহ্বার উচ্চতা বৃদ্ধি পায়।
রোগনির্ণয়
ঘাড়ের আলট্রাসনোগ্রাফি বা ঘাড় ও মুখগহ্বরের এমআরআই করে রেনুলা শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসাপদ্ধতি
যদি রেনুলা আকারে ছোট হয়, তাহলে সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থি অপসারণ করে এর চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।
যদি রেনুলা আকারে বড় হয়, মার্সুপিয়ালাইজেশন ব্যবহার করা যেতে পারে। সেখানে অভ্যন্তরীণ মৌখিক ক্ষতটি খোলা হয়, যার উদ্দেশ্য হলো মুখগহ্বরের সঙ্গে সাবলিঙ্গুয়াল গ্রন্থির পুনরায় সংযোগ স্থাপন করা।
তবে অনেক ক্ষেত্রে রেনুলার পাতলা আবরণের কারণে রেনুলা অস্ত্রোপচার করে অপসারণ করা সম্ভব না–ও হতে পারে।
ঝুঁকি
বারবার সংক্রমণ।
আকারে বড় রেনুলা, খাবার গিলতে এবং কথা বলতে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
অধ্যাপক ডা.
এম আলমগীর চৌধুরী, ইএনটি, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: উৎপত ত
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি, বাড়ছে ডেঙ্গু-করোনাও
চট্টগ্রামে চার ধরনের জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। এর মধ্যে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। এই জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে উচ্চমাত্রার জ্বর, অস্থিসন্ধিতে তীব্র ব্যথা, কখনো ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা যাচ্ছে। অনেক সময় জ্বর সেরে গেলেও কয়েক সপ্তাহ বা মাসব্যাপী জয়েন্টের ব্যথা থেকে যাচ্ছে।
সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে নগরে চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, সাধারণ ভাইরাস জ্বর (ফ্লু) ও করোনাভাইরাসজনিত জ্বর—এই চারটি জ্বরের প্রকোপ রয়েছে। প্রায় প্রতিটি এলাকায় রয়েছে জ্বরের রোগী।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪০০ রোগী সেবা নেন। চিকিৎসকদের ভাষ্য, এর মধ্যে ৭০ শতাংশ রোগী চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক হামিদুল্লাহ মেহেদী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে চিকুনগুনিয়া সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। জ্বরের সঙ্গে জয়েন্টে ব্যথা, হাড় ফুলে যাওয়া, র্যাশ—এসব উপসর্গ থাকলে চিকুনগুনিয়ার আশঙ্কা বেশি।’
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বহির্বিভাগে প্রতিদিন অন্তত দুই হাজার জ্বরের রোগী আসছেন বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে তাঁদের বেশির ভাগই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছেন।
চমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিন।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।
চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ সম্পর্কে জানতে চাইলে সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা রীতা চন্দ বলেন, ‘দুই সপ্তাহ আগে জ্বর ও গায়ে ব্যথা হয়েছিল। পরে জয়েন্ট ফুলে যায়। বাসায় চিকিৎসা নিয়েছি। এখন জ্বর নেই, তবে ব্যথা পুরোপুরি যায়নি।’
চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে ব্যথানাশক ওষুধ বেশি খেলে ঝুঁকি তৈরি হয়। তাই জ্বর হলে নিজে নিজে ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান তাঁরা।আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা হাসপাতালে ১৮টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ভেন্টিলেটর সচল কেবল একটিতে১২ জুন ২০২৫চিকিৎসকদের ভাষ্য, চিকুনগুনিয়ার জ্বর সাধারণত চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যে কমে যায়। তবে জয়েন্টে ব্যথা দুই সপ্তাহ থেকে দুই মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। জ্বর সেরে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় অনেক সময় রোগ শনাক্ত হয়।
চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যাও বাড়ছে। জুন মাসে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু রোগী পাওয়া গেছে ১৭৬ জন, যা বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। চলতি বছর এখন পর্যন্ত জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪৪৫ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ২ জন।
চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু উভয়ই এডিস মশার কামড়ে ছড়ায়। তবে চিকুনগুনিয়ায় সাধারণত প্লাটিলেট কমে না। অধ্যাপক আবদুস সাত্তার বলেন, ‘২০১৭ সালেও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি ছিল, তখন ডেঙ্গুর প্রকোপ তুলনামূলক কম ছিল। এবারে সেই চিত্রটাই দেখা যাচ্ছে। তবে ডেঙ্গুর মৌসুম এখনো শেষ হয়নি।’
চিকুনগুনিয়া, ডেঙ্গু, ভাইরাস জ্বর ও করোনাভাইরাস—সব মিলিয়ে এখন চার ধরনের জ্বর দেখা যাচ্ছে। উপসর্গ দেখে ধারণা করছি, এবারে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেশি। তবে পিসিআর পরীক্ষার সুযোগ কম থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে আলাদা করে শনাক্ত করা কঠিনঅধ্যাপক আবদুস সাত্তার, বিভাগীয় প্রধান, চমেক হাসপাতালসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বর নিয়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কম হলেও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে তুলনামূলকভাবে বেশি। আগ্রাবাদ মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালে গতকাল ডেঙ্গুতে ভর্তি ছিলেন ১৩ জন রোগী।
এ ছাড়া চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস সংক্রমণও ধীরে ধীরে বাড়ছে। জুন মাসে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৩৪ জন, এর মধ্যে মারা গেছেন ৭ জন।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন জাহাঙ্গীর আলম বলেন, করোনার সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে আছে। ডেঙ্গুও তুলনামূলক কম। তবে বৃষ্টির কারণে যত্রতত্র পানি জমে থাকলে এডিস মশার প্রজনন বাড়বে। এতে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকিও বাড়বে।
আরও পড়ুনচট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা হবে দুই হাসপাতালে, চমেকে আলাদা ওয়ার্ড১১ জুন ২০২৫