প্রীতি জিনতার ব্যস্ত জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটে ক্যামেরার সামনে। যদিও এখন সিনেমার ব্যস্ততা খুব একটা নেই, তারপরও ছবি শিকারিদের ক্যামেরা তাঁর দিকে তাক করাই থাকে। ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে [আইপিএল] তাঁর দল পাঞ্জাব কিংস খেলছে, যে কারণে ফ্র্যাঞ্চাইজির অকশন থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্টেডিয়ামে ছুটতে হয় তাঁকে।

বলিউড বাসিন্দাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও না গেলেই নয়। এর বাইরেও ব্যক্তিগত প্রয়োজনে দেশ-বিদেশে ছুটতে হয়। কিন্তু যেখানে তিনি পা রাখেন, পাপ্পারাজিদের ভিড় এড়ানো কঠিন। আর এ বিষয়টাই মেনে নিতে পারেন না প্রীতি। সে কারণে তোলায় কিছু বিধিনিষেধ জারি করেছেন মিষ্টি মুখের এই অভিনেত্রী। একই সঙ্গে হুমকিও দিয়েছেন এই বলে যে, ‘কেউ যদি আমার বাচ্চাদের ছবি তুলতে আসে, তা হলে আমার ভেতরে লুকিয়ে থাকা কালীমূর্তি বেরিয়ে আসবে। আমার অনুমতি ছাড়া কেউ যদি এই কাজ করেন, তবে সেটা কখনোই মেনে নেব না। খুবই বিরক্তিকর একটা ব্যাপার। আমি চাইব বাচ্চাদের যেন এসব থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়।’

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার ও এই সময় অনলাইন থেকে জানা গেছে সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া প্রীতির সাক্ষাৎকারে ছবি তোলার বিষয়ে তাঁর এই বিধিনিষেধের কথা উল্লেখ করেছেন। অভিনেত্রী আরও বলেছেন, ‘কিছু বিষয় মন থেকে সায় দেয় না বলে কখনও করতে চান না। যেমন মন্দিরে গিয়ে ছবি তোলা। এই বিষয়টা খুবই অপছন্দ করি। তা ছাড়া, ভোরবেলা বিমানবন্দরে বা শৌচালয়ে ছবি তুলতেও আমি ভালোবাসি না। এই জায়গাগুলো বাদ দিয়ে আমাকে ছবি তুলতে বলতে ভালো হয়। আর আমার বাচ্চাদের তুলতে বা ভিডিও করতে চাইলে, কতটা কঠোর হতে পারি, তা বলেই দিয়েছি।’ প্রীতি আরও জানিয়েছেন, ছবি শিকারিদের তিনি নিরাশ করবেন না, যদি তারা ছবি তোলার বিষয়ে তার ভালো লাগা, মন্দ লাগাকে গুরুত্ব দেন। কারণ তিনি জানেন, তারকাদের নিয়ে সাধারণ মানুষের সবসময়ই বাড়তি কৌতূহল কাজ করে। যে কারণে ছবি শিকারিরা সুযোগ পেলেই তারকাদের অনুসরণ করেন তাদের বিভিন্ন মুহূর্তকে ক্যামেরাবন্দি করার জন্য। 

এদিকে প্রীতি ব্যস্ত সময় পার করছেন আইপিএলের ১৮তম আসরের খেলা নিয়ে। তাঁর দল ‘পাঞ্জাব কিংস’-এর খেলোয়াড়দের উজ্জীবিত করতে নিয়মিত ছুটে যাচ্ছে ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। এবারের আসরে তাঁর দল ১১টি খেলায় ৭টি জয় এবং একটি পরিত্যক্ত ম্যাচের জন্য বাড়তি ১ পয়েন্টসহ মোট ১৫ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। মাঝে কয়েক দিন পাক-ভারত যুদ্ধের কারণে বন্ধ ছিল আইপিএল, যা আজ থেকে পুনরায় শুরু হতে যাচ্ছে। যার সুবাদে ছোট্ট একটা বিরতির পর আবার ক্রিকেট মাঠে ছুটতে হচ্ছে এই অভিনেত্রীকে।  
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ত জ নত অভ ন ত র

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমরা ভুগছি আর রাজনীতিবিদেরা ধনী হচ্ছেন, তাই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সরকার ফেলে দিয়েছি’

নেপালে মাত্র ৪৮ ঘণ্টার কম সময়ের মধ্যে জেন–জিদের বিক্ষোভে সরকারের পতন ঘটেছে। তবে এ জয় এসেছে চড়া মূল্যে।

বিক্ষোভের সংগঠকদের একজন তনুজা পান্ডে। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত হলেও এর সঙ্গে মানসিক আঘাত, অনুশোচনা ও ক্ষোভের মিশ্র বোঝাও যোগ হয়েছে।’

হিমালয়ের দেশ নেপালে গত সপ্তাহের বিক্ষোভে ৭২ জন নিহত হয়েছেন। এটিকে গত কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী অস্থিরতা হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

বিক্ষোভে সরকারি ভবন, রাজনৈতিক নেতাদের বাসভবন ও গত বছরের জুলাইয়ে চালু হওয়া হিলটনের মতো বিলাসবহুল হোটেলে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।

একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী এখনো জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংকটবিষয়ক গবেষণা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আশীষ প্রধান বলেন, ‘এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।’

তবে আশীষ আরও উল্লেখ করেন, বিক্ষোভের কারণে সরকারি সেবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২০১৫ সালের ভূমিকম্পের সমান্তরাল হতে পারে। ভূমিকম্পে প্রায় ৯ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটে।

শুধু রাজধানী কাঠমান্ডুতে এ ধ্বংসযজ্ঞ সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিক্ষোভে সারা দেশে কমপক্ষে ৩০০টি স্থানীয় সরকারি অফিস ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

এই বিক্ষোভ দশকের পর দশক ধরে নেপালের শাসনব্যবস্থার দুর্বলতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের অপচয়ের বিরুদ্ধে বর্তমান রাজনৈতিক শ্রেণির প্রতি সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যানের ইঙ্গিত বহন করে।আশীষ প্রধান, জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা, ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ

কাঠমান্ডু পোস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিক্ষোভের কারণে প্রায় তিন লাখ কোটি নেপালি রুপির (২ হাজার ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, যা দেশটির মোট জিডিপির প্রায় অর্ধেক। এ সময় নেপালের বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়।

৮ সেপ্টেম্বরের ভয়াবহ বিক্ষোভ শুরুর দুই দিন আগে ২৪ বছর বয়সী পরিবেশকর্মী তনুজা পান্ডে একটি ভিডিও আপলোড করেন। ভিডিওতে তিনি অঞ্চলটির অন্যতম সংবেদনশীল পর্বতশ্রেণি চুরেতে একটি খনি দেখান। তিনি লিখেছিলেন, ‘নেপালের সম্পদের মালিকানা শুধু জনগণের। রাজনীতিবিদদের প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির নয়।’ এ সময় সমবয়সীদের প্রতি ‘দুর্নীতি ও জাতীয় সম্পদের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে’ বিক্ষোভের আহ্বান জানান তিনি।

এশিয়ায় তরুণদের অন্যান্য আন্দোলনের মতো নেপালের জেন–জিদের বিক্ষোভও ছিল নেতৃত্বহীন। দীর্ঘদিন ধরে ‘নেপো বেবিজ’দের (ক্ষমতাবান রাজনীতিবিদদের সন্তানদের) বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভ জমা হচ্ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অবৈধ সম্পদের আড়ম্বরপূর্ণ প্রদর্শনীর অভিযোগ আনা হয়।

সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোর মধ্যে একটিতে প্রাদেশিক মন্ত্রীর ছেলে সৌগত থাপাকে দেখা গেছে। ছবিতে তাঁকে লুই ভুতোঁ, গুচি, কার্টিয়ারসহ বিলাসবহুল ব্র্যান্ডের বাক্স দিয়ে তৈরি একটি ক্রিসমাস ট্রির পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এর জবাবে সৌগত দাবি করেন, ছবিটি নিয়ে ‘ভুল ব্যাখ্যা’ দেওয়া হচ্ছে। তাঁর বাবা ‘জনসেবা থেকে উপার্জিত প্রতিটি রুপি’ জনগণের কাছে ফেরত দিয়েছেন।

তনুজা পান্ডে বলেন, এটা দুঃখজনক যে শিক্ষিত তরুণেরাও দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন। কারণ, এখানে যে বেতন দেওয়া হয়, তা মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয় অর্থের তুলনায় অনেক কম।

নেপালের গণতন্ত্র খুব একটা পুরোনো নয়। মাওবাদীদের নেতৃত্বে এক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০০৮ সালে নেপাল একটি প্রজাতন্ত্রে পরিণত হয়। সেই সময় ১৭ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। কিন্তু এরপরেও প্রতিশ্রুত স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি আসেনি। ১৭ বছরে নেপালে ১৪টি সরকার গঠিত হয়েছে এবং কোনো নেতাই পূর্ণ পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষ করতে পারেননি।

নেপালের কাঠমান্ডুতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ ও কারফিউ চলাকালে পার্লামেন্ট ভবনের বাইরে মুঠোফোনে ছবি তুলছেন আন্দোলনকারীরা। ৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, নেপাল

সম্পর্কিত নিবন্ধ