Risingbd:
2025-11-04@01:12:25 GMT

কেমন অধিনায়ক হবেন মিরাজ?

Published: 2nd, July 2025 GMT

কেমন অধিনায়ক হবেন মিরাজ?

এমন না যে আগে অধিনায়কত্ব করেননি তিনি। ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ফলাফল পক্ষে আসেনি। তাতে তার উপর দায় পড়েনি। তবে সামনে পড়বে। কেননা তাকে পাকাপাকিভাবেই দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়কত্বের দায়িত্ব।

মেহেদী হাসান মিরাজ যুগ শুরু হচ্ছে আজ থেকে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে প্রেমাদাসায় অধিনায়ক মিরাজের অভিষেক হতে যাচ্ছে। নাজমুল হোসেন শান্তকে সরিয়ে মিরাজকে অধিনায়ক হিসেবে বেছে নিয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল এন্ড কোং। যা নিয়ে দেশের ক্রিকেটে ঝড় বয়েছে। ‘অপমানে’ টেস্ট অধিনায়কত্বও ছেড়েছেন শান্ত। বিসিবির উপর তার রাগ, ক্ষোভ, জেদ যেটাই থাকুক না কেন…মিরাজকে নিয়ে বেশ উদার তিনি।

‘‘আমরা অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে একসাথে। অনূর্ধ্ব-১৫ দল থেকে মিরাজ কিন্তু আমার অধিনায়ক। আমি এখনো, এটা বিশ্বাস করি ও-ই আমার অধিনায়ক। এটা ও জানে। ওর কাছে কখনোই মনে হয়নি যে আমি অধিনায়ক। আবার এখন আমি অধিনায়ক, ও নিজেও হয়তো মনে করে না যে আমি অধিনায়ক।

থাকে না… একটু জেলাসি তো থাকেই। কিন্তু ওই জিনিসটা আমাদের মধ্যে একদমই নেই। আমাদের এতোটাই ভালো বোঝাপড়া ওই সময় থেকে। এখনও আমরা একসঙ্গেই খেলছি।’’ – বিসিবির পডকাস্টে বলেছিলেন শান্ত।

শান্তর অনুপস্থিতিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একটি ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ওয়ানডেতে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন মিরাজ। কিন্তু চারটিতেই তার অধীনে দল হেরেছে। সামনে বাংলাদেশ কেমন করে সেটা দেখার। তবে তার উপর বিসিবির অগাধ বিশ্বাস।

‘‘ব্যাট ও বল হাতে মিরাজের ধারাবাহিক পারফরম্যান্স, তার লড়াই ও দলকে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা, মাঠ ও মাঠের বাইরে প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর উপস্থিতি— তাকে এই পালাবদলের সময়ে ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য উপযুক্ত মনে করেছে বোর্ড। আমাদের বিশ্বাস, তার ওই টেম্পারামেন্ট ও ম্যাচিউরিটি আছে বাংলাদেশকে এই সংস্করণে এগিয়ে নেওয়ার জন্য।’’ – বলেছিলেন বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন।

১০৫টি ওয়ানডেতে ১৬১৭ রান এবং ১১০টি উইকেট নিয়ে মিরাজ বর্তমানে আইসিসি ওডিআই র‍্যাংকিংয়ে অলরাউন্ডারদের মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছেন, যা যেকোনো বাংলাদেশি খেলোয়াড়ের মধ্যে সর্বোচ্চ। ওয়ানডেতে ১০০০ রান ও ১০০ উইকেটের যে এলিট ক্লাব, তাতে মোহাম্মদ রফিক, মাশরাফি বিন মর্তুজা ও সাকিব আল হাসানের সঙ্গে আছেন তিনি।

মিরাজের থেকে প্রত্যাশা আকাশচুম্বি। একই সঙ্গে তাকে পরীক্ষাও দিতে হবে বেশি। ওয়ানডে ক্রিকেটে পালাবদলের সময় চলছে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের ‘বিগ ফাইভ’ তারা কেউই এখন নেই। স্কোয়াডে যারা আছেন তারা অভিজ্ঞ। কিন্তু পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতায় বড্ড অভাব। সতীর্থদের থেকে সেরা ক্রিকেট বের করে আনা, নিজে পারফর্ম করা, মাঠ পরিচালনা করা…সব মিলিয়ে একজন নেতা হয়ে উঠার কাজটা করতে হবে মিরাজকে।

মিরাজ কাজটা বেশ ভালোভাবেই পারবেন বলে বিশ্বাস করেন তার বয়সভিত্তিক দলের কোচ মিজানুর রহমান বাবুল। একই সঙ্গে মিরাজের অধিনায়কত্বের দর্শন নিয়েও কথা বলেছেন তিনি, ‘‘আমার মনে হয় মিরাজ আক্রমণাত্মক অধিনায়কত্বই করবেন। প্রতিপক্ষকে তাদের শক্তির জায়গাতে আক্রমণ করে সেরা সাফল‌্য পাওয়ার তৃপ্তি থাকে। বয়সভিত্তিক দল থেকেই দেখেছি তার মধ‌্যে লড়াইয়ের তীব্র আকাঙ্খা। সময়ের সঙ্গে যেটা আরও বেড়েছে।’’

‘‘ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ভালো দল। হয়তো সাম্প্রতিক সময়ে ফলাফল নিজেদের পক্ষে আসেনি। আমি মনে করি মিরাজের হাত ধরে নতুন একটি শুরু হতে যাচ্ছে। শুভ কামনা তো থাকবেই। মিরাজ নিজের নেতৃত্বগুন, পারফরম‌্যান্স এবং বাকি সবার একাগ্রতায় দলটা আবার ছন্দে ফিরে আসবে। অধিনায়ক হিসেবে মিরাজ ভালো করবে বলেই বিশ্বাস করি। নেতৃত্বগুনে সে অনন‌্য। দলটাকে গুছিয়ে রাখতে পারে। এগুলো প্লাস পয়েন্ট। আশা করছি দলটাও ভালো করবে। মিরাজও এগিয়ে যাবে।’’

ঢাকা/ইয়াসিন  

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা

লরা উলভার্ট- দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট দলের অধিনায়ক। বয়স মাত্র ছাব্বিশ, কিন্তু মনের দৃঢ়তায় যেন পাহাড়। এবারের ২০২৫ নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপে তিনি ছিলেন প্রোটিয়া আশার একমাত্র আলোকবর্তিকা। নিজের একক নৈপুণ্যে, এক অসম্ভব সাহসিকতায় দলকে টেনে তুলেছিলেন ফাইনালের মঞ্চে।

সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে খেলে ফেলেছিলেন ১৬৯ রানের অনবদ্য ইনিংস। যেন একক নাটকের একমাত্র নায়িকা তিনি। আর ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন হিমালয়ের মতো দৃঢ় হয়ে। একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন অনবদ্যভাবে। শতরান ছুঁয়ে যখন আকাশে ছুড়লেন ব্যাট, তখন মনে হচ্ছিল, স্বপ্নের ট্রফি যেন হাতের নাগালেই। কিন্তু ক্রিকেটের নির্মম বাস্তবতা! উলভার্ট যখন সাজঘরে ফিরলেন, ঠিক তখনই প্রোটিয়া শিবিরে নেমে এল নীরবতা। জয় হাতছাড়া হলো নিঃশ্বাস দূরত্বে।

আরো পড়ুন:

আরব আমিরাতকে ৪৯ রানে গুঁড়িয়ে ইতিহাস গড়ল যুক্তরাষ্ট্র

মিতালিকে ছাড়িয়ে ইতিহাস গড়লেন মান্ধানা

চোখের কোণে জলের কণা তখনও ঝলমল করছিল। সেটা ঘামের ছিল, নাকি অপূর্ণতার অশ্রু, তা কেউ জানে না। কিন্তু বোঝা যাচ্ছিল, হৃদয়ের গভীরে আগুন জ্বলছে। একটা স্বপ্নের দগ্ধ ছাই হয়ে যাওয়ার যন্ত্রণা।

তবুও এই ব্যর্থতার মাঝেই উলভার্টের জয় আছে। বিশ্বকাপে তিন ফাইনাল, টানা তিনবার! এবং প্রতিবারই দলের একমাত্র ভরসা ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে করেছেন ৯ ম্যাচে ৫৭১ রান, গড়ে ৭১.৩৭। যা নারীদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসে এক আসরে সর্বোচ্চ। এর আগে অ্যালিসা হিলির ৫০৯ রান ছিল শীর্ষে।

শুরুটা ছিল নিস্তরঙ্গ- প্রথম ম্যাচে মাত্র ৫, পরেরটিতে ১৪। কিন্তু ধীরে ধীরে আগুন জ্বলে উঠল তার ব্যাটে। ভারতের বিপক্ষে ৭০, শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অপরাজিত ৬০, পাকিস্তানের বিপক্ষে ৯০, আর সেমিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৬৯। প্রতিটি ইনিংস যেন নিজের সীমাকে ছাপিয়ে যাওয়া একেকটি যাত্রা।

তবে উলভার্টের কীর্তি শুধু এই বিশ্বকাপেই নয়। ২০২৩ ও ২০২৪ দুই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। প্রতিবারই দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য যেন নিষ্ঠুরভাবে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তার দিক থেকে। তিনটি ফাইনাল, তিনটি পরাজয়।

তবু লরার গল্পটা হারের নয়- এ এক অনমনীয়তার গল্প, এক নিঃসঙ্গ অভিযাত্রার গল্প। যেমন শেরপা অক্সিজেনহীন উচ্চতায় পৌঁছে দেয় অন্যদের। কিন্তু নিজে ফিরে আসে নীরবে, তেমনি উলভার্টও দলের স্বপ্নগুলো কাঁধে তুলে বয়ে নিয়েছেন, একা।

ফাইনাল শেষে ভারতীয় খেলোয়াড়রাও যখন এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন, তখন বোঝা গেল; এই হার, এই অশ্রু, এই নীরবতা- সবই সম্মানের প্রতীক।

রবিবার ফাইনাল শেষে লরা বলেছেন অনেক কথা। সেখানে হাতাশার কিছু পাওয়া যায়নি। পাওয়া গেছে প্রেরণা ও সামনে এগিয়ে যাওয়ার সাহস।

“আমি মনে করি, ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের (নিউল্যান্ডসে অনুষ্ঠিত) পর থেকেই আমাদের জন্য অনেক পরিবর্তনের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় থেকেই ঘরোয়া পর্যায়ে কেন্দ্রীয় চুক্তির ব্যবস্থা চালু হয়। আমাদের দলের গভীরতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা ছিল এক বিশাল পদক্ষেপ।”

“এরপরের (২০২৪ সালের) বিশ্বকাপটা আমাদের দলের নামটা বিশ্ব ক্রিকেটে আরও বড় করে তুলেছে, আমার তাই মনে হয়। এখন আমরা এমন একটি দল, যারা নিয়মিত ফাইনালে পৌঁছাচ্ছে। যেখানে আগে এটা একবারের সাফল্য বলেই ধরা হতো।”

“টানা তিনবার ফাইনালে উঠতে পারাটা সত্যিই গর্বের বিষয়। এটা প্রমাণ করে আমরা ঘরোয়া ক্রিকেটে এবং দলীয় কাঠামোয় সঠিক দিকেই এগোচ্ছি। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের এই ফলেই আমরা এখানে পৌঁছেছি। আশা করি, আমরা এমন আরও ফাইনাল খেলতে থাকব… আর একদিন, হ্যাঁ, একদিন আমরা অবশ্যই একটা জিতব।”

টুর্নামেন্টের পারফরম্যান্স নিয়ে উলভার্ট বলেন, “আমার মনে হয়, আমাদের এই আসরটা অসাধারণ কেটেছে। ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছানোই একটা বড় সাফল্য। আমরা পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে দারুণ ক্রিকেট খেলেছি। এই বিষয়টা নিয়েই আমি সবচেয়ে বেশি গর্বিত।”

“একপর্যায়ে আমরা টানা পাঁচটা ম্যাচ জিতেছিলাম। যা আমাদের দলের জন্য অনেক বড় প্রাপ্তি। দুই দলের মধ্যকার সিরিজগুলোতে আমরা সবসময় এই ধারাবাহিকতা পাই না। তাই বড় মঞ্চে, বড় টুর্নামেন্টে এমন পারফরম্যান্স দিতে পারাটা সত্যিই গর্বের। আমরা প্রমাণ করেছি, বড় আসরে দক্ষিণ আফ্রিকাও এখন বড় দল।” 

সত্যিই তাই। লরার নেতৃত্বে দক্ষিণ আফ্রিকা এখন বড় দল। হয়তো একদিন, কোনো এক প্রভাতে, লরা উলভার্ট সেই অধরা ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখবেন। কিন্তু আজকের দিনে, তিনি রয়েছেন বিশ্বকাপের হিমালয়ের চূড়ায়, এক নিঃসঙ্গ শেরপা হয়ে। যিনি নিজের কীর্তিতে চূড়ায় উঠেছেন।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • অ্যালবামের গল্প বলবে ‘পেনোয়া’