দেশে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩ জনের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত দাঁড়াল ২০ লাখ ৫২ হাজার ৯৩ জন। তবে গেল ২৪ ঘণ্টায় কারও মৃত্যু হয়নি। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করে ১৩ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া যায়। চলতি বছর মোট নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮ হাজার ৪৪ জনের। এতে ৫৮৪ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়। আর এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার ৭৩০ জনের।
চলতি বছর করোনায় মোট ২২ জন মারা গেছেন। দেশে শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫২১ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪ দশমিক ২২ শতাংশ। এ পর্যন্ত শনাক্তের হার ১৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। সুস্থতার হার ৯৮ দশমিক ৪১ শতাংশ।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় এ তথ্য জানায়। যদিও এ তথ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়নি।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় জানিয়েছে, চট্টগ্রামে জুন মাসের শুরু থেকে এ নিয়ে ১৬০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। সর্বশেষ শুক্রবার নগরের জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান এক নারী।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
এখন গান আছে কিন্তু তাতে দরদ নেই: সাবিনা ইয়াসমিন
দিনটি ছিল সোমবার। আষাঢ়ের আকাশে গাঢ় মেঘের ছায়া, বৃষ্টির টুপটাপ শব্দে ভিজে যাচ্ছিল শহরের অলিগলি। বাতাসে ছিল স্নিগ্ধ শীতলতা, আর ঠিক সেই মুহূর্তেই সুরের মন্দিরে প্রবেশ করলেন বাংলা গানের চিরন্তন পাখি– সাবিনা ইয়াসমিন। যাঁর কণ্ঠে ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘ও আমার বাংলা মা তোর’, ‘ও মাঝি নাও ছাইড়া দে’ কিংবা ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’ গানগুলি বাঙালির রক্ত এখনও তোলপাড় তুলে দেয়। গায়কিতে এখনও অনন্য তিনি। বয়স ৭০। যা তাঁর কণ্ঠের কাছে সংখ্যা মাত্র। রোগ-শোক, দীর্ঘ পথচলা, জীবনের ওঠানামা– সব পেরিয়ে তিনি এখনও যখন গান ধরেন, তখন সময় যেন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। তাঁর কণ্ঠে সুরের এমন এক জাদু রয়েছে, যা সময়কে বশ করে নেয়, হৃদয়কে অচেনা শিহরণে ভরিয়ে দেয়।
মগবাজারের দিলু রোডের রেকর্ডিং স্টুডিওতে যখন তিনি উপস্থিত হলেন, চারপাশে যেন অন্য এক আবেশ ছড়িয়ে পড়ল। পরিচিত সেই কোকিলকণ্ঠ যখন বেজে উঠল, মনে হচ্ছিল না যে তিনি সত্তর পেরিয়েছেন। বরং মনে হলো, কোনো এক তরুণী গান ধরেছে, যার কণ্ঠে মায়া, মমতা আর গভীর প্রেম। গাইছিলেন ‘প্রাণের বাংলাদেশ’। গানটি লিখেছেন আরিফ হোসেন বাবু, সুর করেছেন রোহান রাজ। সাবিনা ইয়াসমিন যেন গানে গানে বাংলাদেশের আত্মাকে ছুঁয়ে যাচ্ছিলেন। এক অন্তরা শেষ করেই থেমে বললেন, ‘এই লাইনটা মনমতো হয়নি, আবার দেই।’ সেই একাগ্রতা, সেই নিষ্ঠা– এ যেন শিল্পের প্রতি তাঁর প্রেমের প্রকাশ। একটানা গাইছিলেন, আবার থেমে যাচ্ছিলেন। সংশোধন করছিলেন, আবার গাইছিলেন দরদ দিয়ে। তাঁর সেই মুহূর্তগুলো দেখে মনে হচ্ছিল, শিল্পী নিজেই যেন নিজের সবচেয়ে বড় সমালোচক।
তিনি যখন গাইছিলেন, তখন চারপাশটা নিঃশব্দ, রেকর্ডিং স্টুডিওর প্রতিটি দেয়াল যেন তাঁর কণ্ঠে মুগ্ধ হয়ে স্থবির হয়েছিল। তাঁর কণ্ঠে ফুটে উঠল বাংলাদেশের নদী, মাঠ, প্রান্তর, মানুষের দুঃখ-সুখ, প্রেম-বিরহ। ছেলেবেলায় যেমন রুপালি পর্দার নায়িকারা কল্পনায় হেঁটে বেড়াতেন, তেমনই আমাদের কল্পনার পর্দায় হেঁটে বেড়ালেন সাবিনা ইয়াসমিনের সুরেলা কণ্ঠ। কথায় বিনয়, চোখে ক্লান্তির ছায়া। কিন্তু কণ্ঠে ছিল সজীবতা। মনে হচ্ছিল, আমাদের খুব চেনা একজন মানুষ, যার সুরে আছে হাজারো অচেনা অনুভূতির গুঞ্জন।
গানে দরদ নেই, আবেগও নেই
টানা ৩০ মিনিটে রেকর্ডিং শেষ করলেন সাবিনা ইয়াসমিন। এসে বসলেন পাশে। তিন হাত দূর থেকে কালজয়ী গানের এই শিল্পীকে দেখার অভিজ্ঞতা ছিল অসাধারণ। এসেই বললেন সবাই ভালো আছো তো? এরপর ধীরে ধীরে খুললেন গল্পের ঝাঁপি। প্রথমেই জানতে চাওয়া হলো এত দরদ দিয়ে গানটায় কণ্ঠ দিলেন কিন্তু এখনকার গানে এমন দরদ পাই না কেন আমরা? প্রশ্ন করতেই চাতক পাখির মতো তাকালেন। একটু ভেবে বলতে লাগলেন, লাস্ট একটি ছবির গানের সুর করেছিলাম। সেই সিনেমায় এই সময়ের একজন কণ্ঠশিল্পীকে আমি গানটি গাওয়ার ব্যাপারে এক্সপ্রেশনও বুঝিয়ে দিয়েছিলাম। সে সিনেমার পরিচালক যিনি, তিনিও শিল্পীকে বলে বলে দরদ ও এক্সপ্রেশনটা পুরোপুরি আনার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু বিষয়টি এমন কেন হবে। শিল্পীরা কেন এটা নিয়ে পরিশ্রম করছেন না। তারা কেন নিজ থেকে রেওয়াজ বা অনুশীলন করছেন না। সাদামাটা গেয়ে গেলে তো আর ফিল্মের গানের কিছু হলো না। এখন সেটাই হচ্ছে। সাদামাটাভাবেই যেন সবাই গাইছেন। ফলে এখনকার গানে দরদটা নেই, এক্সপ্রেশন নেই, আবেগও নেই, কোনো কিছুই যেন নেই। বোঝা গেল, সময়টায় মেধাবী শিল্পী থাকলেও সেই মেধা বিকাশের চেষ্টা না থাকায় কিছুটা হলেও মর্মাহত এই গায়িকা।
কেন গানে দরদ নেই সে বিষয়ে তিনি নিজেই ব্যাখ্যা দাঁড় করালেন– গান যদি এক লাইন এক লাইন করে গাওয়া হয়, একটা একটা শব্দ করে যদি রেকর্ডিং করা হয় তাহলে গানে দরদ কীভাবে আসবে। এখন ডুয়েট গানেও শুনি একজন আরেকজনকে দেখেন না। অথচ আমরা যখন ডুয়েট করেছি তখন একসঙ্গে ভয়েস দিতাম। প্রতিযোগিতা চলত কে কার চেয়ে ভালো গাইতে পারে। একটা উদাহরণ দেই, সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা– এই গানটা আব্দুল আলীম ভাইয়ের সঙ্গে গাইতে গিয়ে তো আমি ভয়ে শেষ। পরে আলীম ভাই সাহস দিলেন। বেশ কয়েকবার আমাকে অভয় দিলেন। পরে গাইলাম। বলতে গেলে বিখ্যাত মানুষের সামনেও আমার পার্ট তার চেয়ে কীভাবে ভালো হয় সে প্রতিযোগিতা ছিল। একইরকম ঘটনা ঘটেছিল কিশোর কুমারের সঙ্গে গাওয়ার সময়। অথচ এখন সেটা অনুপস্থিত।
স্মৃতির ঝাঁপি ...
সাবিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে কথা হবে আর সেখানে এন্ড্রু কিশোর থাকবেন না, তা হয় না। এই নামটি নিতেই কিছুক্ষণ চুপ হয়ে গেলেন তিনি। প্রশ্ন করা হলো, যদি কখনও এন্ড্রু কিশোরের সঙ্গে দেখা হয় কী বলবেন? সাবলীল উত্তর, কিছুই বলতাম না। হাত ধরে বাসায় নিয়ে আসতাম। এই কথাতেই তাদের সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধি করা যায়। বোঝা যায়, কতটা মিস করেন প্রয়াত এই গায়ককে। কথায় কথায় আলাউদ্দীন আলী ও আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকেও স্মরণ করলেন তিনি। ছোট ছোট স্মৃতি বলতেই দেখা গেল চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে তাঁর। বলতে শুরু করলেন এখন বুলবুল ও আলাউদ্দীন আলীর মতো মিউজিক ডিরেক্টর কোথায়? আতা ভাই, আলতাফ মাহমুদ, খন্দকার নুরুল আলম, আনোয়ার পারভেজ, সত্যদা, সুবল দা, আলম ভাই, দেবুদা, রবিন ঘোষদের মতো এখন কে আছেন? কী সব মায়া জাগানো সুর ও সংগীত করেছেন তারা। সবারই খুব ডিফারেন্ট টাইপের সুর। একেকজনের স্টাইল একেক রকম। আমরা প্রতিটি গানের পেছনে অনেক পরিশ্রম ও রেওয়াজ করতাম। এখন তো রেওয়াজ কী– সেটাও ভুলে গেছে। এরপর আর কথা বাড়ালেন না শিল্পী। উঠে দাঁড়ালেন। বললেন অনেক বেলা হয়ে গেছে। এবার বাসায় ফিরি।