রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এর পাশেই অবস্থিত নৌ পুলিশের একটি ফাঁড়ি। আর সেই ফাঁড়ির মাত্র ২০ গজ দূরেই প্রতিদিন সকালে মাছের জমজমাট বাজার বসে। পদ্মা নদীর তরতাজা মাছের সেই বাজারে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ। খবরটি শুধু হতাশাজনক নয়, রীতিমতো উদ্বেগজনক।
আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এই মাছ শিকার, বিক্রি ও পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ বাস্তবতা হলো দৌলতদিয়া ঘাটে এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিদিন অবাধে এই মাছ ধরা ও বিক্রি হচ্ছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ বিষয়ে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।
একদিকে জেলে বলছেন, মাছ যদি জালে পড়ে তাঁরা কী করবেন, তাই বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘জেলেরা ধরে আনছেন, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে, তাই আমরাও কিনে নিচ্ছি।’ এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অবৈধভাবে বাগাড় ধরা ও বেচাবিক্রির বিষয়টি কতটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিনে ডজন ডজন বাগাড় বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরাই স্বীকার করছেন।
নৌ পুলিশের ইনচার্জ বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওভাবে ভাবা হয়নি। তবে এখন থেকে গুরুত্বসহকারে খোঁজখবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর এ বক্তব্য আমাদের আরও বেশি হতাশ করে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.
গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমানও দায়মুক্তির পথে হেঁটেছেন। তিনি বন্য প্রাণী ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রসিকিউশনের কথা বলছেন এবং অভিযানের আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা এবং একে অপরের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের পথ খুলে দিচ্ছে।
বাগাড়ের মতো মহাবিপন্ন প্রজাতি যখন প্রকাশ্যে এভাবে বিক্রি হয়, তখন বোঝা যায়, আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা আইনগুলো কতটা ঠুনকো। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর হবে এবং দায় এড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বন য প র ণ স রক ষ বলছ ন মৎস য
এছাড়াও পড়ুন:
সনদে সই করব কি না অনুষ্ঠানে গেলে দেখতে পারবেন: তাহের
জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী শুক্রবার জুলাই জাতীয় সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তাঁরা দাওয়াত পেয়েছেন এবং আশা করছেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হবেন। সনদে সই করবেন কি না, সেটা অনুষ্ঠানের দিন সবাই দেখতে পারবেন।
আজ বুধবার রাতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের অতি জরুরি বৈঠক শেষে বের হয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
সনদে স্বাক্ষর করবেন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘১৭ তারিখে (শুক্রবার) আমরা আশা করি, যাব। মাত্র এক দিন বাকি আছে, ওই দিন গেলেই ইনশা আল্লাহ দেখে ফেলবেন।’ কোনো অনিশ্চয়তা আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সে রকম অনিশ্চয়তা আমরা দেখি না।’
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, গণভোট আগে হতে হবে। তারা নভেম্বর মাসে গণভোটের প্রস্তাব করেছে। নভেম্বরে গণভোট হলে ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন, এটা তারা চায়।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জাতীয় নির্বাচনের দিন গণভোট হলে তাতে ভোট পড়ার হার কম হবে। কারণ, রাজনৈতিক দলের কর্মী–সমর্থকরা তাঁদের পছন্দের মার্কায় ভোট দিতে বেশি আগ্রহী থাকবেন। তখন গণভোটের গুরুত্বই থাকবে না। সে জন্য তাঁরা গণভোট নভেম্বরে করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছেন।
আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ঐকমত্য কমিশনকে তাঁরা বলেছেন, যেসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে এবং কমিশন সিদ্ধান্ত দিয়েছে, সেগুলো একটি প্যাকেজ করে একটি প্যাকেজেই গণভোট হতে হবে।
গণভোটের জন্য রাজি হওয়ায় বিএনপিকে ধন্যবাদ জানান জামায়াতে ইসলামীর ওই নেতা। তবে গণভোটের সময় নিয়ে ভিন্নতা থেকে গেছে উল্লেখ করে তাহের বলেন, গণভোট হবে সংস্কার কমিশনের জন্য। জাতীয় নির্বাচন আলাদা বিষয়। গণভোটের এমন কিছু বিষয় আছে, যেগুলো নির্বাচনী আচরণে কিছু পরিবর্তন আনবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, উচ্চকক্ষ এবং ‘পিআর সিস্টেম বাই ভোটার নট বাই দি এমপিস’ এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন। সুতরাং নির্বাচনের আগেই এই সিদ্ধান্ত জনগণের কাছে পৌঁছাতে হবে এবং সেই অনুযায়ী উচ্চকক্ষের ভোট হবে। যদি এটা নির্বাচনের দিনই হয়, তাহলে উচ্চকক্ষ তো পাস হলো না। তাহলে কি আবার একটা নির্বাচন হবে?