Prothomalo:
2025-07-02@13:13:37 GMT

আইন প্রয়োগে অবহেলা দুঃখজনক

Published: 2nd, July 2025 GMT

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এর পাশেই অবস্থিত নৌ পুলিশের একটি ফাঁড়ি। আর সেই ফাঁড়ির মাত্র ২০ গজ দূরেই প্রতিদিন সকালে মাছের জমজমাট বাজার বসে। পদ্মা নদীর তরতাজা মাছের সেই বাজারে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ। খবরটি শুধু হতাশাজনক নয়, রীতিমতো উদ্বেগজনক।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এই মাছ শিকার, বিক্রি ও পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ বাস্তবতা হলো দৌলতদিয়া ঘাটে এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিদিন অবাধে এই মাছ ধরা ও বিক্রি হচ্ছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ বিষয়ে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।

একদিকে জেলে বলছেন, মাছ যদি জালে পড়ে তাঁরা কী করবেন, তাই বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘জেলেরা ধরে আনছেন, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে, তাই আমরাও কিনে নিচ্ছি।’ এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অবৈধভাবে বাগাড় ধরা ও বেচাবিক্রির বিষয়টি কতটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিনে ডজন ডজন বাগাড় বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরাই স্বীকার করছেন।

নৌ পুলিশের ইনচার্জ বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওভাবে ভাবা হয়নি। তবে এখন থেকে গুরুত্বসহকারে খোঁজখবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর এ বক্তব্য আমাদের আরও বেশি হতাশ করে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো.

নাজমুল হুদা মৎস্য আইনে বাগাড় নিষিদ্ধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকার কথা বলছেন, তবে স্বীকার করছেন যে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে এটি নিষিদ্ধ। তাঁর এ বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর। যদি মৎস্য আইনে সরাসরি না-ও থাকে, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে তো আছে! আর মৎস্য বিভাগ যদি জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের কাজের উদ্দেশ্য কী?

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমানও দায়মুক্তির পথে হেঁটেছেন। তিনি বন্য প্রাণী ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রসিকিউশনের কথা বলছেন এবং অভিযানের আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা এবং একে অপরের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের পথ খুলে দিচ্ছে।

বাগাড়ের মতো মহাবিপন্ন প্রজাতি যখন প্রকাশ্যে এভাবে বিক্রি হয়, তখন বোঝা যায়, আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা আইনগুলো কতটা ঠুনকো। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর হবে এবং দায় এড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ স রক ষ বলছ ন মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

আইন প্রয়োগে অবহেলা দুঃখজনক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নৌপথ। এর পাশেই অবস্থিত নৌ পুলিশের একটি ফাঁড়ি। আর সেই ফাঁড়ির মাত্র ২০ গজ দূরেই প্রতিদিন সকালে মাছের জমজমাট বাজার বসে। পদ্মা নদীর তরতাজা মাছের সেই বাজারে প্রকাশ্যে নিলামে বিক্রি হচ্ছে মহাবিপন্ন বাগাড় মাছ। খবরটি শুধু হতাশাজনক নয়, রীতিমতো উদ্বেগজনক।

আন্তর্জাতিক প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণ সংঘের (আইইউসিএন) তালিকায় বাগাড় একটি মহাবিপন্ন প্রাণী। বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী, এই মাছ শিকার, বিক্রি ও পরিবহন আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ বাস্তবতা হলো দৌলতদিয়া ঘাটে এ আইনের কোনো প্রয়োগ নেই। প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, প্রতিদিন অবাধে এই মাছ ধরা ও বিক্রি হচ্ছে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার এ বিষয়ে যেন কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই।

একদিকে জেলে বলছেন, মাছ যদি জালে পড়ে তাঁরা কী করবেন, তাই বিক্রি করতে নিয়ে আসেন। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ‘জেলেরা ধরে আনছেন, খোলাবাজারে বিক্রি হচ্ছে, তাই আমরাও কিনে নিচ্ছি।’ এর মধ্য দিয়ে বোঝা যায় অবৈধভাবে বাগাড় ধরা ও বেচাবিক্রির বিষয়টি কতটা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত কয়েক দিনে ডজন ডজন বাগাড় বিক্রি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরাই স্বীকার করছেন।

নৌ পুলিশের ইনচার্জ বলছেন, ‘বিষয়টি নিয়ে ওভাবে ভাবা হয়নি। তবে এখন থেকে গুরুত্বসহকারে খোঁজখবর নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ তাঁর এ বক্তব্য আমাদের আরও বেশি হতাশ করে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. নাজমুল হুদা মৎস্য আইনে বাগাড় নিষিদ্ধের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট উল্লেখ না থাকার কথা বলছেন, তবে স্বীকার করছেন যে বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে এটি নিষিদ্ধ। তাঁর এ বক্তব্য দায়িত্ব এড়ানোর নামান্তর। যদি মৎস্য আইনে সরাসরি না-ও থাকে, বন্য প্রাণী সংরক্ষণ আইনে তো আছে! আর মৎস্য বিভাগ যদি জেলেদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টিতে ব্যর্থ হয়, তবে তাদের কাজের উদ্দেশ্য কী?

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাহিদুর রহমানও দায়মুক্তির পথে হেঁটেছেন। তিনি বন্য প্রাণী ও সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রসিকিউশনের কথা বলছেন এবং অভিযানের আগেই অপরাধীরা পালিয়ে যাওয়ার অজুহাত দেখাচ্ছেন। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মধ্যে এই সমন্বয়হীনতা এবং একে অপরের ওপর দায় চাপানোর প্রবণতা শুধু দুঃখজনক নয়, এটি দেশের মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের পথ খুলে দিচ্ছে।

বাগাড়ের মতো মহাবিপন্ন প্রজাতি যখন প্রকাশ্যে এভাবে বিক্রি হয়, তখন বোঝা যায়, আমাদের পরিবেশ সুরক্ষা আইনগুলো কতটা ঠুনকো। আইন আছে, কিন্তু প্রয়োগ নেই। আমরা আশা করব, সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ, বিশেষ করে নৌ পুলিশ, মৎস্য বিভাগ এবং উপজেলা প্রশাসন এ ব্যাপারে কঠোর হবে এবং দায় এড়ানোর সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ