আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধে জনগণের সমর্থন ছিল: প্রেস সচিব
Published: 16th, May 2025 GMT
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক কোনো প্রতিক্রয়া লক্ষ্য করা যায়নি। কারণ, এখানে নিষিদ্ধকরণের বিষয়ে জনগণের সমর্থন ছিল।
শুক্রবার বিকেলে মাগুরা প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন তিনি। শফিকুল আলম বলেন, আমরা চাচ্ছি আওয়ামী লীগের বিচার ন্যায়সঙ্গতভাবে হবে। বিচার তার নিজেস্ব গতিতে চলবে। বিচারটা দ্রুত হক, তবে কোনো অন্যায় যেন না হয়।
জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে বিষয়টি নিশ্চিত যে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
মাগুরায় শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলার বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, আশা করছি আমরা ন্যায়বিচার দেখতে পাব। ন্যায় বিচারের জন্য যত দ্রুত বিচারিক কাজটি করা যায় সেটি করেছি। কেবিনেট এটি নিয়ে আইন প্রয়োজনীয় সংস্কার করেছে। আমরা আশা করছি এক্ষেত্রে ন্যায় বিচার হবে।
এ সময় মফস্বল সাংবাদিকতার মান উন্নয়ন করতে গেলে তাদের আর্থিক বিষয়টি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন শফিকুল আলম।
মতবিনিময়কালে মাগুরা প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যাপক সাইদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলামসহ বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে এমবিবিএস ডাক্তার কবে যাবেন?
রংপুর মেডিকেল কলেজে একটা ব্যবস্থা করলেই হার্টের রিং পরানোর জন্য এই বিভাগের রোগীদের ঢাকা যেতে হয় না– এ আক্ষেপ অনেকেরই। গণঅভ্যুত্থানের পর ‘রাষ্ট্র গঠন’, ‘দ্বিতীয় রিপাবলিক’– কত শব্দ শুনছি! জনগণের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার গঠন ছাড়া তা কতদূর সম্ভব?
চিকিৎসা একটা মৌলিক অধিকার। এর সুষ্ঠু বন্দোবস্ত স্বাধীনতার অর্ধশত বছরে করা দূরে থাক; জনগণ লড়াই করে যা আদায় করেছিল, তাও কমে আসছে। এমনকি হাসপাতালগুলোকে ক্লিনিক বানানোর প্রস্তাব পর্যন্ত উঠেছিল এক সময়। এই মৌলিক অধিকার কথার মানেটা তাহলে কী? টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবে; না থাকলে নাই, এমনটা কী?
দুই. লালমনিরহাটের তিস্তা নদীতীরের রাজপুর ইউনিয়ন। সেখানে একটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। সেখানে অন্তঃসত্ত্বার নিরাপদ প্রসবের ব্যবস্থা আছে। কেন্দ্রের একমাত্র ডিএমএফ ডিগ্রিধারী উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো), ১ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা, ১ জন পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক ও ২ জন পরিবার কল্যাণ সহকারী নিয়ে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নিজেদের গ্রামের ডাক্তার-নার্স থাকায় পুরো ইউনিয়নের ভরসাস্থলে পরিণত হয়েছে। দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স ছাড়াই ঠিকঠাক চলছে। রাজীউন সাগর আমাকে জানিয়েছেন, মাসে আপাতত ৭-৮ নারীকে প্রসব সেবা দিচ্ছেন। নতুনভাবে জনসচেতনতার মাধ্যমে আরও বাড়ানো হচ্ছে। তিনি আশাবাদী, পরবর্তী সময়ে মাসে ১৫ জন ছাড়িয়ে যাবে। এখানে আরও পদ আছে, কিন্তু জনবল নেই ফার্মাসিস্ট, আয়া, অফিস সহায়ক পদে। চিলমারী উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৫টি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র ব্রহ্মপুত্রের পেটে চলে গেছে বছর বিশেক। এ নিয়ে হাউকাউ নেই। একমাত্র টিকে থাকা রমনা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র বছর পাঁচেক ধরে বন্ধ। বাকি ইউনিয়নে নতুন করে নির্মাণ বহু দূরের ব্যাপার।
১৯৯৬ সালে গৃহীত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হয় ১৯৯৮ সালে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর উল্লেখযোগ্য সেবা হলো– প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিচর্যা, অন্তঃসত্ত্বা ও প্রসূতির স্বাস্থ্য, নবজাতক ও শিশুস্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি, ইপিআই, সাধারণ রোগ ও জখমের চিকিৎসা, অসংক্রামক রোগ শনাক্তকরণ ও রেফারেল, কিশোর-কিশোরী ও নববিবাহিত দম্পতির প্রজনন স্বাস্থ্য, কভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও টিকা প্রদানে সহযোগিতা, স্তন ও জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ বিষয়ে স্বাস্থ্যশিক্ষা, জনসচেতনতা বৃদ্ধি ও ভায়া স্ক্রিনিং, রেজিস্ট্রেশন করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেরণ, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জরুরি ও জটিল রোগীর রেফারেল, স্বাভাবিক প্রসব (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে), কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মএলাকায় খানাভিত্তিক অনলাইন নিবন্ধন ও হেলথ আইডি কার্ড।
এখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে মাত্র ১ ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পদটির নাম (সিএইচসিপি) কমিউনিটি হেলথকেয়ার প্রভাইডার নন-মেডিকেল পারসন। ক্লিনিকগুলোতে শুধু কয়েক প্রকার ওষুধ রাখা হয়। রোগীরা এসে ওষুধের কথা বললেই ওই ব্যক্তি কয়েকটা ট্যাবলেট বের করে দেন। ক্লিনিকগুলোতে যারা কাজ করছেন তাদের বেতনও কয়েক বছর ধরে বন্ধ। কমিউনিটি ক্লিনিকের ওয়েবসাইটে প্রধান দুর্বলতা হিসেবে লেখা আছে, সিএইচসিপিরা চাকরি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। জনগণের সেবার নামে কী প্রহসন!
কারণ উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য যে সাড়ে চার বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ডিএমএফ ডিগ্রিধারী উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমো) উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে পদায়িত হন, তাদের নিয়োগ কয়েক বছর ধরে বন্ধ। কথা হচ্ছে, এমবিবিএস ডাক্তারের পদায়ন করলে কি চিকিৎসার মান খারাপ হবে? এমবিবিএসরা আবার ডিএমএফদের ডাক্তারই মনে করেন না। গণঅভ্যুত্থানের পর প্যারা মেডিকেল ডাক্তাররা নিয়োগের দাবিতে ঢাকার রাস্তায় নেমেছিলেন। তাদের মুখোমুখি হয়েছিলেন এমবিবিএসরা। তারা উপজেলা সদরেই থাকতে চান না; চরাঞ্চলে যাবেন কোন গরজে? একদিকে তারা ডিপ্লোমা উত্তীর্ণদের ডাক্তার হিসেবে নিয়োগে বাধা দেবেন, আরেকদিকে নিজেরাও গ্রামে সেবা দিতে যাবেন না। তাহলে জনগণের সেবাপ্রাপ্তির মীমাংসা কী?
তিন. এক সময় ডাক্তাররা রোগীদের বাড়িতে যেতেন, বাড়ির পরিবেশ দেখতেন; রোগের কারণ ভেদ করতেন; আশপাশের গাছগাছালি থেকে ওষুধ বানিয়ে খাওয়াতেন। এখন রোগীই ডাক্তারের চেম্বারে যান। ডাক্তার আধা মিনিট কথা শুনে হরেক রকম টেস্ট দেন। কয়েক দিন পর সেই টেস্টের রিপোর্ট দেখে ওষুধ লিখে দেন। প্রতিটি হাসপাতালের আশপাশে তাই ক্লিনিকে গিজগিজ করে। এ একটা দৃঢ় শিকলের মতো, যেখানে রোগী চিকিৎসার পেছনে অর্থ ব্যয় করে ফতুর হবে, আর বিত্তশালী শ্রেণি গড়ে উঠবে। এই শিকল ছিঁড়ে কারা চিলমারীর চরের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাবেন রোগীর কাছে?
নাহিদ হাসান: লেখক ও সংগঠক
nahidknowledge1@gmail.com