মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন: বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস
Published: 16th, May 2025 GMT
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডর’ ও চট্টগ্রাম বন্দরের নিউ মুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার ভার বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার তৎপরতায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দর-সংক্রান্ত সব আলোচনা, চুক্তি ও প্রস্তুতি অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে দলটি।
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তি ও নীতিনির্ধারকদের বক্তব্য জনমনে আতঙ্ক ও আশঙ্কা তৈরি করেছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সংশ্লিষ্ট এ ধরনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে জাতীয় ঐকমত্যের প্রয়োজন।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছি, সরকার মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তথাকথিত “মানবিক করিডর”প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিদেশি শক্তির পৃষ্ঠপোষকতায় একধরনের ইতিবাচক অবস্থান গ্রহণ করেছে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে বিদেশি রাষ্ট্র কিংবা বহুজাতিক গোষ্ঠীর কাছে ইজারা দেওয়ার বিষয়ে প্রকাশ্যে ও গোপনে নানা আলোচনা ও প্রস্তুতি চলমান রয়েছে।’
এ ধরনের তৎপরতা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা, সার্বভৌমত্ব এবং ভূরাজনৈতিক স্বার্থের জন্য মারাত্মক হুমকি উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাখাইনে মানবিক করিডরের নামে সীমান্তঘেঁষা অঞ্চলে বিদেশি উপস্থিতি বাংলাদেশ-মিয়ানমার উপকূলীয় এলাকায় সংঘাতের ঝুঁকি বাড়াতে পারে এবং এতে দেশের নিরাপত্তাব্যবস্থা এক ভয়াবহ সংকটে পড়বে।’
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার অর্থ বাংলাদেশের স্বাধীন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলা এবং এতে ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের একটি নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে বলে মনে করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘রাখাইন করিডর এবং চট্টগ্রাম বন্দরসংক্রান্ত সব আলোচনা, চুক্তি ও প্রস্তুতি অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাচ্ছি। সরকার যেন সব রাজনৈতিক দল ও জাতীয় প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নিয়ে এ বিষয়ে স্বচ্ছ আলোচনা করে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দেশের সার্বভৌমত্ব, নিরাপত্তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধের বিরুদ্ধে যেকোনো ষড়যন্ত্র জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সর্বাত্মকভাবে প্রতিরোধ করবে বলে বিবৃতিতে বলা হয়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ঐকমত্য কমিশন বলছে, শরিয়াহ নিয়ে প্রশ্ন ছিল না, মামুনুল হক বললেন অসতর্কতায় অন্য জরিপের কথা বলেছেন
প্রথম আলোয় প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে শরিয়াহ আইন নিয়ে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হকের একটি মন্তব্য নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত সোমবার মামুনুল হকের সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়।
‘আফগানিস্তানে যেতে আইনি বাধা নেই’ শিরোনামে প্রকাশিত ওই সাক্ষাৎকারের একটি অংশে মামুনুল হক উল্লেখ করেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন বিষয়ে জরিপ চালানো হয়েছিল। সেখানে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ শরিয়াহ শাসন চেয়েছে।’
এ বিষয়ে প্রথম আলোকে দেওয়া বক্তব্যে ঐকমত্য কমিশন বলেছে, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশন স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে যে কমিশনের পক্ষ থেকে যে জরিপ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছিল, সেখানে শরিয়াহ আইন বা শরিয়াহ শাসনসংক্রান্ত কোনো প্রশ্নই অন্তর্ভুক্ত ছিল না। ফলে উক্ত জরিপ থেকে এ ধরনের মতামত বা ফলাফল পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’
অন্যদিকে এ বিষয়ে মামুনুল হক প্রথম আলোকে বলেছেন, ২০১৭ সালে ‘রিজলভ নেটওয়ার্ক’ পরিচালিত একটি জরিপকে তিনি অসতর্কতাবশত ঐকমত্য কমিশনের জরিপ বলে উল্লেখ করেছেন। ‘ডেমোক্রেসি অ্যান্ড শরিয়াহ ইন বাংলাদেশ: সার্ভেয়িং সাপোর্ট’ শীর্ষক ওই জরিপ প্রতিবেদন লিখেছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সৈয়দা সেলিনা আজিজ। ওই জরিপে ৯১ শতাংশ উত্তরদাতা মনে করেন, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের একটি মর্মবস্তু হচ্ছে নির্বাচিত প্রতিনিধিত্ব। তবে ৮০ শতাংশের বেশি মনে করেন, শরিয়াহ আইন মৌলিক সেবা, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দুর্নীতিকে নিরুৎসাহিত করে।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে তিনটি বিষয় নজর কেড়েছে, নারী শিক্ষার বিষয় আপত্তিকর ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫