রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিবাদ
Published: 17th, May 2025 GMT
ময়মনসিংহ শহরের টাউন হল এলাকায় জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী ও সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ময়মনসিংহ মহানগর শাখা।
আজ শনিবার সকালে নিজেদের ফেসবুক পেজে এক বিবৃতিতে তারা জানায়, গত বৃহস্পতিবার ওই বাড়িতে যে ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তা সংগঠনের কর্মসূচি ছিল না এবং মহানগর শাখার দায়িত্বশীল নেতারা এ বিষয়ে অবগত ছিলেন না।
বিবৃতিতে বলা হয়, সংগঠনের নাম ব্যবহার করে একটি পক্ষ ওই বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সামাজিক সহাবস্থান ও সম্প্রীতির পক্ষে এবং ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে হামলার মতো অপরাজনীতিতে বিশ্বাস করে না।
সংগঠনের আহ্বায়ক মো.
প্রতিবাদ জানানোর পাশাপাশি সংগঠনটির মহানগর শাখার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব ওয়ালিদ আহমেদকে (অলি) শোকজ করা হয়েছে গতকাল শুক্রবার। নোটিশে বলা হয়, ওয়ালিদ সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও স্বেচ্ছাচারিতায় লিপ্ত হয়েছেন, যা সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করেছে। তাঁকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে ওয়ালিদ আহমেদ আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গতকাল রাতে আমি শোকজের চিঠি পেয়েছি। কিন্তু যাঁরা চিঠি দিয়েছেন, তাঁরা আমাকে শোকজ করার এখতিয়ার রাখেন না। বিষয়টি আমি কেন্দ্রকে জানিয়েছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘রওশন এরশাদের বাড়ির বিষয়টি সবাই অবগত। রওশন এরশাদের দালাল মহলের কার্যক্রম সম্পর্কে সবাই অবগত। কিন্তু তারা ওপরের ফোন পেয়ে ভয় পেয়ে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এই চিঠি জারি করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আমি তাদের (আহ্বায়ক-সদস্যসচিব) সঙ্গে আজকেই আলোচনায় বসব।’
রওশন এরশাদের পরিবারের কেউ দেশে না থাকায় বাড়িটির দেখভাল করেন জাতীয় পার্টির ময়মনসিংহ মহানগরের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বাড়িটি রওশন এরশাদের একার নয়, এটি তাঁর চার বোন ও দুই ভাইয়ের পৈতৃক সম্পত্তি। বাড়িটি ‘কুটুমবাড়ি’ নামে একটি রেস্তোরাঁর কাছে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। সেখানে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িকে ‘দালাল মহল’ হিসেবে অভিহিত করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এরপর ‘কুটুমবাড়ি’ নামে রেস্তোরাঁ নির্মাণের প্রতিবাদে ২৩ এপ্রিল মানববন্ধন করে এটিতে স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণের দাবি জানায় সংগঠনটি।
আজ সকালে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ভাঙা ইটপাথর ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। রেস্তোরাঁ মালিক বজলুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ময়মনসিংহ মহানগর শাখার সদস্যসচিব আল নূর মোহাম্মদ আয়াস বলেন, ‘হামলায় অনেকে থাকলেও মহানগর শাখার একজনকে চিহ্নিত করে শোকজ করা হয়েছে। জেলা কমিটির যাঁরা ছিলেন, তাঁদের বিষয়ে জেলা কমিটি ব্যবস্থা নিচ্ছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কিছু হলে দায়িত্বরত যাঁরা আছেন, তাঁদের জানিয়ে করতে হবে। না জানিয়ে কেউ কোনো প্রোগ্রাম করে, আর সেটি যদি রাষ্ট্রবিরোধী হয় এবং কাউকে ক্ষতি করার উদ্দেশ্যে হয়, তার দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেবে না। আমরা মহানগরের একজনকে শনাক্ত করলেও বাকিদের শনাক্তের চেষ্টা করছি।’
সংগঠনের জেলা শাখার সদস্যসচিব আলী হোসেন বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা ছিল রওশন এরশাদের। তাঁর বাড়িটিকে ছাত্র-জনতা দালাল মহল হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। কিন্তু সেটি মুছে দিয়ে রেস্টুরেন্ট বানানো হচ্ছে, এটি আমরা সমর্থন করি না। আবার সেখানে যে ভাঙচুর করা হয়েছে, তা–ও সমর্থন করি না। এটি দালাল মহল হিসেবেই থাকবে এটি আমরা চাই।’
আরও পড়ুনময়মনসিংহে রওশন এরশাদের পৈতৃক বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর১৫ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: রওশন এরশ দ র প ত ক ব ড় সদস যসচ ব দ ল ল মহল স গঠন র ব ষয়ট
এছাড়াও পড়ুন:
ক্ষমা পেয়ে কাজে যোগ দিলেন চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণ
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনে আসা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফরের সঙ্গে তর্কে জড়ানো চিকিৎসক ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা করা হয়েছে। শোকজের জবাব সন্তোষজনক হওয়ায় তাঁকে ক্ষমা করে আগের পদ আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) পদে বহাল করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে মুঠোফোনে ধনদেব চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ আমার জবাবে সন্তুষ্ট হয়ে পূর্বের পদে বহাল করেছেন। আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’
গতকাল বুধবার ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম ফেরদৌস স্বাক্ষরিত একটি পত্র জারি করা হয়। এতে বলা হয়েছে, ‘৬ ডিসেম্বর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শনকালে হাসপাতালের আবাসিক সার্জন (ক্যাজুয়ালটি) ও সহকারী অধ্যাপক (সার্জারি) ইনসিটু, ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে মহাপরিচালকের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ ও অসৌজন্যমূলক আচরণের জন্য কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হয় এবং সেই সঙ্গে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণের কারণে ক্ষমা চেয়ে এবং ভবিষ্যতে এরূপ অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ করবেন না বলে অঙ্গীকার করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে লিখিত জবাব দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর দাখিলকৃত জবাব স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে প্রেরণ করা হয়।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মহোদয় বরাবর প্রেরিত প্রতিবেদন সন্তোষজনক হওয়ায় মহাপরিচালকের উদারতা ও মহানুভবতায় ধনদেব চন্দ্র বর্মণকে ক্ষমা প্রদর্শন করেন এবং তাঁকে পূর্বের কর্মস্থল ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জ পদে পুনর্বহাল রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। সে মোতাবেক তাঁকে ক্যাজুয়ালটি ওটি ইনচার্জের দায়িত্বে পুনর্বহাল করা হলো। এই আদেশ পত্র জারির তারিখ থেকে কার্যকর হবে।’
আরও পড়ুনস্বাস্থ্যের ডিজির সঙ্গে তর্কে জড়ালেন চিকিৎসক, বললেন ‘আমাকে সাসপেন্ড করেন, নো প্রবলেম’০৬ ডিসেম্বর ২০২৫৬ ডিসেম্বর ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মো. আবু জাফর। এ সময় হাসপাতালের ক্যাজুয়ালটি অপারেশন থিয়েটার পরিদর্শনে গিয়ে ডিজি কক্ষের ভেতরে টেবিল থাকার কারণ জানতে চান চিকিৎসকদের কাছে। এ সময় জরুরি বিভাগের ক্যাজুয়ালটি ইনচার্জ ধনদেব চন্দ্র বর্মণ তাঁর সঙ্গে তর্কে জড়ান।