ইউসুফ (আ.)-এর জীবনকাহিনি কোরআনের অন্যতম মুগ্ধকর গল্প। তাঁর নামে রয়েছে সুরা ইউসুফ, যেখানে তাঁর জীবনের উত্থান–পতনের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তিনি ছিলেন নবী ইয়াকুব (আ.)-এর প্রিয় পুত্র, যাঁর রূপ ও সৌন্দর্য ছিল চাঁদ-সূর্যের মতো দীপ্তিমান।
ইয়াকুব (আ.)-এর ১২ ছেলের মধ্যে ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন। তাঁর প্রথম স্ত্রী লাইয়া বিনতে লাইয়ানের ঘরে জন্ম নেন ১০ ছেলে। লাইয়ার মৃত্যুর পর তিনি রাহিলকে বিয়ে করেন, যাঁর ঘরে জন্ম নেন ইউসুফ (আ.
ইউসুফ (আ.) শৈশবে এক স্বপ্ন দেখেন—১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র তাঁকে সিজদা করছে। এটি ছিল তাঁর নবী হওয়ার ইঙ্গিত। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৪)
বাবার অতিরিক্ত ভালোবাসা ভাইদের মনে হিংসার জন্ম দেয়।
কুয়ায় নিক্ষেপ
ভাইয়েরা ইউসুফ (আ.)-কে জঙ্গলের এক কুয়ায় ফেলে দেয় এবং বাড়ি ফিরে ইয়াকুব (আ.)-কে তাঁর মৃত্যুর মিথ্যা খবর দেয়। শোকে ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি হারান। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ১৮)
একটি কাফেলা ইউসুফ (আ.)-কে কুয়া থেকে উদ্ধার করে মিসরে বিক্রি করে দেয়। মিসরের মন্ত্রী কিতফির, যাঁকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘আজিজে মিসর’, তিনি তাঁকে কিনে নেন, এবং তিনি প্রাসাদে বড় হন। (কাসাসুল কোরআন, হিফজুর রহমান, অনুবাদ: মাওলানা আবদুস সাত্তার আইনী, ৩/১৭)
আরও পড়ুনসুরা কারিয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা০৪ মে ২০২৫জুলেখার প্রলোভন
যৌবনে ইউসুফ (আ.)-এর রূপ ছিল অতুলনীয়। কিতফিরের স্ত্রী জুলেখা তাঁর প্রতি বিমোহিত হন। তিনি ইউসুফ (আ.)-কে পাপের দিকে ডাকেন, কিন্তু আল্লাহর ভয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। একদিন জুলেখা তাঁকে একা পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। ইউসুফ (আ.) দরজার দিকে ছুটে যান, জুলেখা তাঁর জামা ছিঁড়ে ফেলেন। দরজার বাইরে কিতফির ও জুলেখার চাচাতো ভাই ছিলেন। জুলেখা ইউসুফ (আ.)-এর ওপর অপবাদ দেন, কিন্তু জামা পেছন থেকে ছেঁড়া থাকায় তিনি নিজেই অপরাধী প্রমাণিত হন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ২৬-২৮)
একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুও ইউসুফ (আ.)-এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। (কাসাসুল কোরআন, ৩/৩০)
কারাগার থেকে মুক্তি
জুলেখার সম্মান রক্ষায় কিতফির ইউসুফ (আ.)-কে কারাগারে পাঠান। সেখানে তিনি বন্দীদের আল্লাহর পথে ডাকেন। মিসরের বাদশাহ এক স্বপ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি। ইউসুফ (আ.) সঠিক ব্যাখ্যা দেন। বাদশাহ তাঁকে মুক্ত করে খাদ্যভান্ডার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দায়িত্ব দেন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৪-৫৬)
অনেকে মনে করেন ইউসুফ (আ.) জুলেখার সঙ্গে প্রেম করেছিলেন—এটি ভুল। জুলেখার প্রেম ছিল একপক্ষীয়। তাঁদের বিয়ের বিষয়ে কোরআন-হাদিসে কিছু জানা যায় না। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম, ৮/৩৯০; তাফসিরে তবারি, ১৬/১৫১)
ইউসুফ (আ.)-এর গল্প ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর ওপর ভরসার অপূর্ব দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—বিপদে ধৈর্য আর আল্লাহর রহমত কীভাবে মানুষকে শিখরে নিয়ে যায়।
লেখক: আলেম
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
কোরআনের সবচেয়ে চমৎকার কাহিনি
ইউসুফ (আ.)-এর জীবনকাহিনি কোরআনের অন্যতম মুগ্ধকর গল্প। তাঁর নামে রয়েছে সুরা ইউসুফ, যেখানে তাঁর জীবনের উত্থান–পতনের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। তিনি ছিলেন নবী ইয়াকুব (আ.)-এর প্রিয় পুত্র, যাঁর রূপ ও সৌন্দর্য ছিল চাঁদ-সূর্যের মতো দীপ্তিমান।
ইয়াকুব (আ.)-এর ১২ ছেলের মধ্যে ইউসুফ (আ.) ছিলেন একজন। তাঁর প্রথম স্ত্রী লাইয়া বিনতে লাইয়ানের ঘরে জন্ম নেন ১০ ছেলে। লাইয়ার মৃত্যুর পর তিনি রাহিলকে বিয়ে করেন, যাঁর ঘরে জন্ম নেন ইউসুফ (আ.) ও বেনিয়ামিন। (তাফসিরে কুরতুবি; তাফসিরে মারেফুল কোরআন, মুফতি মুহাম্মাদ শফি, অনুবাদ: মাওলানা মুহিউদ্দীন খান, পৃষ্ঠা: ৬৫৪)
ইউসুফ (আ.) শৈশবে এক স্বপ্ন দেখেন—১১টি নক্ষত্র, সূর্য ও চন্দ্র তাঁকে সিজদা করছে। এটি ছিল তাঁর নবী হওয়ার ইঙ্গিত। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৪)
বাবার অতিরিক্ত ভালোবাসা ভাইদের মনে হিংসার জন্ম দেয়।
কুয়ায় নিক্ষেপ
ভাইয়েরা ইউসুফ (আ.)-কে জঙ্গলের এক কুয়ায় ফেলে দেয় এবং বাড়ি ফিরে ইয়াকুব (আ.)-কে তাঁর মৃত্যুর মিথ্যা খবর দেয়। শোকে ইয়াকুব (আ.) দৃষ্টিশক্তি হারান। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ১৮)
একটি কাফেলা ইউসুফ (আ.)-কে কুয়া থেকে উদ্ধার করে মিসরে বিক্রি করে দেয়। মিসরের মন্ত্রী কিতফির, যাঁকে কোরআনে বলা হয়েছে ‘আজিজে মিসর’, তিনি তাঁকে কিনে নেন, এবং তিনি প্রাসাদে বড় হন। (কাসাসুল কোরআন, হিফজুর রহমান, অনুবাদ: মাওলানা আবদুস সাত্তার আইনী, ৩/১৭)
আরও পড়ুনসুরা কারিয়াতে কিয়ামতের ভয়াবহতার বর্ণনা০৪ মে ২০২৫জুলেখার প্রলোভন
যৌবনে ইউসুফ (আ.)-এর রূপ ছিল অতুলনীয়। কিতফিরের স্ত্রী জুলেখা তাঁর প্রতি বিমোহিত হন। তিনি ইউসুফ (আ.)-কে পাপের দিকে ডাকেন, কিন্তু আল্লাহর ভয়ে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। একদিন জুলেখা তাঁকে একা পেয়ে দরজা বন্ধ করে দেন। ইউসুফ (আ.) দরজার দিকে ছুটে যান, জুলেখা তাঁর জামা ছিঁড়ে ফেলেন। দরজার বাইরে কিতফির ও জুলেখার চাচাতো ভাই ছিলেন। জুলেখা ইউসুফ (আ.)-এর ওপর অপবাদ দেন, কিন্তু জামা পেছন থেকে ছেঁড়া থাকায় তিনি নিজেই অপরাধী প্রমাণিত হন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ২৬-২৮)
একটি দুগ্ধপোষ্য শিশুও ইউসুফ (আ.)-এর পক্ষে সাক্ষ্য দেয়। (কাসাসুল কোরআন, ৩/৩০)
কারাগার থেকে মুক্তি
জুলেখার সম্মান রক্ষায় কিতফির ইউসুফ (আ.)-কে কারাগারে পাঠান। সেখানে তিনি বন্দীদের আল্লাহর পথে ডাকেন। মিসরের বাদশাহ এক স্বপ্ন দেখেন, যার ব্যাখ্যা কেউ দিতে পারেনি। ইউসুফ (আ.) সঠিক ব্যাখ্যা দেন। বাদশাহ তাঁকে মুক্ত করে খাদ্যভান্ডার ও ব্যবসা-বাণিজ্যের দায়িত্ব দেন। (সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৫৪-৫৬)
অনেকে মনে করেন ইউসুফ (আ.) জুলেখার সঙ্গে প্রেম করেছিলেন—এটি ভুল। জুলেখার প্রেম ছিল একপক্ষীয়। তাঁদের বিয়ের বিষয়ে কোরআন-হাদিসে কিছু জানা যায় না। (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম, ৮/৩৯০; তাফসিরে তবারি, ১৬/১৫১)
ইউসুফ (আ.)-এর গল্প ধৈর্য, সততা ও আল্লাহর ওপর ভরসার অপূর্ব দৃষ্টান্ত। তাঁর জীবন আমাদের শেখায়—বিপদে ধৈর্য আর আল্লাহর রহমত কীভাবে মানুষকে শিখরে নিয়ে যায়।
লেখক: আলেম
আরও পড়ুনসুরা হুমাজাতে চারটি পাপের শাস্তির বর্ণনা০৬ মে ২০২৫