প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে খুলনায় তারুণ্যের সমাবেশে জড়ো হচ্ছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা
Published: 17th, May 2025 GMT
উপকূলের জেলা খুলনার জনপদ প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে। এই গরমের মধ্যেও উজ্জীবিত জনস্রোত নগরের পথ ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। সবার গন্তব্য খুলনা নগরের ঐতিহ্যবাহী সার্কিট হাউস ময়দান। ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা’-এর ডাকে সাড়া দিয়ে প্রখর রোদ উপেক্ষা করে দলে দলে মানুষ এসে জড়ো হচ্ছেন ওই ময়দানে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনায় তরুণ প্রজন্মকে নীতিনির্ধারণে যুক্ত করার লক্ষ্যে সারা দেশে যে মাসব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে, তারই অংশ হিসেবে খুলনায় তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশের আয়োজন।
তারুণ্যের ভাবনা ও অধিকার নিয়ে গত সপ্তাহে চট্টগ্রামের পর বৃহত্তর বিভাগ হিসেবে খুলনায় খুলনা ও বরিশাল বিভাগের সমন্বয়ে গতকাল শুক্রবার থেকে এই কর্মসূচি শুরু হয়। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন আজ শনিবার তারুণ্যের সমাবেশ ডাকা হয়েছে। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদল যৌথভাবে দেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগকে ৪টি বৃহত্তর বিভাগে ভাগ করে ধারাবাহিকভাবে সেমিনার ও সমাবেশ আয়োজন করছে।
বেলা আড়াইটার দিকে খুলনা নগরের ময়লাপোতা, রূপসা, নতুন বাজার, ডাকবাংলাসহ বিভিন্ন এলাকা দিয়ে অসংখ্য মানুষকে সমাবেশস্থলের দিকে আসতে দেখা গেছে। রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে নতুন বাজার এলাকা, জোড়াগেট থেকে পুরাতন রেলস্টেশন রোড, বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় মাঠ ও সিঅ্যান্ডবি কলোনি এলাকায় বাস, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ নানা ধরনের যানবাহন রেখেছেন সমাবেশে যোগ দিতে আসা নেতা-কর্মীরা। যানবাহন রেখে সমাবেশস্থলে হেঁটে যাচ্ছেন বেশির ভাগ লোকজন। দলে দলে মিছিল নিয়ে ঢুকছেন সমাবেশস্থলে। নেতা-কর্মীদের হাতে জাতীয় পতাকা, দলীয় পতাকা ও বিভিন্ন রকমের প্ল্যাকার্ড দেখা যাচ্ছে।
খুলনা শহরের বিভিন্ন মোড় ও সড়কের ডিভাইডারগুলো ছেয়ে গেছে প্যানা, ফেস্টুন আর ব্যানারে। সমাবেশস্থলের আশপাশে চোখে পড়ছে অসংখ্য শরবতের দোকান। বিকেলের এই সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। চট্টগ্রাম ও খুলনার পর ২৩ মে বগুড়ায় এবং ২৭ মে ঢাকায় সমাবেশের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হবে।
খুলনায় এই কর্মসূচির প্রথম দিনে খুলনা প্রেসক্লাবে ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও মৌলিক অধিকার নিয়ে তারুণ্যের ভাবনা’শীর্ষক সেমিনারটি গতকাল বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনার ও সমাবেশ সফল করতে কয়েক দিন ধরে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম ও তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী, যুবদল কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সভাপতি আবদুল মোনায়েম, স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা খুলনায় অবস্থান করছেন।
খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম (তুহিন) বলেন, তারুণ্যের ভবিষ্যৎ–ভাবনা ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশ দেশে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির এক যুগান্তকারী কর্মসূচি। এই কর্মসূচি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অভিনব নেতৃত্ব এবং নির্দেশনার উজ্জ্বল স্মারক। বিএনপি তরুণদের মেধা, জ্ঞান এবং তাঁদের স্বপ্নকে ধারণ করতে চায়। পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে তরুণদের দেশের উন্নয়নে কাজে লাগাতে চায়। সমাবেশে আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষের সমাগম হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
শফিকুল আলম জানান, সমাবেশস্থলে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। সমাবেশস্থলের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের পাশাপশি দলের হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবক দায়িত্ব পালন করছেন। নগরের জিয়া হল চত্বর (শিববাড়ি মোড়) সমাবেশ হওয়ার কথা থাকলেও নগরবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে জিয়া হল চত্বর থেকে সমাবেশস্থল সাকির্ট হাউস ময়দানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান বলেন, দূরদূরান্ত থেকে অনেকে গতকাল রাতে এসে গেছেন। আজ দুপুরের আগে থেকে খুলনা ও আশপাশের লোকজন, বিশেষ করে তরুণেরা সমাবেশে যোগ দিতে আসতে শুরু করেছেন। খুলনা ও বরিশাল বিভাগের ১৯টি সাংগঠনিক জেলার লোকজন অংশ নিচ্ছেন সমাবেশে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ব চ ছ স বক দ র জন ত ক ব এনপ র য বদল নগর র
এছাড়াও পড়ুন:
পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি ব্যয় পরিবীক্ষণ জরুরি
স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ সরকার নারীর অগ্রগতি, উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নীতি ও কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে আসছে। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে রাষ্ট্র নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসন, নারীর সার্বিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বাংলাদেশ সরকার নারী-পুরুষ সমতা প্রতিষ্ঠায় একটি বহুস্তরীয় কাঠামো স্থাপন করেছে।
নারীর অগ্রগতি নিশ্চিত করার প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব কেবল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নয় বরং এটি সরকারের সব মন্ত্রণালয়ের যৌথ দায়িত্ব। নারীর প্রতি বিদ্যমান বৈষম্য দূর করার কৌশলগুলোর মধ্যে রয়েছে ক. জেন্ডার সংবেদনশীল পরিকল্পনা, খ. জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং, গ. নারী-পুরুষ ভেদে উপাত্ত সংগ্রহ এবং ঘ. নারী-পুরুষের সমতা বিষয়ে কর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন। নারী-পুরুষের সমতা নিশ্চিত করতে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোতে নারী-পুরুষের সমতা অর্জনের কৌশল অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো নারী-পুরুষের সমতা-উন্নয়নে নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। প্রকল্প প্রণয়ন ছকে এ সম্পর্কিত নির্দেশনা অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জাতীয় জরিপ ও জনশুমারিতে সময়োপযোগীভাবে নারী-পুরুষ ভেদে সূচক সংযোজন করেছে। যেমন– জেন্ডার পরিসংখ্যান প্রতিবেদন, গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপ এবং শ্রমশক্তি জরিপে নারী-পুরুষভিত্তিক মডিউল সংযোজিত হয়েছে।
নীতিনির্ধারণে জেন্ডার সংবেদনশীলতা নিশ্চিত করতে ২০০৯ সালে মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর অধীনে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেট প্রণয়ন প্রক্রিয়া চালু হয়। প্রাথমিকভাবে চারটি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৪৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এতে অন্তর্ভুক্ত হয়। এর মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে–মন্ত্রণালয়গুলোর বাজেটের নির্দিষ্ট অংশ জেন্ডার সংবেদনশীল কার্যক্রমের জন্য বরাদ্দ, নারী-উন্নয়ন ও নারী-পুরুষের সমতার অর্জনে সুনির্দিষ্ট বাজেট-বরাদ্দ এবং বাজেট বাস্তবায়নের ফলাফল ও প্রভাব সম্পর্কে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ। ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে এই বাজেট বরাদ্দ শুরু হয়ে, ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে মোট বাজেটের ৩৪.৩৭ শতাংশ এবং জিডিপির ৫.২৩ শতাংশ জেন্ডার বাজেটে বরাদ্দ হয়। জেন্ডার বাজেট কার্যকর করতে এর সুষ্ঠু ব্যবহার, কার্যকর নজরদারি ও মূল্যায়ন নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
বাংলাদেশে জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং প্রক্রিয়ায় বেশ কিছু কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। প্রাথমিকভাবে ব্যবহৃত রিকারেন্ট, ক্যাপিটাল, জেন্ডার অ্যান্ড পভার্টি (আরসিজিপি) মডেল পরবর্তী সময়ে আইবিএএস++ এর সঙ্গে একীভূত করা হয়নি। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আইবিএএস++ এর আওতায় নতুন জেন্ডার ফাইন্যান্স ট্র্যাকিং মডেল প্রবর্তিত হয়েছে, যাতে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক বাজেট থেকে জেন্ডার সম্পর্কিত বরাদ্দ পৃথক করা যায়। মডেলটি প্রযুক্তিগতভাবে প্রশংসিত হলেও এর কার্যকারিতা মূল্যায়ন এখনও সম্পন্ন হয়নি।
জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিং এখনও অনুমিত মানবণ্টনের ওপর নির্ভরশীল, যার ফলে বাজেট বরাদ্দে অসামঞ্জস্য ও বিশ্লেষণে বিভ্রান্তি হতে পারে। মানবণ্টনের মানসম্পন্ন পদ্ধতি না থাকায় মন্ত্রণালয়গুলোর ব্যাখ্যায় অসংগতি দেখা দেয়। নারী-পুরুষ বিভাজিত তথ্যের অভাবে বাজেট পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সমস্যা সৃষ্টি করে।
অনেক মন্ত্রণালয় জেন্ডার সংবেদনশীল বাজেটিংকে শুধু প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য একটি আনুষ্ঠানিক বা দায়সারা পদক্ষেপ হিসেবে দেখে। সংশোধিত বাজেটে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেন্ডার বাজেটের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল ব্যয় না হওয়া বা কমে যাওয়া একটি সাধারণ বিষয়। যেমন– ২০২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ছিল ২৫৯,৬৯০.৯০ কোটি টাকা, যেখানে ২০২৪ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট কমে দাঁড়ায় ২,৩৮,১৮৮ কোটি টাকায়– যা প্রায় ৮ শতাংশ কম। সংশোধিত বাজেটে জেন্ডার বাজেটের অর্থ অন্য খাতে স্থানান্তরিত হওয়ায় জেন্ডার সংবেদনশীল কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়। নারী অধিকার সংগঠনগুলো বাজেটের প্রকৃত ব্যয় অনুসরণের দাবি জানালেও অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ এখনও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে একটি প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ হিসেবে জেন্ডার বাজেটিংয়ের অংশ হিসেবে ব্যয়ের পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করতে সুপারিশ করেছে। অর্থ বিভাগের সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় জানা গেছে যে, আইবিএএস++ সিস্টেমে প্রয়োজনীয় কোড প্রবর্তনের মাধ্যমে এ ধরনের ট্র্যাকিং ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব।
পরিশেষে, জেন্ডার বাজেটকে অর্থবহ করতে হলে এটিকে সামগ্রিকভাবে দেখতে হবে। খাতুন, নওরিন, কবির ও নীলর্মী (২০২৩) প্রস্তাব করেছেন যে বর্তমান জেন্ডার বাজেট কাঠামোতে চারটি মূল স্তম্ভ অন্তর্ভুক্ত করে পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এগুলো হলো– লিঙ্গ বিভাজিত তথ্যের ব্যবহার, বাজেটসংক্রান্ত বিষয়ে অংশগ্রহণমূলক সিদ্ধান্ত গ্রহণ, বাজেট ব্যয়ের উন্নত পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন এবং বর্ধিত অর্থ সংগ্রহ ও যথাযথ ব্যবহার। এ চারটি বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে বাজেটের প্রক্রিয়া ও ব্যবহার হবে নারীবান্ধব ও ফলপ্রসূ।