চেহারা দেখেই একজন রোগীর স্বাস্থ্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া সম্ভব, এ রকম একটি ধারণাকে ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ‘ফেসএইজ’ নামের একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন শহরে অবস্থিত ম্যাস জেনারেল ব্রিগহ্যামের গবেষকেরা এই প্রযুক্তি তৈরি করেছেন। তাঁদের দাবি, এটি সেলফির মাধ্যমে রোগীর জীববৈজ্ঞানিক বয়স নির্ধারণ করতে পারে, যা চিকিৎসকেরা রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পরিকল্পনার কাজে ব্যবহার করতে পারবেন।

৮ মে দ্য ল্যানসেট ডিজিটাল হেলথে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে এই এআই প্রযুক্তির বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে এটি এখনো পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রায় ৫০ জন রোগীর ওপর একটি পাইলট স্টাডি চালানো হবে বলে জানিয়েছেন গবেষকেরা।

ফেসএইজ হলো একটি ডিপ লার্নিং–নির্ভর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল, যার মূল কাজ রোগীর জীববৈজ্ঞানিক বয়স নির্ধারণ করা। টুলটি কোনো ব্যক্তির প্রকৃত বয়স (যেমন ৬৫ বছর) নয়, শারীরিক ও স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় তাঁর বয়স কত হওয়া উচিত, তা নির্ধারণ করে।

গবেষকেরা বলেন, চিকিৎসার ক্ষেত্রে কারও জীববৈজ্ঞানিক বয়স জানা গুরুত্বপূর্ণ। কোনো ক্যানসার রোগীর বয়স ৮৬ হলেও যদি তাঁর শারীরিক অবস্থা অনুকূল হয়, তাহলে চিকিৎসকেরা বেশি মাত্রার রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। এমন এক রোগীর উদাহরণও দিয়েছেন গবেষণার সহলেখক ও রেডিয়েশন অনকোলজিস্ট রেমন্ড ম্যাক। তাঁর ভাষ্যে, ‘আমি রোগীকে দেখে বুঝতে পারি, তিনি প্রকৃত বয়সের তুলনায় অনেকটা তরুণ। পরবর্তী সময়ে ফেসএইজ দিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, তাঁর জীববৈজ্ঞানিক বয়স প্রকৃত বয়সের চেয়ে ১০ বছর কম। এখন তিনি ৯০ বছর বয়সেও সুস্থভাবে বেঁচে আছেন।’

ফেসএইজ তৈরি করতে গবেষকেরা প্রায় ৯ হাজার প্রবীণ ব্যক্তির ছবি ব্যবহার করেছেন। তাঁদের অধিকাংশই হলিউড তারকা, যাঁদের ছবি উইকিপিডিয়া ও আইএমডিবি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া ইউটিকেএফেস নামের একটি উন্মুক্ত ডেটাসেট থেকেও বিভিন্ন বয়সের মানুষের ছবি নেওয়া হয়। যেখানে বয়স এক বছর থেকে শুরু করে ১১৬ বছর পর্যন্ত বয়সী মানুষের ছবি ছিল। তবে গবেষণায় এটি স্পষ্ট করা হয়েছে যে ফেসএইজ তৈরিতে রোগীর ব্যক্তিগত ছবি কিংবা ক্লিনিক্যাল ডেটা ব্যবহার করা হয়নি।

গবেষণার অংশ হিসেবে ৬ হাজার ২০০ ক্যানসার রোগীর ছবি বিশ্লেষণ করেছে ফেসএইজ। প্রতিটি ছবি রোগীর রেডিয়েশন থেরাপি শুরুর আগেই তোলা হয়েছিল। এতে দেখা যায়, বেশির ভাগ রোগীর জীববৈজ্ঞানিক বয়স প্রকৃত বয়সের চেয়ে গড়ে পাঁচ বছর বেশি। আরেকটি পরীক্ষায় আটজন চিকিৎসককে বলা হয়, শুধু ছবি দেখে তাঁরা বেঁচে থাকবেন কি না, তা শনাক্ত করতে। শুধু ছবি দেখে তাঁদের ভবিষ্যদ্বাণীর যথার্থতার হার ছিল ৬১ শতাংশ। যখন চিকিৎসকেরা ছবির পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল তথ্য ব্যবহার করেন, তখন নির্ভুলতার হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩ শতাংশে। কিন্তু যখন একই ছবিতে ফেসএইজ ব্যবহার করে বিশ্লেষণ করা হয়, তখন সঠিক ভবিষ্যদ্বাণীর হার বেড়ে দাঁড়ায় ৮০ শতাংশে।

তবে গবেষকেরা সতর্ক করে বলেন, শুধু চেহারা বয়স্ক দেখালেই যে স্বাস্থ্য খারাপ হবে, এমন নয়। যেমন অভিনেতা পল রাড ও উইলফোর্ড ব্রিমলির ৫০ বছর বয়সে তোলা ছবি বিশ্লেষণ করে ফেসএইজ জানায়, রাডের জীববৈজ্ঞানিক বয়স ৪৩, আর ব্রিমলির ৬৯।

চেহারাভিত্তিক এআই–ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একটি বড় উদ্বেগের জায়গা। তবে গবেষকেরা বলছেন, ফেসএইজ শুধুই বয়স নির্ধারণে ব্যবহৃত হয়, শনাক্তকরণের জন্য নয়। এর ফলে গোপনীয়তা লঙ্ঘনের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে কম।

সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর বয়স র র বয়স অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি

‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে ‎বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।

এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

আরো পড়ুন:

‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’

‎বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন

‎জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।

‎তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।

‎কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।

‎পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”

‎গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”

‎অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, ‎যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”

ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ