গায়েহলুদের অনুষ্ঠানের ছবি তোলার ফাঁদ পেতে হত্যা
Published: 17th, May 2025 GMT
বয়স ১৫ বছর হওয়ার পর ছবি তোলার কাজ শিখতে শুরু করেন নুর ইসলাম। এর পর থেকে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে টাকার বিনিময়ে ছবি তুলে দিতেন তিনি। দুর্বৃত্তরা সেই ফাঁদেই ফেলেছিল নুর ইসলামকে। গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তুলে দিতে বলে তাঁকে। অগ্রিম হিসেবে তাঁর মুঠোফোনের ব্যাংক হিসাবে ৫০০ টাকাও পাঠানো হয়। কথা অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাফরাবাদে যান নুর ইসলাম। সন্ধ্যায় দুর্গামন্দির গলির পাশে পৌঁছানোর পর তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত নুর ইসলামের (২৬) স্বজন ও ঘটনার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। তাঁরা আরও জানান, প্রকৃতপক্ষে কোনো গায়েহলুদের অনুষ্ঠান ছিল না। নুর ইসলামকে হত্যার জন্যই দুর্বৃত্তরা এই ফাঁদ পেতেছিল। এ ঘটনায় করা মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশের ক্লোজ সার্কিট (সিসিটিভি) টিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যায় জাফরাবাদ দুর্গামন্দির গলির পাশে আলোকচিত্রী নুর ইসলামকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় তাঁকে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হাজারীবাগ থানা-পুলিশ জানায়, আজ শনিবার নুর ইসলামের বড় ভাই ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।
ওসমান গনি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। আজ দুপুরে তিনি প্রথম আলোকে জানান, নুর ইসলাম অবিবাহিত ছিলেন। তিনি ধানমন্ডির শংকর এলাকার একটি মেসে থাকতেন এবং অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের ছবি তুলতেন। গতকাল দুপুরে নুর ইসলাম তাঁকে মুঠোফোনে জানান, জাফরাবাদের দুর্গামন্দির গলিতে একটি গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন এক ব্যক্তি। এ জন্য তাঁর মুঠোফোনের ব্যাংক হিসাবে ৫০০ টাকাও পাঠানো হয়েছে। বিকেলে সেখানে যাবেন তিনি।
ওসমান গনি জানান, সন্ধ্যায় নুর ইসলামের মুঠোফোন বন্ধ পান। রাতে স্বজনদের কাছে খবর পেয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে তাঁর লাশ দেখতে পান তিনি। ঘটনার পর নুর ইসলামের কাছে থাকা দুটি ক্যামেরা পাওয়া যায়নি। তাঁর জানামতে নুর ইসলামের সঙ্গে কারও কোনো শত্রুতা ছিল না। কারা, কেন ভাইকে হত্যা করেছে, তা তিনি জানেন না।
নুর ইসলামদের বাড়ি বরিশালের আগৈলঝাড়ার সুজনকাঠী। চার ভাই ও চার বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। প্রায় ১৬ বছর আগে নুর ইসলামকে ঢাকায় নিয়ে এসেছিলেন বড় ভাই ওসমান গনি। এরপর তাঁকে ঢাকার একটি ছাপাখানায় কাজে দেওয়া হয়। বয়স ১৫ বছর হওয়ার পর তিনি ছবি তোলার কাজ শিখতে শুরু করেন।
ওসমান গনি বলেন, আলোকচিত্রীর কাজ শেখার পর নুর ইসলাম শংকর এলাকার একটি মেসে ওঠেন। গ্রামের বাড়িতে মা–বাবাকে প্রতি মাসে টাকা পাঠাতেন তিনি। এ সময় কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, প্রতিবছর দুই ভাই মিলে দুই ঈদে গ্রামের বাড়ি যেতেন। এবার আর ভাইকে নিয়ে যাওয়া হবে না। দুর্বৃত্তরা ভাইকে চিরতরে সরিয়ে দিল।
হাজারীবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
আজ নুর ইসলামের মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন করেন হাজারীবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আবদুল আজিজ। এতে উল্লেখ করা হয়, নুর ইসলামের বাঁ কান শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল। ঘাড়ের বাঁ দিকে কাটা, ডান কাঁধে কাটা গভীর জখম আছে। এ ছাড়া সুরতহাল প্রতিবেদনে নুর ইসলামের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাটা জখমের কথা উল্লেখ করা হয়।
আরও পড়ুনরাজধানীতে দুই তরুণকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা২০ ঘণ্টা আগেপ্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, নুর ইসলাম জাফরাবাদ এলাকায় পৌঁছালে অজ্ঞাতনামা দুষ্কৃতকারীরা ধারালো অস্ত্র নিয়ে তাঁকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখম করে। পরে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, নুর ইসলামের কাছে থাকা দুটি ক্যামেরা ছিনিয়ে নিতে তাঁকে খুন করা হতে পারে।
সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরির পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে নুর ইসলামের মরদেহ দাফনের জন্য গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
আজ রাতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপকমিশনার মো. মাসুদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, দুদিন আগে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলার জন্য নুর ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। হত্যাকাণ্ডে অন্তত পাঁচ-ছয়জন অংশ নিয়েছেন। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে শনাক্তের পর তাঁদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ইসল ম র ম য গ য গ কর কর মকর ত জ ফর ব দ র জন য প রথম তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
উৎসব ঘুরে প্রেক্ষাগৃহে ‘বাড়ির নাম শাহানা’
কৈশোর পেরোনোর আগেই শাহানাবাড়ির মেয়ে দীপার বিয়ে হয়ে যায়। স্বামীর নির্যাতনের জাল ছিঁড়ে নিজের মতো করে বাঁচতে চেয়েছেন তিনি। নব্বইয়ের দশকের পটভূমিতে দীপার বেঁচে থাকার লড়াইয়ের গল্প নিয়ে নির্মিত হয়েছে বাড়ির নাম শাহানা।
সত্য কাহিনি অবলম্বনে নির্মিত বাড়ির নাম শাহানায় দীপা চরিত্রে অভিনয় করেছেন আনান সিদ্দিকা। ছবিটি যৌথভাবে প্রযোজনা করেছে কমলা কালেক্টিভ ও গুপী বাঘা প্রোডাকশন্স লিমিটেড।
নির্মাণের বাইরে লীসা গাজী লেখক, নাট্যকর্মী হিসেবে পরিচিত