পশুর দেহের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে যেসব রোগ হয় সেগুলোকে পশুবাহিত রোগ বা ইংরেজিতে জুনোটিক ডিজিজ বলে। সংক্রামিত পশু থেকে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে নানাভাবে, যেমন– ছোঁয়ার মাধ্যমে, কামড় দিলে, আঁচড় দিলে, কাঁচা বা অর্ধরান্না করা খাবার খেলে, দূষিত পানি পান করলে, জীবাণুযুক্ত বাতাসের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে।
কুকুরের কামড় থেকে র্যাবিস ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে র্যাবিস বা জলাতঙ্ক হয়। প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। তার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে বার্ড ফ্লু। এটি ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা। এটি পোলট্রি ফার্ম বা বন্যপাখি থেকে মানবদেহে ছড়ায়। তা ছাড়া নিপাহ ভাইরাস ফলবাগানের বাদুড়ের লালা, মল-মূত্র বা রক্ত দ্বারা সংক্রামিত মানুষের খাবারের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত মানুষ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট ইত্যাদিতে ভোগে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই মারা যায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এতে উচ্চ তাপমাত্রা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র্যাশ, মাংশপেশি ও হাড়ে ব্যথা, বমি, রক্তবমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
রোটা ভাইরাসও গৃহপালিত পশু, যেমন– গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বাহিত রোগ বলে গবেষকরা মনে করেন। শিশুরা মূলত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের কারণে এতে প্রচণ্ড ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানবদেহ ও পশুর মলের সংস্পর্শে ছড়ায়।
পশুবাহিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রতিকার নীতি মানতে হবে। যেমন– ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। হাত ধুতে হবে। পরিধেয় কাপড়, বিছানাপত্র, আসবাব, বাড়িঘর, আশপাশ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। সব ধরনের খাবার/পানি টাটকা, জীবাণুমুক্ত, ভালো করে রান্না করে বা ফুটিয়ে খেতে হবে। আশপাশের সব পশু-পাখিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লালন-পালন করতে হবে। বাড়ি ও আশপাশের স্যানিটেশন ও ময়লা ব্যবস্থাপনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নিয়মিত পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে। সব ধরনের গৃহপালিত পশুপাখিকে নিয়মানুযায়ী ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাস্তার সব কুকুর-বিড়ালকে মাস-ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে।
এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজ,
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, হাটবাজার সব স্থানে প্রথমে সচেতনতা ও পরে আইন প্রয়োগ করতে হবে। বন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দেশের সব স্তরের মানুষকে নিজ নিজ স্থান থেকে বিবেচনা করে সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিবছর দেশে পশুবাহিত রোগের কারণে ওষুধ-হাসপাতাল-চিকিৎসকের খরচ, ইনকাম লস, সঞ্চিত অর্থ ব্যয়, সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকি, পশু-পাখির ক্ষতি, খাদ্যে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মিলে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই এই রাহু থেকে বাঁচতে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে।
ডা.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম নবদ হ
এছাড়াও পড়ুন:
বিসিএস ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত পাবনার আশিক-গৌরব-ধ্রুব
৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন পাবনার তিন কৃতী সন্তান আশিকুর রহমান, মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব ও খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। তাদের মধ্যে আশিক শিক্ষায়, ধ্রুব স্বাস্থ্যে এবং গৌরব প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।
এই তিন তরুণ তুর্কি চাকরি জীবনে প্রবেশের পর সমাজের অবহেলিত এবং অসহায় মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন ।
আশিকুর রহমান (২৮) পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার গোকুলনগর গ্রামের শফিকুল ইসলাম ও মরহুমা আলেয়া খাতুনের সন্তান। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। নিজের সাফল্যের পেছনে বাবা ও ভাইয়ের অবদানের কথা জানিয়েছেন এই যুবক।
আরো পড়ুন:
৪৮তম বিশেষ বিসিএসের প্রিলিমিনারি ১৮ জুলাই
৪৪তম বিসিএসের চূড়ান্ত ফল ৩০ জুন
আশিক বলেন, “আমার বাবা সাইকেল মেকানিক ছিলেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে খিদিরপুর বাজারে গিয়ে সাইকেল মেরামতের কাজ করতেন। যা আয় করতেন তা দিয়ে কোনোমতে সংসার আর আমাদের ভাই-বোনদের পড়ালেখার খরচ চালাতেন। মাত্র ৬ বছর বয়সে ২০০২ সালে মা মারা যান। বাবা আমাকে আগলে রাখতেন। তিনি কখনো মায়ের অভাব বুঝতে দেননি। বাবা আর মেজো ভাই সবুজের জন্য আজ আমি এখানে।”
আটঘরিয়া উপজেলার খিদিরপুর শহীদ আব্দুল খালেক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১২ সালে এসএসসি, ঢাকার নটরডেম কলেজ থেকে ২০১৪ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন আশিক। এরপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ২০১৯ সালে বিএ (অনার্স) এবং একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০২০ সালে একই বিষয়ে মাস্টার্স পাস করেন তিনি। এরপর থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতির পাশাপাশি চাকরির চেষ্টা করতে থাকেন আশিক।
আশিক ২০২৪ সালের ২০ জুন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) এ সহকারী পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। এবার ৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শিক্ষা ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি।
স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মুহাম্মদ ফাহিম রহমান ধ্রুব পাবনা পৌরসভার শালগাড়িয়া কসাইপট্টি মহল্লার মো. হাফিজুর রহমান ও মোছা. নাহিদ খানমের সন্তান। দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়। বাবা হাফিজুর রহমান পাবনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। ২০২২ সালের নভেম্বরে তিনি অবসরে যান। মা গৃহিণী। ব্যক্তিগত জীবনে অবিবাহিত ধ্রুব।
ফাহিম রহমান ধ্রুব ২০১৩ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি এবং ২০১৫ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। এরপর ভর্তি হন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে। ২০২১ সালে কৃতিত্বের সাথে এমবিবিএস সম্পন্ন করেন তিনি। ২০২৩ সালে সেখানে ইন্টার্ন শেষ করেন। ইন্টার্ন চলা অবস্থায় বিসিএসের প্রস্তুতি শুরু করেন এই যুবক।
অনুভূতি জানাতে গিয়ে ধ্রুব বলেন, “মা-বাবা সবসময় আমাকে উৎসাহ-সাহস আর সাপোর্ট দিয়েছেন। তাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। এর সঙ্গে আমার শিক্ষক আর ব্যাচমেটদেরও অবদান রয়েছে। সবার দোয়া, ভালোবাসা এবং সহযোগিতায় আজ আমি বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছি।”
বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন খন্দকার গৌরব মুস্তাফা। পাবনা পৌরসভার ঘোষপাড়া মহল্লার বাসিন্দা খন্দকার গোলাম মুস্তাফা-মরহুমা গুলশান আরা দম্পতির একমাত্র সন্তান তিনি।
গৌরবের বাবা বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে অবসরে যান। মা মরহুমা গুলশান আরা একই প্রতিষ্ঠানে ডেটা এন্ট্রি অপারেটর পদে চাকরি করতেন। ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তিনি ইন্তেকাল করেন।
গৌরব ২০১১ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে এসএসসি ও ২০১৩ সালে পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) যন্ত্রকৌশল বিভাগে। ২০১৮ সালের অক্টোবরে স্নাতক সম্পন্ন করেন তিনি।
গৌরব স্নাতকের পরই শুরু করেন বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি। পড়ালেখার পাশাপাশি গৌরব একজন প্রশিক্ষিত সংগীত শিল্পী, যা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় থাকতে সহায়তা করেছে। এই দীর্ঘ প্রস্তুতির ফল এসেছে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার মাধ্যমে।
নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে গৌরব বলেন, “এই সফলতার সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব আমার মায়ের। মা সবসময় আমাকে বলতেন-ভালো করে পড়ো, ইনশাআল্লাহ একদিন সফল হবে। আজ তিনি আমার পাশে নেই, কিন্তু আমি জানি, আজকের দিনে তিনি পাশে থাকলে সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন। বাবাও সবসময় সাপোর্ট দিয়ে গেছেন, সাহস জুগিয়েছেন। তিনি বলতেন, চেষ্টা করো, সবসময় পাশে আছি।”
বিসিএস প্রত্যাশীদের জন্য পরামর্শ দিতে গিয়ে এই তিন তুর্কী বলেন, সব সময় সৎ আর পজিটিভ চিন্তা করতে হবে। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে। নেগেটিভ কোনো কিছু ভাবা যাবে না। নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস শক্ত রাখতে হবে। প্রতিদিন নিয়মিত গড়ে ৪ ঘণ্টা পড়ালেখায় সময় দিতে হবে। নিজের সাবজেক্টের বাইরে জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয় আয়ত্বে রাখতে হবে।
তারা বলেন, ভাল কিছু অর্জন করতে হলে অবশ্যই ধৈর্যের সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে। নিয়মিত পড়ালেখা করতে হবে, নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে। ব্যর্থতা আসতেই পারে, কিন্তু তা যেন লক্ষ্য থেকে সরিয়ে না দেয়। ভাগ্য সহায় হলে অবশ্যই সফলতা আসবে।
ভবিষ্যত জীবনে সমাজের অসহায়, সুবিধাবঞ্চিত ও অবহেলিত মানুষের সেবা করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এই তিন যুবক। এজন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন তারা।
ঢাকা/মাসুদ