Samakal:
2025-09-18@03:31:54 GMT

পশুবাহিত রোগে উদ্বেগ

Published: 17th, May 2025 GMT

পশুবাহিত রোগে উদ্বেগ

পশুর দেহের ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, প্যারাসাইটে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে যেসব রোগ হয় সেগুলোকে পশুবাহিত রোগ বা ইংরেজিতে জুনোটিক ডিজিজ বলে। সংক্রামিত পশু থেকে জীবাণু মানবদেহে প্রবেশ করে নানাভাবে, যেমন– ছোঁয়ার মাধ্যমে, কামড় দিলে, আঁচড় দিলে, কাঁচা বা অর্ধরান্না করা খাবার খেলে, দূষিত পানি পান করলে, জীবাণুযুক্ত বাতাসের মধ্যে শ্বাস-প্রশ্বাস নিলে, কাঁচা দুধ বা কাঁচা দুগ্ধ জাতীয় খাবার খেলে।

কুকুরের কামড় থেকে র‍্যাবিস ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করলে র‍্যাবিস বা জলাতঙ্ক হয়। প্রতিবছর আমাদের দেশে প্রায় ১ লাখ ৬৭ হাজার মানুষ কুকুরের কামড়ের শিকার হয়। তার মধ্যে অনেকের মৃত্যুও হয়। আরেকটি রোগ হচ্ছে বার্ড ফ্লু। এটি ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা। এটি পোলট্রি ফার্ম বা বন্যপাখি থেকে মানবদেহে ছড়ায়। তা ছাড়া নিপাহ ভাইরাস ফলবাগানের বাদুড়ের লালা, মল-মূত্র বা রক্ত দ্বারা সংক্রামিত মানুষের খাবারের মাধ্যমে মানুষ বা অন্যান্য প্রাণীকে আক্রান্ত করে। আক্রান্ত মানুষ জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, ডায়রিয়া, কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট ইত্যাদিতে ভোগে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর বেশির ভাগই মারা যায়। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বর হয়। এতে উচ্চ তাপমাত্রা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরে র‍্যাশ, মাংশপেশি ও হাড়ে ব্যথা, বমি, রক্তবমি, নাক দিয়ে রক্ত পড়া ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়।
রোটা ভাইরাসও গৃহপালিত পশু, যেমন– গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কুকুর, বিড়াল ইত্যাদি বাহিত রোগ বলে গবেষকরা মনে করেন। শিশুরা মূলত এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তাদের পরিপাকতন্ত্রে সংক্রমণের কারণে এতে প্রচণ্ড ডায়রিয়া, বমি, জ্বর, খাবারে অরুচি দেখা দেয়। এটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত মানবদেহ ও পশুর মলের সংস্পর্শে ছড়ায়।

পশুবাহিত রোগ থেকে মুক্তির জন্য কিছু প্রতিকার নীতি মানতে হবে। যেমন– ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা। হাত ধুতে হবে। পরিধেয় কাপড়, বিছানাপত্র, আসবাব, বাড়িঘর, আশপাশ ইত্যাদি পরিষ্কার রাখতে হবে। সব ধরনের খাবার/পানি টাটকা, জীবাণুমুক্ত, ভালো করে রান্না করে বা ফুটিয়ে খেতে হবে। আশপাশের সব পশু-পাখিকে ভ্যাকসিন দিতে হবে। শিশুদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী লালন-পালন করতে হবে। বাড়ি ও আশপাশের স্যানিটেশন ও ময়লা ব্যবস্থাপনায় সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। নিয়মিত পোকামাকড় বা কীটপতঙ্গ দমন করতে হবে। সব ধরনের গৃহপালিত পশুপাখিকে নিয়মানুযায়ী ভ্যাকসিন দিতে হবে। রাস্তার সব কুকুর-বিড়ালকে মাস-ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে হবে। 

এ ব্যাপারে স্কুল-কলেজ, 
বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত, হাটবাজার সব স্থানে প্রথমে সচেতনতা ও পরে আইন প্রয়োগ করতে হবে। বন ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার্থে দেশের সব স্তরের মানুষকে নিজ নিজ স্থান থেকে বিবেচনা করে সচেতন হতে হবে। কারণ প্রতিবছর দেশে পশুবাহিত রোগের কারণে ওষুধ-হাসপাতাল-চিকিৎসকের খরচ, ইনকাম লস, সঞ্চিত অর্থ ব্যয়, সরকারি হাসপাতালে ভর্তুকি, পশু-পাখির ক্ষতি, খাদ্যে অনিশ্চয়তা ইত্যাদি মিলে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনৈতিক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছি। তাই এই রাহু থেকে বাঁচতে নিজেদেরই সচেষ্ট হতে হবে।     
                                     
ডা.

গোলাম শওকত হোসেন: গবেষক ও কলাম লেখক
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম নবদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ