মেক্সিকান নৌবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ জাহাজ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক সিটির ব্রুকলিন ব্রিজে ধাক্কা লেগে অন্তত ২২ জন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক, মেক্সিকান নৌবাহিনী এই তথ্য জানিয়েছে। সূত্র: বিবিসি

ঘটনাস্থলের এক ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, শনিবার সন্ধ্যায় যখন জাহাজটি বিশ্বখ্যাত এই সেতুটির নিচ দিয়ে পার হচ্ছিল, তখন কুয়াউথেমক নামের জাহাজটির উঁচু মাস্তুল সেতুর সাথে ধাক্কা খায়।

খবরে বলা হয়েছে, মাস্তুলের কিছু অংশ ভেঙে গিয়ে জাহাজের ডেকের উপরে পড়ে, তখন মাস্তুলের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন ক্রু আহত হয়েছেন বলে মার্কিন গণমাধ্যম জানিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক সিটির জরুরি ব্যবস্থাপনা বিভাগ (এনওয়াইসিইএম) জানায়, তারা এই ঘটনায় সাড়া দিয়েছে, তবে এর চেয়ে বিস্তারিত কিছু জানায়নি।

নিউ ইয়র্কের মেয়র বলেছেন, ব্রুকলিন ব্রিজের কোনো ক্ষতি হয়নি। তবে মেক্সিকান নৌবাহিনী নিশ্চিত করেছে যে, জাহাজটির ক্ষতি হয়েছে এবং তারা ঘটনাটি তদন্ত করছে।

অনেক মানুষ জাহাজটির গতিপথ পর্যবেক্ষণ করছিলেন। যখন জাহাজটি সেতুর একদম কাছাকাছি চলে আসে এবং সেতুতে ধাক্কা খায় তখন সাধারণ মানুষ পানির কাছ থেকে সরে যান।

সংবাদমাধ্যম সিবিএস এর খবরে বলা হয়েছে, নিউ ইয়র্কের দমকল বাহিনী জানিয়েছে যে তারা আহতদের সেবায় কাজ করছে।

তারা জানিয়েছে, কতজন আহত হয়েছেন বা আহতরা জাহাজে ছিলেন নাকি সেতুতে ছিলে, সে বিষয়ে এখনও সঠিক কোনো তথ্য মেলেনি।

এনওয়াইসিইএম সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ (সাবেক টুইটার) এক বিবৃতিতে বলেছে, "পরিস্থিতি এখনো পরিষ্কার নয়, বিস্তারিত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।"

নিউ ইয়র্কের মেয়র এরিক অ্যাডামস ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্রিফ নিয়েছেন বলে সিবিএস জানিয়েছে।

নিউ ইয়র্ক পুলিশ (এনওয়াইপিডি) মানুষকে অনুরোধ করেছে যেন তারা ব্রুকলিন ব্রিজ, ম্যানহাটনের সাউথ স্ট্রিট সিপোর্ট ও ব্রুকলিনের ডাম্বো এলাকায় না যান।

তারা এক্স-এ পোস্ট করেছে যে, "এই এলাকাগুলোতে প্রচণ্ড যানজট এবং অনেক জরুরি যানবাহন থাকবে।"

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুয়াউথেমক নামের জাহাজটিতে ২০০ জনেরও বেশি ক্রু ছিলেন। জাহাজটি নিউ ইয়র্কে এসেছিল সৌজন্যমূলক সফরে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র আহত ব র কল ন জ হ জট

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্কের কৃষ্ণাঙ্গ ও শ্রমজীবী ভোটারদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য জোহরান মামদানি

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক নগরের মেয়র নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে সবাইকে চমকে দিয়ে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমোকে হারিয়ে প্রাথমিক জয়ী হন জোহরান মামদানি। গত ২৪ জুন এই দলীয় বাছাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল।

গত মঙ্গলবার র‍্যাঙ্কড চয়েস পদ্ধতিতে (পছন্দের ক্রমানুযায়ী পাঁচজন প্রার্থীকে ভোট দেওয়া) তৃতীয় ধাপে ৫৬ শতাংশ ভোট পেয়ে চূড়ান্ত জয় নিশ্চিত করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত জোহরান। প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যান্ড্রু কুমো পেয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোট।

জোহরানের এই সুষ্পষ্ট বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন তুলেছে। তবে একই সঙ্গে ভোটের মাঠে তাঁর দুর্বলতা কোথায় থাকতে পারে, তা নিয়েও কৌতূহল সৃষ্টি হয়েছে।

ভোটের প্রথম ধাপের ফলাফলে দেখা গেছে, ব্রাউনসভিল এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের মতো নিম্ন আয়ের মানুষ–অধ্যুষিত এলাকায় খুব একটা ভালো করতে পারেননি জোহরান। এসব এলাকায় বেশ বড় ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন অ্যান্ড্রু কুমো।

ব্রাউনসভিল ও ইস্ট ফ্ল্যাটবুশের ৬০ শতাংশের বেশি বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ। এসব এলাকায় দারিদ্র্যের হারও বেশি। নিউইয়র্ক নগরে সামগ্রিক দারিদ্র্যের হার যেখানে ১৮ দশমিক ২ শতাংশ, সেখানে ব্রাউনসভিলে এই হার ৩২ দশমিক ৪ এবং ইস্ট ফ্ল্যাটবুশে সেই হার ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত ব্যাপক আলোচিত এক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, যেসব এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি, সেসব এলাকার মধ্যে ৪৯ শতাংশের সমর্থন পেয়েছেন কুমো, আর মামদানির পক্ষে সমর্থন ছিল ৩৮ শতাংশ।

অন্যদিকে যেসব এলাকায় কৃষ্ণাঙ্গদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে, সেখানে কুমোর পক্ষে সমর্থনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫১ শতাংশে।

তবে এখানেই মামদানি অনেককেই চমকে দিয়েছেন। নিউইয়র্ক টাইমসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এবার ২০ ও ৩০ বছর বয়সী তরুণ ভোটারদের উপস্থিতি ছিল অনেক বেশি, যা ২০২১ সালের মেয়র নির্বাচনকে ছাড়িয়ে গেছে।

এসব পরিসংখ্যানের কারণে প্রশ্ন উঠেছে, নিউইয়র্ক নগরে বসবাসের জন্য সাশ্রয়ী শহরে পরিণত করার যে প্রতিশ্রুতি জোহরান দিয়েছিলেন, তা কি কোনো কাজেই আসেনি? নাকি এসব পরিসংখ্যানের পেছনে লুকিয়ে আছে আরও জটিল কোনো গল্প।

পরিচিত মুখ, কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা

নির্বাচনের প্রাথমিক ফল ঘোষণার আগেই কিছু ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছিল, নিম্ন আয়ের ও কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের সমর্থন আদায়ে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন জোহরান।

মার্চ মাসে পরিচালিত একটি জরিপে দেখা যায়, যেসব ভোটারের পরিবারের আয় ৫০ হাজার ডলারের নিচে, তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ প্রথম পছন্দ হিসেবে কুমোকে বেছে নিয়েছেন।

জরিপে দেখা যায়, মেয়র প্রার্থী নির্বাচনের দলীয় বাছাইয়ে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে জোহরান ছিলেন অনেক পিছিয়ে। তখন মাত্র ১১ শতাংশ সমর্থন ছিল তাঁর প্রতি। কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল আরও নিচে—মাত্র ৮ শতাংশ। অথচ জরিপে কুমো পেয়েছেন ৫০ শতাংশ ভোট।

বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু বিষয়ের কারণে কুমো সুবিধাজনক অবস্থানে ছিলেন। রাজনৈতিক পরামর্শক জেরি স্কারনিক বলেন, ‘কুমো এই নির্বাচনের আগেই পরিচিত মুখ ছিলেন। শুধু দুবারের গভর্নরই নন, বরং সাবেক গভর্নর মারিও কুমোর ছেলে এবং প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের প্রশাসনেও কাজ করেছেন তিনি।’

আরও পড়ুনজোহরান মামদানি: প্রতিশ্রুতি আর বাস্তবতার দোটানায় নিউইয়র্কের নতুন স্বপ্ন০২ জুলাই ২০২৫ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি নির্বাচনে জয়ের খবরে সমর্থকদের সঙ্গে উল্লাস করছেন জোহরান মামদানি। ২৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ