জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতকে দ্বৈত ভর্তি, বাতিলের জরুরি নোটিশ
Published: 18th, May 2025 GMT
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন কোর্সে দ্বৈত ভর্তি হয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ মে তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ‘দ্বৈত ভর্তি’ বাতিল করতে জরুরি নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দরকারি তথ্য
১.
২. তালিকায় প্রকাশিত দ্বৈত ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী উক্ত তারিখের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বাতিল করবেন না, তাঁদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে না এবং তাঁদের উক্ত ভর্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে তাঁদের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বহাল থাকবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে পাঠদানের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫৩. দ্বৈত ভর্তির তালিকায় প্রকাশিত কোনো শিক্ষার্থী যদি দাবি করেন যে তিনি তাঁর আগের ভর্তি ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন এবং ২০ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাতিল করবেন, তাঁদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ফরমসহ আগের ভর্তি বাতিলের প্রমাণ (‘ভর্তি বাতিলপূর্বক মূল মার্কশিট ফেরত দেওয়ার অনুমতি’পত্রের কপি ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২২ মে ২০২৫ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য, যেসব শিক্ষার্থী এর আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের নতুন করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট: http://app11.nu.edu.bd
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সব শ ক ষ র থ দ ব ত ভর ত ব ত ল কর র ভর ত
এছাড়াও পড়ুন:
তদন্ত করে ভুয়া নাম বাদ দিন
সরকারি নথিপত্রে যেকোনো ঐতিহাসিক ঘটনার ভুল কিংবা মিথ্যা তথ্যের ইচ্ছাকৃত অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীতভাবে ইতিহাস বিকৃতির সবচেয়ে খারাপ ধাপ। স্বাধীনতা-পরবর্তী সরকারগুলোর প্রায় প্রত্যেকে এই গুরুতর অভিযোগে অভিযুক্ত।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৈরি করা মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় রাজাকারদের, আর রাজাকারের তালিকায় সুবিদিত মুক্তিযোদ্ধাদের নামের অন্তর্ভুক্তি দেখা গেছে। কিন্তু হাজারো তরুণের রক্তস্নাত জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে, তা অকল্পনীয় ছিল।
কিন্তু বাস্তবতা দেখিয়েছে, আগের সেই রেশ থামেনি। দেখা যাচ্ছে, সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান শহীদদের যে তালিকা করেছে, তাতে এমন অর্ধশতাধিক লোকের নাম এসেছে, যাঁরা জুলাই শহীদ নন।
জুলাই যোদ্ধাদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন বিধিমালা, ২০২৫ স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে: শুধু রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বাহিনী অথবা আওয়ামী শাসক দলের লোকদের হাতে নিহত ব্যক্তিরাই জুলাই শহীদ বলে গণ্য হবেন। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদন বলছে, সরকারের তৈরি করা জুলাই শহীদদের তালিকায় কমপক্ষে ৫২ জনের নাম আছে, যাঁরা জমিসংক্রান্ত বিরোধ বা অন্য কারণে প্রতিপক্ষের হাতে খুন হয়েছেন কিংবা নানা ঘটনা-দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। এ ছাড়া তালিকায় তিনজন পুলিশ কর্মকর্তা, একজন ছাত্রলীগ নেতা আছেন। এমনকি তালিকায় এমন একজনকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যিনি প্রতিবাদীদের ওপর হামলায় যুক্ত ছিলেন।
প্রত্যেক শহীদ পরিবারকে এককালীন মোট ৩০ লাখ টাকা দেবে সরকার। এর মধ্যে ১০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা চলতি (২০২৫-২৬) অর্থবছরে দেওয়া হবে। এ ছাড়া প্রত্যেক শহীদ পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা করে ভাতা পাচ্ছে। ঢাকায় তাদের ফ্ল্যাট দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে।
জনমানসের যৌক্তিক ধারণা, এই অর্থনৈতিক সুবিধার প্রলোভন তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়ায় প্রতারণা, শৃঙ্খলাভঙ্গ এবং অপকৌশলের সুযোগ তৈরি করেছে। শুধু জালিয়াতি করে শহীদ দেখিয়ে শুধু সহায়তা নেওয়া নয়; সংশ্লিষ্ট নিহতের ঘটনায় মামলা করে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করার নজিরও মিলেছে।
এই পরিস্থিতি প্রমাণ করছে, তালিকাভুক্তকরণের প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক ও আর্থিক স্বার্থ কাজ করে থাকতে পারে। ঘটনাটিকে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু কর্মকর্তার মিলিত কৌশল এবং সুযোগসন্ধানীদের চক্রান্ত হিসেবে বিবেচনা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এটি অন্তর্বর্তী সরকারের একটি বড় ধরনের ব্যর্থতা। তবে প্রথম আলোর অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর বিষয়টি সরকার আমলে নিয়েছে, এ জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাতে চাই।
বহু শহীদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকার এক মহান দায়িত্ব কাঁধে নিয়েছে। তাদের মনে রাখতে হবে, শহীদের মর্যাদাকে সরকারি পরিসরে আর্থিক প্রলোভন, সংকীর্ণ রাজনৈতিক সুবিধা বা স্বার্থপর উদ্দেশ্যে বিকৃত করা হলে সেটি ইতিহাস, নৈতিকতা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব লঙ্ঘনের অমার্জনীয় অন্যায় হয়ে ওঠে।
এ অন্যায় থেকে বাঁচতে ও মানুষের আস্থা পুনঃস্থাপনে অবিলম্বে বিতর্কিত সব নামের সব সরকারি সুবিধা অবিলম্বে স্থগিত করতে হবে। স্বাধীন ও অরাজনৈতিক কমিটি গঠন করে প্রতিটি নামের পুনঃ যাচাই নিশ্চিত করা জরুরি। বাদ পড়া শহীদদের নামও তালিকায় যুক্ত করতে হবে। যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে যাদের গাফিলতি বা দুর্নীতির কারণে এই অনিয়ম হয়েছে, তাদের চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান আমাদের ইতিহাসে এক অমর মাইলফলক। এর শহীদদের তালিকায় নকল বা অপ্রাসঙ্গিক নাম সংযোজন করা হলে ‘বীরের এ রক্তস্রোত, মাতার এ অশ্রুধারা’ সব ‘ধরার ধুলায় হবে হারা’। সরকারকে এ সত্য উপলব্ধি করতে হবে।
আশার কথা হলো, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, কোনো প্রকার ভুয়া প্রমাণিত হলে তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশ এবং তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের সঠিক তালিকা প্রণয়নে মন্ত্রণালয় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে কথা ও কাজের সম্মিলিত প্রয়াস আমরা দেখব, সেটিই কাম্য।