চট্টগ্রামে কারা হেফাজতে লাল ত্নেং কিম বমের মৃত্যুর বিচার, নিরপরাধ বম নারী-শিশুদের কারামুক্তি এবং চিংমা খেয়াংকে ধর্ষণের পর হত্যার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে আদিবাসী ছাত্র সমাজ।

রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ‘পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসীদের ওপর রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন বন্ধ কর’ স্লোগানে সমাবেশের আয়োজন করা হয়।  

সমাবেশে লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরে এটি হওয়ার কথা ছিল না। পাহাড়ের আদিবাসী নারীদের ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। পাহাড়ে সাধারণ বমদের সন্ত্রাসী বানিয়ে গ্রেপ্তার ও হত্যা করা হচ্ছে, আর আমাদের ঢাকায় এসে বিচার চাইতে হচ্ছে। 

তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টাকে জানাতে চাই, আমি আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি বান্দরবানের মুনলাই পাড়ার জন্য। যে পাড়া দেশের সবচেয়ে পরিষ্কার গ্রাম, যে গ্রামের মানুষরা প্রকৃতির মতো সরল তাদের আজ সন্ত্রাসী বানিয়ে পুরো গ্রামবাসীদের গ্রাম ছাড়া করেছে। যাদের অনেককে আজ বনে-জঙ্গলে পালিয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই প্রধান উপদেষ্টা আপনাকে সাজানো সমস্যার সমাধান করতে হবে। কেননা এইসব ঘটনা জুলাই গণহত্যার পরিপন্থি। আজ যে শিশুটি জেলে বন্দি আছে, সে তখনো মায়ের পেটে যখন বান্দরবানের ব্যাংক লুটের ঘটনা ঘটে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কারাগার কারা চালায়? এই কারাগার চালায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী, রাষ্ট্রের সরকার। তাহলে জেল হেফাজতে অবস্থানরত সব ব্যক্তিদের খাওয়া, চিকিৎসা, নিরাপত্তা দেওয়ার সব দ্বায়িত্ব এই রাষ্ট্রের, সরকারের। নিরীহ বমদের বিনা ওয়ারেন্টে গ্রেপ্তারের দায় যেমন শেখ হাসিনা সরকারের, ঠিক তেমনি কারাগারের ভেতরে চিকিৎসার অভাবে মৃত্যুর দায়ও এই অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতেই হবে। এই দেশের আইন যদি নিরপেক্ষভাবে চলে তাহলে প্রশ্ন থাকবে দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু নিরীহ বমদের বিনা ওয়ারেন্টে, বিনা অপরাধে কেমনে গ্রেপ্তার করে দীর্ঘদিন জেলে আটকে রাখে।

সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক এহসান মাহমুদ বলেন, যে জনগোষ্ঠীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন  থেকে শুরু করে দেশের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পদযাত্রায় সবসময় বাঙালিদের সঙ্গে থেকেছে, তাদের সঙ্গে এই রাষ্ট্র বারবার বিমাতৃসুলভ আচরণ করেছে। ৭২এর সংবিধানে এম এন লারমা নিজের জাতিকে সাংবিধানিকভাবে সুরক্ষা দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু এই রাষ্ট্র তা হতে দেয় নাই। দেশের সরকার পরিবর্তন হয়, কিন্তু আদিবাসীদের সঙ্গে এই রাষ্ট্রের বিমাতৃসুলভ আচরণ পরিবর্তন হয় না।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা বলেন, আমরা খবর পেয়েছি, সাধারণ বম আদিবাসীদের সন্ত্রাসী সাজিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আটক করে রাখা করা হয়েছে। তারা অনেকেই চিকিৎসার অভাবে মারা যাচ্ছে, অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই সরকার, এই রাষ্ট্রকে বলতে চাই আপনারা দ্রুত নিরীহ বম আদিবাসীদের নিঃশর্তে ছেড়ে দেন এবং অসুস্থ মানুষদের চিকিৎসা দেন। পার্বত্য চট্টগ্রামের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে ১৯৯৭ সালের পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়ন করেন। তা না হলে যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় সেটা কারোর জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে না।

বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, ফ্যাসিবাদ সরকারের পতনের পর আয়নাঘরে যতজন বন্দি ছিল, তাদের সবাইকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে গ্রেপ্তার করা নিরপরাধ বমদের এখনও মুক্তি দেওয়া হয়নি। কারণ পার্বত্য চট্টগ্রামকে একটি বিপজ্জনক  কারাগার করে রাখা হয়েছে। আয়নাঘরে চক্ষুর অন্তরালে নির্যাতন করা হয়। কিন্তু পাহাড়ে প্রকাশ্যে নিরপরাধ আদিবাসীদের অত্যাচার করা হয়। দেশের সরকার এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। আমি এসব চরিত্রকে ধিক্কার জানাই।

বম ছাত্র প্রতিনিধি রিচার্ড বম বলেন, গত তিন বছর ধরে বম জনগোষ্ঠীকে এক প্রকার নজরবন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে অভিযানের নামে পুরো বম জনগোষ্ঠীকে হয়রানি করে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে বছরের পর বছর বিচারহীন অবস্থায়। আপনারা কীসের স্বার্থ রক্ষা করতে চান সেটা আমার প্রশ্ন? আজ রাষ্ট্রের অবহেলা, বিমাতৃসুলভ আচরণের কারণে আমার বোনকে প্রতিনিয়ত ধর্ষণের শিকার হতে হই। রাষ্ট্র যদি একটু মানবিক হয় তাহলে পাহাড়ের এই সমস্যার সমাধান সম্ভব।

পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায়  এবং বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নুংমংপ্রু মারমার সভাপতিত্ব সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং ঢাকাস্থ ম্রো শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি পাতলাই ম্রো, হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা, বাংলাদেশ খিয়াং স্টুডেন্টস ইউনিয়নের প্রতিনিধি জনি খিয়াং ও হিল উইমেন্স ফেডারেশনের ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সম ব শ এই র ষ ট র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

বরখাস্ত-অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান

বিভিন্ন সময় সশস্ত্র বাহিনী থেকে চাকরিচ্যুত একদল ব্যক্তি চাকরি ফিরে পাওয়াসহ কয়েকটি দাবিতে রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিক্ষোভ করেন। তাঁদের বিক্ষোভ ঘিরে সংঘটিত ঘটনাবলি নিয়ে রাতে একটি বক্তব্য দিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)।

আইএসপিআর বলেছে, জাতীয় প্রেসক্লাব চত্বরে রোববার কতিপয় বরখাস্ত-অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্য তাঁদের চাকরিতে পুনর্বহাল, শাস্তি মওকুফ ও আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। শান্তিপূর্ণ সমাধানের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল জাতীয় প্রেসক্লাবে যায় এবং অত্যন্ত ধৈর্য ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁদের বক্তব্য শোনে। প্রতিনিধিদল সেনাবাহিনীর প্রচলিত বিধিবিধান অনুসারে দাবিদাওয়া যাচাই ও সমাধানে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেয়। একই সঙ্গে অভিযোগসমূহ কোনো তৃতীয় পক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে না পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে সরাসরি উপস্থাপনের পরামর্শ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৪ মে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ ধরনের মোট ৮০২টি আবেদন গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে ১০৬টি আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে এবং বাকি আবেদনগুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে‌, যা সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও মানবিকতার সঙ্গে বিবেচনা করছে। তবে দুঃখজনক যে আজকের (রোববার) কিছু অনভিপ্রেত আচরণ এই সুশৃঙ্খল বাহিনীর ঐতিহ্য ও মূল্যবোধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

আইএসপিআর বলেছে, পরপর দুবার সফল বৈঠক শেষে প্রতিনিধিদল ফেরত যাওয়ার সময় কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল বরখাস্ত সেনাসদস্যের উসকানি ওই প্রতিনিধিদলের গাড়ির সম্মুখে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ এবং অশ্রাব্য ভাষায় স্লোগান দেওয়া হয়। সমগ্র দিনজুড়ে সেনাবাহিনী সর্বোচ্চ ধৈর্য ও সহমর্মিতার সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালালেও একপর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুসংখ্যক বিশৃঙ্খল সাবেক সদস্যকে ছত্রভঙ্গ করতে বাধ্য হয়।

যেকোনো ধরনের উসকানিমূলক কার্যকলাপ, জনস্বার্থবিরোধী আচরণ কিংবা বাহিনীর সুনাম ক্ষুণ্ন করতে পারে—এমন কর্মকাণ্ড কখনোই কাম্য নয় বলে উল্লেখ করেছে আইএসপিআর। তারা বলেছে, সব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনী অত্যন্ত ধৈর্য, সহমর্মিতা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে বিষয়টি বিবেচনা করছে। সাংবিধানিক কাঠামো ও শৃঙ্খলার প্রতি শ্রদ্ধা রেখে দায়িত্বশীল আচরণ করার জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আবার সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বরখাস্ত-অব্যাহতিপ্রাপ্ত সাবেক সেনাসদস্যদের বিক্ষোভ ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অবস্থান
  • বিএনপিপন্থী চার আইনজীবীকে কারণ দর্শাতে নোটিশ দিল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম
  • বম নারী ও শিশুদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল
  • ‘এমন কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না, যাতে শিক্ষক–ছাত্রের সম্পর্ক বজায় থাকে না’
  • সবাই জেনেবুঝে যেভাবে বৈশ্বিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করছে
  • আপনাকে যাঁরা পছন্দ করেন না, কীভাবে তাঁদের সামলে চলবেন
  • কর্মক্ষেত্রে নিজের দোষে আত্মবিশ্বাস হারাবেন না
  • আমাদের সংস্কৃতি বদলায়নি, বদলেছে সংহতি
  • ‘ইমোশনালি ম্যাচিউর’ বাবা মায়েরা শিশুর সঙ্গে যে পাঁচ আচরণ করেন