ভোর থেকেই রাঙামাটির বনরূপার সমতাঘাটে ভিড়তে শুরু করে একের পর এক ইঞ্জিনচালিত নৌকা। তাতে বোঝাই থাকে বিভিন্ন ধরনের পাকা মৌসুমি ফল। মূলত সকালের হাট ধরতেই তোড়জোড় শুরু করেন ফল নিয়ে ঘাটে আসা বিক্রেতারা। দল বেঁধে উপস্থিত থাকেন ক্রেতারাও। নৌকা ঘাটে ভেড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বিক্রেতা ও ক্রেতাদের মধ্যে দর কষাকষি। 

বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী বাংলা সনের দ্বিতীয় মাস জ্যৈষ্ঠ চলছে। এটি মধু মাস হিসেবেও পরিচিত। শনিবার (১৭ মে) ভোরে সমতাঘাটে সাপ্তাহিক হাটে গিয়ে দেখা মিলল, ভাসমান প্রতিটি নৌকা আম, লিচু, আনারসে ঠাসা। আশপাশের পাহাড়ি এলাকা থেকে এসব ফল ইঞ্জিনচালিত নৌকায় সমতাঘাটে নিয়ে এসেছেন চাষিরা। ঘাটে নৌকা আসার সঙ্গে সঙ্গে পাইকারদের সঙ্গে তাদের দর কষাকষির পর্ব শুরু হয়। 

ফল চাষি ও ব্যবসায়ীরা জানান, রাঙামাটির হাট-বাজারগুলোতে মৌসুমের প্রথমেই আসে আনারস। সাধারণত চৈত্র-বৈশাখের ফল হলেও বর্তমানে রাঙামাটির বাজারে আনারস মেলে শীতের শুরু থেকেই। শীতকালে ব্যাপক পর্যটক সমাগম থাকায় আগাম আনারস বাজারে উঠলেই ভালো দাম পাওয়া যায়। তাই চাষিরা আগাম চাষ করা আনারস হাটে আনেন বিক্রির জন্য। বর্তমানে এই ফলটি জোড়া ৫০ টাকা থেকে ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। 

আরো পড়ুন:

এপেক্স ট্যানারির প্রয়াত উদ্যোক্তার শেয়ার হস্তান্তর

প্রধান উপদেষ্টার সাক্ষাৎ চায় ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন

চৈত্রে তরমুজ আসে হাটে। বৈশাখের অর্ধেক সময় এই ফলটি বাজারে থাকে। তবে, এখন আর নেই। এরপর ধীরে ধীরে বাজারে আসতে থাকে লিচু। বৈশাখের মাঝামাঝি থেকে দেশি ও চায়না থ্রি জাতের লিচু বাজারে আসতে শুরু করে। মৌসুমী লিচু বর্তমানে হাটে পাওয়া যাচ্ছে। 

চাষিরা জানান, এ বছর প্রাকৃতিক নানা কারণে লিচুর ফলন কম হয়েছে। বাজারে দেশি লিচুর দাম তুলনামূলক কিছুটা কম। দেশি লিচু আকারভেদে ১০০টির দাম ৭০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। চায়না থ্রি ১০০ লিচুর দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা।

তারা আরো জানান, এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে পাকা আম বাজারে আসতে শুরু করেছে। বছরের প্রথম পাকা আম দাম বেশি হলেও বিক্রি হচ্ছে। চাষিরা আম ক্যারেট বা ঝুঁড়িপ্রতি বিক্রি করে থাকেন। সাধারণত কেজি হিসাবে ধরলে দেশি পাকা আম ৫০-১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে, পাহাড়ের জনপ্রিয় আম রাংগুই এখনো বাজারে আসেনি। কিছুদিনের মধ্যে এই আম বাজার দখল করবে বলে জানান চাষিরা। 

ভাসমান নৌকার বেশিরভাগ বর্তমানে দখল করে আছে দেশের জাতীয় ফল কাঁঠাল। এ বছর কাঁঠাল ভালো উৎপাদন হলেও বাজারে দাম নেই বলে জানান চাষিরা। তারা জানান, পাইকাররা কাঁঠালের দাম ২০-২৫ টাকা বলছেন। এই দামে বিক্রি করলে ঘটে আনা ও শ্রমিক খরচ কোনটি উঠবে না তাদের।

নানিয়ারচর উপজেলা থেকে কাঁঠালভর্তি নৌকা নিয়ে সমতাঘাটে আসা অমর জীবন চাকমা বলেন, “এতদূর থেকে কাঁঠাল নিয়ে সমতাঘাটে আসলাম, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। গত সপ্তাহে এক বোট নিয়ে এসেছিলাম, দাম না পাওয়ায় কাঁঠাল নিয়ে ফিরে যাই। এই সপ্তাহে আবারো কাঁঠাল আনলাম, কিন্তু দাম পাচ্ছি না। ২০-২৫ টাকায় পাইকারদের কাছে কাঁঠাল বিক্রি করতে হচ্ছে।”

কাটাছড়ি থেকে আম নিয়ে আসা লাল মোহন চাকমা বলেন, “এই বছর আমের ফলন কম হয়েছে, বেশি গরম এবং বৃষ্টিপাত না হওয়ায় ফলন কম হয়েছে। বাজারে আমের দাম ভালো আছে। লিচুর দামও ভালো পাচ্ছেন বিক্রেতারা।”

সমতাঘাটের বেশিরভাগ মৌসুমী ফল পাইকারা কিনে চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যান। প্রতি সপ্তাহে বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা হাজির হন মৌসুমী ফল কিনতে। আমির হোসেন নামে চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকার বলেন, “কাঁঠাল কম দামে পেয়েছি। আম ও লিচুর দাম বাড়তি।”

রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩ হাজার ৬২৮ হেক্টর জমিতে আম, ৩ হাজার ৩৭৩ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল, ১৯ হাজার ৩ হেক্টর জমিতে লিচু ও ২ হাজার ৫৩৭ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৯৮ হাজার ২০ মেট্রিক টন, লিচুর লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। আনারস উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬৩ হাজার ২৫০ মেট্রিক টন।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো.

মনিরুজ্জামান বলেন, “পার্বত্য অঞ্চলের মাটির বৈশিষ্ট্যের কারণে এখানকার উৎপাদিত ফল স্বাদে ও মানে অনেক ভালো। বিশেষ করে এখানকার কলা ও পেঁপে। এই দুটি ফল সারা বছরই উৎপাদন হয়। এছাড়া রাঙামাটিতে উৎপাদিত লিচু ও কাঁঠাল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন শহরে প্রচুর পরিমাণে যাচ্ছে।” 

তিনি বলেন, “এবার লিচুর ফলন কিছুটা কম হয়েছে। অন্যান্য ফলের যে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জিত হবে বলে আশা করছি। বছরে পার্বত্য এলাকা থেকে যে পরিমাণ ফল উৎপাদন হয়, তার আর্থিক মূল্য ৫০০ কোটি টাকা।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফল ম ট র ক টন সমত ঘ ট ফলন ক উৎপ দ

এছাড়াও পড়ুন:

সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় সিজারিয়ান অপারেশনের সময় এক নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ উঠেছে ক্লিনিকের চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। রবিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে বিষয়টি নিয়ে রোগীর স্বজনদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে নবজাতকসহ তাদেরকে ক্লিনিক থেকে বের করে দেওয়া হয়। ওই রাতেই শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতালে) নেওয়া হয়। 

অভিযুক্ত চিকিৎসক পার্থ সমদ্দার কলাপাড়া পৌর শহরের জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের আবাসিক চিকিৎসক এবং চেয়ারম্যান।শিশুটির

স্বজনদের অভিযোগ, গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) প্রসব বেদনা নিয়ে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভর্তি হন লালুয়ার ইউনিয়নের গোলবুনিয়া গ্রামের সিদ্দিক মিয়ার মেয়ে ও রফিকুলের স্ত্রী মিম বেগম। ওই রাতেই মিমের সিজারিয়ান অপারেশন করেন ডা. পার্থ সমদ্দার। সিজারের কিছুক্ষণ পরই টিকার কথা বলে নবজাতকের পায়ে একটি ইনজেকশন পুশ করা হয়। পরের দিন থেকেই নবজাতকের বাম পা ফুলতে শুরু করে এবং কান্না বাড়তে থাকে। বিষয়টি চিকিৎসক ও নার্সদেরকে অবহিত করলে তারা তাতে কর্ণপাত করেননি। উল্টো ওই ক্লিনিকের কর্মী ও নার্সরা নবজাতকের স্বজনদের সঙ্গে অসদাচরণের পাশাপাশি তাদের ক্লিনিক থেকে বের করে দেন। পরে অন্যত্র এক্সরে করে জানা যায়, সিজারের সময় নবাজতকের পা ভেঙে ফেলেছেন চিকিৎসক। 

নবজাতকের মা মিম আক্তার বলেছেন, বাচ্চা অনবরত কান্না করলে প্রথমে নার্স ও পরে চিকিৎককে অবহিত করা হয়। বাচ্চার বাম ফুলে গেলে তা জানানো হয়। কিন্তু, তারা এর কোনো প্রতিকার না করে আমাদের ধমকাতে থাকেন। ক্লিনিক ছেড়ে চলে যেতে চাপ প্রয়োগ করেন। 

নবজাতকের নানা সিদ্দিক বলেন, টিকার কথা বলে আমার নাতিকে শরীর অবশ করার ইনজেকশন দিয়েছিল নার্সরা। ইনজেকশনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পরপরই আমার নাতি অনেক কান্না করে। আমার স্ত্রী নার্সদের বললে তারা তাকে মারধরের চেষ্টা করে। আমাদের সঙ্গে ক্লিনিকের সবাই অনেক খারাপ আচরণ করেছে। এভাবে রোগীদের সঙ্গে প্রাইভেট ক্লিনিকের কর্মকর্তারাও যদি অসদাচরণ করে, তাহলে আমরা কোথায় যাব?

সিজারের সময় নবজাকের পা ভাঙেনি, দাবি করে জমজম ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চেয়ারম্যান ডা. পার্থ সমদ্দার বলেছেন, আমি শিশু বিশেষজ্ঞ নই। নবজাতককে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। 

কলাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শংকর প্রসাদ অধিকারী বলেছেন, যদি সিজারিয়ান অপারেশনের প্রশিক্ষণ থাকে, তাহলে এনেস্থেসিস্টও সিজার করতে পারেন। তবে, এনেস্থেসিস্ট একাই সিজারিয়ান অপারেশন করতে পারেন না।

ঢাকা/ইমরান/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিজারের সময় নবজাতকের পা ভেঙে ফেলার অভিযোগ