ইসরায়েলকে ‘একটি বিপজ্জনক ক্যান্সারের টিউমার’ বলে আখ্যা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এটিকে ‘উচ্ছেদ করা’ প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। শনিবার তেহরানে এক সরকারি অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইরানের শীর্ষ নেতৃত্বের বিষয়ে করা মন্তব্যকে ‘লজ্জা ও অসম্মানজনক’ হিসেবে উল্লেখ করেন খামেনি। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প এমন ভাষায় কথা বলেছেন, যা তাঁর নিজের জন্য যেমন লজ্জার, তেমনি পুরো আমেরিকান জাতির জন্যও অপমানজনক।’ 

অনুষ্ঠানে খামেনি আরও বলেন, ‘ওই মন্তব্যগুলো এতই নীচু মানের ছিল, সেগুলোর জবাব দেওয়ারও দরকার নেই।’ তিনি অভিযোগ করেন, ট্রাম্প শান্তির কথা বললেও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ ও গণহত্যায় ইসরায়েলকে সমর্থন দিচ্ছেন। এর আগে ট্রাম্প তাঁর মধ্যপ্রাচ্য সফরে ইরানের শাসকদের ‘দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর’ বলে মন্তব্য করেন। এ ছাড়া তিনি দাবি করেন, ইরানের ‘সবুজ পশুচারণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে’। ইরানিরা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎবিহীন থাকে বলেও দাবি করেন ট্রাম্প। এই বক্তব্যের পরই ইরান থেকে এমন প্রতিক্রিয়া এলো।

একই দিনে নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেন, ‘ট্রাম্প একদিকে শান্তির বার্তা দেন, অন্যদিকে গাজায় গণহত্যাকে সমর্থন করেন। আমরা কোনটা বিশ্বাস করব?’

এদিকে আজারবাইজানের সঙ্গে আরাস-২০২৫ নামে একটি যৌথ সামরিক মহড়া শুরু করেছে ইরান। আর্মেনিয়ার সঙ্গে বিরোধপূর্ণ কারাবাখ অঞ্চলে এই মহড়া আগামী বুধবার পর্যন্ত চলবে। ইরানি জেনারেল ভালি মাদানি বলেন, ‘চলমান এই মহড়া সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার এবং সম্ভাব্য হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।’ দুই দেশের মধ্যে আগে সম্পর্কের টানাপোড়েন থাকলেও বর্তমানে তা উন্নয়নের চেষ্টা চলছে।

অন্যদিকে, ইউরোপের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের বার্তা দিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। তেহরানে এক কূটনৈতিক সম্মেলনে তিনি বলেন, যদি ইউরোপ আন্তরিকতা ও স্বাধীন চিন্তাভাবনা দেখায়, তবে ইরান সম্পর্কের একটি নতুন অধ্যায় শুরু করতে প্রস্তুত। খবর আলজাজিরা ও এএফপির।
 

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।

সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।

পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু

১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।

বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।

এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।

আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।

জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাইবিরোধী শক্তির শাস্তি দাবিতে ইবিতে বিক্ষোভ
  • সুদানে আরএসএফের গণহত্যায় আরব আমিরাত ইন্ধন দিচ্ছে কেন
  • গাইবান্ধায় চোর সন্দেহে তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা
  • সুদানে ‘গণহত্যা’ হয়েছে
  • একাত্তরের গণহত্যার জন্য জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে হবে: আলাল
  • চোখে আলো ফেলা নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডার জেরে কৃষককে হত্যা
  • সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী