গোপালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে অভিযান চালিয়েছে গোপালগঞ্জ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদক গোপালগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেলের নেতৃত্বে দুই সদস্যের দল এ অভিযান চালায়।

সহকারী পরিচালক সোহরাব হোসেন সোহেল জানান, প্রশিক্ষকদের উপকরণ বিতরণ রেজিস্ট্রার ২০১৯ সালের ১ অক্টোবরের পর লিপিবদ্ধ নেই। এছাড়া পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের স্লিপ বরাদ্দে অনিয়ম, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ইউপিএস ক্রয়েও অনিয়মের তথ্য পাওয়া গেছে। 

সংগৃহীত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদক প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হবে এবং প্রতিবেদনে অনিয়মের বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলা হবে বলে জানান সহকারী পরিচালক। 
 

আরো পড়ুন:

‘সরকার যাদের বিশ্বস্ত মনে করে, তাদের বেশিরভাগই দুর্নীতি করে’

সাবেক উপাচার্যের দুর্নীতি তদন্তে অসহযোগিতা রাবি প্রশাসনের

ঢাকা/বাদল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ

এছাড়াও পড়ুন:

হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে কারণে পিছিয়ে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে একটি রাজনৈতিক লড়াই শুরু করেছেন, কিন্তু ইতোমধ্যে তিনি এই দ্বন্দ্বে পিছিয়ে পড়েছেন। হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ– বিশ্ববিদ্যালয়টি উদারপন্থি পক্ষপাত ও ইহুদিবিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশাসন হার্ভার্ডের ২.৬৫ বিলিয়ন ফেডারেল তহবিল স্থগিত করেছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কর-মুক্ত মর্যাদা বাতিলের হুমকি দিয়েছে। হার্ভার্ড এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইয়ে নেমেছে, যুক্তি দিয়েছে প্রশাসনের এই পদক্ষেপ সংবিধানবিরোধী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গারবার বলেছেন, হার্ভার্ড একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং ক্যাম্পাসে ইহুদিবিদ্বেষ রোধে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এরই মধ্যে হার্ভার্ড সম্প্রতি তাদের আর্কাইভে একটি প্রামাণিক ম্যাগনাকার্টা আবিষ্কার করেছে, যা স্বৈরাচারবিরোধী প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। জনমত জরিপে দেখা গেছে, অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্পের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এই ধরনের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন। এটি ইঙ্গিত দেয়, ট্রাম্পের হার্ভার্ডের বিরুদ্ধে লড়াই কৌশলগতভাবে ভুল এবং তিনি ইতোমধ্যে এই লড়াইয়ে পিছিয়ে পড়েছেন।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও তাঁর সহযোগীরা মনে করছেন, আমেরিকানরা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি ব্যাপক বিরূপ মনোভাব পোষণ করেন। এই অনুমান একেবারেই ভুল। আমাদের উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো নিঃসন্দেহে নিখুঁত নয় এবং জনগণও সেগুলোকে ত্রুটিহীন ভাবে না। কিন্তু অধিকাংশ আমেরিকানই এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল গুরুত্ব স্বীকার করেন এবং ট্রাম্পের আক্রমণের বিরোধিতা করেন।

এ মাসের শুরুর দিকে এপি/এনওআরসি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়-সংক্রান্ত ইস্যুতে ট্রাম্পের কর্মকাণ্ডের প্রতি অস্বীকৃতির হার অনুমোদনের চেয়ে ১৪ পয়েন্ট বেশি। অর্থাৎ অধিকাংশ আমেরিকান ট্রাম্প যা করছেন, তা পছন্দ করছেন না।
এই জরিপের অন্যান্য তথ্য ব্যাখ্যা করে কেন এমন মনোভাব: টিউশন ফি নিয়ে জনমনে বাস্তব উদ্বেগ রয়েছে– ৫৮ শতাংশ আমেরিকান অন্তত খুবই চিন্তিত টিউশন খরচ নিয়ে। এর বিপরীতে তথাকথিত ‘উদারপন্থি পক্ষপাত’ খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। মাত্র ৩৬ শতাংশ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন, আর ৩২ শতাংশ একেবারেই চিন্তিত নন।
রক্ষণশীলরা দীর্ঘদিন ধরেই কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উদারপন্থাকে আক্রমণ করে আসছেন– এর শুরু হয়েছিল ১৯৫১ সালে উইলিয়াম এফ বাকলির  ‘গড এন্ড মান অ্যাট ইয়েল’ বই প্রকাশের মাধ্যমে।
তবে সেই সময়ে বাকলির বক্তব্য পুরোপুরি সঠিক ছিল না এবং ২০ বছর পর যখন সেমুর মার্টিন লিপসেট ও এভারেট কার্ল ল্যাড প্রথমবার জাতীয় পর্যায়ে অধ্যাপকদের রাজনৈতিক মতাদর্শ নিয়ে জরিপ চালান, তখন দেখা যায়–একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, বরং একটি শক্তিশালী উদারপন্থি বহর বিদ্যমান। সেই জরিপে ৪৬ শতাংশ অধ্যাপক নিজেকে উদারপন্থি বলেন, ২৭ শতাংশ ছিলেন মধ্যপন্থি, আর ২৮ শতাংশ রক্ষণশীল।
এই শতাব্দীতে, ২০২৪ সালে ফায়ার পরিচালিত এক জরিপে যুক্তরাষ্ট্রের ৫৫টি চার বছরের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় হাজার অধ্যাপকের মধ্যে ৬৪ শতাংশ নিজেকে উদারপন্থি, ১৯ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং ১৮ শতাংশ রক্ষণশীল বলে উল্লেখ করেন।
ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এই অনুপাত কিছুটা ভিন্ন হতে পারে– যেমন হার্ভার্ডে উদারপন্থিদের হার ৭৩ শতাংশ, আর ব্রিগহাম ইয়াং ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস, ডালাসে রক্ষণশীলদের সংখ্যা সামান্য বেশি। হার্ভার্ডের এক ছাত্র সংবাদপত্রের জরিপে দেখা গেছে, ৭৭ শতাংশ শিক্ষক নিজেকে উদারপন্থি বা অতিউদারপন্থি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, ২০ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং মাত্র ৩ শতাংশ রক্ষণশীল। ডিউকে ‘দ্য ক্রনিকল অব হিগ্যের এডুকেশন’-এর জরিপে দেখা গেছে ৬২ শতাংশ শিক্ষক উদারপন্থি, ২৪ শতাংশ মধ্যপন্থি এবং ১৪ শতাংশ রক্ষণশীল।
এই ধরনের একমুখী রাজনৈতিক ঝোঁক অনেকের জন্য স্বস্তিকর নয়। সার্বিকভাবে মাত্র ২৭ শতাংশ আমেরিকান মনে করেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো রক্ষণশীলদের জন্য ‘সম্মানজনক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ’ প্রদান করে।
তবে শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিভঙ্গি এতটা স্পষ্ট নয়। গ্যালাপের এক জরিপে দেখা গেছে, চার বছরের কলেজে পড়ুয়া ডেমোক্র্যাটদের ৭৪ শতাংশ ও রিপাবলিকানদের ৭৩ শতাংশ মনে করে, তাদের স্কুল মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখছে।
তারপরও এমন এক দেশে যেখানে উদারপন্থিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ নয়, উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় আদর্শগত বৈচিত্র্য প্রতিফলিত হয় না এবং অতীতে কখনোই হতো না। তবে রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ হলো– ভোটাররা উদারপন্থি পক্ষপাতকে খুব একটা গুরুত্ব দেন না, ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করেন এবং এসব প্রতিষ্ঠানের মূল্য অনুধাবন করেন।

একটি আগের এপি/এনওআরসি জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৩০ শতাংশ ভোটার মনে করেন, রাজ্য সরকারগুলোর উচিত তাদের অর্থায়নে পরিচালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠ্যসূচিতে হস্তক্ষেপ করা। বিপরীতে ৬৮ শতাংশ মনে করে, এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য সরকারগুলোর থাকা উচিত নয়। ফেডারেল সরকার যদি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করে, তবে সেটি আরও অজনপ্রিয় হবে। একই সময়ে, ভোটাররা কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সামাজিক উপকারও প্রত্যক্ষ করেন।
ট্রাম্প, সম্ভবত হার্ভার্ডকে বিশেষভাবে ঘৃণার লক্ষ্য মনে করছেন। কিন্তু ওয়াশিংটন পোস্টের এক জরিপে দেখা গেছে, হার্ভার্ডের শিক্ষকের নিয়োগ, ছাত্র ভর্তির পদ্ধতি এবং শিক্ষাক্রমে ফেডারেল হস্তক্ষেপে ট্রাম্পের পক্ষে মাত্র ৩২ শতাংশ আমেরিকান। বিপরীতে ৬৬ শতাংশ হার্ভার্ডের পক্ষ নিয়েছ, যারা বলছে এটি ‘একটি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে তাদের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ।’
আরও এক প্রমাণ পাওয়া যায় ইউ গভ-এর এক জরিপে, যেখানে দেখা যায় মাত্র ৩৫ শতাংশ মানুষ সমর্থন করেন ‘ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে হার্ভার্ডের শিক্ষক নিয়োগ, ছাত্র ভর্তি ও শিক্ষাক্রম পরিচালনায় বেশি ভূমিকা নেওয়া।’ অর্ধেক মানুষ এই উদ্যোগের বিরুদ্ধে।
ইতিহাসে ট্রাম্প তাঁর প্রতিপক্ষ বেছে নিতে রাজনৈতিকভাবে পারদর্শী প্রমাণিত হয়েছেন। তবে এবার হয়তো তিনি ভুল প্রতিপক্ষ বেছে নিয়েছেন।

ছাবেদ সাথী: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী লেখক ও সাংবাদিক


 

সম্পর্কিত নিবন্ধ