উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি এখন মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি
Published: 19th, May 2025 GMT
সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক তালুকদারকে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি করা হয়েছে। এছাড়াও ২১ সদস্যের কমিটির ১৮ জনই আওয়ামী লীগ সমর্থক বলে অভিযোগ উঠেছে। কমিটি অনুমোদনের পর এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা।
জানা যায়, ২৪ এপ্রিল সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি অনুমোদন দেন জেলা শাখার আহ্বায়ক এবং জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুর রহমান দুলাল। কমিটিতে এনামুল হক তালুকদারকে সভাপতি এবং আব্দুল গফুর সরকারকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এছাড়াও সাবেক বন কর্মকর্তা আলী কবির হায়দারসহ ১৮ জন আওয়ামী সমর্থককে বিভিন্ন পদে রাখা হয়েছে।
কামারখন্দের মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভদ্রঘাট ইউনিয়নের ঝাটিবেলাই গ্রামের বাসিন্দা এনামুল হক উপজেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন। সর্বশেষ কমিটিতেও তিনি সহ-সভাপতি। তিনি আওয়ামী লীগ মনোনীত ইউপি চেয়ারম্যানও ছিলেন। এনামুল হক সাবেক মন্ত্রী পরিষদ সচিব ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বস্ত আমলা কবির আনোয়ারের নিকটতম আত্মীয়। কবির বিন আনোয়ারের মাধ্যমে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারি কাজসহ নানা ধরনের সুযোগ সুবিধা নেন। এছাড়াও তার ছোট ভাই এমদাদুল হককে করা হয়েছে মুক্তিযোদ্ধা দলের অর্থ সম্পাদক। বিগত দিনে তিনিও ভদ্রঘাট ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পদে ছিলেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল গফুর সরকারকে। তিনিও স্থানীয় আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব দিয়ে এসেছেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এছাড়াও সহসভাপতি আব্দুল ওয়াহাব, আব্দুর রহমান সরকারও আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন। সহ-সভাপতি আলী কবির হায়দার সিরাজগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক ড.
মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। কিন্তু আমাকে না জানিয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সদস্য করা হয়েছে।’
কমিটির সদস্য রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলের সঙ্গে যুক্ত না। আমাকে এই কমিটিতে সদস্য করা হয়েছে। এসব কমিটিতে আমি থাকতে চাই না।’
কমিটির সহ-সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা আলী কবির হায়দার বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগ বা বিএনপি করি না। তবে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবশ্যই বঙ্গবন্ধুর সৈনিক। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমার কয়েকটি বইও লেখা রয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ নিয়েও বই আছে আমার। মুন্না সাহেব আমাদের এমপি ছিল, তার সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি। আমি মুক্তিযোদ্ধার স্বার্থটা দেখি। ওরা একটা কমিটি করেছে, আমি বলেছি, যেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থ আছে, সেখানে আমি আছি। এনামুল হক আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও আব্দুল গফুরও আওয়ামী লীগ করে।’
এসব বিষয়ে জানতে নতুন কমিটির সভাপতি এনামুল হক রঞ্জুর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তা বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর সরকার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন স্বীকার করে বলেন, ‘সভাপতি রঞ্জু সাহেব ঠিকাদারির কাজে এ মুহূর্তে পঞ্চগড়ে আছেন। তিনি আসার পর এ বিষয়ে কথা বলব।’
কামারখন্দ উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাতে রাব্বী উথান বলেন, ‘এই কমিটির মধ্যে মাত্র তিনজন বিএনপি সমর্থক। আর সবাই আওয়ামী লীগের। আমরা জেলা কমিটির আহ্বায়কের কাছে অভিযোগ দিয়েছি। তিনি বলেছিলেন, এ বিষয়ে তিনি জানেন না। তখন আমরা বলেছিলাম, জানেন না তাহলে কমিটি ভেঙে দেন। কিন্তু কমিটি এখনও ভেঙে দেননি। আমাদের নেতা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু ভাইকে বিষয়টি জানাব।’
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি বদিউজ্জামান ফেরদৌস বলেন, ‘আওয়ামী লীগ দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা দলের কমিটি করা হয়েছে। তারাই যদি কমিটিতে থাকে, তাহলে আন্দোলন করে লাভ কি হলো?’
এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল সিরাজগঞ্জ জেলা শাখার আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি আজিজুর রহমান দুলাল বলেন, ‘কমিটি অনুমোদনের পর জেনেছি যে ৯০ শতাংশ সদস্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অনুমোদিত কমিটি তো সহজে বাতিল করা যায় না। তবে কমিটির কার্যক্রম আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। পরবর্তীতে সকলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স র জগঞ জ আওয় ম ল গ ক ম রখন দ স র জগঞ জ ব এনপ র স র জন ত কম ট র কম ট ত অন ম দ সরক র সদস য উপজ ল আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করতে হবে: সিপিবি
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেছেন, নির্বাচনব্যবস্থার আমূল সংস্কার করে অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে। অতীতে নির্বাচন কমিশনকে ধ্বংস করা হয়েছে। কাজেই এখন জনগণ বুঝতে চায়, তারা ভোট দিতে পারবে কি না।
আজ সোমবার বিকেলে জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে এ কথা বলেন রুহিন হোসেন। সংস্কার নিয়ে ঐকমত্য গঠনের লক্ষ্যে আজ বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সঙ্গে বর্ধিত আলোচনায় বসে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
বিকেল তিনটায় আলোচনার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, দুই মাস ধরে চলা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার প্রথম ধাপ আজকে শেষ হচ্ছে। এরপর দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরু হবে। প্রথম পর্বের আলোচনা শিগগিরই জনসমক্ষে তুলে ধরবেন তাঁরা।
সংস্কার নিয়ে এখন পর্যন্ত ৩৩টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, আনুষ্ঠানিক আলোচনার বাইরে অনেক রাজনৈতিক দল অনানুষ্ঠানিক মতামতও দিয়েছে। সবার মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদ তৈরির দিকে এগিয়ে যাবেন তাঁরা।
নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কারের অনেক প্রস্তাব বইয়ে থাকলেও প্রশ্নমালায় নেই উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, জনগণ শুধু নির্বাচন চায় না। তারা বুঝতে চায়, কারসাজি করে আবারও জনদৃষ্টি ভোট থেকে অন্যদিকে সরানো হবে কি না। পুরোনো ভয়ের রাজত্ব কায়েম হবে কি না।
সংস্কারের সুনির্দিষ্ট প্রশ্নগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে সিপিবি সাধারণ সম্পাদক বলেন, জনগণ মতামত দিলে অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব দূর হয়ে যাবে। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য জনমতের প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার ও অন্য জনগুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের প্রস্তাবগুলো জনসমক্ষে আসছে না উল্লেখ করে রুহিন হোসেন বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের অর্জিত বাংলাদেশে বৈষম্য দূর হবে—সেই লক্ষ্যে কাজ করতে প্রস্তুত রয়েছেন তাঁরা।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেনের নেতৃত্বে প্রতিনিধিদলে রয়েছেন সহকারী সাধারণ সম্পাদক মিহির ঘোষ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অনিরুদ্ধ দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, হাসান তারিক চৌধুরী, আবিদ হোসেন ও লুনা নূর।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আলোচনায় আছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, কমিশনের সদস্য সফর রাজ হোসেন, বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।