ভূগর্ভের পানি তুলে বোতলজাত করে ব্যবসা করছে ‘অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্ট’ নামে একটি কোম্পানি। বাবুগঞ্জের রহমতপুরে অবস্থিত এ প্রতিষ্ঠানটি শুরুতে কারখানার জন্য একটি গভীর নলকূপের অনুমোদন নেয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটারের অনুমতি নিয়ে আরও তিনটি কূপ স্থাপন করে এক লাখ লিটার পানি তুলে বিক্রি শুরু করে। পানি নিয়ে অমৃতের এ অনাচারে ভূগর্ভের পানির স্তর নেমে গেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পানির জন্য হাহাকার
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বহুতল ভবন, কারখানা নির্মাণ এবং এসবের জন্য পানির চাহিদা মেটাতে বাবুগঞ্জে অপরিকল্পিতভাবে পাম্প বসানো হয়েছে। এতে পানির স্তর নেমে গেছে। ৮০ ভাগ নলকূপ এখন অকেজো। আগে যেখানে ৭৫০ থেকে ৮০০ ফুট নিচে গেলে নলকূপে মিলত বিশুদ্ধ পানি, সেখানে এখন সাড়ে ৯০০ ফুট নিচে যেতে হচ্ছে। বৈদ্যুতিক মোটরেও পানি তোলা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট দেখা দিয়েছে ছয় ইউনিয়নের ৮৭টি গ্রামে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থা মাধবপাশা ইউনিয়নের। এখনই পদক্ষেপ না নিলে উপজেলাজুড়ে পানির হাহাকার আরও বাড়বে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোহাম্মদ সুমন বলেন, অমৃত গ্রুপ পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা (ওয়ারপো), বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই) এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়েছে কিনা, সেটি তদন্তের পর সত্যতা পেলে কেবল সংস্থাটিকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে; এর আগে নয়।
এদিকে, পানি নিয়ে অমৃতের অনাচার থেকে মুক্তি পেতে এলাকাবাসীর পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযোগ করেছেন বরিশাল ক্যাডেট কলেজ এলাকার বাসিন্দা আইনজীবী এম মাসুদ হাওলাদার। তিনি বলেন, অমৃত গ্রুপ সরাসরি ভূগর্ভ থেকে মোটা পাইপ ও পাম্পের সাহায্যে লাখ লাখ লিটার পানি তুলে বোতলজাত করে বিক্রি করছে। তাদের বলা হয়েছে, পানি বিক্রির ব্যবসা চালাতে হলে নদী কিংবা বিকল্প উৎস থেকে পানি সংগ্রহ করতে হবে। ৯ মে পর্যন্ত আলটিমেটাম দেওয়া হয়েছিল। এখন পর্যন্ত তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
মাধবপাশা ইউনিয়নের পূর্ব পাংশা গ্রামের শাহনাজ পারভীনের অভিযোগ, তাঁর বাড়ির গভীর নলকূপে পানি উঠছে না। আশপাশের বাড়িগুলোরও একই অবস্থা। কিছুদিন ফিটকিরি দিয়ে, ফুটিয়ে বিশুদ্ধ করে পুকুরের পানি পান করেছেন। বর্তমানে এক কিলোমিটার দূরে সিকদারবাড়ির হাউজিংয়ের নলকূপ থেকে পানি সংগ্রহ করছেন। সেখানেও কয়েকবার চাপার পর নলকূপ থেকে পানি ওঠে।
যেভাবে অনিয়মের শুরু
মাধবপাশা ইউনিয়নের পাংশা গ্রামে দেড় যুগ আগে অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের যাত্রা শুরু। প্যাকেট গুঁড়া মশলা, বোতলজাত সরিষার তেল বাজারজাত করত প্রতিষ্ঠানটি। ২০২৩ সালে ওয়ারপো থেকে যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ নামে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে বোতলজাত (অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটার) পানি উৎপাদন ও বিপণন শুরু করে। পুরোনো কারখানার এক পাশে ওয়াটার প্লান্ট স্থাপন করে তারা। প্রথমে একটি ছয় ইঞ্চি ব্যাসের কূপের অনুমোদন নিয়ে পরে অবৈধভাবে আরও তিনটি কূপ খনন করা হয়। প্রতিদিন ১৬ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও চারটি কূপ থেকে গড়ে এক লাখ লিটার পানি উত্তোলন করা হচ্ছে। গত এপ্রিল মাসে ৭ লাখ ৫০ হাজার লিটার পানি উত্তোলন করেছে। অভিযোগ পেয়ে কারখানা পরিদর্শনে যায় ওয়ারপো পরিদর্শক টিম।
যা বলছে ওয়ারপো
সমকালের পক্ষ থেকে ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে তারা জানায়, যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ ৯৬০ ফুট গভীরতায় ৬ ইঞ্চি ডায়ামিটার পাইপের সাহায্যে প্রতিদিন গড়ে ২৫ হাজার লিটার পানি উত্তোলনের জন্য আবেদন করেছিল। ১৬ হাজার লিটার পানি তোলার অনুমতি দেওয়া হয়। তারা আরও তিনটি কূপের মাধ্যমে ৮০ হাজার লিটার পানির জন্য আবেদন করে। এ আবেদন মঞ্জুর হয়নি। এরপরও তারা বড় একটি কূপ থেকে ৩৫ হাজার লিটার পানি তুলছে এমন প্রমাণ পেয়ে তাৎক্ষণিক সেটি বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়।
ওয়ারপো জেলা কার্যালয়ের ইনচার্জ উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম রয়েল বলেন, অনুমোদনের আগে অন্য কোনো কূপ থেকে পানি তুললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে অমৃত গ্রুপকে সাবধান করা হয়েছে।
এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অমৃতের প্রোডাকশন ম্যানেজার বিজয় কৃষ্ণ ঘোষ। তাঁর দাবি, ১৬ হাজারের অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন ১৪ হাজার লিটার পানি আহরণ করছেন। এতে এলাকাবাসীর টিউবওয়েলে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে অনেক বেশি পানি সিটি করপোরেশন, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান উত্তোলন করছে। তবে ভূগর্ভের পানি তুলে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রির জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদনের কাগজ দেখাতে পারেননি তিনি। কাগজপত্র অমৃত গ্রুপের হেড অফিসে রক্ষিত আছে বলে দাবি তার।
জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক কাজী সাইফুদ্দীন জানান, অমৃত কনজ্যুমার ফুড প্রোডাক্টসের নামে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র আছে। যোগমায়া ফুড অ্যান্ড বেভারেজ বা অমৃত ড্রিংকিং ওয়াটারের নামে পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে আলাদা ছাড়পত্র ইস্যু করা হয়েছে কিনা জানা নেই।
ইউএনও ফারুক আহমেদ বলেন, ‘অমৃত কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। তারা কোন প্রক্রিয়ায় কী পরিমাণ পানি ভূগর্ভের উৎস থেকে তুলেছে, তার সপক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সাত কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে। কাগজপত্র পাওয়ার পর পানি ব্যবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ক গজপত র ন র জন য ১৬ হ জ র ব তলজ ত র নলক প র অন ম ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষ স্নাতকে দ্বৈত ভর্তি, বাতিলের জরুরি নোটিশ
২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাঁরা ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন কোর্সে দ্বৈত ভর্তি হয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০ মে তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের ‘দ্বৈত ভর্তি’ বাতিল করতে জরুরি নোটিশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
দরকারি তথ্য
১. সংযুক্ত তালিকা অনুযায়ী তাঁদেরকে শেষবারের মতো ২০ মে ২০২৫ তারিখের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (পাস)/স্নাতক (সম্মান) এবং প্রফেশনাল/স্নাতক (পাস) ভর্তি বাতিলের সুযোগ দেওয়া হলো।
আরও পড়ুনজাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ১২টি বিষয়ে ডিপ্লোমা, ভর্তির শেষ সময় ২৪ মে২১ ঘণ্টা আগে২. তালিকায় প্রকাশিত দ্বৈত ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেসব শিক্ষার্থী উক্ত তারিখের মধ্যে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বাতিল করবেন না, তাঁদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (পাস) ও স্নাতক (সম্মান) প্রফেশনাল শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন কার্ড ইস্যু করা হবে না এবং তাঁদের উক্ত ভর্তি বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে তাঁদের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি বহাল থাকবে।
আরও পড়ুনপ্রাথমিকে ছুটি কমিয়ে পাঠদানের সময় বাড়ানোর পরিকল্পনা হচ্ছে: প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা১৭ মে ২০২৫৩. দ্বৈত ভর্তির তালিকায় প্রকাশিত কোনো শিক্ষার্থী যদি দাবি করেন যে তিনি তাঁর আগের ভর্তি ইতিমধ্যে বাতিল করেছেন এবং ২০ মে ২০২৫ তারিখ পর্যন্ত যেসব শিক্ষার্থীরা ভর্তি বাতিল করবেন, তাঁদের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি ফরমসহ আগের ভর্তি বাতিলের প্রমাণ (‘ভর্তি বাতিলপূর্বক মূল মার্কশিট ফেরত দেওয়ার অনুমতি’পত্রের কপি ও রেজিস্ট্রেশন কার্ড) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২২ মে ২০২৫ তারিখের মধ্যে পাঠাতে হবে। উল্লেখ্য, যেসব শিক্ষার্থী এর আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়েছেন, সেসব শিক্ষার্থীদের নতুন করে কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
* বিস্তারিত তথ্য জানতে ওয়েবসাইট: http://app11.nu.edu.bd