অর্থ ছাড় ও বিল দাখিলের সময় বেঁধে দেওয়া হলো
Published: 22nd, May 2025 GMT
সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের জন্য চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের অর্থ ছাড় (অবমুক্তি) এবং বিল দাখিলের সময়সীমা ঠিক করে দিয়েছে সরকার। পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অর্থ অবমুক্তি ও বিল দাখিলের বিষয়ে বৃহস্পতিবার একটি পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ।
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে জারি করার কথা উল্লেখ করে পরিপত্রে বলা হয়, পরিচালন ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় অর্থ ছাড়ের সময়সীমা আগামী ১৭ জুন। তবে পরিচালন ও উন্নয়ন—উভয় খাতে নতুন ব্যয় বিল দাখিলের সময়সীমা আরও চার দিন বাড়িয়ে ২২ জুন করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, মন্ত্রণালয় এবং বিভাগগুলোকে পরিচালন ও উন্নয়ন—উভয় খাতে ফেরত বিল দাখিল করতে হবে ২৫ জুনের মধ্যে। তবে উভয় বাজেটের আওতায় বিল নিষ্পত্তি ও চেক ইস্যুর সর্বশেষ তারিখ ২৬ জুন।
পরিপত্রে আরও বলা হয়, বাজেট বরাদ্দের আওতায় বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আমদানি ও মূল্য পরিশোধের সর্বশেষ তারিখ ২৬ জুন। যেসব ক্ষেত্রে ৩০ জুনের মধ্যে আমদানি ও মূল্য পরিশোধের প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে না, সেসব ক্ষেত্রে অসুবিধার কারণগুলো চলতি অর্থবছরে স্থাপিত ঋণপত্রের (এলসি) বিপরীতে আগামী অর্থবছরে পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমাণ ইত্যাদি জানাতে হবে। সে ক্ষেত্রে কারণগুলো বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদন অর্থ বিভাগে পাঠাতে হবে ১৯ জুনের মধ্যে।
এতে আরও বলা হয়, বাজেট বরাদ্দের বিপরীতে কোনো আমদানি এলসি স্থাপন বা নিষ্পত্তির সর্বশেষ তারিখ ২৬ জুন। তবে সকল প্রকার বেতন–ভাতা সংক্রান্ত বিল এ সময়সীমার আওতামুক্ত থাকবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, নিরীক্ষা কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া এবং আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে কাজগুলো করা দরকার। অর্থবছরের শেষ দিকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর বা সংস্থা দাখিল করা নিয়মিত বিল ও ফেরত বিলের ওপর নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষ পূর্ব নিরীক্ষা করে থাকে। এ কাজ সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে অর্থবছরের শেষে ব্যয় বিল দাখিল, চেক ইস্যু ও চেক নগদায়নের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা বজায় রাখা দরকার। আর এ কারণেই চলতি অর্থবছরের ব্যয় বিল দাখিল, চেক ইস্যু ও চেক নগদায়নের সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র সময়স ম র আওত আমদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা
একের পর এক জটিলতায় পড়ছে চট্টগ্রাম ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পটি। অর্থ বরাদ্দের সংকট, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বকেয়া নিয়ে বিরোধ, কাজের ধীরগতি—সব মিলিয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজ বর্ধিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
প্রায় ৫ হাজার ২০৪ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২২টি ওয়ার্ডের ২০ লাখ মানুষের জন্য আধুনিক পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা গড়ে তোলার কথা রয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে ৭০ শতাংশ। এই সময়ে এসে নানা জটিলতায় ‘বিপদে’ পড়েছে ওয়াসা।
‘চট্টগ্রাম মহানগরের পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থা স্থাপন’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন পায়। শুরুতে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩ হাজার ৮০৮ কোটি টাকা। এরপর প্রায় ১ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় বেড়েছে। মেয়াদ বেড়েছে তিন দফা। ২০২৩ সালের মধ্যে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা হয়নি।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা। প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।প্রকল্প পরিচালক, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এই নির্বাচনী মৌসুমে প্রকল্প বরাদ্দে আরও অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। অর্থ না এলে প্রকল্পের কাজ স্থবির হয়ে পড়বে। ২০২৭ সালের শুরুতে এ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কাজ শেষ না হলে এই পরিকল্পনা পিছিয়ে যাবে।
জানতে চাইলে ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, গত বছরই অর্থ বরাদ্দের অভাবে অনেক কাজ আটকে ছিল। এ বছরও চাহিদা অনুযায়ী বরাদ্দ না পেলে সময়সীমা রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে অর্থ বরাদ্দ নিয়ে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরে বরাদ্দের বিষয়ে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহেদীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।
বর্তমানে অর্থ বরাদ্দের সংকট নিয়ে বিপাকে আছে ওয়াসা। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সংস্থাটি চেয়েছিল ১ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা, সরকারের কাছ থেকে পেয়েছে ৭৪৪ কোটি। চলতি অর্থবছরে (২০২৫-২৬) দরকার ১ হাজার ৪০ কোটি টাকা, কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে ৬৭৬ কোটি টাকা।প্রকল্পের নথিতে বলা হয়, দৈনিক ১০ কোটি লিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি পয়োশোধনাগার, দৈনিক ৩০০ ঘনমিটার পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি সেপটিক ট্যাংকের বর্জ্য শোধনাগার, ২০০ কিলোমিটার পয়োনালা নির্মাণ করা হবে। এতে চট্টগ্রাম নগরের ২২টি ওয়ার্ডের ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্রকল্পের আওতায় আসবে। আর উন্নত পয়োনিষ্কাশনব্যবস্থার সুফল পাবেন ২০ লাখ মানুষ।
এখনো কাজ বন্ধ, অর্থের টানাপোড়েন
প্রকল্পের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাইয়ং ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড উপঠিকাদারদের অর্থ পরিশোধ না করায় সাতটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠান কাজ বন্ধ রেখেছে।
হালিশহর এলাকায় পাইপ বসানোর কাজ করছে মেসার্স নূর এন্টারপ্রাইজ, এসএ ইঞ্জিনিয়ারিং, জাহান এন্টারপ্রাইজ, দেশ কন্ট্রাক্টরস অ্যান্ড ডেভেলপার লিমিটেড, ইনাস এন্টারপ্রাইজ, পোর্ট হারবার ইন্টারন্যাশনাল ও পাওয়ার বাংলা করপোরেশন। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর দাবি, তাদের প্রায় ৪৬ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার তাইয়ং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনায় উপঠিকাদাররা দুটি শর্তে কাজ শুরুতে রাজি হয়েছেন—আগামী সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বকেয়া পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি।
জানতে চাইলে এসএ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রকল্প পরিচালক আহাদুজ্জামান বাতেন বলেন, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছিল। এরপর ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত করা কাজের টাকা আমরা পাইনি। আগেও একই কারণে কাজ বন্ধ রাখতে হয়েছিল, পরে আশ্বাস পেয়ে শুরু করেছিলাম। এবারও সেই পরিস্থিতি।’
আহাদুজ্জামান জানান, ‘মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনায় আমরা দুটি শর্ত দিয়েছি—সোমবারের মধ্যে ৫০ শতাংশ বিল পরিশোধ এবং ডিসেম্বরের মধ্যে বাকি অর্থ নিষ্পত্তি। এ দুই শর্তে কাজ আবার শুরু করছি।’