ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র হিসেবে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনের শপথ নিতে আর বাধা নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে রিট খারিজ হওয়ার পরও ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন ইশরাক সমর্থকরা। আদালতের রায়ের পর সরকার কী করে, তা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করবেন তারা। সরকারের কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার কাছে কাকরাইলে অবস্থান নিয়ে ইশরাক হোসেন বলেছেন, আদালতের রায়ের মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের প্রাথমিক বিজয় হয়েছে। একটা জিনিস স্পষ্ট বলতে চাই, রায়ের বিষয়, শপথের বিষয় আলাদা। আর এটি হয়ে যাওয়া মানে প্রথম যে দাবি করেছিলাম, ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদে থাকা দুই উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবি, সেটি দাবির জায়গায় থাকবে।
গতকাল দুপুরে আদালত রিট খারিজ করে দেওয়ার পরও ইশরাক রাজপথ না ছাড়ার ঘোষণা দেন। পরে দলীয় সিদ্ধান্তে তিনি ৪৮ ঘণ্টার সময় বেঁধে দিয়ে এ অবস্থান থেকে সরে আসেন।
গত ১৪ মে থেকে ‘ঢাকাবাসী’র ব্যানারে সাবেক সচিব মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ইশরাককে মেয়র পদে বসানোর দাবিতে সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন চলছিল। এক পর্যায়ে গত বুধবার সন্ধ্যায় ইশরাক নিজেও তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা দিয়ে কাকরাইলে অবস্থান নেন।
এদিকে, রায় ঘোষণার পর থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ভার্চুয়ালি উচ্চ আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যেহেতু আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে, সেহেতু সড়ক অবরোধ না রেখে সরে যাবেন। আশা করছি, সরকারের সুমতি হবে। তারা ইশরাককে শপথের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবে। পরিস্থিতি সহজ করে তোলার চেষ্টা করবে। বর্তমানে রাজনৈতিক সংকট দূর করার একটি মাত্র পথ হচ্ছে দ্রুত নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা। এখানে অন্য কথা বলে লাভ নেই।
ইশরাক সমর্থকদের আন্দোলন ঘিরে প্রতিদিনই দক্ষিণ ঢাকা কার্যত অচল থাকে। নগর ভবন থেকে ধীরে ধীরে আন্দোলন গুলিস্তান, হাইকোর্ট, প্রেস ক্লাব, মৎস্য ভবন হয়ে যমুনা পর্যন্ত পৌঁছে। এসব এলাকার সড়ক অবরোধ করে রাখায় নগরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগে পড়ে। রিটের রায় ঘোষণার সময় কয়েক দফা পেছানোর পর গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আদালত রিট খারিজ করে দিলে ইশরাক সমর্থকরা উল্লাসে মাতেন। অবশ্য এই আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করবেন বলে জানিয়েছেন রিটকারীর আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা।
বিচারপতি মো.
রিট খারিজ হওয়ার ফলে ইশরাককে মেয়র পদে শপথ পড়াতে আইনি বাধা নেই বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, রিট খারিজের পর এখন ইশরাককে শপথ পড়ানো না হলে সেটি আদালত অবমাননা হবে।
অন্যদিকে, রিটকারীর আইনজীবী জহিরুল ইসলাম মুসা বলেন, ‘আজই (বৃহস্পতিবার) সম্ভব না হলে আগামী রোববার আপিল করা হতে পারে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
আদালতে রিট আবেদনকারীর পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন। ইশরাকের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আইনজীবী কায়সার কামাল। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান ও খান জিয়াউর রহমান।
মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, চ্যালেঞ্জ করতে হলে আপিল ট্রাইব্যুনালে যেতে হবে। সেখানে কেউ যাননি। তার (রিটকারী) মামলা করার অধিকার নেই, তা নিয়ে (আদালত) বড় অবজারভেশন দিয়েছেন। জনস্বার্থে যে কেউ মামলা করতে পারেন। তবে সেটি ভিন্ন। যেমন– পরিবেশ, মানবাধিকার, মৌলিক অধিকার নিয়ে মামলা করতে পারে। এগুলো জনস্বার্থের মামলা। এটি (রিট) জনস্বার্থের মামলা না। তিনি (রিটকারী) ঢাকা সিটির ভোটার হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, সেটি দেখাতে পারেননি।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নূর তাপসকে মেয়র ঘোষণা করা হয়। গেল ২৭ মার্চ তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল। রায়ের কপি পাওয়ার পর ২২ এপ্রিল গেজেট প্রকাশের বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কিন্তু পরামর্শ পাওয়ার আগেই ২৭ এপ্রিল ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে ইসি।
গত ১৪ মে মো. মামুনুর রশিদ নামে এক ব্যক্তির পক্ষে আইনজীবী কাজী আকবর আলী হাইকোর্টে রিট করেন। রিটে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে দেওয়া রায় স্থগিতের পাশাপাশি তাঁকে শপথ না পড়ানোর নির্দেশনা চাওয়া হয়।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইশর ক হ স ন উপদ ষ ট আইনজ ব র টক র য় র পর ইশর ক গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাতক্ষীরায় সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় ৩২ জনের জামিন
সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৩২ জন সাংবাদিক আদালতে স্বেচ্ছায় হাজির হয়ে জামিন নিয়েছেন।
সোমবার (৭ জুলাই) সাতক্ষীরা চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতের বিচারক রাফিয়া সুলতানা তাদের জামিন মঞ্জুর করেন।
সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের দখলদার কমিটির নেতা মো. আবু নাসের সাঈদ। মামলায় ৩৭ জন সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়, যাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা, ভাঙচুর ও হত্যাচেষ্টার মতো ফৌজদারি ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
‘প্রশ্ন নয়, প্রশংসা করতে এসেছি’ এই ছিল হাসিনার সংবাদ সম্মেলন
কলাপাড়া প্রেস ক্লাবের সভাপতি টিপু, সম্পাদক অমল
আদালতে সাংবাদিকদের পক্ষে জামিনের সওয়াল করেন সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এম শাহ আলম, সাবেক পিপি সৈয়দ ইফতেখার আলী ও খায়রুল বদিউজ্জামালসহ অর্ধশতাধিক সিনিয়র আইনজীবী।
জামিন পাওয়া সাংবাদিকরা বলেন, ‘‘আমরা ন্যায়বিচারের ওপর আস্থাশীল বলে আইন মেনে আদালতে আত্মসমর্পণ করেছি। সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে যেভাবে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মামলা করা হয়েছে, তাতে আমাদের পেশাগত নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।’’
সাংবাদিক নেতারা দাবি করেছেন, মূলত সাংবাদিকদের উপর সংঘটিত হামলার ঘটনা আড়াল করতেই পাল্টা মামলা করেছেন আবু সাঈদ। তারা আরো বলেন, ‘‘যারা হামলার শিকার হয়েছেন, আজ তারাই আসামি, এটি ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।’’ তারা দ্রুত হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেন।
গত ৩০ জুন সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাব এলাকায় দখলদার কমিটির আবু সাঈদ ও আব্দুল বারীর নির্দেশে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় বহিরাগতরা। এতে সভাপতি আবুল কাশেমসহ অন্তত ৩০ জন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনায় দুটি মামলা হয়। একটি সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে এবং অপরটি আবু সাঈদের পক্ষ থেকে।
ঢাকা/শাহীন/বকুল