জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সাহসী সাংবাদিকতা, তরুণ পাঠকদের যুক্ততা ও পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য বৈশ্বিক স্বীকৃতি পেল প্রথম আলো।
সংবাদমাধ্যমের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশনের ‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড-২০২৫’-এ প্রথম আলো পেয়েছে ‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা’র পুরস্কার। এতে বিশ্বের ছয়টি অঞ্চল থেকে ছয়টি উদ্যোগকে সেরা হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। দক্ষিণ এশিয়া থেকে নির্বাচিত করা হয় প্রথম আলোকে।
বিশ্বব্যাপী সংবাদমাধ্যমগুলোতে উদ্ভাবনী উদ্যোগ ও শ্রেষ্ঠ চর্চার স্বীকৃতিস্বরূপ দেওয়া হয় গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ড। এটি গণমাধ্যমের জন্য সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।
‘ইনমা গ্লোবাল মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডে’ দুটি শ্রেণিতে আরও দুটি পুরস্কার পেয়েছে প্রথম আলো। ‘বেস্ট আইডিয়া টু এনকারেজ রিডার এনগেজমেন্ট’ শ্রেণিতে (ক্যাটাগরি) প্রথম আলো প্রথম স্থান অর্জন করেছে। এই শ্রেণিতে পেরুর এল কমার্সিও গ্রুপ দ্বিতীয় এবং নরওয়ের শিবস্ট্যাড মিডিয়া তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
‘বেস্ট ইউজ অব অ্যান ইভেন্ট টু বিল্ড এ নিউজ ব্র্যান্ড’ শ্রেণিতে ‘জাতীয় স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াড’ উদ্যোগের জন্য তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছে প্রথম আলো। এই শ্রেণিতে প্রথম হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডো জোন্স এবং দ্বিতীয় হয়েছে ভারতের হিন্দুস্তান টাইমস।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের ম্যানহাটনের এডিসন হোটেলের বলরুমে বৃহস্পতিবার স্থানীয় নিউইয়র্ক সময় রাত ৯টায় (বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সকাল ৭টা) গণমাধ্যমের বিশ্ব কংগ্রেসে এই পুরস্কার দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান। তিনি বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে প্রথম আলোর খবর ছিল সাহসী সাংবাদিকতার প্রতিচ্ছবি। পরবর্তী সময়ে গণ-অভ্যুত্থান সংক্রান্ত প্রথম আলোর নানামুখী উদ্যোগ ছিল অনন্য। যার ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রথম আলো এই সর্বোচ্চ পুরস্কার পেল।
বিশ্বের ৯৩টি দেশের ১ হাজারের বেশি সংবাদমাধ্যমের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল নিউজ মিডিয়া অ্যাসোসিয়েশন (ইনমা)। তারা ১৯৩৭ সাল থেকে সংবাদমাধ্যমের নানা ধরনের অনন্য উদ্যোগের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে।
বিভিন্ন দেশের পত্রিকা, ম্যাগাজিন, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন ও রেডিওর জন্য অন্যতম সম্মানজনক এই প্রতিযোগিতায় এবার ৪৯টি দেশের ২৮৬টি সংবাদমাধ্যম প্রতিষ্ঠান থেকে জমা পড়ে ৮৩৯টি উদ্যোগ। এর মধ্য থেকে ১৯৮টি উদ্যোগকে ‘ফাইনালিস্ট’ (প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্বে স্থান পাওয়া) নির্বাচিত করে বিশ্বের ২৬টি দেশের ৬০ জন সংবাদমাধ্যম নির্বাহীর সমন্বয়ে গঠিত জুরিবোর্ড (বিচারক প্যানেল)। সেখান থেকে ৭টি বিভাগে ২০টি শ্রেণিতে পুরস্কার দেওয়া হয়।
প্রথম আলো ছাড়াও এ বছরের পুরস্কারপ্রাপ্তির তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট ও দ্য বোস্টন গ্লোব, যুক্তরাজ্যের ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস, কানাডার টরন্টো স্টার, নরওয়ের অ্যামেডিয়া, নিউজিল্যান্ডের দ্য ওয়াইকাতো টাইমস, স্পেনের প্রিসা মিডিয়া ও দ্য ভসেন্তো, সুইডেনের এনটিএম, ফিনল্যান্ডের আলমা মিডিয়া, ব্রাজিলের আরবিএস গ্রুপ, ভারতের দ্য হিন্দু, জাগরণ প্রকাশন ও এপিবি, অস্ট্রেলিয়ার নিউজ করপোরেশন, হংকংয়ের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টসহ বিভিন্ন দেশের সংবাদমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমের মালিক প্রতিষ্ঠান।
বাংলাদেশের ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার-এর ই-শিক্ষা উদ্যোগ কিরণ ‘বেস্ট কমার্স প্রোডাক্ট অর সার্ভিস’ শ্রেণিতে দ্বিতীয় পুরস্কার পেয়েছে।
প্রথম আলো বৈশ্বিক এই প্রতিযোগিতায় আগেও সাফল্য পেয়েছে। এর আগে ইনমায় বাংলাদেশ থেকে প্রথম আলো ২০২১ সালে একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি, ২০২২ সালে একটি প্রথম স্থান ও একটি দ্বিতীয় স্থান, ২০২৩ সালে একটি দ্বিতীয় স্থান ও একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি এবং ২০২৪ সালে একটি দ্বিতীয় স্থান, একটি তৃতীয় স্থান ও একটি সম্মানজনক স্বীকৃতি অর্জন করে।
দক্ষিণ এশিয়ার সেরার পুরস্কার২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রথম আলো ধারাবাহিকভাবে সব খবর বস্তুনিষ্ঠভাবে ছাপা পত্রিকা, ডিজিটাল ও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাঠকদের জন্য প্রকাশ করেছে। এ সত্য ও সাহসী খবরের কারণে সাধারণ পাঠকদের সত্য খবর জানার প্রধান উৎস হয়ে ওঠে প্রথম আলো।
আন্দোলনের ৩৬ দিনে (১ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট) প্রথম আলোর অনলাইন সংস্করণ প্রথম আলো ডটকমে পেজ ভিউ (পাঠক কতবার পড়েছেন) হয়েছে ৩১ কোটি। শুধু আগস্ট মাসে প্রথম আলো ডটকম ৩৫ কোটি পেজ ভিউ পেয়েছে, যা বাংলাদেশের যেকোনো গণমাধ্যমের জন্য একটি মাইলফলক।
৩৬ দিনে ৩১ কোটি পেজ ভিউর ৪৩ শতাংশ এসেছে জেন-জি (জেনারেশন-জেড) পাঠকদের মধ্য থেকে। অর্থাৎ, পাঠকের বড় অংশই ছিল তরুণ, বয়স ১৮ থেকে ২৪ বছর। তাঁরা সাধারণ সময়ের চেয়ে ৭৪ দশমিক ৫২ শতাংশ বেশি ‘এনগেজমেন্ট’ করেছে প্রথম আলোতে। ওই সময় পত্রিকার প্রচারসংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছিল ২ লাখ কপি।
ডিজিটাল আর্কাইভজুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে প্রথম আলোতে প্রকাশিত প্রতিবেদন, সাক্ষাৎকার, স্লোগান, মতামত, গ্রাফিতি, ছবি ও ভিডিও নিয়ে প্রথম আলো একটি ডিজিটাল আর্কাইভ তৈরি করে। সাইটটিতে ৩৬ দিনের আন্দোলনের দিনপঞ্জি ও মৃত্যুঞ্জয়ীদের বাছাই করা ২৪টি গল্প রয়েছে। আবু সাঈদ থেকে শুরু করে মুগ্ধ, ফারহানদের কথা আছে সেখানে।
আর্কাইভে একনজরে পাওয়া যাবে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে হতাহতের তথ্য-উপাত্ত এবং জুলাই জাগরণ নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ প্রদর্শনী ও নানা স্মৃতিস্মারকের ছবি।
শুরু থেকেই প্রথম আলো জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাপ্রবাহ নিষ্ঠার সঙ্গে তুলে ধরেছে। রেখেছে মৃত্যুর হিসাব, করেছে মানবিক ও বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন। গণ-অভ্যুত্থান নিয়ে বিদ্রোহ-বেদনা ও বীরত্বের কথা উঠে এসেছে সেসব প্রতিবেদনে। দমন-পীড়নের সাহসী ছবি প্রকাশিত হয়েছে অনলাইন ও পত্রিকায়। এসব নিয়ে প্রথম আলোর বিশেষ এই আর্কাইভ সাইটের নাম দেওয়া হয়েছে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান ২০২৪’। সাইটটির ঠিকানা: https://services.
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ক র প য় ছ ন র ব চ ত কর প রথম আল র প ঠকদ র প রক শ র জন য আগস ট
এছাড়াও পড়ুন:
জমি নিয়ে বিরোধে এ হত্যাকাণ্ড: পুলিশ
খুলনায় শিশু ফাতিহা (৭), মুস্তাকিম (৮) এবং তাদের নানি মহিতুন্নেছার (৫৩) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে হত্যা সংঘটিত হয়। এ মামলায় এখন পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
শনিবার (২৯ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা মেট্রেপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরে প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার বিষয়ে তথ্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মো. সালেহ। তিনি জানান, নিহত ফাতিহা ও মুস্তাকিমের বাবা শেফার আহমেদের মামাত ভাই ফ্রান্স প্রবাসী মো. শামীম শেখ ওরফে শেখ শামীম আহম্মেদসহ সাতজন হত্যা মিশনে অংশ নেন।
আরো পড়ুন:
বন্ধুকে হত্যার পর কুড়াল নিয়ে থানায় হাজির
খুলনায় ছুরিকাঘাতে যুবক নিহত
ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার শামীম শেখ আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মো. সালেহ বলেন, ‘‘খুলনার রূপসা উপজেলার আইচগাতী ইউনিয়ন ভবাণীপুর গ্রামে ১ একর ৬৯ শতক পৈত্রিক জমি নিয়ে শেফার আহমেদের সঙ্গে মামাত ভাই শামীমের বিরোধ আছে। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছে। ২০০৩ সালে শামীম একটি অস্ত্র মামলার আসামি ছিলেন। এরপর তিনি ফ্রান্সে চলে যান। ২০১৭ সালে ফ্রান্স থেকে দেশে ফেরেন। এরপর তিনি অস্ত্র মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর ৭-৮ মাস আগে জামিনে মুক্তি পান। জেলখানায় বসে শামীম তার ফুফাত ভাই শেফারের পরিবারকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে।’’
ওই কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘‘অস্ত্র মামলায় জেলে থাকাকালে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপের সদস্যের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে শামীমের। জেলখানা থেকে বের হয়ে তিনি জেলখানায় পরিচিত সন্ত্রাসীদের এক লাখ টাকার বিনিময়ে ভাড়া করে প্রতিপক্ষ সেফার আহমেদের পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করার পরিকল্পনা করে।’’
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আবু রায়হান মো. সালেহ বলেন, ‘‘গত ১৬ নভেম্বর দুপুর একটা থেকে দেড়টার মধ্যে শামীমের নেতৃত্বে সাতজন লবণচরা এলাকার দরবেশ মোল্লা গলির শেফার আহমেদের বাড়িতে প্রবেশ করে। প্রথমে দেওয়াল টপকে একজন ভেতরে প্রবেশ করে প্রধান গেটের পকেটগেট খুলে দেয়। এরপর তারা একে একে তিনজনকে ইট দিয়ে থেতলে হত্যা করে মুরগীর খামারের কক্ষে রেখে দেয়। এরপর তারা শেফার আহমেদ ও তার স্ত্রী রুবি আক্তারকে হত্যা করার জন্য ওই বাড়িতে অবস্থান করে কিন্তু সেটি সফল করতে না পেরে তারা কৌশলে পালিয়ে যায়।’’
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘‘হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী শামীম শেখ ঘটনার দিন থেকে পলাতক ছিলেন। তিনি কৌশলে ফ্রান্সে পালিয়ে যাচ্ছিলেন। গত ২৭ নভেম্বর রাত ৩টায় ঢাকার বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।’’
এ মামলায় আরো দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তারা হলেন, লবণচরা থানার মোল্লাপাড়া এলাকার আজহারুল ইসলাম আরজুর ছেলে তরিকুল ইসলাম তারেক (২৬)। তার বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা রয়েছে। এছাড়া একই থানার জিন্নাহপাড়া এলাকার বাবুল হাওলাদারের ছেলে তাফসির হাওলাদারকে (২০) গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে চুরি ও ছিনতাইয়ের দুটি মামলা রয়েছে।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে ওই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, হত্যার মিশন সফল হওয়ার পর শামীম ভাড়াটে খুনীদের এক লাখ টাকা পরিশোধ করেন। ঘটনার পর ওই বাড়ি থেকে লুট হওয়া জমির দলিলপত্র ও স্বর্ণালংকার এখনো উদ্ধার হয়নি।
এ মামলার সকল আসামি ধরতে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশের এ কর্মকর্তা।
প্রেস ব্রিফিংয়ে নিহত ফাতিহা ও মুস্তাকিমের বাবা শেফার আহমেদ এবং মা রুবি আক্তার উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল