চট্টগ্রামে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে শত শত মানুষের উপস্থিতিতে প্রকাশ্যে গুলিতে দুইজন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। শুক্রবার রাত আটটার দিকে এই ঘটনা ঘটে। আহতদের একজনের নাম আলী আকবর। তিনি অপরাধ জগতে 'ঢাকাইয়া আকবর' হিসেবে পরিচিত। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।

পুলিশের ধারণা, প্রতিপক্ষের লোকজন 'ঢাকাইয়া আকবরকে' লক্ষ্য করে গুলি করেছে। এই ঘটনায় সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যাওয়া লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গুলিবিদ্ধ ঢাকাই আকবরকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আকবর নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার চালিতাতলী পূর্ব মসজিদ জব্বার সওদাগর বাড়ির মোহাম্মদ মঞ্জুরের ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, কারাগারে বন্দি সন্ত্রাসী 'ছোট সাজ্জাদ' ও বিদেশে পলাতক সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের সঙ্গে ঢাকাইয়া আকবরের বিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

পুলিশ সূত্র জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকাইয়া আকবর পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে ঘুরতে যান। তার সঙ্গে এক নারীসহ পাঁচজন ছিলেন। তারা সমুদ্র সৈকতের পুলিশ বক্সের কাছাকাছি ২৮ নম্বর ও ২৯ নম্বর দোকানের মাঝামাঝি বসেন। ২৮ নম্বর দোকানে তারা খাবার অর্ডার দিয়েছিলেন। খাবারের জন্য তারা অপেক্ষা করছিলেন। এসময় অতর্কিত এসে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়। এসময় ঢাকাইয়া আকবরসহ দুইজন গুলিবিদ্ধ হন। পরে স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

পতেঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদুল আলম সমকালকে বলেন,‘সমুদ্র সৈকতে এক যুবক গুলিবিদ্ধ হয়েছেন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। ঘটনাস্থল থেকে ঢাকাইয়া আকবরকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কারা, কী কারণে গুলি করেছে তা জানা যায়নি। তার সঙ্গে থাকা লোকজনকেও পাইনি। আমরা খোঁজ খবর নিচ্ছি।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো.

আলাউদ্দিন বলেন, ‘আহত দুইজনকে হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’

পুলিশ জানায়, ঢাকাইয়া আকবর বিদেশে পালিয়ে থাকা দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের অনুসারী ছিলেন। তার নামে নগরের বিভিন্ন এলাকায় চাঁদাবাজি করতেন তিনি। কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে গুলি কিংবা পেট্রোলবোমা ছুড়ে মারতেন। কয়েকবছর আগে সাজ্জাদের সঙ্গে তার দূরুত্ব তৈরি হয়। ২০২৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি সাজ্জাদের ভাই ওসমান আলীর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়া তার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও আগুন ধরিয়ে দেন। সম্প্রতি সাজ্জাদ আলীর অনুসারী ছোট সাজ্জাদের সঙ্গে বিরোধে জড়ান ঢাকাইয়া আকবর। ২০২৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর লক্ষীপুর থেকে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। গত ৫ আগস্টের পর জামিনে বের হন তিনি।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি ইসরায়েল

গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনা করতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র সংগঠন হামাস ‘অবিলম্বে’ যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করতে প্রস্তুত জানানোর পর ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি প্রতিনিধিদলকে কাতারে পাঠাচ্ছেন।

গাজা থেকে এএফপি জানিয়েছে, এই দল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে রোববার রওনা দিবে। তবে নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যুদ্ধবিরতির খসড়া নিয়ে হামাস যে সংশোধনী দিয়েছে, তা ইসরায়েলের কাছে ‘অগ্রহণযোগ্য’।

আজ সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রায় ২১ মাস ধরে চলা গাজা যুদ্ধ থামাতে নতুন করে চেষ্টা শুরু করেছেন।

এদিকে এমন প্রচেষ্টা চলার সময়ে গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থা জানিয়েছে, শনিবার ইসরাইলি হামলায় সেখানে অন্তত ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

হামাস শুক্রবার জানিয়েছিল, তারা ‘অবিলম্বে ও আন্তরিকভাবে’ আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত এবং প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতির বিষয়ে তাদের জবাব পাঠানো হচ্ছে।

নেতানিয়াহুর দপ্তর থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হামাস কাতারি প্রস্তাবে যে পরিবর্তন চাচ্ছে, তা গতরাতে আমাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু এসব পরিবর্তন ইসরায়েলের কাছে মেনে নেওয়ার মতো নয়।’

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু প্রস্তাবিত আলোচনায় অংশ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেইসঙ্গে কাতারি প্রস্তাবের ভিত্তিতে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে সংলাপ চালিয়ে যেতে বলেছেন, যেটিতে ইসরায়েল ইতোমধ্যে সম্মতি দিয়েছে।’

হামাস এখনো যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রস্তাবিত যুদ্ধবিরতি সম্পর্কে তাদের জবাব প্রকাশ্যে জানায়নি। তবে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পৌঁছেছে।

আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ফিলিস্তিনি দু’টি সূত্র এএফপি’কে জানিয়েছে, প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির কথা বলা হয়েছে। এ সময় হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি মুক্তি দেবে এবং কয়েকটি মৃতদেহ ফেরত পাঠাবে। এর বিনিময়ে ইসরায়েলের কাছে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি চাওয়া হয়েছে।

তবে তারা জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে আরও কিছু শর্ত তোলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—ইসরায়েলের সেনা প্রত্যাহারের রূপরেখা, আলোচনার সময় পুনরায় যুদ্ধ শুরু না হওয়ার নিশ্চয়তা ও জাতিসংঘের নেতৃত্বে ত্রাণ বিতরণ ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি।

হামাস ২০০৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামলা চালায়। এরপরই ইসরায়েল হামাসকে ধ্বংস করতে এবং  সব জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে ব্যাপক অভিযান শুরু করে।

এর আগে কাতার, মিশর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতি হয়েছিল। তখন ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি জিম্মিদের ফেরত আনা হয়েছিল।

২০২৩ সালের হামলায় ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা ২৫১ জনকে জিম্মি করেছিল। এদের মধ্যে এখনো ৪৯ জন গাজায় রয়েছে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মতে, এদের মধ্যে ২৭ জন মারা গেছেন।

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শনিবার জানিয়েছে, দেশটির শীর্ষ কূটনীতিক বদর আবদেল আতি যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি আলোচনায় প্রধান প্রতিনিধি স্টিভ উইটকফের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। 

আলোচনায় সাম্প্রতিক অগ্রগতি এবং ‘চুক্তিতে পৌঁছাতে সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ বৈঠকের প্রস্তুতি’ নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

তবে নতুন করে যুদ্ধবিরতির চেষ্টা বারবার ব্যর্থ হয়েছে। মূল কারণ হলো, হামাস চায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি। তবে তা মানতে নারাজ ইসরায়েল। এই যুদ্ধ গাজার ২০ লাখেরও বেশি মানুষের জন্য ভয়াবহ মানবিক সংকট তৈরি করেছে।

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের বাসিন্দা কারিমা আল-রাস বলেছেন, ‘হামাস ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে শুনে মানুষ খুশি। আমরা আশা করছি, যুদ্ধবিরতির ঘোষণা আসবে এবং ত্রাণ ঢুকবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ ময়দার (খাবার) অভাবে মারা যাচ্ছে; আর যুবকরা নিজেদের সন্তানদের জন্য ময়দা জোগাড় করতে গিয়ে মারা যাচ্ছে।’

গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, শনিবার গাজাজুড়ে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে ৪২ জন নিহত হয়েছেন।

গাজায় গণমাধ্যমের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ ও অনেক এলাকায় প্রবেশে বাধার কারণে বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার দেওয়া নিহতের সংখ্যা ও বিস্তারিত তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি এএফপি।

এএফপি’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, নির্দিষ্ট স্থানের তথ্য ছাড়া তারা হামলা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে পারবে না।

ইসরায়েলের সরকারি তথ্যের ভিত্তিতে এএফপি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১ হাজার ২১৯ জন নিহত হয়েছিল, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন সাধারণ নাগরিক।

এদিকে হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের পাল্টা হামলায় গাজায় এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৫৭ হাজার ৩৮৮ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই সাধারণ মানুষ। জাতিসংঘ এই পরিসংখ্যানকে বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  •  দেলপাড়া গিয়াসউদ্দিন ইসলামিক মডেল স্কুলের আয়োজনে বৃক্ষরোপণ  
  • মিরাজরাই হাসতে চান শেষ হাসি
  • সিটিজেনস ব্যাংকের এমডি হলেন আলমগীর হোসেন
  • অনিয়ম করে শ্রমিক থেকে প্রকৌশলী হওয়ার সত্যতা পেল দুদক
  • ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কী আছে, এটা কি গাজায় যুদ্ধ থামাতে পারবে
  • ইয়েমেনের ৩ বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • ইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল
  • দ্বন্দ্বের অবসান, শুটিংয়ে গড়াচ্ছে শুভ-সোহিনীর ‘লহু’
  • ২৬ মাসে কাটা হয়েছে ১৩ লাখ গাছ, সবচে বেশি কোথায়, ঢাকায় কত
  • গাজায় যুদ্ধবিরতির আলোচনায় রাজি ইসরায়েল