উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা এক পক্ষের
Published: 23rd, May 2025 GMT
বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে একটি পক্ষ। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ২০ জুন উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের ‘অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ নির্বাচনী অধিবেশন’ আহ্বান করেন তিনি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বদিউর রহমান বলেছিলেন, বর্তমানে উদীচীর কোনো বৈধ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সংসদ নেই। কেন্দ্রীয় সংসদের এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ওই অধিবেশন আহ্বান করছেন তিনি।
এর প্রতিক্রিয়ায় আজ উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করে বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনের একটি পক্ষের নেতারা। গত ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি উদীচীর তিন দিনব্যাপী ২৩তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনের শেষ দিনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষ তৈরি হয়। দুটি পক্ষই আলাদা করে দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে। উভয় পক্ষে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পক্ষে জামসেদ আনোয়ার তপন এবং আরেক পক্ষে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নাম ঘোষণা করা হয়।
জামসেদ আনোয়ার তপন আজ বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উদীচীর আজকের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক এ ব্যবস্থার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।
এই দুজনসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে উল্লেখ করে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, সংগঠনবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বদিউর রহমান, মাহমুদ সেলিম ও অমিত রঞ্জন দের নেতৃত্বে উদীচীর নামে অননুমোদিত যে তৎপরতা চলছে, তা উদীচীর মতো সংগঠনে ঐক্যের বদলে তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি করবে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তৈরি করবে বিভ্রান্তি। তাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অসাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন বলেও আশা করা হয়।
আরও পড়ুন২০ জুন উদীচীর ২৩তম সম্মেলনের ‘অসম্পূর্ণ নির্বাচনী অধিবেশন’ আহ্বান২০ মে ২০২৫সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হাবিবুল আলম, জুলফিকার আহমেদ গোলাপ, ইকরামুল কবির ইল্টু, মকবুল হোসেন, মোতালেব হোসেন ও বুলবুল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট কম ট র স গঠন গঠন ক
এছাড়াও পড়ুন:
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, আতঙ্কে ভুগছেন ব্যবসায়ীরা
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর গত আট মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কাঙ্ক্ষিত উন্নতি হয়নি; বরং দিন দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। তাতে ব্যবসায়ীরা সবাই ভয়ে আছেন। এ অবস্থায় ছিনতাই-চাঁদাবাজির আতঙ্ক থেকে মুক্তি চেয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্য সংগঠন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় আজ বুধবার এ কথা বলেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখা নিয়ে মতিঝিলে চেম্বার ভবনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, চাঁদাবাজি ও প্রতারণার মতো অপরাধের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি কার্যকর অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা গঠন করা প্রয়োজন। এ ছাড়া রাতের বেলা পণ্য পরিবহন নিরাপদ করতে করিডরভিত্তিক মোবাইল টিম সক্রিয় করার পরামর্শ দেন তাঁরা।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে অনিরাপদ পরিবেশ, চাঁদাবাজি, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন।
সরকাররে উদ্দেশে তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘আপনারা একদিকে বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে আসার কথা বলছেন; অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের গ্যাস-বিদ্যুৎ দিতে পারছেন না। দেশের আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে পারছেন না। সুদহার বাড়িয়ে বসে আছেন। এ কারণে অনেক ছোট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। বিষয়গুলোর নেতিবাচক প্রভাব শেষ পর্যন্ত আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটাই দাবি, নির্বিঘ্ন ও নিরাপত্তার সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনার নিশ্চয়তা।’
সম্প্রতি দাবিদাওয়া নিয়ে শাহবাগসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান অবরুদ্ধ করে আন্দোলনের ঘটনা ঘটছে। এ প্রসঙ্গে তাসকীন আহমেদ বলেন, দাবি আদায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ। তবে অর্থনীতির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকেও সবার নজর দেওয়া প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে নির্ধারিত আলোচনায় রাজধানীর বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী সমিতির নেতারা কথা বলেন। তাঁদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ব্যবসায়ীরা নিয়মিত কর-ভ্যাট দিলেও বর্তমানে তাঁরা ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। এক কথায় ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন।
বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, স্থলবন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। মৌলভীবাজার এলাকায় অনিয়ন্ত্রিতভাবে ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় বাবুবাজার ব্রিজে তীব্র যানজট হচ্ছে, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকায় ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা পরিবহনের নিরাপত্তার স্বার্থে সন্ধ্যাকালীন পুলিশি টহল বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আবুল হাসেম বলেন, ‘মাঝেমধ্যে মহাসড়ক থেকে চিনির ট্রাক ছিনতাই হয়। ছিনতাইয়ের ভয়ে রাতে বাসা থেকে বের হতে পারি না, রিকশায় চড়তে পারি না। এই আতঙ্ক থেকে আমরা মুক্তি চাই।’
মোহাম্মদপুর টাউন হল কাঁচাবাজার বণিক সমিতির সভাপতি লুৎফুর রহমান বলেন, মোহাম্মদপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্রমেই অবনতি হচ্ছে। এখানে ছিনতাইকারীরা পুলিশের সামনেই ঘুরে বেড়ায়। অভিযোগ দিলেও পুলিশ কাউকে আটক করে না।
বাংলাদেশ ডাল ব্যবসায়ী সমিতির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি নেসার উদ্দিন বলেন, কিশোর গ্যাংয়ের নৈরাজ্যে এখন জনজীবনের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
এ ছাড়া সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা চেম্বারের সাবেক সহসভাপতি এম আবু হোরায়রাহ, মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি সৈয়দ মোহাম্মদ বশির উদ্দিন, বাংলাদেশ মনিহারি বণিক সমিতির সহসভাপতি হাজি ফয়েজউদ্দিন, ধামরাই ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম, ঢাকা চেম্বারের পরিচালক এনামুল হক পাটোয়ারী, মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।