বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে একটি পক্ষ। আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর তোপখানা রোডে উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়।

উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক বদিউর রহমান। গত মঙ্গলবার সংবাদ সম্মেলন করে আগামী ২০ জুন উদীচীর ২৩তম জাতীয় সম্মেলনের ‘অসমাপ্ত ও অসম্পূর্ণ নির্বাচনী অধিবেশন’ আহ্বান করেন তিনি। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বদিউর রহমান বলেছিলেন, বর্তমানে উদীচীর কোনো বৈধ পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় সংসদ নেই। কেন্দ্রীয় সংসদের এই অচলাবস্থা নিরসনের জন্য ওই অধিবেশন আহ্বান করছেন তিনি।

এর প্রতিক্রিয়ায় আজ উদীচীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলন করে বদিউর রহমান ও মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন সংগঠনের একটি পক্ষের নেতারা। গত ৬ থেকে ৮ ফেব্রুয়ারি উদীচীর তিন দিনব্যাপী ২৩তম জাতীয় সম্মেলন হয়। সম্মেলনের শেষ দিনে নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন নিয়ে দুই পক্ষ তৈরি হয়। দুটি পক্ষই আলাদা করে দুটি কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করে। উভয় পক্ষে অধ্যাপক বদিউর রহমানকে সভাপতি ঘোষণা করা হয়। সাধারণ সম্পাদক পদে এক পক্ষে জামসেদ আনোয়ার তপন এবং আরেক পক্ষে বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক অমিত রঞ্জন দের নাম ঘোষণা করা হয়।

জামসেদ আনোয়ার তপন আজ বিকেলে এই সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ ও সংগঠনবিরোধী তৎপরতায় লিপ্ত থাকার অভিযোগে উদীচীর সভাপতি বদিউর রহমান ও সহসভাপতি মাহমুদ সেলিমকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। উদীচীর আজকের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় সাংগঠনিক এ ব্যবস্থার বিষয়টি অনুমোদিত হয়েছে।

এই দুজনসহ আরও কয়েকজনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে উল্লেখ করে জামসেদ আনোয়ার তপন বলেন, সংগঠনবিরোধী তৎপরতার অভিযোগে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটির মাধ্যমে তদন্ত চলছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, বদিউর রহমান, মাহমুদ সেলিম ও অমিত রঞ্জন দের নেতৃত্বে উদীচীর নামে অননুমোদিত যে তৎপরতা চলছে, তা উদীচীর মতো সংগঠনে ঐক্যের বদলে তিক্ত পরিস্থিতি তৈরি করবে। সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তৈরি করবে বিভ্রান্তি। তাই এ ধরনের বিভ্রান্তিকর ও অসাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে তাঁরা বিরত থাকবেন বলেও আশা করা হয়।

আরও পড়ুন২০ জুন উদীচীর ২৩তম সম্মেলনের ‘অসম্পূর্ণ নির্বাচনী অধিবেশন’ আহ্বান২০ মে ২০২৫

সংবাদ সম্মেলনে অন্যান্যের মধ্যে উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি হাবিবুল আলম, জুলফিকার আহমেদ গোলাপ, ইকরামুল কবির ইল্টু, মকবুল হোসেন, মোতালেব হোসেন ও বুলবুল আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক ন দ র য় কম ট কম ট র স গঠন গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি নাগরিকদের জঙ্গিবাদী তৎপরতায় যুক্ত হওয়ার অভিযোগটি গুরুতর বলেই অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন মালয়েশিয়ায় উগ্রবাদী মতাদর্শ ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে আটক বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন। এরপর আইন ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল শুক্রবার রাতে জানিয়েছেন, তিনজন ইতিমধ্যে দেশে ফিরেছেন এবং তঁাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঘটনাকে বিব্রতকর বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

শুক্রবার কুয়ালালামপুরে সংবাদ সম্মেলনে মালয়েশিয়ার পুলিশপ্রধান খালিদ ইসমাইল জঙ্গি-সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৩৬ জন বাংলাদেশি নাগরিককে আটক করার কথা জানান। তাঁর বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে শ্রমিকদের মধ্যে ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গিগোষ্ঠীর মতাদর্শ প্রচার এবং তহবিল সংগ্রহ করে, বাংলাদেশি শ্রমিকদের এমন একটি চক্র ভেঙে দিয়েছে মালয়েশীয় কর্তৃপক্ষ। চক্রটি অন্যান্য বাংলাদেশি শ্রমিককে নিশানা করে সদস্য সংগ্রহ করত এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন মেসেজিং প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে উগ্র ও চরমপন্থী মতাদর্শ ছড়িয়ে দিত বলেও তিনি অভিযোগ করেছেন।

মালয়েশীয় পুলিশপ্রধানের বক্তব্য সন্দেহমুক্ত নয়। সেখানে অবস্থিত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কেউ কেউ তাঁদের ভাষ্য অনুযায়ী জঙ্গি তৎপরতায় জড়িত থাকতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশে আইএসের সাংগঠনিক ভিত্তি থাকার দাবি সঠিক নয়। তারপরও বাংলাদেশ মালয়েশিয়ার অভিযোগকে উড়িয়ে না দিয়ে দেশে ফেরত আসা ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদের উদ্যোগ নিয়েছে। এর সঙ্গে দেশের ভেতরে কেউ থাকলে সেটাও বেরিয়ে আসবে। এর সঙ্গে কেবল বাংলাদেশের ভাবমূর্তির বিষয় জড়িত নয়, লাখ লাখ শ্রমিকের জীবিকার প্রশ্নও আছে। গেল শতকের শেষ দশক ও চলতি শতকের প্রথম দশকে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের অনেক দেশে জঙ্গিবাদী তৎপরতা বেড়ে যায়, যার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশেও।

জঙ্গিবাদ বিশ্বব্যাপী প্রবণতা। এ থেকে খুব কম দেশই মুক্ত থাকতে পেরেছে। এখানে দুই ধরনের অতিশয়োক্তি আছে। এক পক্ষ মনে করে বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় জঙ্গিবাদী তৎপরতা ছিল। আরেক পক্ষের দাবি, জঙ্গিবাদ বলে বাংলাদেশে কিছু নেই। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার সহজ পথ ছিল যেকোনো তৎপরতা ও ব্যক্তিকে ‘জঙ্গি’ তকমা লাগিয়ে দেওয়া। জঙ্গি ইস্যু কাজে লাগিয়ে তারা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর দমন–পীড়ন চালিয়েছে। আবার অন্যদিকে ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে জঙ্গি বলে কিছু নেই, ছিনতাইকারী আছে। ২০১৬ সালের ১ জুলাইয়ে সংঘটিত হোলি আর্টিজানে হামলা প্রসঙ্গে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করলে তিনি এই উত্তর দেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে সেদিন সেই রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়ে বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকসহ ২২ জনকে হত্যার যে ঘটনা ঘটেছে, তা কি ছিনতাইকারীরা ঘটিয়েছিল? 

মালয়েশিয়ায় ৩৬ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে জঙ্গি তৎপরতার যে অভিযোগ উঠেছে, তাকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে। মালয়েশিয়ার অভিযোগ কতটা সত্য, তা যথাযথ তদন্ত করে বের করতে হবে। দেশের কোনো পক্ষ এর সঙ্গে যুক্ত আছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হবে। মনে রাখতে হবে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম শ্রমবাজার। সেখানে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে এই ঘটনা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ফলে বাংলাদেশকে বিশ্বাসযোগ্যভাবে এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও উদ্যোগ নিতে হবে। আবার নিরীহ কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সরকারকে সর্বোচ্চ সজাগ থাকতে হবে।

দুই উপদেষ্টার সঙ্গে আমরাও আশাবাদী হতে চাই যে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগ নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে, দেশটির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তার নিরসন হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীর খোঁজ মেলেনি, সাগরে তল্লাশি চলছে
  • মিলেমিশে দুই ইজারাদারের সরকারি বালু আত্মসাৎ
  • বোদায় ছাত্রদলের সহসভাপতিকে মারধরের ভিডিও ভাইরাল, চার নেতা বহিষ্কার
  • বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে সহসভাপতির মামলা
  • জঙ্গি তৎপরতার অভিযোগের তদন্ত হোক