অবিলম্বে জাতীয় নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। দলটি বলেছে, সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণার পর নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করুন।

গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এক বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে দলটির নেতারা এ কথা বলেন। ‘কথিত মানবিক করিডরের নামে বাংলাদেশকে সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধে জড়ানোর চক্রান্ত ও চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার প্রতিবাদ’ শীর্ষক বিক্ষোভ সমাবেশে সিপিবির ঢাকার মহানগর উত্তর, দক্ষিণ ও বিভিন্ন থানার নেতা–কর্মীরা অংশ নেন।

সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন (প্রিন্স) বলেন, ‘সরকার নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, মানবিক করিডর দেবে। কার সঙ্গে কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে? দেশের জনগণকে বাদ দিয়ে করিডর দিয়ে দেবেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সীমা ছাড়িয়ে গেছে।’

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচিত সরকার নয় উল্লেখ করে সিপিবির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা কি নির্বাচিত সরকার? গণ–অভ্যুত্থানের ভিত্তিতে এসে আমরা অন্তর্বর্তী সরকার বানিয়েছি। সব দায়িত্ব আপনাদের নয়। .

..নির্বাচনের নামে কালবিলম্ব করে আপনাদের আসল উদ্দেশ্য করিডর দেওয়া, বন্দর দেওয়া। তাই হুঁশিয়ার করে বলতে চাই, আপনারা আলোচনার নামে নির্বাচনকে বিলম্ব না করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে নির্বাচনের সুস্পষ্ট তারিখ ঘোষণা করে, নির্বাচন কমিশন সংস্কার করে ২৪–এর আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করুন।’

সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘রাখাইনে মানবিক করিডর দিলে বাংলাদেশ দখল হয়ে যাবে। সরকার যদি সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসে, সবাইকে নিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। ...চট্টগ্রাম বন্দরের যে সক্ষমতা তার থেকে এখন বেশি সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। তাহলে কেন বিদেশিদের হাতে আমরা এ বন্দর তুলে দেব। সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, মানবিক করিডর দিয়ে দেশকে হুমকির মুখে ফেলে দেবেন না।’

সিপিবির এই নেতা বলেন, ‘আজকে পত্রিকাতে এসেছে, এনসিপির আহ্বায়ক নাকি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে আসছেন। তিনি নাকি হতাশ-বিক্ষুদ্ধ, পদত্যাগ করবেন। তাঁকে কেউ কি বলেছে পদত্যাগের বিষয়ে, বড় বড় রাজনৈতিক দল কি চাপ দিয়েছে? আমার মনে হয় না এমন কেউ করবে। ...আমরা অতিসত্বর নির্বাচিত সরকার চাই। নির্বাচিত সরকার না এলে দেশের মানুষের জানমাল রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে না। আপনি দ্রুত নির্বাচন দিয়ে বিদায় নিন।’

মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘ইন্টেরিম গভর্মেন্টকে এ দেশের ছাত্র-জনতা ও রাজনৈতিক দলগুলো ম্যান্ডেট দিয়েছে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার জন্য। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, দ্রুত নির্বাচন দিন। ন্যূনতম সংস্কার করে দেশের মানুষের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দিন।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব চ ত সরক র সরক র ন

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্দশা শহীদ হাসিবের পরিবারে, পাননি সরকারি সহায়তা 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত হাসিবুর রহমান (১৭) ‘শহীদ’ হিসেবে গেজেটভুক্ত হলেও সরকারী সহায়তা পায়নি পরিবার। 

৬ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে হাসিবের পরিবার থেকে এ অভিযোগ করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাসিবের বড় চাচা তোতা মিয়া ঢালী। 

তিনি জানান, শহীদ হাসিবের বাবা দেলোয়ার হোসেন ঢালী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী। তার দেখভাল করেন হাসিবের বৃদ্ধ দাদি, যিনি নিজেও শারীরিকভাবে অক্ষম। পরিবারটি বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। 

তোতা মিয়া ঢালী বলেন, “ শহীদ হাসিব গেজেটভুক্ত হলেও আমরা অধিকাংশ সরকারি সাহায্য পাইনি। আমাদের পরিবারকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। যদিও হাসিব দেশের ছাত্রদের ন্যায্য অধিকারের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে।”

‘‘ভাতার জন্য বিভিন্ন স্থানে আমরা ঘুরেছি। শিঘ্রই হয়ে যাবে এমন আশ্বাস পেলেও জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে কোনো সাহায্য সহযোগিতা পাইনি।’’ অভিযোগ তোতা মিয়া ঢালীর। 

শহীদ হাসিবুর রহমানের বাড়ি মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার উত্তর কানাইপুর গ্রামে। অভাব অনটনের সংসারে বড় হয়েছিলেন হাসিব। প্রতিবন্ধী পিতা আর নিজের ভরণপোষণের জন্য রং মিস্ত্রির কাজ শুরু করেন ঢাকার সাভারে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তিনি ৫ আগস্ট সাভারে গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭ আগস্ট হাসিব মারা যান। পরে তাকে দাফন করা হয় পৈত্রিক ভিটায়। তার সরকারি গেজেট নং ৭৭৭। 

দাদীর কাছে বড়ো হতে থাকেন মা-হারা হাসিব। নাতির মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দাদী সিরাতুননেছা। তিনি বলেন, ‘‘আমার নাতি অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছিল। ওর বাবা প্রতিবন্ধী। আমি তাকে মুখে তুলে খাওয়াই। আমার নিজেরই বয়সের কারণে চলাফেরা করতে কষ্ট হয়; তবু করি। এ অবস্থায় নাতিটা মারা গেলো। শহীদ পরিবারের সবাই ভাতা পেলেও আমার ছেলে দেলোয়ার অনেক কিছু থেকেই বঞ্চিত।’’ 

এ বিষয়ে মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন আক্তারের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান, হাসিবের পরিবারের প্রয়োজনীয় সরকারি সহায়তা ও ভাতা প্রাপ্তির জন্য তিনি উদ্যোগ নিবেন।

বেলাল//

সম্পর্কিত নিবন্ধ