ইনজুরি যেন ছায়ার মতো পেছন ছাড়ছে না ব্রাজিলিয়ান ফুটবল জাদুকর নেইমারের। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে আজ পর্যন্ত যতবারই মাঠে ফিরেছেন, ততবারই ছন্দপতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে চোট। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপের পর থেকে মাঠে তার উপস্থিতি গোনা যেন কঠিন হয়ে পড়েছে ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য। তাই প্রশ্ন উঠছে এই ছন্দভাঙা পথ পেরিয়ে তিনি কি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন?

এই জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সম্প্রতি এক ঘরোয়া সাক্ষাৎকারে খোলামেলা কথা বলেন নেইমার। জানান, যতদিন নিজের পারফরম্যান্সে নিজে সন্তুষ্ট থাকবেন, ততদিন খেলবেন। নির্দিষ্ট কোনো সময়সীমা নেই তার বিদায়ের। শৈশবের ক্লাব সান্তোসের সঙ্গে ২০২৫ সাল পর্যন্ত নতুন চুক্তি করেছেন নেইমার, যেখানে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলার সুযোগও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

সাক্ষাৎকারে স্ত্রী ব্রুনা বিয়ানকার্ডির প্রশ্নের উত্তরে নেইমার বলেন, “ফুটবলের প্রতি ভালোবাসাই আমাকে প্রতিদিন নতুন করে অনুপ্রাণিত করে। আমি যতদিন নিজের খেলায় আত্মবিশ্বাস পাই, ততদিন খেলে যাব। এই ভালোবাসা কোনোদিন ফুরাবে না। তবে যেদিন মনে হবে নিজের সেরা ফর্মে নেই, সেদিনই থেমে যাব।”

আরো পড়ুন:

রূপান্তরের আভাস দিয়ে আনচেলোত্তির ব্রাজিল দল ঘোষণা

চিকিৎসক প্রেসিডেন্ট ও কোচিং কিংবদন্তিতে নতুন অধ্যায় ব্রাজিলে

কেবল ফুটবলে নয়, নেইমার প্রায়ই আলোচনায় থাকেন তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়েও। জীবনযাপন নিয়ে নানা সমালোচনার মুখে পড়লেও নিজের অবস্থানে অনড় তিনি, “যারা আমাদের চেনে না, তারা যা খুশি তাই বলে। এসবের প্রভাব ফেলার সুযোগ আমি দিই না। অনলাইনে কী লেখা হলো তাতে আমি নাড়া খাই না।’’

নিজের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কিছুটা আক্ষেপের সুরও শোনা যায় তার কণ্ঠে, “আমি চাই মানুষ মাঠে আমার খেলা দেখে বিচার করুক। সোশ্যাল মিডিয়া এখন খেলোয়াড়দের মনোযোগ কেড়ে নিচ্ছে। আমাকে এমনভাবে মূল্যায়ন করা হয়, যেন আমি শুধুই ক্যামেরার জন্য বেঁচে থাকি। অথচ, পরিবার আর নিজের ভবিষ্যতের জন্য আমি কতটা নিবেদিত, তা কজনই বা জানে?”

নেইমার জানিয়ে দেন, ফুটবল থেকে একদিন বিদায় নেবেন ঠিকই, কিন্তু তার চিহ্ন থেকে যাবে ইতিহাসের পাতায়, “আমার ক্যারিয়ার শেষ হবে একদিন। নতুন প্রজন্ম আসবে, কেউ হয়তো আমাকেও ছাপিয়ে যাবে। কিন্তু যাদের ভালোবাসা আমি পেয়েছি, যারা আমাকে সত্যিকারে চেনেন, তাদের হৃদয়ে আমার নাম থাকবে।”

বার্সেলোনা, পিএসজি ও আল-হিলালের মতো জায়ান্ট ক্লাবে খেলা এই ফরোয়ার্ড দেশের জার্সিতে ১২৮ ম্যাচে করেছেন ৭৯ গোল। যা ব্রাজিলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তবে বারবার ইনজুরিই বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে তার সম্ভাবনার পথে। ২০২৩ সালের বড় ইনজুরি এসিএল ও মেনিসকাস ছিঁড়ে যাওয়া তাকে দীর্ঘ সময়ের জন্য ছিটকে দেয়।

তবে সবকিছুর পরও নেইমার ফিরেছেন নিজের শিকড়ে, সান্তোস ক্লাবে। এখানেই তিনি খুঁজে পেয়েছেন নতুন করে বাঁচার আশ্রয়, “সান্তোস আমার ঘর, আমার শিকড়। এখানেই আমি স্বপ্ন দেখা শিখেছি। এবার সেই সব অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করতে চাই এখানেই।’’

আর ২০২৬ বিশ্বকাপ? নেইমারের চোখে সেটিই হতে যাচ্ছে তার ‘শেষ নৃত্য’, “আমি নিজেকে পুরোপুরি উজাড় করে দেব। যদি এটিই হয় আমার শেষ বিশ্বকাপ, তাহলে আমি চাই বিদায়টা হোক গর্বের, ভালোবাসার এবং ফুটবলের প্রতি আমার দায়বদ্ধতার প্রতিচ্ছবি।”

ঢাকা/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ টবল র জন য ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

জাবির বাজেটে ফের উপেক্ষিত গবেষণা ও চিকিৎসা খাত

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৫—২৬ অর্থবছরের জন্য ৩২৩ কোটি ৩৪ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এ বাজেটে ৪ কোটি ৯১ লাখ টাকা বাড়লেও ফের উপেক্ষিত হয়েছে গবেষণা ও চিকিৎসা খাত। 

শনিবার বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলে অনুষ্ঠিত ৪২তম বার্ষিক অধিবেশনে উপস্থাপিত বাজেট থেকে এ তথ্য জানা গেছে। নিয়মানুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বাজেট উপস্থাপন করেন। সিনেটরদের আলোচনার পর তা পাস করা হয়। 

২০২৫-২৬ সালের প্রস্তাবিত বাজেট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং পেনশন ও অবসর সুবিধার পেছনে মোট ব্যয় ২২০ কোটি ৬৩ লাখ, যা মোট বাজেটের ৬৮ দশমিক ২৩ শতাংশ। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ব্যয় রাখা হয়েছে বেতন-ভাতায়। এ খাতে বরাদ্দের পরিমাণ ১৮১ কোটি ৮৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এটি বাজেটের ৫৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। পেনশন ও অবসর সুবিধা খাতে এতে বরাদ্দ রয়েছে ৩৮ কোটি ৭৭ লাখ, যা বরাদ্দের ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। এই খাতে বাজেটের তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে। এই দুই খাতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরেও বাজেটের ৭৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। বাজেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ব্যয় ধরা হয়েছে সেবা খাতে- ৭৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। এ খাতে বাজেটের ২৪ দশমিক ১৫ শতাংশ খরচ হবে। 

ফের উপেক্ষিত চিকিৎসা ও গবেষণা খাত
গত ২২ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১তম ব্যাচের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসাইন মৃত্যুবরণ করেছেন। তার মৃত্যুর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের অ্যাম্বুলেন্স তিনি যথাসময়ে পাননি এমন অভিযোগ তুলে সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্র সংষ্কারের দাবিতে ‘মেডিকেল ঘেরাও’ কর্মসূচি পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসাকেন্দ্রের সার্বিক উন্নয়নসহ বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান তারা। তবে বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে মাত্র ৪৫ লাখ টাকা, যা বাজেটের মাত্র ০.১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরেও মাত্র ০.১৫ শতাংশ বরাদ্দ রাখা হয়। 

গবেষণা ও উদ্ভাবন খাতেও উল্লেখযোগ্য হারে বাড়েনি বাজেটের আকার। নতুন বাজেটে প্রস্তাবিত বরাদ্দ রয়েছে ৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গত বছর এটি ছিল ৭ কোটি ২২ লাখ, যা বরাদ্দের ২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এছাড়া যানবাহন ক্রয় বাবদ ২ কোটি ২৮ লাখ, তথ্য ও যোগাযোগ ব্যয় ২ কোটি  ২০ লাখ, যন্ত্রপাতি খাতে ব্যয় ৫ কোটি ৭২ লাখ এবং অন্যান্য ব্যয় ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। 

২০২৫-২৬ অর্থবছরের মূল বাজেটের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বা সরকারি মঞ্জুরি ২৭৯ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, ছাত্রছাত্রীদের থেকে প্রাপ্ত ফিস বাবদ ৬ কোটি ৩৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও ভর্তি ফর্ম বিক্রি থেকে আয় ২৩  কোটি ৪৫ লাখ ৬০  হাজার টাকা। এছাড়াও বিভিন্ন চার্জ থেকে ৩  কোটি ৭১ লাখ ২১  হাজার টাকা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তি থেকে আয় ৩৩ লাখ টাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য উৎস হতে আয় ১০  কোটি ১৫ লাখ ৪৯  হাজার টাকা। ইউজিসির বরাদ্দ বাদে সব মিলিয়ে নিজস্ব আয় ৪৪ কোটি টাকা।

পাঁচ দশকে বাজেট ঘাটতি ১০০ কোটি টাকা
প্রতিষ্ঠার পর প্রায় পাঁচ দশকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রমপুঞ্জিত বাজেট ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কোষাধ্যক্ষের বক্তব্য থেকে জানা গেছে- চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সে হিসেবে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৩০ জুনের পর বাজেট ঘাটতি পৌঁছাবে ১০০ কোটিতে। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের ঘাটতি বাজেট ছিল ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ঘাটতি ছিল ১৯ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ও ২০২১—২২ অর্থবছরে ঘাটতি ৩ কোটি ১ লাখ ৫৩ হাজার টাকা।

বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটের জন্য ৪১৫ কোটি ৭৮ লাখ ১ হাজার টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের ৪৩৪ কোটি ৪৬ লাখ ১৯ হাজার টাকার মূল বাজেট ইউজিসিতে পাঠানো হয়। ইউজিসি ২০২৪-২০২৫ সনের সংশোধিত বাজেটে ৩৩৭ কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং ২০২৫-২০২৬ সনের মূল বাজেটে ৩২৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজস্ব তহবিলে ঘাটতির পরিমাণ ৮০ কোটি ৩৭ লাখ ৭০ হাজার টাকা। চলতি অর্থবছরে সর্বনিম্ন আনুমানিক ২০ কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। এরূপ আর্থিক চাপের মধ্যে একটি কল্যাণমুখী বাজেট প্রস্তুত করা দুরূহ হয়ে পড়েছে।

আগামী বছরের শুরুতে হতে পারে জাবির সপ্তম সমাবর্তন: উপাচার্য
আগামী বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সপ্তম সমাবর্তন। শনিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটের ৪২তম বার্ষিক অধিবেশন এ তথ্য জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কামরুল আহসান। 

অধিবেশনে লিখিত ভাষণে উপাচার্য বলেন, ২০২৩ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ষষ্ঠ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। আগামী বছরের প্রথম তিন মাসের মধ্যে সপ্তম সমাবর্তন আয়োজন করতে আগ্রহী। এ বিষয়ে সকলের পরামর্শ ও মতামত প্রত্যাশা করছি।

উপাচার্য আরও জানান, বিগত শিক্ষাবর্ষে ১ হাজার ৬৭ জন শিক্ষার্থী স্নাতক (সম্মান), ১ হাজার ১৮২ জন শিক্ষার্থী স্নাতকোত্তর, ৩ জন এমফিল ও ৪৭ জন গবেষক পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। 

আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশে বাঁধা 
এ দিকে দুপুর আড়াইটার দিকে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের আওয়ামী লীগপন্থি সিনেটরদের প্রবেশ ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সিনেট হলের প্রবেশপথে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ শফিক-উর-রহমান, কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক যুগল কৃষ্ণ দাস এবং বিজনেস স্টাডিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিগার সুলতানা পসিনেট হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশে স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তারা সিনেট হল ত্যাগ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাসিকের বাজেট ৮০৬ কোটি টাকা
  • জাবির বাজেটে ফের উপেক্ষিত গবেষণা ও চিকিৎসা খাত