বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তা মানছে না রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট এখন ক্যাম্পাসে প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে দলীয় কার্যক্রম।

এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তরাও বিভিন্ন ব্যানারের এসব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন মহলে। প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপের অভাবে ক্রমেই এসব সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছর ২৮ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এক জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে সব ধরনের রাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। এরপর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো.

হেলাল উদ্দীনের স্বাক্ষরে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে সিদ্ধান্ত ঘোষণার ১ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই সেই নির্দেশনার বাস্তব প্রতিফলন ম্লান হয়ে গেছে।

আরো পড়ুন:

নানা আয়োজনে যবিপ্রবিতে জুলাই বিপ্লব উদযাপন

নবীন শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত কুবি

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাধারণ শিক্ষার্থী জানান, নিষেধাজ্ঞা জারি করেই দায় শেষ করেছে প্রশাসন। কেউ নিয়ম ভাঙলেও দৃশ্যত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এতে করে রাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা কেবলই কাগজে-কলমে থেকে গেছে। নিষেধাজ্ঞা যদি বাস্তবে প্রয়োগ না হয়, তাহলে তার মানে কী? আন্দোলনের ফলাফল কি তবে কেবলই একটি কাগজ?

বাকৃবিতে জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশন ময়মনসিংহ বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সভাপতিত্বে বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের দেখা যায় বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বাকৃবি ছাত্রদলের নিজস্ব ব্যানারে আয়োজিত বিভিন্ন দলীয় অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার, কয়েকটি হলের প্রাধ্যক্ষসহ বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষকদের বক্তব্য প্রদান ও সরব উপস্থিতি দেখা যায় বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হল, আশরাফুল হক হল, শহীদ শামসুল হক হল ও মাওলানা ভাসানী হলের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা নিয়মিত হলে হলে গিয়ে সদস্য ফরম বিতরণ করছেন এবং কর্মী সংগ্রহ করছেন। তারা বিভিন্ন হলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তারেরও চেষ্টা করছেন। এছাড়াও মিছিল ও শোডাউন নিয়মিত চলছে। ধীরে ধীরে আগের সেই ছাত্রলীগের ধারার রাজনীতিতেই ফিরে যাচ্ছেন তারা।

এদিকে, ইসলামী ছাত্রশিবির সরাসরি মিছিল না করলেও দলীয় পরিচয়ে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিবির কর্মীরা শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ জানিয়ে বিভিন্ন সময় খাবারের আয়োজন করছেন এবং কর্মী সংগ্রহ করছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী। 

শিক্ষার্থীদের মতে, কুরআন বিতরণ, ইফতার মাহফিল, ফলচক্র আয়োজনের মতো মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তারা নিজেদের রাজনৈতিক সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করছে শিবির। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে দলীয় নামে দেয়াল লিখনও করছেন ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা।

পিছিয়ে নেই সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ইউনিউনসহ বামপন্থী নেতাকর্মীরাও। বিগত সময়ে ছাত্রলীগের (নিষিদ্ধ) নির্যাতনে ক্যাম্পাসে অন্যান্য সংগঠনগুলোর তুলনায় সে সময়েও অনেকটা নির্বিঘ্নে রাজনৈতিক কার্যক্রম চলমান ছিল তাদের। এবার রাজনীতি নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারির পর ছাত্র ফ্রন্টই প্রথম প্রকাশ্যে দলীয় ব্যানারে মিছিল করে বলে জানিয়েছেন একাধিক শিক্ষার্থী।

সম্প্রতি বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (বাকসু) নির্বাচনের দাবিতে দলীয় ব্যানারে তারা গণভোট কর্মসূচি পালন করছেন বলেও অভিযোগ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচিতে একসঙ্গে মাঠে সরব উপস্থিতি দেখা যায় বামপন্থী সংগঠনগুলোর।

নাম প্রকাশ না করা শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী এক শিক্ষার্থী বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা আগেও ক্যাম্পাস রাজনীতি চায়নি, এখনো চায় না। গণঅভ্যুত্থানের পরেও লেজুড়বৃত্তির এই রাজনীতি আমাদের সামনে নেওয়ার বদলে পিছিয়ে দিচ্ছে। আমরা চাই শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ থাকুক, যেখানে শিক্ষার্থীদের হয়ে কথা বলার মতো প্রতিনিধি থাকবেন। রাজনৈতিক কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি আমরা চাই না।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. শফিকুল ইসলাম শফিক বলেন, “আমরা কখনো ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পক্ষে নই। ছাত্রলীগের নোংরামি দেখে সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাজনীতি বিমুখ হয়েছে। যারা গোপনে রাজনীতি করে, তারাই রাজনীতি নিষিদ্ধের নামে অন্যদের দমন করতে চায়।”

তিনি বলেন, “বাকৃবি ছাত্রদল বিশ্বাস করে, সুস্থ ধারার রাজনীতি চর্চা হওয়া উচিত। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞার কারণে সংগঠনগুলো স্থবির হয়ে পড়েছে। আর সে সুযোগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দমন করা হচ্ছে, হুটহাট শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা হচ্ছে। আমরা এই ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাই।”

শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‌‌“ইসলামী ছাত্রশিবির লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনীতির বিপক্ষে। বিগত ১৫ বছর ছাত্র রাজনীতির যে ভয়াবহ রূপ দেখেছি, আমরা আমাদের ক‍্যাম্পাসে আর সেটা দেখতে চাই না। বাকৃবি প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি বন্ধের যে প্রজ্ঞাপন দিয়েছিল, আমরা তার প্রতি শ্রদ্ধাশীল ছিলাম। কিন্তু এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ক্যাম্পাসে একাধিক ছাত্র সংগঠন আগের মতোই রাজনৈতিক কার্যক্রম চলমান রাখে এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যপারে নীরবতা পালন করে।”

তিনি বলেন, “এমতাবস্থায় ইসলামী ছাত্রশিবির শিক্ষার্থীদের মাঝে কোরআন বিতরণ, ইফতার মাহফিলের মতো শিক্ষার্থীবান্ধব কাজ পরিচালনা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শোডাউন, সভা, সমাবেশের মতো কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি ইসলামি ছাত্রশিবির পালন করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ হয়, তবে সব ছাত্র সংগঠনের জন্যই তা সমভাবে প্রযোজ্য হতে হবে। সব ছাত্র সংগঠনের জন্য একই নীতি প্রশাসনকেই নিশ্চিত করতে হবে।”

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের বাকৃবি সংসদের সভাপতি সঞ্জয় রায় বলেন, “ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তার দোষর সন্ত্রাসী ছাত্রলীগের পতনের পর একটি গণতান্ত্রিক ক্যাম্পাস ও দেশ বিনির্মাণের স্বপ্ন আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু গত ২৯ আগস্ট প্রশাসন যেই প্রক্রিয়ায় ক্যাম্পাসে রাজনীতি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, আমরা সেদিনই এই সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছিলাম।”

তিনি বলেন, “আমরা বলেছিলাম ছাত্র রাজনীতি একটি উচ্চতর হৃদয়বৃত্তি, যদি সেটা শিক্ষা, শিক্ষার্থী তথা ক্যাম্পাস, দেশ ও দশের স্বার্থে হয়। প্রত্যেকেরই সেই ছাত্রবান্ধব রাজনীতি করার অধিকার রয়েছে। আবার যদি কেউ রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে না চায়, তার সেই অংশগ্রহণ না করার অধিকারও আছে। যদি আগামী দিনের ছাত্র রাজনীতি ছাত্রবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হয়, তবে আমাদের প্রশাসনের উচিৎ ব্যাপক রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। একইসঙ্গে হল, ক্যাম্পাসে সব ধরনের দমনমূলক অপরাজনৈতিক তৎপরতা বন্ধ করে, সুষ্ঠু ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ গণতান্ত্রিক পরিবেশ বিনির্মাণ করা “

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিরক্তি ও উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক একে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, “সিন্ডিকেট সভায় নেওয়া রাজনীতি বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো বহাল রয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডে প্রশাসন অত্যন্ত বিরক্ত। তারা কোনো কর্মসূচির জন্য প্রশাসনিক অনুমতিও নিচ্ছে না। বারবার বলা সত্ত্বেও তারা নিয়ম মানছে না।”

তিনি বলেন, “আমি সবাইকে আবারো স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্ছি, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী সবার জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ। জাতীয় নির্বাচন হয়ে গেলে এরপর একে একে বাকসু ও শিক্ষক সমিতি নির্বাচন নিয়ে ভাবা হবে।”

ঢাকা/লিখন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত র র জন ত র জন ত ক ক স গঠনগ ল ছ ত রদল ফ রন ট র জন য কর ম র এক ধ ক প রক শ করছ ন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) একসময় প্রাণবন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য আলাদা পরিচিতি ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন নিজেদের উদ্যোগে আয়োজন করত গান, নাটক, আবৃত্তিসহ সাহিত্যচর্চার বহুমাত্রিক অনুষ্ঠান।

সম্প্রতি এই পরিবেশ ধীরে ধীরে সংকুচিত হয়ে আসছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’ নামক এক অদৃশ্য বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। এর প্রধান সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে বাজেট।

আরো পড়ুন:

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আবাসন-পরিবহনে ভোগান্তি চরমে, বাড়ছে শুধু বিভাগ

ডেঙ্গুতে কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যু, চিকিৎসা না পাওয়ার অভিযোগ

সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সংগঠনগুলো কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও নির্দিষ্ট উত্তর আসে— ‘একাডেমিক প্রোগ্রামের জন্য বাজেট দেওয়া হবে, এসব প্রোগ্রামের জন্য নয়।’ এতে সংগঠনগুলো চরম হতাশার মধ্যে পড়েছে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণের শেকলে বাধা পড়েছে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড।

জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রোগ্রামগুলো আগে সংগঠনগুলো আয়োজন করত, তা এখন একেবারেই সীমিত হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাজেট না দেওয়ার কারণে সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো নিজেদের জায়গা হারাচ্ছে। তারা আর স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম করতে পারছে না। যেসব সংগঠন আগে নিয়মিত উৎসব বা শিল্পচর্চার অনুষ্ঠান করত, এখন তাদের কার্যক্রম সীমিত হয়ে গেছে। গত ১ বছরে উল্লেখযোগ্য কোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারেনি সংগঠনগুলো।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি শুধু সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য নয়, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশের জন্যও এক ধরনের ক্ষতি। শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতা, মেধা বিকাশ এবং মানসিক প্রশান্তির অন্যতম মাধ্যম ছিল এসব আয়োজন। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও আর্থিক সংকটে সেই পথ আজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। এর ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠনগুলোর কার্যক্রমও প্রায় বন্ধের পথে হাঁটছে।

বিভিন্ন সংগঠন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট না দেওয়ায় সংগঠনগুলো বাইরের স্পন্সর খুঁজতে চাইলেও নানা জটিলতা পোহাতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেফারেন্স না থাকায় তারা বাইরে থেকেও স্পন্সর আনতে পারেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার কারণে বাইরের সহযোগিতা গ্রহণও কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ফলে সংগঠনগুলো কার্যত দ্বিমুখী সংকটে পড়ে আছে—একদিকে অর্থ নেই, অন্যদিকে স্বতন্ত্রভাবে কাজ করার সুযোগও নেই।

এদিকে, আগে যেসব প্রোগ্রাম বিভিন্ন সংগঠন আয়োজন করতো। এখন সেসব প্রোগ্রাম আয়োজন করছে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই। এতে সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ডও বন্ধ হয়ে গেছে। গত ১ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কয়েকটা প্রোগ্রাম হলেও সেসবে ছিল না আগের মতো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ছোঁয়া। এ সময়ে তেমন কোনো আয়োজনও করতে পারেনি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। বিশ্ববিদ্যালয় বাজেট বরাদ্দ না দেওয়ায় মৃতপ্রায় অবস্থা এসব সংগঠনের। চলে না নিয়মিত কার্যক্রমও।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাংস্কৃতিক চর্চাকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে না। অথচ শিক্ষা ও সংস্কৃতি সমানতালে এগোলে শিক্ষার্থীরা মানসিকভাবে পরিপূর্ণ হয়। শুধু একাডেমিক পড়াশোনা নয়, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডও ছাত্রজীবনকে সমৃদ্ধ করে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোভাব এমন দাঁড়িয়েছে যে, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান যেন এক প্রকার ‘অপ্রয়োজনীয় বিলাসিতা’। 

শিক্ষার্থীরা বলছেন, আলাদা বাজেট বরাদ্দ এবং সংগঠনগুলোর স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই একমাত্র সমাধান। কর্তৃপক্ষ যদি সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতি আস্থা দেখায়, তাদের হাতেই অনুষ্ঠান আয়োজনের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেয়, তবে আবারো প্রাণ ফিরে পাবে জবির সাংস্কৃতিক অঙ্গন।

ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, “সাংস্কৃতিক চর্চা এককেন্দ্রিক হলে স্বনিয়ন্ত্রিত সংস্কৃতি গড়ে ওঠে না। বিভিন্ন সংগঠনকে স্বাধীনভাবে প্রোগ্রাম আয়োজনের সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসনের কাজ হলো পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া বা অনুকূল পরিবেশ তৈরি করা। সরাসরি অর্থ সাহায্য বাধ্যতামূলক নয়, তবে উৎসাহ ও সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের রুটিন দায়িত্বে নিয়োজিত কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. সাবিনা শরমীন বলেন, “বর্তমানে অবকাশ ভবনে ১৮টি সংগঠন সক্রিয় রয়েছে। এই ১৮টি সংগঠনের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বাজেট বরাদ্দ করা হয়। বাজেট ব্যবহারে যথাযথ জাস্টিফিকেশন করতে হয় আমাদের।”

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় দিবস কেন্দ্রীয়ভাবে উদযাপিত হয় এবং এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব প্রোগ্রাম। তাই কোনো সংগঠনকে আলাদাভাবে অনুষ্ঠান করার সুযোগ নেই। বর্তমান প্রশাসন এবং পূর্ববর্তী প্রশাসনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।”

ঢাকা/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবিতে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে ‘নিয়ন্ত্রণের শেকল’