এইচএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক
Published: 1st, July 2025 GMT
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহের অভিযোগে কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি মৃদুল হাসানকে আটক করা হয়েছে। মঙ্গলবার এইচএসসির ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষা চলাকালে জেলার কালিহাতী শাহজাহান সিরাজ কলেজ কেন্দ্র থেকে তাকে আটক করে পুলিশ।
আটক মৃদুল হাসানের বাড়ি কালিহাতী পৌরসভার সাতুটিয়া গ্রামে। তিনি শাজাহান সিরাজ কলেজের ডিগ্রি ২য় বর্ষের ছাত্র।
কালিহাতী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোহাম্মদ সিফাত বিন সাদেক আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরীক্ষা চলাকালীন আমি আশপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণ করি। পরীক্ষা কেন্দ্রের গেটের ভেতরে তাকে ঢুকতে দেখে দায়িত্বে থাকা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আটক করতে নির্দেশ দিই। তার কাছে নকলের কাগজপত্র পাওয়া গেছে। তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কালিহাতী থানার ওসি জাকির হোসেন বলেন, মৃদুল হাসান আমাদের হেফাজতে আছেন। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বেনজির আহমেদ টিটো বলেন, কালিহাতীতে দলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপরাধের সঙ্গে জড়িত হলে বিএনপি তার দায় নেবে না। আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ছেলেকে ইতোমধ্যে জেলা ছাত্রদল থেকে শোকজ করা হয়েছে। দোষ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এইচএসস পর ক ষ আটক পর ক ষ
এছাড়াও পড়ুন:
চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
দেশে সব সময় ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যে চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগের বিষয়টি ঘুরেফিরে উচ্চারিত হয়ে থাকে ব্যবসায়ী মহলে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের প্রত্যাশা তৈরি হলেও সে আশার গুড়ে বালিই ঘটেছে। রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে স্থিতিশীলতা না আসায় ব্যবসা-বাণিজ্য একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্য বিষফোড়া হিসেবে চাঁদাবাজি ব্যবসায়ীদের চরমভাবে ভুক্তভোগী করছে। এর থেকে পরিত্রাণের জন্য সরকারকে কঠোর হওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই।
পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য পরিস্থিতি ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের মতবিনিময় সভায় চাঁদাবাজি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সভায় ব্যবসায়ী নেতারা যে সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, তার সারসংক্ষেপ হলো বাজারের অস্থিরতার মূল কারণ ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা নয়, বরং কিছু করপোরেট গ্রুপের সিন্ডিকেট এবং পণ্য পরিবহন থেকে শুরু করে খালাস পর্যন্ত চলমান ভয়াবহ চাঁদাবাজি।
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মওলার বক্তব্য বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, ‘বাজার তদারকিতে যতক্ষণ পর্যন্ত ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে দৃষ্টি না সরাবেন, ততক্ষণ সমস্যার সমাধান হবে না। কারওয়ান বাজারের চুনোপুঁটি ব্যবসায়ীর কাছে না গিয়ে রাঘববোয়ালের কাছে যান।’ চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো অপরিহার্য পণ্য সরবরাহের জন্য মুষ্টিমেয় সাতটি গ্রুপের ওপর গোটা দেশের নির্ভরতা এই সিন্ডিকেট-নির্ভরতার বিপদকে প্রকট করে তোলে।
পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনের অভিযোগ আরও গুরুতর। তিনি সরাসরি করপোরেট ব্যবসায়ীদের ‘শকুনের মতো শোষণকারী’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন এবং ৩ টাকার মোড়ক দিয়ে ৪০ টাকা দাম বাড়ানোর মতো কারসাজির কথা তুলে ধরেছেন। সংকটের সময় মিলগুলো নিয়মিত পাইকারদের তেল না দিয়ে বিশেষ শ্রেণির পরিবেশকদের সুবিধা দেওয়ায় বাজার আরও অস্থির হয় বলে অভিযোগ। এসব করপোরেট কারসাজির ওপর সরকারের কার্যকর নজরদারি না থাকলে রমজানের সময় মূল্য সহনীয় রাখা অসম্ভব।
ব্যবসায়ী নেতারা একবাক্যে স্বীকার করেছেন, নিত্যপণ্য পরিবহন ও সরবরাহের পথে গুরুতরভাবে চাঁদাবাজি চলছে। পণ্য ট্রাকে ওঠানো-নামানো—সর্বত্রই চাঁদা দিতে হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গেও চাঁদাবাজদের ‘দহরম-মহরম’ থাকার অভিযোগ তো নতুন নয়। চাঁদাবাজমুক্ত পরিবেশ তৈরি না হলে সরবরাহ স্বাভাবিক থাকবে না এবং বাজার স্থিতিশীল হবে না—এই কঠোর সত্যটি সরকারকে অনুধাবন করতে হবে। এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক কেবল ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ অন্যান্য সংস্থাকে অনুরোধ করা হবে’ বলে দায় সারলে এই সমস্যার সমাধান হবে না, দরকার কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা।
পেঁয়াজ বা খেজুরের মতো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির পেছনে সরকারের ভুল শুল্কনীতি এবং আমদানির সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা বড় ভূমিকা রাখে। পেঁয়াজ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার কাছাকাছি এসেও সামান্য ১০ শতাংশ ঘাটতির জন্য দামের ‘সেঞ্চুরি’ হওয়ার পর সরকারের আমদানির প্রয়োজন বোধ করা সময়োচিত নয়। অন্যদিকে খেজুরের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে উচ্চ শুল্ক আরোপ করে এটিকে বিলাসবহুল পণ্যে পরিণত করা হয়েছে। ফল আমদানিকারকেরা অবিলম্বে শুল্ক যৌক্তিক করার দাবি জানিয়েছেন। রমজানে চাহিদা মেটাতে সরকার যদি নিজেই নির্দিষ্ট পরিমাণ চিনি ও ভোজ্যতেল আমদানি করে মজুত রাখে, তবে বেসরকারি ব্যবসায়ীদের ওপর চাপ কমবে এবং সংস্থার হয়রানিও বন্ধ হবে—এমন প্রস্তাব সরকারকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা উচিত।
গত বছরের রমজানে সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক সিদ্ধান্তের ফলে বাজারের পরিস্থিতি ছিল তুলনামূলক সন্তোষজনক। আমরা আশা করব, সরকার আসন্ন রমজানের দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আগাম প্রস্তুতি নেবে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগকে গুরুত্ব দিয়ে সিন্ডিকেট ও চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগী হবে, সেটিই কাম্য।