ঘরে বাক্সের ভেতর কাপড়-বালিশের নিচে ছিল গৃহবধূর মরদেহ, স্বামী আটক
Published: 10th, July 2025 GMT
যশোরের বাঘারপাড়ায় ঘরের ভেতর লেপ-তোশক রাখা স্টিলের বাক্সের ভেতর থেকে এক গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে পুলিশ উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের একটি বাড়ি থেকে তাঁর মরদেহ উদ্ধার করে।
নিহত সুচিত্রা দেবনাথ (৫৮) উপজেলার বাসুয়াড়ী ইউনিয়নের ঘোষনগর গ্রামের তপন দেবনাথের স্ত্রী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ তপন দেবনাথকে (৬৪) আটক করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানান, তপন দেবনাথ ও চিত্রা দেবনাথ দম্পতির দুই মেয়ে এক ছেলে। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়েছে। ছেলে তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে যশোর শহরে থাকেন। বাড়িতে তপন দেবনাথ ও চিত্রা দেবনাথ থাকতেন। তাঁদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক কলহ ছিল।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, গতকাল সকালে সুচিত্রা দেবনাথকে শেষবারের মতো দেখা যায়। এরপর তাঁর স্বামী তপন দেবনাথ যশোর শহরের উদ্দেশে রওনা হন। দুপুরে বাড়ি ফিরে তিনি স্ত্রীকে কোথাও খুঁজে না পেয়ে প্রতিবেশীদের সহায়তায় চারপাশে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি নিজের টিনের দোচালা বসতঘরের ভেতরে রাখা স্টিলের বাক্স খুলে দেখতে পান, ভেতরে কাপড় ও বালিশে নিচে হাঁটু ভাঁজ করা অবস্থায় চিত্রা দেবনাথের মরদেহ রাখা রয়েছে। তখন তিনি থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে রাত নয়টার দিকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। এরপর রাত ১০টার দিকে পুলিশ মরদেহ উদ্ধার করে বাঘারপাড়া থানায় নিয়ে আসে।
পুলিশ বলছে, সুচিত্রা দেবনাথের মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর ঠোঁটে হাল্কা কাটা দাগ রয়েছে। তাঁকে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। এরপর মরদেহ লুকাতে স্টিলের বাক্সে কাপড় ও বালিশ দিয়ে ঢেকে রাখা হয়।
বাঘারপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফকির তাইজুর রহমান বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য যশোর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। স্বামী-স্ত্রীর পারিবারিক কলহ লেগেই থাকত। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, স্বামী নিজেই মাথায় আঘাত করে স্ত্রীকে হত্যা করে মরদেহ বাক্সের ভেতর লুকিয়ে রেখেছিলেন। স্বামী তপন দেবনাথকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাড়ে ৫ বছর পর জামিনে মুক্তি পেলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই দুই শিক্ষার্থী
জঙ্গি সন্দেহে গ্রেপ্তার হওয়ার সাড়ে পাঁচ বছর পর জামিনে মুক্তি পেয়েছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী—নুর মোহাম্মদ অনিক ও মোজাহিদুল ইসলাম। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় খুলনা জেলা কারাগার থেকে তাঁরা মুক্তি পান। এর আগে গত সপ্তাহে উচ্চ আদালতে তাঁদের জামিন মঞ্জুর করা হয়।
সহপাঠীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ওই দুই শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে যান। ১৭ দিন ধরে অজ্ঞাত স্থানে রেখে তাঁদের ওপর শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়। পরে ২৫ জানুয়ারি পুলিশ জানায়, বিস্ফোরক দ্রব্যসহ তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একই দিন খুলনার কৃষক লীগ কার্যালয় ও আড়ংঘাটা থানার গাড়ির গ্যারেজে বোমা হামলার মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এরপর পুলিশ আরও চারটি মামলা করে তাঁদের বিরুদ্ধে।
নুর মোহাম্মদ অনিক মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ডিসিপ্লিনের এবং মোজাহিদুল ইসলাম পরিসংখ্যান ডিসিপ্লিনের ১৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। গত বছর আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পরিবর্তনের পর সহপাঠী, রুমমেট, শিক্ষক ও স্বজনেরা তাঁদের মুক্তির দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সংবাদ সম্মেলন ও মানববন্ধন করেন।
গতকাল মুক্তির পর কারাগারের সামনে দুই শিক্ষার্থীকে ফুল দিয়ে বরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা, পরিবারের সদস্য ও ঘনিষ্ঠজনেরা।
ওই দুই ছাত্রের আইনজীবী আকতার জাহান বলেন, তাঁদের বিরুদ্ধে মোট ছয়টি মামলা হয়েছিল। এর মধ্যে দুটি মামলায় তাঁরা খালাস পেয়েছেন। দুটি মামলায় জামিন হয় এবং সোনাডাঙ্গা থানার অপর দুটি মামলায় দণ্ড দেওয়া হয়। দণ্ডপ্রাপ্ত মামলাগুলোর জামিন চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করা হয়। আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। ছুটি থাকায় আদালতের আদেশ কারাগারে পৌঁছাতে তিন দিন সময় লেগেছে। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রেজাউল করিম বলেন, ‘জঙ্গি নাটকে যাঁরা জড়িত, তাঁদের বিচার হওয়া উচিত। দীর্ঘদিন পর কারামুক্ত হওয়া দুই শিক্ষার্থী নতুন জীবন ফিরে পেয়েছেন। তাঁদের পাশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থাকবে। তাঁদের বরণ করে নিতে আমাদের একটি প্রতিনিধিদল খুলনা কারাগারে গিয়েছিল।’