‘আসলে আমরা ভিউবাজদের ভিউ বিড়ম্বনার স্বীকার হয়েছি। কোনো অপপ্রচারই “ইত্যাদি”র সঙ্গে দর্শকদের এই ভালোবাসার বন্ধন ছিন্ন করতে পারবে না। তার প্রমাণ ঠাকুরগাঁওয়ের “ইত্যাদি” দেখার জন্য দর্শকদের এই বাঁধভাঙা স্রোত, যা আমাদের অভিভূত করেছে। আর দর্শকদের এই ভালোবাসায় ধন্য হয়েই “ইত্যাদি” এ বছর পদার্পণ করেছে তার ৩৭তম বছরে।’ নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে হানিফ সংকেত কথাগুলো লিখেছেন। ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলে রাজা টংকনাথের রাজবাড়িতে ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের শুটিংয়ের সময় ঘটে যাওয়া ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে হানিফ সংকেত কথাগুলো তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন।
গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাতে হানিফ সংকেত তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘“ইত্যাদি”র ঠাকুরগাঁওয়ের ধারণ অনুষ্ঠান নিয়ে কিছু কিছু মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু ব্যক্তির সংবাদ ও মন্তব্য পড়ে কিছুটা অবাকই হয়েছি। ভেবেছিলাম এসবের কোনো জবাব দেব না। কিন্তু তাঁদের মন্তব্য ও সংবাদ দেখে মনে হচ্ছে, অনুষ্ঠানস্থলে আমি নই, বোধ হয় তাঁরাই উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মন্তব্য পড়ে মনে হয় অনুষ্ঠানস্থলে হামলা, মারামারি, ভাঙচুর হয়েছে, যে কারণে আমি অনুষ্ঠান বন্ধ করতে বাধ্য হই। অথচ ঠাকুরগাঁওবাসী এবং উপস্থিত দর্শকেরাই জানেন, এ ধরনের কোনো ঘটনাই সেখানে ঘটেনি।’

এর আগে গতকাল সকালে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপেও একই রকম কথা বলেছিলেন হানিফ সংকেত। বরাবরই দেশের ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থানে শুটিং হয় হানিফ সংকেতের ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের।

আরও পড়ুনঠাকুরগাঁওয়ে ইত্যাদির শুটিংয়ে কী ঘটেছিল, জানালেন হানিফ সংকেত২২ ঘণ্টা আগে

সেই ধারাবাহিকতায় ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’ এবার শুটিংয়ের জন্য বেছে নেয় ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈলের টংকনাথ জমিদারবাড়ি। কিন্তু শুটিং শুরুর কিছুক্ষণ পর চেয়ার–ছোড়াছুড়ির ঘটনার কয়েকটি ভিডিও ক্লিপ ফেসবুক ও ইউটিউবে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে নানাজন নানা কথা বলেন। ঘটনার সত্যতা জানতে তাই যোগাযোগ করা হয় ‘ইত্যাদি’ অনুষ্ঠানের পরিকল্পক, নির্মাতা ও উপস্থাপক হানিফ সংকেতের সঙ্গে। তখন তিনি বলেন, ‘আসলে সেখানে সমস্যাটা হয়েছে কি, আমরা পরিস্থিতির শিকার হয়ে গেছি। আমরাও বুঝিনি যে এত লোক হবে। কর্তৃপক্ষও বোঝেনি যে এত লোক হবে। আমাদের জায়গাটা আসলে আরও বড় হওয়া উচিত ছিল।’
এদিকে হানিফ সংকেত তাঁর ফেসবুক পোস্টে এ–ও লিখেছেন, ‘আমরা দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য, প্রত্ননিদর্শনসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানে গিয়ে ইত্যাদি ধারণ করছি প্রায় তিন দশক ধরেই।

ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করার পর আমরা রানীশংকৈল (রাজা টংকনাথের) রাজবাড়িতে “ইত্যাদি” ধারণ করার সিদ্ধান্ত নিই এবং এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে অবহিত করি। আমরা ছয় হাজার দর্শকের বসার ব্যবস্থা করি এবং সন্ধ্যা সাতটার দিকে অনুষ্ঠান শুরু করি। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আমরা জানতে পারি অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ অপেক্ষা করছেন অনুষ্ঠান দেখার জন্য।

আরও পড়ুনকখনোই ছাত্রদের আন্দোলন পরাজিত হয়নি: হানিফ সংকেত০৬ আগস্ট ২০২৪

অনুষ্ঠানে দর্শক বাছাই, নৃত্য ও গান ধারণ করার পরই হঠাৎ করে বাঁশের ঘেরা সরিয়ে কয়েক হাজার লোক আমন্ত্রণপত্র না পেয়েও তাঁদের প্রিয় “ইত্যাদি” দেখার জন্য অনুষ্ঠানস্থলে ঢুকে পড়েন। ফলে অনুষ্ঠানস্থলে সাময়িক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। আমরা পরিস্থিতি অনুধাবন করে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে কিছু সময়ের জন্য অনুষ্ঠান ধারণ স্থগিত করি এবং পরিস্থিতি শান্ত হলে আবার ধারণ শুরু করি। যদিও ইতিমধ্যে স্থগিতের কথা শুনে অনেক দর্শকই চলে যান। পরে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমরা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান ধারণ করি।’

উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ হামলা, ভাঙচুর বা মারামারি নয়, ‘ইত্যাদি’র প্রতি দর্শকদের ভালোবাসা—হানিফ সংকেত তাঁর লেখায় এমনটা উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, ‘এই ভালোবাসার কারণেই “ইত্যাদি”র ধারণ দেখার জন্য সবাই উন্মুখ হয়ে ছিলেন। কিন্তু স্থানাভাবে দাঁড়াতেও পারছিলেন না। তাই চেয়ার সরিয়ে দাঁড়ানোর স্থান করছিলেন। আর সে কারণেই এই চেয়ার–ছোড়াছুড়ি।

অনুষ্ঠানটির রচনা, পরিচালনা ও উপস্থাপনা করেছেন হানিফ সংকেত.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

হেডের ঝড় দেখেছেন, সবচেয়ে কম বলের সেই সব টেস্ট সেঞ্চুরি দেখেছেন কি

ইংল্যান্ড কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের মনে হয়েছিল, জেতার জন্য ২০৪ রান যথেষ্ট। অস্ট্রেলিয়াকে এর কমেই আটকে দিতে পারবে ইংল্যান্ড। অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্টের মনে হয়েছে, রানটা যথেষ্টর চেয়েও বেশি। তাঁর মতে, ইংল্যান্ড ৩০ রানের মতো বেশি করেছে। ম্যাককালামকে সেটা বলেছেনও।

গতকাল পার্থ টেস্টের দ্বিতীয় দিনে ম্যাককালাম আর গিলক্রিস্টের এই ভাবাভাবিটা ছিল অস্ট্রেলিয়ার রানতাড়া শুরু হওয়ার আগে। যে ম্যাচে তিনটি ইনিংস শেষ হয়েছে ১৫০-এর আশপাশে (ইংল্যান্ড ১৭২ ও ১৬৪, অস্ট্রেলিয়া ১৩২), সে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে ২০০ রান তাড়া করা চাট্টিখানি কথা তো নয়।

কিন্তু ম্যাককালাম আর গিলক্রিস্টের ভাবনাকে ভুল প্রমাণ করেছেন ট্রাভিস হেড। অস্ট্রেলিয়ার ৩১ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান রীতিমতো ঝড় বইয়ে দিয়েছেন ইংলিশ বোলারদের ওপর। ফল, মাত্র ২ উইকেট হারিয়েই লক্ষ্যপূরণ অস্ট্রেলিয়ার।

ইংল্যান্ডের জন্য হারের চেয়েও বড় যন্ত্রণা হওয়ার কথা হেডের তাণ্ডব চালানো ব্যাটিং। প্রথম ১৪ বলে মাত্র ৩ রান করা এই ব্যাটসম্যান পরের ৫৫ বলেই নিয়েছেন ৯৭ রান; সব মিলিয়ে ৬৯ বলে সেঞ্চুরি। টেস্ট ক্রিকেটের ১৪৮ বছরের ইতিহাসে রানতাড়ায় এত কম বলে সেঞ্চুরি আর কেউ করতে পারেননি। বিশ্ব রেকর্ড!

তবে এমন ঝোড়ো ইনিংস খেলার পরও হেড কিন্তু টেস্টের দ্রুততম সেঞ্চুরিয়ান নন। তাঁর চেয়ে কম বল খেলে সেঞ্চুরির কীর্তি আছে আরও পাঁচজনের। যেখানে ১ নম্বর নামটি ওই ম্যাককালামেরই।

আরও পড়ুনরান তাড়ায় দ্রুততম সেঞ্চুরির বিশ্ব রেকর্ড হেডের, দুই দিনে ইংল্যান্ডকে হারাল অস্ট্রেলিয়া১৫ ঘণ্টা আগে

ইংল্যান্ড টেস্ট দলের কোচ ম্যাককালাম আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়েছেন ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে। তাঁর শেষ ম্যাচ ছিল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট। আর এই ম্যাচেই দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ঘোষণা দিয়ে বিদায়ী টেস্ট খেলতে নামা ম্যাককালাম।

তা–ও কী এক অসীম চাপের মধ্যে। টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিউজিল্যান্ড। ৭৪ রানে ৪ উইকেট চলে যাওয়ার পর মাঠে নামেন ম্যাককালাম। আর ওই পরিস্থিতিতে তিনি বেধড়ক পিটুনিতে ৫৪ বলেই ছুঁয়ে ফেলেন ১০০। ১৬টি চার, ৪টি ছক্কা।

কয়েক বছর ধরে সেই ম্যাককালামকে কোচ হিসেবে পেয়ে তাঁরই ধাঁচে ব্যাট করছে ইংল্যান্ড। কিন্তু কেউই এখন পর্যন্ত তাঁর রেকর্ডটা ভাঙতে পারেননি। ৯ বছর পার করেও এখন পর্যন্ত টেস্টের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডটা ম্যাককালামের।

শেষবারের মতো ব্যাট হাতে মাঠ ছেড়ে যাচ্ছেন ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। কাল ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে l

সম্পর্কিত নিবন্ধ