আড়াইহাজারে “তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ” শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত
Published: 15th, January 2025 GMT
আড়াইহাজারে 'তারুণ্যের ভাবনায় আগামীর বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে উপজেলা পরিষদের হল রুমে এই কর্মশালার আয়োজন করা হয়।
কর্মশালায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ সাজ্জাত হোসেনর সভাপতিত্বে ও আরো উপস্থিত ছিলেন, কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, উপজেলা শিক্ষা অফিসার মমতাজ বেগম, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের মেডিকেল অফিসার ডাঃ রীতা ফারিহা, একাডেমিক সুপারভাইজার মো: শাহজাহান, অতিরিক্ত কৃষি অফিসার শারমিন আরা খন্দকার, পরিসংখ্যান কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আনিসুর রহমান প্রমুখ। কর্মশালায় বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।
কর্মশালায় ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে আগামীর তারুণ্যের ভাবনায় বাংলাদেশ' শীর্ষক কর্মশালাটি একটি ব্যাতিক্রম উদ্যোগ। আজকের তরুণরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আন্দোলন সংগ্রামের পাশাপাশি তাদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যেতে হবে। বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে।
আমরা আশা রাখি এই কর্মশালা নতুন প্রজন্মকে নতুনভাবে দেশ গড়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরষ্কার তুলে দেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
৭০ টাকার ফেসওয়াশ বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়!
রাতারাতি মোটা অঙ্কের টাকা হাতানোর জন্য আমদানিতে মিথ্যা ঘোষণা, আন্ডার ইনভয়েসিং, শুল্ক ফাঁকি, বাজারে মেয়াদোত্তীর্ণ মানহীন পণ্য ঠেকাতে এবং বাজার সিন্ডিকেট ভাঙতে কসমেটিকস পণ্যের ওপর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) যে নতুন শুল্ক নীতি করেছে তা প্রতিরোধ করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে অসাধু আমদানীকারকরা।
সম্প্রতি এনবিআর থেকে প্রকাশিত এক তথ্য বিবরণীতে দেখা গেছে, আমদানীকালে একটি বিদেশি ব্র্যান্ডের ফিনিশড গুডস (প্যাকেজিংসহ) হিসেবে আইলাইনার পণ্য সব ধরনের শুল্ক ও পরিবহন ব্যয়সহ খরচ পড়েছে ৪ টাকা ৩১ পয়সা। কিন্তু এই পণ্য বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৯৪০ টাকা। এতে করে সরকার ও ভোক্তারা সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হলেও বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু আমদানিকারকরা।
ঘটনার বিষয়টি পরোক্ষভাবে স্বীকারও করেছে কসমেটিকস আমদানিকারকদের সংগঠন। সম্প্রতি এক মানববন্ধনে ‘বাংলাদেশ কসমেটিক্স অ্যান্ড টয়লেট্রিজ ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন’ (বিসিটিআইএ) সভাপতি মো. জহিরুল হক ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. সাহিদ হোসেনের যৌথ স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রসাধনী পণ্যের প্রকৃত মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তারা উল্লেখ করেন যে, যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয় ব্র্যান্ড XPEL-এর টি ট্রি ফেসওয়াশ (২০০ মিলিলিটার) পণ্যের খুচরা মূল্য pakcosmetics.com-এ মাত্র ১.২২ মার্কিন ডলার এবং পাইকারি মূল্য ০.৬১ ডলার। অর্থাৎ, প্রতি কেজির পাইকারি মূল্য দাঁড়ায় ৩.০৫ ডলার মাত্র। সে অনুযায়ী এর দাম ৭৩.০২ টাকা। কিন্তু দেশের বাজারে ও অনলাইনে (shajgoj.com) খুচরা পর্যায়ে এ পণ্যটি বিক্রি হচ্ছে নূন্যতম ৯৮০ টাকায়।
একইভাবে, তাদের উল্লেখিত, XBC কোকোয়া বাটার ক্রিম (৫০০ মিলিলিটার) www.poundland.co.uk-এ খুচরা বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১.৩৭ ডলারে, যার পাইকারি মূল্য প্রায় ০.৬৮৫ ডলার এবং প্রতি কেজির গড় পাইকারি মূল্য ১.৩৭ ডলারেরও কম। সে অনুপাতে আমদানি ব্যয় ৮২.০২ টাকা হলেও দেশের বাজারে খুচরা এবং অনলাইন (cellsii.com)-এ নূন্যতম ৯৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ তারা দাবি করেন এই আন্তর্জাতিক মানের প্রসাধনী পণ্যের প্রকৃত মূল্য বাংলাদেশের জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে পূর্ববর্তী বাজেটে নির্ধারিত ন্যূনতম শুল্কায়ন মূল্যের তুলনায় অনেক কম।
বিষয়টি নজরে আসায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছন অ্যাসোসিয়েশন অব স্কিন কেয়ার বিউটি প্রোডাক্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অব বাংলাদেশ-এএসবিএমইবি’র সভাপতি আশরাফুল আম্বিয়া।
তিনি বলেন, “দেশীয় শিল্প সুরক্ষায় এখনই নজর দিতে হবে। সরকার অসাধু দাপট বন্ধ করতে না পারলে দেশীয় শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। আর তাতে করে লক্ষাধিক লোক বেকার হয়ে রাস্তায় নামবে। যা সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংকট তৈরী করবে। দুষ্ট চক্রে প্রভাবিত হলে দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। ফলে সরকারকে এর জন্য বড় মাশুল গুনতে হবে”
আশরাফুল আম্বিয়া আরো বলেন, “আমদানীকারকরা কসমেটিকস ফিনিশড গুডস হিসেবে পণ্য আমদানি করলেও নীতিমালার ফাঁক গলে শুল্ক পরিশোধ করছেন শুধু মুল উপাদানের। এতে করে বাজারে অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে। ছিটকে পড়ছেন দেশীয় উদ্যোক্তারা, বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছেন অনেকে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে পড়ছে নেতিবাচক প্রভাব। শুরুর দিকে আগ্রহ থাকলেও অনেকে এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। বিনিয়োগ হারানোর পাশাপাশি এটি নতুন কর্মসংস্থানের জন্য অশনি সংকেত।”
উৎপাদকরা বলছেন দেশীয় উৎপাদনে সক্ষমতা তৈরী হওয়ার পরও অসৎ উপায়ে আমদানি বন্ধ করতে না পারলে দেশে শিল্পায়ন, বিনিয়োগ সুরক্ষা, নতুন বিনিয়োগ আকর্ষণ ও দেশীয় উৎপাদনশীলতায় স্থবিরতা তৈরী হতে পারে। এতে পরনির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত না হয়ে বরং পুরোপুরি আমদানির নামে অসাধু চক্রের কবলে পড়তে পারে দেশ।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী শুধু কালার কসমেটিকস খাতে চলতি বছরে আমদানি প্রায় ৫শ কোটি টাকার। আন্ডার ইনভয়েস এবং ওজনে ফাঁকি না দিলে প্রকৃতপক্ষে টাকার অঙ্কে এটি হওয়ার কথা নূন্যতম ১৬শ কোটি টাকা। সে হিসাবে শুধু আমদানিতেই ফাঁকি হচ্ছে প্রায় ১১শ কোটি টাকা। এছাড়া, অসাধুরা নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ করছেন না।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থবছরে (২০২৪-২০২৫) সকল আমদানিকারকরা মিলে সরকারকে রাজস্ব দিয়েছে মাত্র ১৭ কোটি টাকা। বিপরীতে উৎপাদক হিসেবে শুধু ১টি প্রতিষ্ঠান দিয়েছে ১০০ কোটি টাকার বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলেন, নীতি নির্ধারণী পর্যায়ের কোনো মহলের ভূমিকা রহস্যজনক এবং দেশীয় শিল্পবিরোধী। যার কারণে স্থানীয় বিনিয়োগ প্রবল অসম প্রতিযোগীতা ও ঝুঁকির মুখোমুখি হয়েছে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, কোন কোন মহলের শিল্পায়ন বিরোধী মনোভাব কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বর্তমান সরকারের যে অগ্রাধিকার নীতি রয়েছে তার পরিপন্থি।
এএসবিএমইবি’র জেনারেল সেক্রেটারি জামাল উদ্দীন বলেন, “এই খাতে এখনই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। শুধু সরকারের নীতি সহায়তার অভাবে শিল্পের আকার ও ব্যাপকতা আটকে আছে। আমদানি বিকল্প দেশীয় শিল্পের বিকাশ ঘটলে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হয়। কর্ম️সংস্থান ছাড়াও উপরন্তু, রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জ️ন করা যায়। তাই নীতিনির্ধ️ারণে অগ্রাধিকার তালিকায় শীর্ষে️ থাকা উচিত স্থানীয় বিনিয়োগ সুরক্ষা।” তাছাড়া, কসমেটিকস আমদানি সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমাণ শুল্ক, কর ও ভ্যাট ফাঁকির যে অভিযোগ উঠেছে তা দুদকের দ্বারা তদন্তের দাবি জানান তিনি।
তিনি বলেন, “কতিপয় মানহীন ও ভেজাল পণ্যের ছড়াছড়ির খবর প্রায়শই দেখা যায়। এসব ভেজাল পণ্য ব্যবহার করে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছেন। পড়ছেন বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে। তাই স্থানীয় উৎপাদনকে নীতি সহায়তা দিয়ে মানসম্মত পণ্য ক্রেতাদের জন্য সুলভ করা জরুরী।”
দেশে গ্লোবাল ব্র্যান্ডের উৎপাদন কার্যক্রম সম্প্রচারণে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানি সহজলভ্য করা গেলে এবং সরাসরি কসমেটিকস পণ্যের আমদানি শুল্কহার বাড়ানো হলে দেশীয় উৎপাদন ও উদ্যোগকে এগিয়ে নেওয়া সহজ হবে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থ️নীতিবিদ ও ন্যাশনাল ব্যুরো অব ইকোনোমিকস রিসার্চ (এনবিইআর) এর চেয়ারম্যান প্রফেসর সৈয়দ আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, “প্রায় ৩শ’ কোটি ডলারের কসমেটিকস বাজারের শিল্পে বিদ্যমান সম্পুরক শুল্ক ও ভ্যাট স্থানীয় উদ্যোক্তাদের জন্য বৈষম্যের কারণ হবে। কারণ এই শিল্পের বার্ষি️ক গড় প্রবৃদ্ধির হার সাড়ে ১২ শতাংশ। তাই দেশীয় শিল্পে বিনিয়োগ আকর্ষ️ণে নীতি সহায়তা জরুরী। বাংলাদেশে কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার সামগ্রীর বার্ষিক বাজার ২১ হাজার কোটি টাকার ওপরে। এই খাত দেশের সম্ভাবনাময় একটি খাত হলেও আমদানী নির্ভর বিদেশি পণ্যের ভিড়ে দেশি কোম্পানির পণ্যগুলো অনেকটা চ্যালেঞ্জের মুখে।”
সরকারের পক্ষে দেশীয় এসব পণ্য জনপ্রিয় করতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হলেও সম্পূরক ভ্যাট, অতিরিক্ত শুল্ক আরোপকে বলা যায় এ খাতে অন্যতম বাধা। বর্ত️মানে স্থানীয় উৎপাদন পর্য️ায়ে মূল্য সংযোজন কর ও সম্পুরক শুল্ক আরোপযোগ্য পণ্যের তালিকায় রয়েছে ওষ্ঠাধার প্রসাধন, চক্ষু প্রসাধন, হাত, নখ বা পায়ের প্রসাধন, পাউডার, সুগন্ধিযুক্ত বাথ সল্ট এবং অন্যান্য গোসল সামগ্রীসহ সংশ্লিষ্ট প্রসাধন সামগ্রী।
এই খাতের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন, কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্যের কাঁচামাল আমদানির শুল্ক কমালে দেশীয় বাজার আরো সম্প্রসারিত হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা এসব কাঁচামালের প্রায় ৯০ শতাংশই বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে আমদানি করতে হয়। মিথ্যা ঘোষণায় আমদানি, লাগেজ পার্টি, চোরাইপথে পণ্য এবং নকল ও ভেজাল উৎপাদন বন্ধ করতে না পারলে স্থানীয় উৎপাদন ব্যহত হয়ে পুনরায় আমদানি নির্ভর হয়ে পড়বে এই খাত।
দেশীয় পণ্য উৎপাদনে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের শুল্ক হ্রাস, বিদেশি পণ্য আমদানিতে শুল্ক বৃদ্ধি, অবৈধ পথে বাজারে আসা পণ্য ঠেকানো, নকল পণ্য রোধ ইত্যাদি বিষয়ে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নিলে বাংলাদেশে কসমেটিকস শিল্প খাত অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিতে পরিণত হবে বলে মনে করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।
ঢাকা/হাসান/ইভা