মাগুরার সেই শিশুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এ মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় নিয়ে আসার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১টায় মাগুরার সেই শিশুকে মৃত ঘোষণা করা হয়। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) পেডিয়াট্রিক নিউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক কর্নেল নাজমুল হামিদ প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার মা। এই মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

কর্নেল নাজমুল হামিদ বলেন, আজ সকালে দুই দফায় শিশুটির ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ (আকস্মিকভাবে হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যাওয়া) হয়। সিপিআর দেওয়ার পর তাঁর হৃৎস্পন্দন ফিরে এসেছিল। কিন্তু দুপুর ১২টায় আবার ‘কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট’ হয়। এই দফায় সিপিআর দেওয়ার পরও তার হৃৎস্পন্দন ফেরেনি। বেলা ১টায় তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে জানানো যাচ্ছে, মাগুরায় নির্যাতিত শিশুটি আজ বেলা ১টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সিএমএইচের সর্বাধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা প্রয়োগ এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। শিশুটির আজ সকালে তিনবার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। দুইবার স্থিতিশীল করা গেলেও তৃতীয়বার আর হৃৎস্পন্দন ফিরে আসেনি।

আইএসপিআরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ৮ মার্চ শিশুটিকে সংকটাপন্ন অবস্থায় ঢাকার সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। শিশুটির আত্মার মাগফিরাত কামনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শিশুটির শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী গভীর সমবেদনা জানাচ্ছে। যেকোনো প্রয়োজনে তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার ব্যক্ত করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।

আরও পড়ুনমাগুরার সেই শিশুটিকে বাঁচানো গেল না১ ঘণ্টা আগে

গত বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় শিশুটিকে মাগুরার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে যান তার বোনের শাশুড়ি। পরে শিশুটির মা হাসপাতালে যান। সেদিন দুপুরেই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে রাতেই পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এরপর শুক্রবার রাতে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। সংকটাপন্ন অবস্থায় শিশুটিকে শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (পিআইসিইউ) থেকে সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। তাকে ঢাকার সিএমএইচের পিআইসিইউতে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।

আরও পড়ুনমাগুরায় শিশু ধর্ষণ: মধ্যরাতে আদালতে শুনানি, চার আসামির রিমান্ড মঞ্জুর ১০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স এমএইচ

এছাড়াও পড়ুন:

ধ্বংসস্তূপে জীবনের জয়গান

একে অপরের হাত ধরে হেঁটে যাচ্ছেন বর-কনে। কনের পরনে লাল ফিতায় সজ্জিত ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী কারুকার্যমণ্ডিত লাল–সাদা পোশাক। বরের গায়ে কালো স্যুট ও টাই। ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার একটি গণবিবাহের দৃশ্য এটি। দুই বছর ধরে ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত ভবন ও ধংসস্তুপকে পেছনে রেখে এভাবেই গাওয়া হয় নতুন জীবনের জয়গান।

গত মঙ্গলবার গাজার দক্ষিণে খান ইউনিস শহরে চোখজুড়ানো এ অয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ৫৪ জোড়া জুটির বিয়ে সম্পন্ন হয়, যা কোনো প্রচলিত বিয়ে নয়। যুদ্ধের ধ্বংসাবশেষের মধ্যে এটি ছিল জীবনের সাহসী উদ্‌যাপন। কারাম মুসাআদ নামের এক ফিলিস্তিনি তরুণ ওই অনুষ্ঠানে জীবনসঙ্গী বেছে নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এমন একটি আনন্দঘন মুহূর্তের প্রয়োজন ছিল, যা আবার আমাদের হৃদয়কে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।’

ইসরায়েলের হামলায় গাজার সর্বত্র ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে। তার ওপরে লালগালিচা বিছিয়ে বানানো হয় অস্থায়ী মঞ্চ। বাদ্যের তালে তালে পা মিলিয়ে একে একে মঞ্চে ওঠেন হবু দম্পতিরা। ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরা কনেদের হাতে ছিল লাল, সাদা ও সবুজ রঙের ফুলের তোড়া। তিন ধরনের ফুলের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের পতাকা ফুটিয়ে তোলা হয়। তাঁদের পাশে ফিলিস্তিনের ছোট ছোট পতাকা উড়িয়ে হাঁটছেন বরেরা।

অনুষ্ঠানে ফিলিস্তিনের ঐতিহ্যবাহী গান ও নৃত্য পরিবেশন করা হয়, যা দেখতে শত শত দর্শক শহরের একটি চত্বরে জড়ো হন। কেউ দাঁড়িয়ে ছিলেন, কেউ আশপাশের ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনের ওপর অসহায়ভাবে বসেছিলেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ