বাংলাদেশে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনে সাহায্য করতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। একই সঙ্গে তারা এই দেশে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়।

আজ রোববার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে ইইউর প্রতিনিধিদল। এই বৈঠকে তারা ইসিকে সহায়তার প্রস্তাব দেয়।

বৈঠক শেষে সিইসি নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ইইউর প্রতিনিধিদল নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। ইসির বাজেট সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। ইসি বলেছে, টাকাপয়সার সমস্যা নেই। সরকারের কাছে বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। তবে ইসিকে সাহায্য করতে চায় ইইউ। ইসির কী কী প্রয়োজন, তা তারা জানতে চেয়েছে। তারা বলেছে, নির্বাচনের জন্য যে ধরনের সাহায্য প্রয়োজন, তা করতে তারা প্রস্তুত রয়েছে।

সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, তিনি নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের প্রশিক্ষণ, ভোটার এডুকেশন (ভোটার শিক্ষণ) ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বলেছেন। ইইউ সর্বতোভাবে সহায়তা করতে রাজি আছে।

এক প্রশ্নের জবাবে নাসির উদ্দিন বলেন, ইইউ আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায়। তারা অবাধ, স্বচ্ছ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন দেখতে চায়। নির্বাচন কমিশনও এমন নির্বাচনই চায়। এ জন্য ইসি স্বচ্ছভাবে কাজ করছে। কোনো কিছু লুকিয়ে বা ছাপিয়ে রাখা হচ্ছে না।

বৈঠক শেষে ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, তিনি ইসিকে জানিয়েছেন, ইইউ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসারে বাংলাদেশে নির্বাচন আয়োজনে সহায়তা করবে। উল্লেখযোগ্য আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি ইইউ তার অভিজ্ঞতা ও এক্সপার্টিজ (দক্ষতা) প্রদানের মাধ্যমে এই কাজ করবে বলে তিনি জানান।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

মধ্য সেপ্টেম্বরে আসছে ইইউর প্রাক্‌–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল

আগামী সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি বাংলাদেশে আসছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) একটি প্রাক্‌–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল। তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি দেখার জন্য আসছে। গতকাল সোমবার নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ইসি সচিব জানান, ইইউর প্রাক্‌–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দলে তিনজন বিদেশি এবং চারজন স্থানীয় মিলিয়ে সাতজন থাকবেন। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন জেনেছে। এ বিষয়ে এখনো ইসিকে বিস্তারিত জানানো হয়নি।

আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে, সে বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট তারিখ জানানো হয়নি। তবে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন হতে পারে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজটি চলতি মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করবে ইসি। আখতার আহমেদ, জ্যেষ্ঠ সচিব, নির্বাচন কমিশন

গতকাল ব্রিফিংয়ে নির্বাচন নিয়ে ইসির বিভিন্ন প্রস্তুতির কথাও তুলে ধরেন ইসি সচিব। তিনি জানান, ১০ আগস্টের মধ্যে বাদ পড়া ভোটারদের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। দাবি আপত্তি নিষ্পত্তি শেষে ৩১ আগস্টের মধ্যে এই তালিকা চূড়ান্ত করা হবে। সংশোধিত ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন যৌক্তিক বিবেচনা করে একটি ‘কাটআউট টাইম’ দিয়ে ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে। নির্বাচন কবে হবে, তার ওপর নির্ভর করে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচনী আইনবিধি সংস্কারের অগ্রগতি তুলে ধরে ইসি সচিব বলেন, ‘সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনের সংশোধনী, ভোটার তালিকা আইনের সংশোধিত অধ্যাদেশ ইসি ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছে। একটা সংশোধনী ছিল, সেটা আমরা পেয়েছি। ভোট কেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা, সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে ইসি। জাতীয় নির্বাচনসংক্রান্ত আইন গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) সংশোধনী এবং রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা আগামী বৃহস্পতিবার ইসির বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজটি চলতি মাসের মধ্যে শেষ করার চেষ্টা করবে ইসি। এ ছাড়া একটু একটু করে কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনী দ্রব্যাদি কেনাকাটার কাজ আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করবে ইসি।’

ইসি সচিব জানান, ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর আয়–ব্যয়ের নিরীক্ষা প্রতিবেদন ইসিতে দেওয়ার বিধান আছে। নির্ধারিত সময়ে ৫১টি দলের মধ্যে ৩০টি দল হিসাব দাখিল করেছে। ১৫টি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। বাকি ছয়টি দলের একটি বলেছে, তারা এ বছর নিবন্ধন পেয়েছে, তাই তাদের ক্ষেত্রে এ বছর হিসাব দেওয়ার বিধান প্রযোজ্য হবে না। বাকি পাঁচটি দল হিসাব দাখিল করেনি। এটি কমিশনকে জানানো হবে। কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গত রোববার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে এনসিপির নেতা নাসির উদ্দীন পাটোয়ারী বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশনের মেরুদণ্ড নেই। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইসি সচিব কিছুটা হাস্যরস করে বলেন, ‘আমার মেরুদণ্ড না থাকলে আমি সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি কী করে, এটা নাম্বার ওয়ান। নাম্বার টু হচ্ছে, এটা রাজনৈতিক বক্তব্য, আমার এরিয়া নয়। আমার জায়গাটা হচ্ছে প্রশাসনিক ব্যাপার। এ ব্যাপারে প্রথম উত্তরটাই যদি আপনি নেন, এখনো পর্যন্ত তো সোজা হয়ে আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আপনারা দোয়া করেন, যেন এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে পারি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মধ্য সেপ্টেম্বরে আসছে ইইউর প্রাক্‌–নির্বাচনী পর্যবেক্ষক দল