৩৭ লাখ টাকাসহ আটক গাইবান্ধার সেই প্রকৌশলীকে সাময়িক বরখাস্ত
Published: 19th, March 2025 GMT
নাটোরের সিংড়ায় নগদ টাকাসহ আটক গাইবান্ধার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) সেই নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। অনুমতি ছাড়া কর্মস্থল ত্যাগ ও গাড়িতে অবৈধ অর্থ বহনের অভিযোগে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) গাইবান্ধার নির্বাহী প্রকৌশলী মো.
বিধিমালা অনুযায়ী ছাবিউল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার রাত একটার দিকে গাইবান্ধা থেকে ছেড়ে আসা একটি প্রাইভেটকার রাজশাহী যাচ্ছিল। পথে নাটোরের সিংড়ার চলনবিল গেট এলাকায় পুলিশের চেকপোস্টে প্রাইভেটকারটিতে তল্লাশি চালানো হয়। এসময় প্রাইভেটকারটির পেছনে ৩৬ লাখ ৯৪ হাজার ৩০০ টাকা দেখে প্রকৌশলী ছাবিউল ইসলামের কাছে টাকার উৎস সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
এ সময় ছাবিউল ইসলাম টাকাগুলো জমি বিক্রির টাকা বলে দাবি করলেও কোনো প্রমাণ দিতে পারেননি। পরে যৌথবাহিনী ওই টাকা ও টাকা বহনকারী গাড়িটি জব্দ করে। সেই সঙ্গে প্রকৌশলীসহ প্রাইভেটকার ও তার ড্রাইভারকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। পরে শুক্রবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তদন্তের জন্য ডাকলে যেকোনো সময় হাজির হতে বাধ্য থাকবেন তিনি এমন মুচলেকা নিয়ে পরিবারের জিম্মায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বিষয়টি তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
পুরো বিষয়টি উদঘাটন করার জন্য দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ছাবিউল ইসলামের গাড়ি থেকে জব্দ করা প্রায় ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
রোববার বিকেলে নাটোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহান এই নির্দেশ দেন। ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া সাধারণ ডায়েরির (জিডি) তদন্তকারী কর্মকর্তা সিংড়া থানার পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাজু আহমেদ জব্দ করা টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ চেয়ে রোববার দুপুরে আদালতে আবেদন করেন। তার প্রেক্ষিতে আদালতের বিচারক জব্দ করা প্রায় ৩৭ লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ভোলায় সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে নিখোঁজ ১৩ জেলে ভারতের কারাগারে বন্দী
সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে ২০ দিন ধরে নিখোঁজ ভোলার লালমোহনের ১৩ জেলের খোঁজ মিলেছে। আজ সোমবার দুপুরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলেন তাঁরা। হঠাৎ বিকল হয়ে যাওয়া তাঁদের ট্রলার স্রোতের টানে ভারতের সীমানায় ঢুকে পড়ে। বর্তমানে তাঁরা পশ্চিমবঙ্গের একটি জেলে আটক রয়েছেন বলে ভিডিও কলে জানিয়েছেন।
ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌড়নগর ইউনিয়নে ‘মা বাবার দোয়া’ নামের একটি ট্রলার গত ১০ নভেম্বর রাতে ১৩ জন জেলে নিয়ে চরফ্যাশন উপজেলার সামরাজ ঘাট থেকে সাগরে মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। পাঁচ দিন পরে ফিরে আসার কথা থাকলেও ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত তাঁদের কোনো খোঁজ না মেলায় পরিবারগুলো হতাশ হয়ে পড়ে।
নিখোঁজ জেলেরা হলেন ধলীগৌরনগর ইউনিয়নের চরকালাচাঁদ গ্রামের মো. সাব্বির হোসেন, কুলচড়া গ্রামের মো. হেলাল উদ্দিন, মো. শামীম, মাসুদুর রহমান, মো. খোকন, মো. সজিব, হরধরিঞ্জ গ্রামের মো. জাহাঙ্গীর আলম, ভেদুরিয়া গ্রামের মো. নাছির, ধলীগৌরনগর গ্রামের মো. আলম, মো. ফারুক মাঝি, মো. মাকসুদুর রহমান, মোহাম্মদ ফারুক ও আব্দুল মালেক।
জেলে মো. খোকনের স্ত্রী মোসাম্মত নিপা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘১০ নভেম্বর আমার স্বামী সমুদ্রে যায়। আজ ভিডিওতে শুধু তার চোখের পানি দেখেছি। আমার একটা প্রতিবন্ধী ছেলে আর ছোট একটা মেয়ে সারা দিন বাবাকে ডাকতে ডাকতে কান্না করে। আমি নিজেও অসুস্থ, সন্তানসম্ভবা। সরকারের কাছে মিনতি—আমার স্বামীসহ সব জেলেকে ফিরিয়ে এনে দিন।’
জেলে মো. সাব্বির হোসেনের স্ত্রী সীমা আক্তার বলেন, ‘চার মাস হলো আমাদের বিয়ে হয়েছে। আজ দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছে। কিছু বলতে পারেনি, শুধু কাঁদছিল। সবাইকে যেন দ্রুত দেশে আনা হয়, এই আবেদন করছি।’
নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের দাবি, ভিডিও কলটি ভারতীয় পুলিশের সহায়তায় সম্ভব হয়েছে। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন জেলেরা। তাঁরা জানিয়েছেন, খাওয়াদাওয়াসহ অনেক কষ্টে তাঁদের দিন কাটছে। তাঁরা দ্রুত দেশে ফেরার আকুতি জানিয়েছেন স্বজনদের কাছে।
ট্রলারের প্রধান ফারুক মাঝির ছেলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ১৩ জন জেলের কেউ না ফেরায় তাঁরা লালমোহন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন। ঘাটে ঘাটে খুঁজেছেন। সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন করেছেন। সব গণমাধ্যমে এসব সংবাদ প্রচার হয়েছে। অবশেষে খোঁজ পাওয়া গেছে।
লালমোহন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সিরাজুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, সাগরে মাছ শিকার করার সময় লালমোহনের জেলেদের ফিশিংবোট বিকল হয়ে যায়। ভাসতে ভাসতে ভারতের সীমানায় চলে গেলে ভারতের নৌবাহিনী তাঁদের আটক করে পশ্চিমবঙ্গের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা করে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। আজ সোমবার দুপুরের দিকে নিখোঁজ জেলেদের একজনের মুঠোফোনে ভিডিও কল দেন তাঁর চাচাতো ভাই। সেই সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের জেল-পুলিশের সহযোগিতায় নিখোঁজ জেলেদের সঙ্গে স্বজনেরা কথা বলে জানতে পারেন এসব ঘটনা। ওসি আরও বলেন, ‘আমরা ইমিগ্রেশনে চিঠি লিখেছি। পরবর্তীতে সরকার তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’