১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরেরা সরকারি বাঙলা কলেজকে এক ভয়াবহ নির্যাতনকেন্দ্রে পরিণত করেছিল। কলেজ প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়েছিল সামরিক ক্যাম্প, যেখান থেকে পরিচালিত হতো বিভিন্ন দমন-পীড়ন ও বর্বর হত্যাযজ্ঞ।

এখনো কলেজ চত্বরে আছে গণকবর, শহীদের রক্তমাখা গাবগাছ এবং সেই কুয়া, যেখানে নির্বিকার নিষ্ঠুরতায় মৃতদেহ ফেলে দিত পাকিস্তানি সেনারা। কলেজের মূল ভবনের নির্যাতনকক্ষ, হোস্টেলের পাশের ব্রাশফায়ারের স্থান কিংবা অধ্যক্ষের বাগানে গাছের গোড়ায় জবাই করার নির্মম ঘটনাগুলো শুধু ইতিহাসের পাতায় বন্দী নয়, আজও এই মাটির প্রতিটি কণা তার সাক্ষ্য বহন করে। বিজয়ের মুহূর্তে ক্যাম্পাসজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা কঙ্কাল, রক্ত, পচাগলা দেহ হয়ে উঠেছিল সেই নৃশংসতার নীরব প্রমাণ।

পাকিস্তানি বাহিনীর ৯ মাসের দখলদারিত্বে সরকারি বাঙলা কলেজের নাম বদলে রাখা হয়েছিল ‘উর্দু কলেজ’। কিন্তু বিজয়ের পর প্রতিষ্ঠানটি আবার ফিরে পায় তার পরিচিতি, সম্মান ও দায়িত্ব।

আরও পড়ুনএকজন শামসুজ্জোহা আজও অনুপ্রেরণা২৩ মার্চ ২০২৫

আমি যখন কলেজের সেই জোড়া গাবগাছের নিচে দাঁড়াই, বুকের ভেতর এক অদ্ভুত শূন্যতা অনুভব করি। এই গাছের গোড়ায় কত মানুষ শেষনিশ্বাস ফেলেছেন, কত স্বপ্ন ধুলায় মিশে গেছে। শহীদ মিনারের সামনে দাঁড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সেই সাহসী আত্মত্যাগের কথা ভাবলে গর্বে বুক ভরে যায়, আবার বেদনাও ছুঁয়ে যায় হৃদয়ে।

কলেজের বিভিন্ন সেমিনার, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনায় একাত্তরের স্মৃতি তুলে ধরা হয়, যেখানে অংশ নিতে পারাটা আমার জন্য গর্বের। এমনই এক অনুষ্ঠানে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বক্তব্য শুনে মনে হয়েছিল, তাঁদের জীবন্ত স্মৃতিগুলো যেন আমাদের চোখের সামনে এক নতুন ইতিহাস রচনা করছে।

সরকারি বাঙলা কলেজের বধ্যভূমি শুধু মিরপুর নয়, গোটা বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আজকের প্রজন্মের দায়িত্ব এই ইতিহাসকে শুধু জানা নয়, তা থেকে শিক্ষা নেওয়া, চেতনায় ধারণ করা। কারণ, মুক্তিযুদ্ধ শুধুই অতীত নয়, এটি আমাদের আত্মপরিচয়ের শিকড়। এই শিকড় ভুলে গেলে হারিয়ে যাবে পথ, মুছে যাবে চেতনা।

সরকারি বাঙলা কলেজের মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী সুফিয়ান ইসলাম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কল জ র সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

ইসলামী শ্রম আইন বাস্তবায়নের দাবি

শ্রমিক সমা‌জের মু‌ক্তির জন‌্য ইসলামী শ্রমনী‌তি প্রণয়ন ও বাস্তবায়‌নের দা‌বিতে রাজধানীসহ দে‌শের বি‌ভিন্ন স্থা‌নে র‌্যালি, আলোচনা সভা ও সমা‌বেশ ক‌রে‌ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এর সহ‌যোগী সংগঠনগু‌লো।

মহান মে দিবস উপল‌ক্ষে বৃহস্প‌তিবার (১ মে) সকাল থে‌কে এসব কর্মসূচি পালন ক‌রা হয়।

গাজীপুরে শ্রমিক সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, ইসলামী শ্রমনীতি ছাড়া যে শ্রমিকের মুক্তি সম্ভব না, তা আজ প্রমাণিত। স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরও বিদ্যমান শ্রম নীতিমালাই বাস্তবায়ন করা যায়নি। দেশের অর্থনীতির আকার বড় হয়েছে, জিডিপির আকার বড় হয়েছে, কিন্তু শ্রমিকের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। টাকার অংকে শ্রমিকের বেতন বাড়লেও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকৃত মজুরি বরং আরো কমেছে। এই বাস্তবতায় রাষ্ট্র পরিচালনায় ইসলামকে ভিত্তি বানাতে না পারলে শ্রমিকের ভাগ্য কোনোদিনই পরিবর্তন হবে না।

ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা খলিলুর রহমান নোয়াখালীর সেনবাগে তার নির্বাচনি এলাকায় শ্রমিক-জনতা সমাবেশে বলেছেন, ইসলামী শ্রম আইন বাস্তবায়নে সামগ্রিক আন্দোলন করা ছাড়া শ্রমিকের সামনে আর কোনো পথ নেই। ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন সে পথেই হাঁটবে।

তি‌নি বলেন, আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস কেবল একটি দিন নয়, বরং শ্রমজীবী মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও ন্যায্যতার প্রতীক। ইসলামী শ্রমিক আন্দোলন বাংলাদেশ শুরু থেকেই এ চেতনাকে ধারণ করে শ্রমজীবী জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। এবারের দিবস উপলক্ষে দেশব্যাপী যে উদ্দীপনা ও অংশগ্রহণ আমরা দেখেছি, তা অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক ও অনুপ্রেরণাদায়ক।

মে দিবসে ঢাকা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, নেত্রকোনা, শেরপুর, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, যশোর, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, নড়াইল, বরিশাল, পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, নাটোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জয়পুরহাট, রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, মাগুরা, মেঘনাঘাটসহ সাংগঠনিক জেলাগুলো সভা-সমা‌বে‌শ ক‌রে‌ছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ