শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত আর্থিক খাতের কোম্পানি বাংলাদেশ ফাইন্যান্স বা বিডি ফাইন্যান্স গত বছর রেকর্ড পরিমাণ লোকসান করেছে। বছর শেষে কোম্পানিটির লোকসান বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮৩ কোটি টাকা। যে কারণে ২০২৪ সালের জন্য কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার বিডি ফাইন্যান্সের পরিচালনা পর্ষদের সভায় ২০২৪ সালের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদনের পাশাপাশি শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শেয়ারবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানি হিসেবে আজ রোববার স্টক এক্সচেঞ্জের মাধ্যমে এই তথ্য বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়। দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিপুল পরিমাণ লোকসান হওয়ার কারণও জানিয়েছে। বলেছে, খেলাপি ঋণ ও শেয়ারবাজারে বিতরণ করা মার্জিন ঋণ এবং বিভিন্ন ধরনের বিনিয়োগের বিপরীতে বর্তমান-ভবিষ্যৎ ঝুঁকি বিবেচনায় শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশনিং করা হয়েছে। বছর শেষে খেলাপির ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো প্রভিশনিং করেছে কোম্পানিটি। এ কারণে বছর শেষে কোম্পানিটি বড় ধরনের লোকসানে পড়েছে।

কোম্পানি-সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে বিডি ফাইন্যান্সের লোকসান হয়েছিল প্রায় ১০৪ কোটি টাকা, যা গত বছর সাড়ে সাত গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৮৩ কোটি টাকা। ১৯৯৯ সালে যাত্রা শুরু করার পর এটিই কোম্পানিটির সবচেয়ে বড় লোকসানের রেকর্ড। আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের প্রথম ৯ মাস জানুয়ারি-সেপ্টেম্বরে বিডি ফাইন্যান্সের লোকসান হয়েছিল প্রায় ২০ কোটি টাকা। বছর শেষে তা একলাফে ৭৮৩ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। তাতে বছর শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান (ইপিএস) দাঁড়ায় ৪১ টাকা ৬১ পয়সা। ২০২৩ সালে লোকসান হয়েছিল ৫ টাকা ৬০ পয়সা।

বড় ধরনের এই লোকসানের কারণ জানতে চাইলে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কায়সার হামিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের খেলাপি ও ঝুঁকিপূর্ণ সব ধরনের ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিং করা হয়েছে। এ ছাড়া শেয়ারবাজারে মার্জিন ঋণ, শেয়ারে বিনিয়োগ ও প্লেসমেন্টের বিপরীতে যেসব ঋণ অনাদায়ি এবং ভবিষ্যতের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ সেসব বিনিয়োগের বিপরীতেও আমরা শতভাগ প্রভিশনিং করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে নানা ছাড় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা সেটি করিনি। বরং শতভাগ প্রভিশনিং করেছি, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই গত বছর বড় লোকসান হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ ও খেলাপি ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশনিং করায় ভবিষ্যতে বিডি ফাইন্যান্স একটি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াবে।’

বাংলাদেশ ফাইন্যান্স হচ্ছে আনোয়ার গ্রুপের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এটির প্রায় সাড়ে ৩০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা-পরিচালকদের হাতে। বাকি শেয়ারের মধ্যে ১৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের এবং প্রায় সাড়ে ৫৪ শতাংশ ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে। কোম্পানিটি শেয়ারধারীদের সর্বশেষ ১০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছিল ২০২২ সালের জন্য। ২০২৪ সালের মতো ২০২৩ সালেও কোনো লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কাছ থেকে প্রভিশনিংয়ের ক্ষেত্রে নানা ছাড় নেওয়ার সুযোগ থাকলেও আমরা সেটি করিনি। বরং শতভাগ প্রভিশনিং করেছি, যাতে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি এড়ানো যায়। তাই গত বছর বড় লোকসান হয়েছে।কায়সার হামিদ, এমডি, বিডি ফাইন্যান্স।  

এদিকে রেকর্ড লোকসানের খবরে আজ রোববার ঢাকার শেয়ারবাজারে বিডি ফাইন্যান্স শেয়ারের দরপতন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ৮ শতাংশ বা ৮০ পয়সা কমে ৯ টাকা ২০ পয়সায় নেমেছে। এদিন কোম্পানিটির প্রায় সাড়ে ৮ লাখ শেয়ার হাতবদল হয়। দুই বছরের ব্যবধানে ঢাকার বাজারে কোম্পানিটির শেয়ারের দাম প্রায় ৪০০ শতাংশ বা ৩৫ টাকা কমেছে। পরপর দুই বছর বিনিয়োগকারীদের কোনো লভ্যাংশ না দেওয়ায় কোম্পানিটিকে দুর্বল মানের ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত করা হয়েছে। আগামীকাল সোমবার থেকে জেড শ্রেণিভুক্ত হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারের লেনদেন হবে।

বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, নিয়ম অনুযায়ী জেড শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় কোম্পানিটির শেয়ার কেনার ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা কোনো ধরনের ঋণসুবিধা পাবেন না। পাশাপাশি এটির শেয়ারের লেনদেন নিষ্পত্তিতেও এক দিন বেশি সময় লাগবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ইন য ন স র শ য় রব জ র র ব পর ত বছর শ ষ গত বছর র কর ড ত বছর ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচার পাখির মতো গুলি করা হয়: মামুনুল হক

ইসলামি জনতাকে বারবার বুলেটের আঘাতে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক বলেছেন, ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচার পাখির মতো গুলি করা হয়। ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনের কারণে আলেমদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। ২০২৪ সালে জুলাই বিপ্লবে এ দেশে আপামর তৌহিদি জনতা, ছাত্রজনতা, কৃষক–শ্রমিক–মজুরদের হত্যা করে বাংলাদেশকে রক্তে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

আজ বুধবার দুপুরে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলা শাখার আয়োজনে সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নির্বাচনী গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মামুনুল হক এ কথা বলেন।

আগামীর বাংলাদেশ ইসলামের বাংলাদেশ হবে বলে দাবি করেন মামুনুল হক। তিনি জানান, বিগত সময়ে যারা ক্ষমতার মসনদে ছিল, তারা দেশের প্রতিনিধি নয়; বরং ভিনদেশি কৃতদাসী হিসেবে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল। এ দেশের মানুষের অধিকার আদায় নয়, ভিনদেশিদের স্বার্থ আদায় করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। দেশটাকে উজাড় করে সোনার বাংলাকে শ্মশান বানিয়ে মানুষের রক্ত ও জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলে দেশটাকে গুমের রাজত্বে পরিণত করা হয়েছিল। বাংলাদেশটাকে মৃত্যুকূপে পরিণত করা হয়েছিল।

বিগত সরকারের আমলে ইসলামি নেতাদের বছরের পর বছর বিনা বিচারে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল অভিযোগ করে মামুনুল হক বলেন, জেল–জুলুম–হুলিয়া চালানো হয়েছিল, ফাঁসির কাষ্ঠে ঝোলানো হয়েছিল। কারাগারে বিনা চিকিৎসায় আলেমদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে মৃত্যুর কোলে ঠেলে দেওয়া হয়েছিল। ২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল—১৫টি বছর ছিল আলেম–ওলামা তথা ইসলামপন্থীদের রক্ত দেওয়ার, ত্যাগ ও কোরবানির সময়। সব জুলুম–নির্যাতনের পর চব্বিশের বিপ্লব প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। চব্বিশের এ বিপ্লবে যারা বুক চিতিয়ে জীবন দিয়েছিল, তাদের সিংহভাগ ছিল আলেমসমাজ। জীবন ও রক্তের বিনিময়ে বিদেশি আধিপত্যমুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশকে ফ্যাসিবাদমুক্ত করা হয়েছে। নতুন করে আবার বিদেশি পরাজিত শক্তি অন্য কারও মাথার ওপর ভর করে বাংলার মানুষকে যদি জিঞ্জিরাবদ্ধ করতে চায়, তা বরদাশত করা হবে না।

ঐক্যবদ্ধ জনগণ যাদের প্রতিহত করেছে, তারা ভিন্ন রাজনৈতিক দলের আশ্রয়ে বাংলাদেশের মানুষকে জিম্মি করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করেন মামুনুল হক। তিনি বলেন, ‘আমরা শপথ করছি, জীবন দিয়ে যেই ফ্যসিবাদ বিতাড়িত করেছি, সেই ফ্যাসিবাদ ভিন্নরূপে বাংলার ক্ষমতার মসনদে আসার পাঁয়তারা করলে আমরা রাজপথে লড়াই করে মোকাবিলা করব। নিজের বক্তব্যে চাঁদাবাজি, লুটপাট, দুর্নীতি বন্ধ ও জুলাই সনদের আইনিভিত্তি বাস্তবায়নে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতীকের পাশাপাশি গণভোটে হ্যাঁ ব্যালটে সিল দিতে সবার প্রতি আহ্বান জানাই।’

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস উপজেলা শাখার সভাপতি হাফেজ আবদুল লতিফের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব আতাউল্লাহ আমীন, নায়েবে আমির শাহ মুহাম্মদ সাঈদ নূর, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ হাদী, ফুলবাড়িয়া আসনে খেলাফত মজলিস মনোনীত প্রার্থী মুফতি আবদুল কাদের, জামায়াত মনেনানীত প্রার্থী অধ্যক্ষ কামরুল হাসানসহ খেলাফত মজলিসের অন্য নেতারা।

একই দিন বিকেলে ভালুকা সরকারি কলেজ মাঠে আয়োজিত সমাবেশেও প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন মামুনুল হক।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান ফয়েজ হামিদের ১৪ বছরের কারাদণ্ড
  • ২ কোটি রুপি বেতন কমতে পারে রোহিত–কোহলির, ২ কোটি রুপি বাড়তে পারে গিলের
  • সেমিনার: ১৫ বছরে গুম শিবিরের ২৫৫ জন, সাতজন ফেরেননি এখনো
  • ২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে নির্বিচার পাখির মতো গুলি করা হয়: মামুনুল হক
  • এনসিপির মনোনয়ন পেলেন জাতীয় ছাত্র সমাজের সাবেক সভাপতি
  • আবারও ইতিহাস গড়লেন মেসি, দ্বিতীয়বার এমভিপি
  • মেঘনা পেট ইন্ডাস্ট্রিজের টিকে থাকা নিয়ে নিরীক্ষকের শঙ্কা
  • দেশে মানবাধিকার কমিশন এখনো অকার্যকর
  • বেগম রোকেয়া: মৃত্যুর প্রায় এক শ বছর পরেও কেন প্রাসঙ্গিক
  • ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় এবার উঠে এল টাঙ্গাইল শাড়ির বুননশিল্প