নদী শাসন বাঁধ না থাকায় বর্ষার শুরুতেই ভাঙন দেখা দিয়েছে আড়িয়াল খাঁ নদের পাড়ে। সেতুর খুব কাছেই নদের পাড়ে ভাঙন শুরু হওয়ায় উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা।

উৎরাইল-শিবচর প্রধান সড়কের আড়িয়াল খাঁ নদের উপর নির্মিত সেতুটির নয়াবাজার পাড়ের দক্ষিণপাশে নদের পাড়ে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু জায়গা ভেঙে নদী গর্ভে চলেও গেছে। সেতুর একটি পিলার থেকে একশ’ ফুটেরও কম দূরত্বে এই ভাঙন দেখা দিয়েছে।

২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.

৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। সেতুটি নির্মাণের ফলে শিবচর সদরের সাথে দত্তপাড়া, শিরুয়াইল, নিলখী ইউনিয়নের সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হয়। এতে অত্র অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তি দূর হয়। 

সম্প্রতি আড়িয়াল খাঁ নদে পানি বৃদ্ধির ফলে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতা। সেতুর কাছে নদের পাড় ঘেঁষে সৃষ্টি হয়েছে ঘূর্ণিস্রোত। ফলে সেতুর কাছেই নদের পাড়ের বেশকিছু জায়গা ভেঙে গেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাড় ভেঙে নদী কিছুটা ভেতরে ঢুকে গেছে। একটি গাছ রয়েছে নদের পাড়ে। যেকোন সময় গাছটিও নদের গর্ভে চলে যেতে পারে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েকদিন আগে হঠাৎ ভাঙন দেখা দিয়েছে। নদীর এই স্থানটিতে পানির চাপও অনেক। পাড় ঘেঁষে তৈরি হয় ঘূর্ণিস্রোত। একারনেই পাড় ভাঙছে। সেতুটির খুব কাছে এভাবে নদী ভাঙন আতংকের বিষয়। সেতুর পাড়ে নদী শাসন বাঁধ থাকে। অথচ এখানে নদী শাসন বাঁধ দেওয়া গয়নি। নদীতে পানি বাড়লে ভাঙন আরও বাড়তে পাড়ে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সেতুটি।

শিবচর উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, ৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যায়ে আড়িয়াল খাঁ নদের উপর ৫৫০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯.৮০ মিটার প্রস্থের সেতুটিতে স্প্যান সংখ্যা ১১টি এবং পিলার সংখ্যা নয়টি। সেতুটির পাইলের সংখ্যা ১২৩টি, পাইলের দৈর্ঘ্য ৪৮ মিটার। সেতুর জন্য অ্যাপ্রোচ সড়কের (সংযোগ সড়ক) দৈর্ঘ্য ১.৫০ কিলোমিটার। 

৯৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতুটির নির্মাণ কাজ করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মইন উদ্দীন বাঁশি ও হা-মিম ইন্টারন্যাশনাল। ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর সেতুটি যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়।

গিয়াস উদ্দিন মীর নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি বলেন, ‘‘সেতুর দুইপাড়ে নদী শাসন বাঁধ সেতু নির্মানের পূর্বেই দেওয়া উচিত ছিল। সেতু চালু হয়েছে প্রায় দেড় বছর। অথচ নদী শাসন বাঁধ দেওয়া হয়নি। এখন নদীতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেতুর কাছেই পাড়ে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। এটা উদ্বেগের বিষয়। পানি বাড়লে ভাঙন বাড়তে পারে। যা সেতুর জন্য হুমকি।”

এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পারভীন খানম বলেন, “এ বিষয়ে খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ঢাকা/বেলাল/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নদ র প ড় র জন য শ বচর

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রির দৃশ্য

আমাদের টাউনকে আমার পরাবাস্তব টাউন মনে হয়। যেন এই টাউন কখনও পাহাড়ে থাকে। কখনও পাহাড়ের উপত্যকায়, জলাভূমির মাঝখানে দ্বীপ হয়ে থাকে। বাসিন্দা কারা টাউনের?– আমার বন্ধুরা। ফরিদ, বাপি, অমিয়, মান্না, শামীম, নাসের, অঞ্জন, তুষার, রোমেন, নুমান, লিখন, সর্বোপরি মুস্তফা। তারা কি পরাবাস্তব?
সবকিছুই পরাবাস্তব। যারা বেঁচে আছে, যারা মরেছে। পরাবাস্তব টাউনে কোনো নোটিশ বোর্ড নাই– ‘মৃতদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত।’ মৃত আকল পণ্ডিত বরং অধর্ম করেন। ছামুলালের ঘরে বসে মদ্যপান করে জমে যান বব মার্লের সঙ্গে জ্যামিং-এ। কিছু উটপাখি, কিছু ঝাউগাছ রাতে সেই পরাবাস্তব টাউনে ঢুকে যায়।
দেখা এসব দৃশ্য লিখে যাই। মান্নাকে মনা, ফরিদকে ইরাব, তুষারকে কুটু বড়াল বানিয়ে। মুস্তফা শুধু মুস্তফা থেকে যায়। আউট ল সে, ধার ধারে না কোনো গ্রন্থিকের।
‘আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রি’ ২০২২ খ্রিষ্টাব্দে লেখা। দৈনিক সমকাল-এর ঈদসংখ্যায় ছাপা হয়েছিল। বই হয়েছে বিদ্যাপ্রকাশ থেকে। প্রকাশক: মজিবর রহমান খোকা। প্রচ্ছদ: সব্যসাচী হাজরা। কাহিনি? মনে নাই।
আমার ছাপা বই আমি পড়ি না। অস্বস্তি লাগে, বাজে লাগে। জীষ্ণু, বিন্দুবাসিনী, অংশুদা এসব কিছু কিছু মনে আছে। কোন পৃষ্ঠার একটা বাক্য মনে আছে– সন্ধ্যা রাতের হুডি পরে নিয়েছে। আর সেভাবে কিছু মনে নাই।– আমাদের পরাবাস্তব টাউন বহমান, উড়ুক্কু, জলমগ্ন, সর্পিল। তবে রাসেল ভাইপার সাপ তখনও আমাদের টাউনে দেখা যায় নাই। ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ সেটা।
কবিতা ও উপন্যাস বিভাগে ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার-২০২৩ পেয়েছে ‘আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রি’। অবশ্যই আনন্দের কথা। নিরানন্দের কথা এই সম্মান গ্রহণের জন্য আমাকে একদিন মাত্র একবার মঞ্চে উঠতে হবে। মাহবুব আজীজ যত সহজ করে বললেন, তত কি সহজ? আমার সোশ্যাল ফোবিয়া প্রচণ্ড। মারাত্মক মঞ্চভীতি যার অংশ। ভূত প্রেত ডরাই না, মঞ্চ ডরাই। বিপদে মধুসূদন আছেন মামুন ভাই।
‘দুর্বলেরে রক্ষা করো, মামুন ভাই!’
মামুন ভাইয়ের প্রেসক্রিপশন কম্পিউটারে আছে।– আমার কয়েকজন মামুন ভাই আছেন। বিপদে মধুসূদন কোন মামুন ভাই, না বলি। অনুষ্ঠান ৪ জুলাই ২০২৫। সন্ধ্যা ছয়টায়। আমার সঙ্গে মঈন ভাই যাবেন। কথাসাহিত্যিক মঈন আহমেদ। দেশে থাকলে খোকা ভাই (প্রকাশক মজিবর রহমান খোকা) যেতেন। আমি মাসুক ভাইকে বলেছি থাকতে। প্রতিকৃতিকর মাসুক হেলাল। দীর্ঘদিনের সখ্য আমাদের। 

মঈন ভাই আছেন, মাসুক ভাই থাকলে বুকে আরেকটু বল পাব।
মাহবুব আজীজ বিকেলে আসাদকে পাঠালেন। মঈন ভাই ও আমাকে নিয়ে গেল আসাদ। সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠান। লাউঞ্জেই প্রিয় দুজন মানুষকে একসঙ্গে পেয়ে গেলাম। মাসুক ভাই ও তারেক– আর্টিস্ট নাজিব তারেক। মাসুক ভাইয়ের হাত ধরলাম তো ধরলাম আর ছাড়াছাড়ি নাই।
‘মাসুক ভাই আপনি কিন্তু মঞ্চ পর্যন্ত যাবেন আমার সঙ্গে।’
‘যাব, ধ্রুব।’
আস্তে ধীরে কিছু অস্বস্তি কাটল। আশপাশে সব আপন মুখ দেখে। অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেল মাহবুব আজীজের সঞ্চালনায়। কিছু মেয়ে চমৎকার নাচল। শামা রহমান গান করলেন। সকাতরে ওই ডাকিছে সকলে– এই সন্ধ্যার জন্য মনে থাকবে, আপা। আপার গানের পর সম্মাননা প্রদান।
মঞ্চের সিঁড়ি পর্যন্ত মাসুক ভাইয়ের হাত ধরে থাকলাম। মঞ্চে উঠলাম, সম্মাননা নিলাম। সকলের যে ভালোবাসা দেখলাম ভুলব না। ২০২৫-এ ব্র্যাক ব্যাংক-সমকাল সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩-এর ‘বাস্তব’ সন্ধ্যা ভুলব না।
সেই সন্ধ্যা রাতের হুডি পরে নিল। আমি আবার আমাদের পরাবাস্তব টাউনে ফিরলাম। রাত বিদিক করে ফিরলাম।
আছি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজার বেইত হানুন শহর ধ্বংসের ছবি প্রকাশ করল ইসরায়েল
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ৮০০ ছাড়াল
  • রাস্তা করল উত্তর সিটি, উদ্বোধনে বিএনপি নেতা!
  • চার বছরের মধ্যে পাসের হার সর্বনিম্ন, অকৃতকার্যের রেকর্ড
  • আমাদের পরাবাস্তব টাউনের দিনরাত্রির দৃশ্য
  • মোহামেডানে নেই সাফল্যের নায়ক দিয়াবাতে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যঘাটতি আরও বেড়েছে
  • ক্রেতা হারাবে চট্টগ্রামের ৬০ শতাংশ কারখানা
  • ইসরায়েলের দুর্ভেদ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য তাহলে কি অনুপ্রবেশ দায়ী